Ajker Patrika

দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষ: ১৯ সিদ্ধান্তের মধ্যে যে ১১টিতে ভিন্নমত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ৪০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ৩০ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে ২৩ দিনের সংলাপে ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তির নোট) দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপিসহ একাধিক দল।

গত ২ জুন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৩ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু হয়। ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৩ দিনের আলোচনা কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৯টি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যার মধ্যে আটটি বিষয়ে সবগুলো দলের মধ্যে ঐকমত্য হয়।

সংলাপে ঐকমত্য হওয়া আটটি বিষয় হলো—সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব; নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান; জরুরি অবস্থা ঘোষণা; সংবিধান সংশোধন; প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল; পুলিশ কমিশন গঠনসংক্রান্ত প্রস্তাব এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিয়োগের বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও বাকি চারটির বিষয়ে ভিন্নমত আছে।

বাকি ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট আছে দলগুলোর, যার মধ্যে বিএনপি ও তার সমমনারা আটটিতে, সিপিবি-বাসদের একাধিকে, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন একটি করে বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া নোট অব ডিসেন্ট আছে বাংলাদেশ জাসদ ও বাসদ-মার্কসবাদী দলেরও।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার

সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দলের মধ্যে ২১টি দল একমত হওয়ায় কমিশন সিদ্ধান্ত জানায়, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নে ব্যর্থ হলে র‍্যাংকড চয়েসে ভোট হবে। ভোটে কমিটির সদস্য হিসেবে যুক্ত হবেন দুই বিচারপতি। এ সিদ্ধান্তে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপিসহ পাঁচটি দল। তারা বলেছে, কমিটি প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করতে না পারলে কী হবে–এ সিদ্ধান্ত হবে আগামী সংসদে।

সংসদের উচ্চকক্ষ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ দিনের সংলাপে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন থাকবে। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিএনপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ পাঁচটি দল আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, বেশির ভাগ দলের মতামতের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে সিপিবি, বাসদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও আমজনতার দল উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিত করেছে।

সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের ভূমিকা

কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন লাগবে। তবে এই সিদ্ধান্তকেও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। উচ্চকক্ষের অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা দিতে চায় না দলটি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল জনগণের সরাসরি নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতেই থাকা উচিত। পরোক্ষভাবে নির্বাচিত উচ্চকক্ষকে এই ক্ষমতা দেওয়া গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।

এর জবাবে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গণঅধিকার সভাপতি নুরুল হক নুর এবং এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফ্যাসিবাদ রুখতে সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের সমর্থন অপরিহার্য। তাঁদের মতে, উচ্চকক্ষের সদস্যরা দলের মনোনয়নে এলেও তাঁরা সমভাবে নির্বাচিত।

উচ্চকক্ষের ক্ষমতা নিয়ে সংলাপের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়। বিএনপির সমমনা জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এবং এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের মধ্যে এই বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

প্রধান বিচারপতি মনোনয়ন

বিএনপি ও তার সমমনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে উত্থাপিত সমন্বিত প্রস্তাবের ৮, ৯, ১১ ও ১২ ধারার এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বাড়ানোর দুটি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে।

কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ এবং উপজেলা পর্যায়ে অধ্বস্তন আদালত স্থাপনের কথা। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি তারা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করতে চায়। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি করার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নির্বাচনে বিজয়ী দলের ইশতেহার অনুযায়ী আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতি হতে পরবর্তী প্রধান বিচারপতির করার সুযোগ থাকবে। বিষয়টিতে একমত বিএনপি ও তার সমমনারা।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি

সংলাপে এমপিদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ছাড়া বাকি সব দল একমত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতেও সব দল একমত, তবে কতটুকু ক্ষমতা বাড়বে, তা নিয়ে বিভিন্ন দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার পরামর্শ ছাড়া মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, প্রেস কাউন্সিল এবং আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়ার বিষয়ে বিএনপি রাজি হয়েছে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধানসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দিতে বিএনপিসহ কয়েকটি দল রাজি হয়নি। জামায়াতও এই বিষয়ে নিজেদের আপত্তি জানিয়েছে।

জুলাই সনদ ও আইনি ভিত্তি

সংলাপে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্তত ২১টি দল ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ’-এর আইনি ভিত্তি থাকার দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, আইনি ভিত্তি ছাড়া সনদে সই করবে না এবং আইনি ভিত্তি না দিলে সরকার ও কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপি এই দাবির বিরোধিতা করে বলেছে, সব রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষর এবং দুই বছরের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকায় এই সনদের মর্যাদা আইনের ঊর্ধ্বে। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই সনদ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের দলিল।

নারী সংসদ সদস্য

সরাসরি নারী আসন ১০০ পরিবর্তে বিদ্যমান জাতীয় সংসদের ৫০ সংরক্ষিত নারী বহাল রেখে আগামী নির্বাচনে দলগুলোকে ৫ শতাংশ আসনে নারীদের প্রার্থী করার অনুরোধ করে কমিশন। এ বিষয়ে বিএনপি একমত। বিষয়টি নোট অব ডিসেন্ট দেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তাদের দাবি সরাসরি নির্বাচনের ১৫ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়নে দলগুলোকে বাধ্য করতে। নারী আসন নিয়ে বাংলাদেশ জাসদের নোট অব ডিসেন্ট আছে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

পিএসসি ও দুদক: ২২টি দলের ঐকমত্যে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বিএনপি এতে আপত্তি জানিয়েছে।

বিএনপি ও তার সমমনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে উত্থাপিত সমন্বিত প্রস্তাবের ৮,৯, ১১ এবং ১২ ধারার এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বাড়ানোর দুটো বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে।

সংবিধানের মূলনীতি: সংবিধানের মূলনীতিতে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার’ যুক্ত করতে বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল একমত হয়েছে। তবে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।

সংলাপ বর্জন: বাহাত্তরের চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ এবং বাসদ (মার্কসবাদী) সংলাপ বর্জন করে।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রস্তুত করে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে দেশজুড়ে ভূমি অফিসগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৫৬
অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে দেশজুড়ে ভূমি অফিসগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের ভূমি অফিসগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গত সোমবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখা থেকে সব জেলা প্রশাসকদের পাঠানো এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক অগ্নি দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ডরুমে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের সব উপজেলা ভূমি অফিস, রাজস্ব সার্কেল, ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এ ধরনের আকস্মিক দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ যাবতীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

চিঠিতে সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ডরুমে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ উপজেলা ভূমি অফিস, রাজস্ব সার্কেল, ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে আকস্মিক অগ্নি দুর্ঘটনা, যে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা বিপর্যয় এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ যাবতীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

সব বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের চাওয়ার আগেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৩৫
ফাওজুল কবির খান। ফাইল ছবি
ফাওজুল কবির খান। ফাইল ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সরকার নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ পেতে নানা হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতার মুখে পড়েন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা কিছুই পান না। এই জটিলতা দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যাতে চাওয়ার আগেই ক্ষতিপূরণ পান, সে ব্যাপারে বিআরটিএকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার এক অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে তেজগাঁওয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অডিটরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সড়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হচ্ছে এবং এই অভিযান আরও বাড়ানো হবে। তিনি গাড়ির মালিকদের ফিটনেস ঠিক রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন যানবাহন কোনো অবস্থাতেই সড়কে চলতে দেওয়া হবে না। কারণ, এটি দুর্ঘটনার বড় কারণ।’

মোটরসাইকেল বিষয়ে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ায় দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে হেলমেট ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এবার জাতীয় সড়ক দিবস উপলক্ষে ১০ হাজার মোটরসাইকেল চালকের মধ্যে হেলমেট বিতরণ করা হবে, বিশেষ করে যেসব এলাকায় সড়ক নির্মাণকাজ চলছে বা মানুষ ভোগান্তিতে আছে।’

সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের জন্য এক ধরনের গ্লানি ও ব্যর্থতা। ২০১৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে গড়ে ২৭ জন নিহত ও ৩৮ জন আহত হন।’

উপদেষ্টার মতে, সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনাও বেড়েছে।

দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবার ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা তা পান না।’

উপদেষ্টা আরও জানান, বিআরটিএকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো চাওয়ার আগেই ক্ষতিপূরণের টাকা পায়।

সড়ক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা শুধু সড়ক বিভাগের দায়িত্ব নয়, বরং এটি করতে হবে সকল সংস্থার সমন্বয়ে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ড্রাইভিং লাইসেন্সে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৩২
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: আজকের পত্রিকা

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের বর্তমান পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন থেকে প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন না। লাইসেন্স দেওয়ার সব কমিটি বাতিল করে আন্তর্জাতিক মানে নতুন ব্যবস্থা চালু করা হবে। লাইসেন্স পাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে অন্তত ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এর আয়োজন করবে সরকার। প্রশিক্ষণকালে প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতার ব্যবস্থাও থাকবে।

আজ বুধবার এক অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে তেজগাঁওয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অডিটরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উপদেষ্টা বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে চালকদের স্বীকৃত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। বর্তমানে বিআরটিসিসহ দেশে বেশ কয়েকটি বৈধ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, যেখান থেকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, প্রশিক্ষণে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে—প্রথমত, সড়কের বিভিন্ন সাইন ও চিহ্ন সম্পর্কে জ্ঞান এবং দ্বিতীয়ত, যানবাহন সঠিকভাবে চালানো ও নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা। কারণ, বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে।

ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স-সংক্রান্ত কাজগুলো বিআরটিএ থেকে সরিয়ে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোর মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। এতে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা থাকবে না।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী মাসের মধ্যেই এই নতুন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার মূল কারণ প্রশিক্ষণহীন চালকেরা।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি সরাইল এলাকায় গিয়েছিলাম। যাওয়ার আগে সেখানে নিয়মিত যানজট ছিল, কিন্তু আমার পরিদর্শনের দুই দিন পর থেকেই আর জ্যাম নেই। আমার হাতে কোনো জাদুর কাঠি নেই—শুধু কিছু শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছি।’

এদিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ, বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে কাটবে ভোটের সংশয়, আশা আসিফ নজরুলের

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ৪৫
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ফাইল ছবি
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ফাইল ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বাস্তব অগ্রগতিতে নির্বাচন নিয়ে ‘সব সংশয় কেটে যাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

আজ বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘মাঠে-ঘাটে মানুষের মধ্যে আস্থার অভাব আছে কি না, আমি জানি না। আমার মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেভাবে অনৈক্য থাকে, তারা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে যেভাবে বলে, ওটার কারণে হয়তো নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় কাজ করছে। তবে আশা করি, আমরা যখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতি দেখব, এ সম্পর্কে সব সংশয় খুব দ্রুত কেটে যাবে।’

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করতে প্রধান উপদেষ্টাকে পরামর্শ দেন বিএনপির নেতারা।

এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় যেটা বুঝেছি, উনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাননি। অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে, সেটা বলেছে। তারা আমাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছে। আমরা উনাদেরকে বলেছি, আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকাই পালন করছি। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার জন্য এমনকি প্রধান উপদেষ্টা এই নিশ্চয়তাও দিয়েছেন—জনপ্রশাসন বা অন্যান্য ক্ষেত্রে বড় বদলির ব্যাপারটা উনি নিজে দেখবেন।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, এটা বলেনি। বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করতে। আমাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছে। সে বিষয়ে তাদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।’

নির্বাচনের সময় উপদেষ্টা পরিষদ ছোট হবে কি না, সেই প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ধরনের কথা কোথাও আলোচনা হয়নি। এটা উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনার বিষয়। নির্বাচনকালীন সরকার ছোট হবে কি না, এ ধরনের কোনো দাবিও কোনো মহল থেকে উত্থাপন হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত