বালু-পাথর উত্তোলন

গিয়াস উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নদীর ভেতর আমার জমি। তাই নদীর জমি আমার। আমি তো বালু কাটমুই, বালুর ব্যবসা করি। অনুমতি কিসের? ইউএনও-এর কাছ থেকে আমার কোনো অনুমতি লাগে না বালু...

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামছেই না। এমন অবস্থায় নদীপাড়ের গ্রামগুলো রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী একটি চক্র বালু উত্তোলন করছে। তাঁদের দাবি, নদী রক্ষায় দ্রুত বালু উত্তোলন বন্ধ করা হোক।

কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নদীগুলো থেকে সারা বছরই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। এ কারণে নদীপাড়ের গ্রামগুলো প্রতিনিয়ত পড়ছে ভাঙনের মুখে।

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের লঞ্চঘাট এলাকায় কুতুবদিয়া চ্যানেলে খননযন্ত্র বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী একটি চক্রের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে দুই সপ্তাহ ধরে পরিবেশ বিধ্বংসী এ কাজ চলে আসলেও দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চরপলিশা ঝিনাই নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে নদী-তীরবর্তী ফসলি জমি ভাঙনের মুখে পড়ছে।

বান্দরবান সদরের বিভিন্ন ঝিরি, খাল, ছড়া থেকে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ হলেও বিভিন্ন মহলকে হাতে নিয়ে পাথর উত্তোলন ও পাচার অব্যাহত রেখেছেন প্রভাবশালীরা। এমনকি পাথর পাচারের জন্য পাহাড় কেটে ৪ কিলোমিটার রাস্তা তৈরিও করা হচ্ছে। এ জন্য খালের অন্তত ১৪ জায়গায় ছোট-বড় বাঁধ দেওয়া হয়েছে।

যশোরের চৌগাছায় শিগগির কপোতাক্ষ খননকাজ শুরু হবে, এমন খবর পেয়ে বালু লুটের মহোৎসবে মেতেছেন প্রভাবশালী অসাধু ব্যক্তিরা। খননকাজ শুরু হলে আর বালু লুট করার সুযোগ থাকছে না ভেবে তাঁরা প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। প্রশাসন কয়েক দফায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালালেও থামছে না এই বালু লুট।

মুলাদীতে ড্রেজার পুড়িয়ে কিংবা জব্দ করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না অবৈধ বালু উত্তোলন। প্রশাসনকে পাহারা দিয়ে রাতের আঁধারে উপজেলার তিন নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন ব্যবসায়ীরা। গোটা উপজেলায় কোনো বালুমহাল না থাকলেও ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। এতে নদীভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্

ছোটবেলায় বালু নদীতে গোসল করেছি, সাঁতার কেটেছি। এই নদীর পানি খেয়ে বড় হয়েছি। কিন্তু এখন নদীর পানি এত নোংরা ও দুর্গন্ধ যে, স্পর্শ করা দূরের কথা, নামও মুখে নিতে পারি না।’ বলছিলেন বালু নদী সংলগ্ন দাশেরকান্ধি এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় ডলু খালের ওপর নির্মিত স্টিল ব্রিজ হুমকির মুখে রয়েছে। ব্রিজটির নিচ ও পাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নিচের পিলার ভেসে উঠেছে। এর ফলে ব্রিজটি হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। 

ডুমুরিয়ায় শরাফপুর ইউনিয়নে ড্রেজার দিয়ে মরাভদ্রা নদী থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবির বিরুদ্ধে। নদীতে মাছের অভয়াশ্রম এলাকা থেকে বালু তুলে তার ব্যক্তিগত জমি ভরাট করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ নামের ওই প্রকল্পের জন্য যমুনা নদীর তীরে ৮৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী জাদুকাটা নদীর নির্ধারিত সীমার বাইরে গিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অপরাধে দুটি বালুভর্তি নৌকাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (০৩ আগস্ট) বিকেলে তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ জরিমানা করেন।

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধোপাজান চলতি নদীতে বালু, পাথর তোলা নিষিদ্ধ। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ১৭টি বাল্কহেড নৌকা আটক করে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।