Ajker Patrika

ঝুঁকিতে রেল ও সড়ক সেতু

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ মে ২০২২, ১৩: ২৫
ঝুঁকিতে রেল ও সড়ক সেতু

কুষ্টিয়ায় বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘন করে গড়াই নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে এলাকার প্রভাবশালীরা। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গড়াই নদের মীর মশাররফ হোসেন সেতুর নিচ থেকে তোলা হচ্ছে শত শত ট্রাক বালু। এতে চরম ঝুঁকিতে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে গড়াই নদের ওপর শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মীর মশাররফ হোসেন সেতুসহ সংলগ্ন রেলসেতু।

বালু উত্তোলনকারীদের এমন দৌরাত্ম্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কুষ্টিয়ার সংশ্লিষ্ট রাজস্ব বিভাগের তথ্যমতে, জেলার ২১টি বালুমহালের মধ্যে উল্লেখিত জয়নাবাদ, রাহিনীপাড়া ও ছেঁউড়িয়া মৌজা ভুক্ত ৭১ একর জমির উপরিউক্ত ৬৬ লাখ টাকা সরকারি মূল্যমানের বালুমহালটি চলতি অর্থবছরে কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। গড়াই নদের উপরিউক্ত রেল ও সড়ক সেতুর বালু মহাল থেকে যারা বালু উত্তোলন করছেন তা অবৈধ ভাবেই করছেন।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ট্রলিচালক আমিরুল বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে ভেকু, বেলোটার দিয়ে সরাসরি ব্রিজের নিচ থেকে শত শত ড্রাম ট্রাক, ট্রলি ভরে দিচ্ছেন। প্রতি ড্রাম ট্রাক থেকে ১ হাজার ৭০০ এবং ছোট ট্রলি প্রতি ২৫০ টাকা করে টোল নিচ্ছেন ইজারাদারের লোক।

জেলার কয়েকটি পয়েন্ট থেকে এভাবে বালু উত্তোলন করে তা ড্রাম্পট ট্রাকের মাধ্যমে জেলার মধ্যে এবং এর আশপাশের জেলায় পাঠানো হয়। ১০ চাকার এই ট্রাকের ধারণ ক্ষমতার চাইতে বেশি ওভার লোড দিয়ে চালানো হচ্ছে হেলপার অথবা অপরিপক্ব চালক দিয়ে। আবার এসব ট্রাক যাচ্ছে গ্রামের ছোটখাটো সড়কেও। যার ফলে যেমন ঘটছে দুর্ঘটনা তেমনি হচ্ছে প্রাণহানি।

আবার এসব ওভার লোডে ট্রাকের কারণে সড়কের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে ফাটল। যার ফলে জেলা অধিকাংশ মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়কসহ গ্রামীণ সড়কের অবস্থা একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরছে।

অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে। তেমনি এই বালু বহনকারী গাড়ির কারণে সড়কের ক্ষতি হচ্ছে। যেটা সংস্কারের জন্য ও সরকারকে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলামের অভিযোগ, কুষ্টিয়া রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের মীর মশাররফ হোসেন সেতুর সংলগ্ন নদীর মধ্য থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সেতুটি চরম ঝুঁকি মধ্যে পড়তে পারে। বিষয়টি জানিয়ে প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। আমি নিজে সরেজমিন গিয়ে দেখে এসেছি। সেখানে অন্তত ডজনখানেক ভেকু ও বেলোটার (মাটিকাটা যন্ত্র) ব্যবহার করে ট্রাক ভর্তি করে দেওয়া হচ্ছে। আইন না মেনে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলনের ফলে শতকোটি টাকার সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ অঞ্চলের সমগ্র যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর প্রভাব পড়বে। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে শেখ রাসেল হরিপুর কুষ্টিয়া সংযোগ সেতু চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

শুধু এই এলাকাতেই নয়, ইজারা না নিয়েই রাতের আঁধারে শত শত ট্রাক বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন শহরতলির এক প্রভাবশালী জন প্রতিনিধি। দিনে কোনো কর্মকাণ্ড না থাকলেও গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে বালু উত্তোলন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা বলেন, সারা রাতই ট্রাকে করে বালু তুলে নিয়ে বিক্রি করা হয়। যদি বালুমহাল ইজারা নেওয়া হতো, তাহলে রাতে কেনো বালু তুলছে। সেখানে রাতে কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সেখানে সারা রাত ক্যাডার দিয়ে পাহারা বসানো হয়। যার ফলে কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে সাহস পায় না। আবার তাঁরা বলে ওপর মহলের সবাইকে ম্যানেজ করা আছে। যার কারণে কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলার মোট ২১টি বালু মহাল আছে ইজারাযোগ্য। এর মধ্যে চলতি অর্থ বছরে সবগুলি ইজারা দেওয়া হয়নি। যেগুলি ইজারা দেওয়া হয়েছে, এবং যারা ইজারা নিয়েছেন, তাঁদের আইনগত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর বিধি অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কুষ্টিয়া রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের মোশাররক হোসেন সড়ক সেতুটি জয়নাবাদ, রাহিনীপাড়া ও ছেউড়িয়া মৌজা ভুক্ত ৭১ একর জমির বালু মহালের মধ্যে স্থাপিত। প্রথম কথা এই বালু মহালটি চলতি অর্থ বছরে কোনো ইজারা দেওয়া হয়নি। সেই সঙ্গে বিধি অনুযায়ী নদীর উপরিউক্ত সড়ক বা রেল সেতু যেখানে আছে সেখানে উজান এবং ভাটির এক হাজার মিটার বা ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভাবেই বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। কেউ এই আইন ভেঙে বালু উত্তোলন করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত