Ajker Patrika

হাওরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ভাঙন ঝুঁকি

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২২, ১০: ১৫
হাওরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ভাঙন ঝুঁকি

কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নদীগুলো থেকে সারা বছরই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। এ কারণে নদীপাড়ের গ্রামগুলো প্রতিনিয়ত পড়ছে ভাঙনের মুখে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীমহল নানা ভাবে বালু উত্তোলন করছে। কিন্তু অবাধে এমন বালু উত্তোলন চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর তৎপরতা দেখা যায়নি। তাঁদের দাবি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হোক। অন্যদিকে জেলা প্রশাসন বলছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিকূলতার সুযোগ নিয়ে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে বালু তোলেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তবে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা যতই প্রভাবশালী হোক তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ হাজার ৪৭০ বর্গকিলোমিটার হাওর রয়েছে। যা জেলার মোট আয়তনের অর্ধেকের বেশি। এর মধ্যে রয়েছে কালনী, কুশিয়ারা, ধনু, ঘোড়াউত্রাসহ ছোট বড় ১৫টি নদী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছরই এসব নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। এতে করে জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী উপজেলার হাওরপাড়ের গ্রামগুলোতে ভাঙন দেখা দেয়। এতে নদী গর্ভে বিলীন হয় কৃষি জমি, বসত ভিটা। নদী ভাঙনে অনেকেই ভিটেমাটি হারিয়ে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ভাসমান অবস্থায় বসবাস করছেন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলে বা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলে অভিযোগকারীরা নানা নির্যাতনের শিকার হন। তাই এসব বিষয়ে অভিযোগ করতে চান না স্থানীয়রা। বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের কোনো কার্যকর তৎপরতা দেখা যায়নি।

সম্প্রতি ধনু নদীতে গেলে দেখা যায়, প্রকাশ্যে দিনের বেলায় ড্রেজার মেশিনে চলছে বালু উত্তোলন। উত্তোলন করা বালু নৌকায় তুলে দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। এ সময় বালু উত্তোলনের জন্য অনুমোদন আছে কী না জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তাঁরা।

এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ড্রেজার মেশিনের শ্রমিক বলেন, ‘এভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন যে অবৈধ তা জানি, কিন্তু আমরা শ্রমিক। আমাদের কি করার আছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের লোকজন আসছে, এমন খবর আমরা আগে থেকেই পেয়ে যাই। তখন মেশিন বন্ধ করে নদীর পাড়ে ভিড়িয়ে রাখি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধনু নদীর তীরবর্তী এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘অনেকের বাড়িঘর ভাইঙা গেছে। বাপ দাদার ভিটা ভাইঙা গেলে আমরা কই যাব?’

আরেক জন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন আইলে এরা কাজ বন্ধ কইরা দেয়। চইলা গেলে আবার শুরু করে। তাঁরা প্রশাসনের লোকজনের যোগসাজশে এসব কাজ করেন। আর এইদিকে আমাগো বাড়ি ঘর ভাঙে।’

হাওরাঞ্চলের নদীগুলো থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রত্যন্ত হাওরের দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিকূলতার সুযোগ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে লুকোচুরি খেলায় মাতেন বালু উত্তোলনকারীরা। তবে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা যতই প্রভাবশালী হোক তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালানো অভিযানে কয়েকটি ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়েছে। জরিমানাও করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত