নোবেল ভাষণ

১৯৫৮ সালে আমি লিখেছিলাম—বাস্তব এবং অবাস্তবতার মধ্যে, সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে চোখে পড়ার মতো বিরাট কোনো ফারাক নেই। কোনো বিষয়কেই হয় সত্যি, নয় মিথ্যা হতেই হবে—এমনটাও নয়। এমনও হতে পারে, বিষয়টি একই সঙ্গে সত্য এবং মিথ্যা।

সভ্যতার আদি থেকেই মানুষ যা বারবার বলে এসেছে, সে কথাই আজ শুরুতে বলি। ধন্যবাদ আপনাদের! প্রতিটি ভাষাতেই কৃতজ্ঞতার প্রকাশ রয়েছে, নিজের মতো করে। প্রকাশভঙ্গি পৃথক, অর্থের পরিধিও তার বিভিন্ন। রোমান ভাষায় কৃতজ্ঞতাসূচক বাক্য শরীর এবং আত্মাকে ছুঁয়ে থাকে। কখনো তা স্বর্গীয় সৌরভে ভরপুর, আবার কখনো-বা তা মানুষকে ম

উনিশ শতকে যেসব উপন্যাস লেখার কাজ শুরু হয়েছিল তা ক্রমেই এগিয়ে যেতে থাকবে। খবরের কাগজ এবং পত্রপত্রিকাগুলো তাকে প্রয়োজনীয় জায়গা দিয়েছে, উপন্যাসকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশও করে গেছে যখন সেসবের খ্যাতি তুঙ্গে ছিল। সেই উপন্যাসের প্রথম দিককার কাজগুলো দ্রুত হয়ে গেছে। পরবর্তী লেখার কাজটি হচ্ছে এখন, উপসংহার কোথায়

ফ্লোরেন্সের নাবিক আন্তোনিও পিগাফেত্তা বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন ম্যাগেলানকে সঙ্গে নিয়ে। আমেরিকার দক্ষিণ ভাগের যাত্রার সেই বিবরণ তিনি লিখে রেখে গিয়েছেন। সেই ভ্রমণকথা একদিকে যেমন খুঁটিনাটি তথ্যে ভরা, অন্য দিকে কল্প-অভিযানের মতোই মুচমুচে তার স্বাদ। ওই বিবরণে তিনি লিখেছেন এক বিচিত্রদর্শন বরাহের কাহিনি!

আজকের এই বক্তৃতা আসলে দীর্ঘ এক যাত্রা; যা সুদূর প্রদেশ এবং পরস্পর বিপরীত মেরুতে অবস্থিত বহু স্থান-কাল-পাত্রকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে এগিয়েছে। ফলে পথ ক্রমেই চওড়া হয়েছে।

ধুলার মেঘে ঢাকা পথ দেখতে দেখতে অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল—এখানে এখনো কিছু বনাঞ্চল অক্ষত রয়ে গেছে। গতকাল আমি কেটে ফেলা গাছের গুঁড়ি এবং আগুনে পোড়া বনের মধ্য দিয়ে মাইলের পর মাইল গাড়ি চালিয়ে এসেছি। ১৯৫৬ সালেও আমার দেখা সবচেয়ে বিস্ময়কর বনভূমি এখানেই ছিল, যার সবই এখন ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষকে তো খেয়ে বাঁচত

আমার কাজকে শীর্ষতম সম্মানে ভূষিত করার জন্য সুইডিশ একাডেমিকে ধন্যবাদ। এটা ঠিকই যে, অন্য কৃতী লেখকদের টপকে আমাকে এই সম্মান দেওয়া নিয়ে আমার নিজের মনেই এখনো সংশয় রয়েছে। সেই সব লেখককে টপকে, যাঁদের আমি অত্যন্ত সম্মান ও সম্ভ্রম করি। কিন্তু এটাও তো বলতেই হবে, এই পুরস্কার আমার কাছেও গৌরবের এবং আনন্দের।

আমি মনে করি, ব্যক্তি আমিকে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে না, দেওয়া হচ্ছে আমার কাজকে। গোটা জীবন ধরে করা কাজ, মানবাত্মার স্বেদ ও যন্ত্রণার মধ্য থেকে উঠে আসা কাজ, যার উদ্দেশ্য কোনো লাভ বা গৌরব অর্জন নয়। যার লক্ষ্য মানবাত্মার টুকরো-টাকরো কুড়িয়ে এমন কিছু সৃষ্টি করা, যা আগে ছিল না। ফলে এই পুরস্কার সম্পর্কে আমার

বলা হয়ে থাকে বক্তৃতার প্রথম বাক্যটি বলা সবচেয়ে কঠিন। সে ক্ষেত্রে এটাই বলার যে প্রথম বাক্যটি ইতিমধ্যেই আমি পেছনে ফেলে এলাম। কিন্তু আমার ধারণা, এর পরে যেসব বাক্য আমায় বলতে হবে, তৃতীয়, ষষ্ঠ, দশম এবং তারপর আরও একদম শেষ লাইন পর্যন্ত—সেগুলো তৈরি করাও খুব সহজ কাজ নয়। কারণ, আমি কবিতা নিয়ে কথা বলব। এ ব্যাপার

আজকের এই সন্ধ্যায় ঠিক কী বলা উচিত, সেই ভাবনা শুরু করতেই মনে হলো, সুইডিশ একাডেমি যে বিরাট সম্মান আমাকে অর্পণ করলেন, সে জন্য আমার কৃতজ্ঞতাটুকুই জানাব শুধু। তবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার কাজটিও সঠিকভাবে

উপন্যাস কখনোই চীনে একটি শিল্প হিসেবে বিবেচিত হয়নি। চীনা ঔপন্যাসিকেরাও কখনো নিজেদের শিল্পী হিসেবে দেখেননি। চীনা উপন্যাস ইতিহাস, পরিধি আর মানুষের হৃদয়ে এর অবস্থান—সবকিছুকেই বিবেচনা করতে হবে এই সত্য মাথায় রেখে।

আমি মনে করি রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির সমসাময়িক আলোচনায় মনোবিজ্ঞান কার্যত বিবেচনায় নেওয়া হয় না। অর্থনীতি, জনসংখ্যাগত পরিসংখ্যান, সাংবিধানিক সংগঠন এবং আরও অনেক কিছু যথাযথভাবে রাজনীতির আলোচনায় প্রাধান্য পায়। কোরীয় যুদ্ধ শুরুর সময় দক্ষিণ কোরীয় ও উত্তর কোরীয়দের সংখ্যা কত ছিল তা জানতে