জীবন অগাধ

হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনকে কেউ শিশুসাহিত্যিক বললে তিনি রেগে যেতেন। বড়দের জন্যও তো লিখেছেন, তাহলে কেন শুধু শুধু শিশুসাহিত্যিকের লেবেল এঁটে দেওয়া হবে তাঁর শরীরে—এই ছিল রাগের কারণ। দারিদ্র্য কিংবা অন্যদের অবহেলা, বিদ্রূপ কোনোভাবেই

ইয়াহিয়া খানের ঘোষণা যখন ভেসে এল রেডিও-মারফত, তখন তো গোটা দেশ বেরিয়ে পড়েছিল রাস্তায়। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ অন্য এক গল্প লেখা হচ্ছিল ঢাকার রাজপথে এবং একসময় তা ঢাকা ছাড়িয়ে প্রসারিত হয়েছিল পুরো বাংলায়।

১৯৬০ সাল। ‘অপুর সংসার’ মুক্তি পেয়েছে এক বছর হলো। সত্যজিতের প্রথম দুই ছবি ‘পথের পাঁচালী’ আর ‘অপরাজিত’ দর্শক মন জয় করতে পারেনি। মানুষ সিনেমা হলে যায়নি। কিন্তু ‘অপুর সংসার’ মুক্তি পেতেই হল ভেঙে পড়ল দর্শকে।

জীবনের সবচেয়ে কঠিন কথাগুলো সবচেয়ে সহজভাবে বলতে পারতেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে’, কথাটা ঠিক। কিন্তু কঠিন কথা যে সহজে বলা যায়, তার উদাহরণ দিতে হলে তো সুভাষ মুখোপাধ্যায়েই এসে থামতে হবে সবার আগে।

সৈয়দ আবদুল হাদীর মাছ ধরার নেশাটা ছিল খুবই জোরালো। এমনও দিন গেছে, যেদিন মাছ ধরতে বসে রেকর্ডিংয়ের কথা ভুলে গেছেন। মাছ ধরার মাচা থেকে তাঁকে তখন তুলে নিয়ে যাওয়া হতো রেকর্ডিং স্টুডিওতে।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন বাঙালিরা। সবার মনে তখন তরতাজা ক্ষত। এর ঠিক এক বছর পর ১৯৫৩ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকার সচিবালয়ে একটি সভা ডাকেন ডক্টর আবদুস সাদেক। তিনি তখন পূর্ববঙ্গ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালক।

মৃণাল সেনের ‘কলকাতা ৭১’ ছবিটি শুরু হয়েছিল কুড়ি বছরের এক ছেলেকে নিয়ে। মেট্রো সিনেমায় ছবিটি মুক্তি পেলে বিশাল দর্শকের ভিড় দেখা গেল। টিকিটের জন্য তখন লম্বা লাইন।

চলচ্চিত্রে চুম্বন নিয়ে বিতর্ক চলছিল তখন। সে সময়ের ভারতের ইনফরমেশন অ্যান্ড ব্রডকাস্টিং মিনিস্টার বসন্ত শাঠে এই বিতর্কের সূচনা করেছিলেন। সাংবাদিক গোপালকৃষ্ণ রায় এ নিয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরি করবেন বলে মনস্থির করলেন।

বরযাত্রী হয়ে এক বিয়েতে যাচ্ছিলেন নজরুল। ভবানীপুর থেকে বাগবাজার। বরের গাড়ির পর যে বাস দাঁড়িয়ে আছে, তাতেই সওয়ার হয়েছিলেন তিনি।কালোপাড়ের তাঁতের ধুতি, খদ্দরের পাঞ্জাবি আর রঙিন উড়নি তাঁর পোশাক। দূর থেকে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তকে দেখতে পেয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন নজরুল, ‘চলে এস।’

বাড়ি বদল করলেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। উঠলেন ব্রহ্মপুরের ভাড়াবাড়িতে। বিশাল দোতলা বাড়ি। ওপরতলা বন্ধ থাকত, নিচের তলায় ড্যারা গড়ে তুলল শ্যামলপরিবার। বাড়িটি ছিল খুব ভালো, কিন্তু সমস্যা ছিল একটা—বিশাল সাইজের একেকটা মশা সেখানে রাজত্ব করত। এবং তা একটা-দুটো নয়, অজস্র।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিলেন নির্মোহ এক মানুষ। তিনি সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতেন। দেবব্রত বিশ্বাসকে যখন হেয় করা হয়েছে নানাভাবে, তখনো হেমন্ত মুখোপাধ্যায় দেবব্রত বিশ্বাসকে নিয়ে তাঁর গর্বের কথা ভোলেননি।

গিরিডিতে সুনির্মল বসুর শৈশব কেটেছে। তাঁদের বাড়িতে যেসব মাসিক পত্রিকা আসত, তার সবই ছিল বড়দের জন্য। একদিন শ্রাবণ মাসের বৃষ্টির মধ্যে স্কুলের পথে রওনা দিয়েছেন সুনির্মল, এমন সময় তাঁর বাবা বালিশের নিচ থেকে চারখানা পত্রিকা বের করে সুনির্মল বসুর হাতে দিলেন।

এক দারুণ ঘটনা ঘটেছিল রবীন্দ্রনাথের ‘প্রাণ চায় চক্ষু না চায়...’ গানটি নিয়ে। ইএমআই কর্তৃপক্ষ চিন্তা করেছিল, রবীন্দ্রনাথের গান যদি বিলেতি অর্কেস্ট্রাসহ রেকর্ড করা যায়, তাহলে রবীন্দ্রসংগীতের জনপ্রিয়তা যেমন বাড়বে, তেমনি বাণিজ্যিক সফলতাও আসবে।

লক্ষ্মীপুরে ফেরদৌসী মজুমদারের বাপের বাড়ি। সেখানে যাওয়া হয়নি কোনো দিন। ফেরদৌসীর বাবা ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তাই বাড়ির নাম ‘ডিপটি বাড়ি’।১৯৯৭ সালে লক্ষ্মীপুরে থিয়েটারের ক্লাস নিতে গেছেন ফেরদৌসী মজুমদার। তখনই প্রথম বাপের ভিটা দর্শন হলো। বাড়িটি ছিল সোমপাড়া, গোপাইরবাগে।

প্রায় এক বছর পড়াশোনা করা হয়নি সলিল চৌধুরী ও তাঁর দাদার। বাড়িতে বসে ‘মুখ্যু’ হয়ে যাচ্ছিলেন। থাকতেন তখন হাতিখুলিতে। শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো তাঁদের দুই ভাইকে কলকাতার সুকিয়া স্ট্রিটে মেজ জ্যাঠামশাইয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কলকাতার স্কুলে ভর্তি করে বাবা চলে

ঘটনাটা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের। ১৯৬৭ সালের এপ্রিল মাস। পুরোনো ২০ সেলে যে ছাত্রবন্দীরা আছে, তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে দাবি তুলেছে, খিচুড়ি খাওয়াতে হবে। কিন্তু এত বন্দীকে খাওয়াতে গেলে যে পরিমাণ রসদ দরকার হয়, তা জোগাড় করা কঠিন বলে

১৯৪২ সালে যখন কুইট ইন্ডিয়া আন্দোলন শুরু হয়, তখন সেই আন্দোলনে ভিড়ে গিয়েছিলেন কলিম শরাফী। কলকাতায় তখন থাকতেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করল। জেলে বসে কোনো কাজ ছিল না। জেলে ছিলেন প্রণব গুহঠাকুরতা, তিনি রবীন্দ্রনাথের গান গাইতেন। কলিম শরাফীকে রবীন্দ্রনাথের গান, স্বদেশি গান শেখালেন। জেলে যেখানে কলিম ছিলেন