Ajker Patrika

কোয়ান্টাম কম্পিউটার

নওরোজ চৌধুরী
কোয়ান্টাম কম্পিউটার

বর্তমান সময়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তি উন্নয়নে বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। কারণ, কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে সুপার কম্পিউটারের থেকেও দ্রুতগতিতে তথ্য যাচাই ও গণনা করা সম্ভব। প্রায় অসম্ভব গাণিতিক সমস্যার সমাধান এক তুড়িতেই করে ফেলতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এ বছর এই প্রযুক্তির বেশ কিছু উন্নয়ন দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিষয়টি এখনো মূলধারায় আসেনি। তারপরও ২০২৩ সালে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের পেছনে এর আগের বছরের তুলনায় আরও বিনিয়োগ বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে সিলিকন ভ্যালিসহ বিশ্বজুড়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার নির্মাণের জন্য গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্টার্টআপ। কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করার প্রতিযোগিতায় রয়েছে গুগল, আইবিএম, মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্টরা।

২০২২ সালে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরীক্ষা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ফোর্ডের কোয়ান্টাম গবেষকেরা একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন।সেখানে জানানো হয়েছে, গবেষকেরা একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারিসামগ্রীর মডেল তৈরি করেছেন। এ ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলো সঠিকভাবে অনুকরণ করতে আরও শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করা হতে পারে। তা ছাড়া ফার্মাসিউটিক্যালস এবং সেমিকন্ডাক্টর গবেষণারও উন্নয়ন হবে এই প্রযুক্তির কল্যাণে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে কম্পিউটিংয়ের নতুন এক যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। এটি উন্নত মহাকাশযান থেকে শুরু করে খাদ্য ও পণ্য উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার কী
কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান লজিক বা যুক্তি অস্বীকার করেছে। কোয়ান্টামের জগতে পরমাণু প্রচলিত পদার্থবিদ্যার সূত্র মানে না। ক্ল্যাসিক্যাল কম্পিউটার যেমন কার্যগত একক হিসেবে বিট ব্যবহার করে, তেমনি কোয়ান্টাম কম্পিউটারে কাজে লাগে কিউবিট একক। বিট কেবল বাইনারি পজিশনেই থাকতে পারে, যেমন ১ অথবা ০। কিন্তু কিউবিট সুপার পজিশনেও বিরাজ করতে পারে। যেমন কিউবিটে ১ বা ০ অথবা ১ ও ০ একসঙ্গেও থাকতে পারে। এই সম্ভাব্য পজিশনকেই সুপার পজিশন বলে। এই অদ্ভুতুড়ে আচরণের কারণে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সুবিধা নেওয়ার কথা ভাবেন গবেষকেরা। কোয়ান্টাম থিওরির সুপার পজিশন, এন্টেঙ্গলমেন্ট ও ইন্টারফেরেন্স প্রভৃতি পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার দ্রুত ও নিখুঁত কাজ করতে সক্ষম হবে।

 যেসব সুবিধা মিলতে পারে
ক্ল্যাসিক্যাল কম্পিউটারে যে সমস্যার সমাধান পেতে লাখ লাখ বছর লাগতে পারে, সেটা হয়তো কোয়ান্টাম কম্পিউটারে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে সমাধান মিলবে!

অনেকেই তথ্যের নিরাপত্তায় এনক্রিপশনকে যথেষ্ট মনে করেন। কিন্তু ভার্চ্যুয়াল যে এনক্রিপশন ভাঙা সম্ভব নয়, তা তৈরি করা যাবে এই প্রযুক্তিতে। এতে ডেটা নিরাপত্তার পরিস্থিতি বদলে যাবে। এখনকার বেশির ভাগ এনক্রিপশন পদ্ধতি ভেঙে দিতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এর বদলে হ্যাক ঠেকানোর মতো বিকল্প ব্যবস্থা পাওয়া যাবে

মূলত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন টুল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে এই প্রযুক্তি। এটি প্রচলিত কম্পিউটারের জায়গা নেবে না। যেমন কোনো বিমানবন্দরের ফ্লাইট শিডিউল নিখুঁতভাবে নির্ণয় করার কাজ করা যাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে।

আর্মহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্যাথরিন ম্যাকগিওচের মতে, প্রচলিত কম্পিউটারের চেয়ে হাজার হাজার গুণ গতিসম্পন্ন কোয়ান্টাম কম্পিউটার। ভবিষ্যতে মেশিন বা যন্ত্রের যুগ আসছে। প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যন্ত্র থেকেও তৈরি হবে ডেটা। এসব তথ্যের নিখুঁত বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়ে। এতে বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না। কোয়ান্টাম টানেলিং নামের একটি পদ্ধতি এতে ব্যবহৃত হয়, যাতে বিদ্যুতের খরচ কমে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি হয়ে গেলে মেশিন লার্নিং সমস্যা সমাধানের জন্য সময় কমাতে সাহায্য করবে।

তথ্যসূত্র: এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ, টেক ওয়ার এশিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

এনবিআর বিলুপ্তির জেরে প্রায় অচল দেশের রাজস্ব কর্মকাণ্ড

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে যে প্রতিক্রিয়া জানাল যুক্তরাষ্ট্র

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত