Ajker Patrika

পাকিস্তানে প্রথম লাইন ও টিকিটবিহীন মেট্রো, চলবে সৌর বিদ্যুতে

অনলাইন ডেস্ক
জিপিএস, ডিজিটাল ম্যাপিং ও উন্নত সেন্সর প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি ভার্চুয়াল ট্র্যাকে চলে। ছবি: গালফ নিউজ
জিপিএস, ডিজিটাল ম্যাপিং ও উন্নত সেন্সর প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি ভার্চুয়াল ট্র্যাকে চলে। ছবি: গালফ নিউজ

পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে ট্র্যাকলেস (লাইনবিহীন), টিকিটবিহীন এবং সৌরবিদ্যুৎ চালিত আধুনিক মেট্রো সার্ভিস। লাহোরে শুরু হয়েছে সুপার অটোনোমাস রেল র‍্যাপিড ট্রানজিট (এসআরটি) সিস্টেমের পরীক্ষামূলক চলাচল।

এটিকে বলা হচ্ছে ‘হুইলের ওপর সাবওয়ে’—কারণ এটি সাবওয়ের মতো সেবা দিলেও চলাচল করে সাধারণ সড়কে। এসআরটি প্রযুক্তি মূলত ট্র্যাডিশনাল (প্রথাগত) ট্রেনের বিকল্প। এটি চলার জন্য কোনো লাইনের প্রয়োজন নেই। বরং জিপিএস, ডিজিটাল ম্যাপিং ও উন্নত সেন্সর প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি ভার্চুয়াল ট্র্যাকে চলে।

পুরোটাই ব্যাটারিচালিত ও বৈদ্যুতিক এই যানবাহন পরীক্ষামূলকভাবে লাহোর বিমানবন্দরের আশপাশে নির্দিষ্ট করিডোরে চালানো হচ্ছে। পরীক্ষামূলক এই যাত্রার সূচনা অনুষ্ঠানে পাকিস্তান ও চীনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চীন থেকেই এসেছে এই পরিবহন প্রযুক্তি। এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এই ধরনের উদ্যোগ।

পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিবহন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি কেবল একটি পরীক্ষামূলক ড্রাইভ নয়; এটি পাঞ্জাবের গণপরিবহনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের একটি পরীক্ষা।’

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ সম্প্রতি যে পাঁচ বছরের পরিবহন মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন দিয়েছেন, এই এসআরটি উদ্যোগ তারই অংশ। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, অটোমেটেড র‍্যাপিড ট্রান্সপোর্ট (এআরটি) সিস্টেম আগামী পাঁচ বছরে প্রদেশের ৩০টি শহরে চালু করা হবে।

মরিয়ম নওয়াজ বলেন, ‘এটি একটি সম্পূর্ণ সৌরচালিত, স্মার্ট ট্রানজিট সিস্টেম। আমরা শুধু অবকাঠামো গড়ে তুলছি না, আমরা গড়ে তুলছি চলাচলের ন্যায্যতা।’

এসআরটি ও আরটি সিস্টেমে ব্যবহৃত গাড়িগুলো সাধারণ ট্রেন বা বাসের মতো নয়। এটি মাল্টি-কোচ ইলেকট্রিক বাস, যা প্রতি ফ্লিটে ২৫০ থেকে ৩০০ যাত্রী বহনে সক্ষম। যেহেতু এতে কোনো লাইন বা উঁচু করিডোর প্রয়োজন হয় না, তাই এটি তুলনামূলকভাবে দ্রুত ও কম খরচে চালু করা যায়, এমনকি ছোট শহরগুলোতেও।

প্রথম ধাপে লাহোর, ফয়সালাবাদ ও গুজরানওয়ালায় এই প্রযুক্তি চালু করা হবে। এরপর ধাপে ধাপে চার বছরের মধ্যে মোট ৩০টি শহরে বিস্তৃত হবে এই পরিবহন ব্যবস্থা। প্রত্যেক ধাপে ১০টি শহর অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এই উদ্যোগ পরিবেশ সুরক্ষা ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার দিকেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রতিটি ট্র্যাকলেস মেট্রো ১০০টি ব্যক্তিগত গাড়ির বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে, ফলে দূষণ, শব্দ এবং যানজট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।

মরিয়ম নওয়াজ বলেন, ‘প্রত্যেকটি শহরের আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার অধিকার থাকা উচিত। এই প্রকল্প নগর বৈষম্য কমাবে এবং কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করবে।’

বর্তমানে লাহোরে চালানো পরীক্ষামূলক চলাচল চলবে আরও কয়েক সপ্তাহ। এই সময়ে প্রকৌশলীরা পারফরম্যান্স ডেটা ও যাত্রীদের মতামত সংগ্রহ করবেন। সবকিছু ঠিকঠাক চললে ২০২৬ সালেই লাহোরে চালু হতে পারে পূর্ণাঙ্গ ট্র্যাকলেস মেট্রো সেবা। পরবর্তীতে করাচি, ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিসহ অন্যান্য বড় শহরেও এটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এসআরটি একটি ভার্চুয়াল রেল সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত, যা ট্রেনের মতন নির্ভুলভাবে সাধারণ রাস্তায় চলাচল করতে পারে। এতে করে যানজটপূর্ণ এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতায় ভোগা শহরগুলোর জন্য এটি হতে পারে একটি যুগান্তকারী সমাধান।

তথ্যসূত্র: গালফ নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত