Ajker Patrika

ডাকাতি ঠেকাতে তায়কোয়ান্দো

নাজিম আল শমষের
ডাকাতি ঠেকাতে তায়কোয়ান্দো

দিনাজপুর সদরের দাইনুর গ্রাম, সময়টা নব্বইয়ের দশক। ভারতের সীমান্ত থেকে যখন-তখন গ্রামে ঢুকে পড়ে ডাকাতের দল। বাধ্য হয়ে রাতে গ্রামে বসাতে হয় পাহারা। এসএসসি পরীক্ষার্থী জাকির হোসেন তখন উপায় খুঁজছেন কীভাবে ডাকাত তাড়ানো যায়।

এক দিন দুষ্টুমি করতে গিয়েই বন্ধু রেঞ্চুর গায়ে চড় মারতে গিয়েছিলেন জাকির। অদ্ভুতভাবে পা দিয়ে সেই চড় ঠেকিয়ে দেন রেঞ্চু। বন্ধুর নতুন এই আত্মরক্ষার কৌশল দেখে জাকির সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, যেভাবে হোক তাঁকেও শিখতে হবে এটি। অংকে ভালো হওয়ায় ফন্দি করে বন্ধুকে শেখাতে লাগলেন গণিতের মারপ্যাঁচ। আর বিনিময়ে বন্ধুর কাছ থেকে শিখে নিলেন আত্মরক্ষার মৌলিক কৌশলগুলো। পরে জানলেন এ কৌশলের নামই তায়কোয়ান্দো।

এরপর কেটে গেছে প্রায় দুই দশকের বেশি সময়। নিজ শহর দিনাজপুরে হাইস্কুলে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে থিতু হয়েছেন জাকির। তায়কোয়ান্দোর প্রতি ভালোবাসা থেকে সময় পেলেই চালিয়ে যান টুকটাক চর্চা। জ্ঞান যদিও তখন মৌলিক কৌশল পর্যন্ত আটকে। ২০০১ সালে ফেডারেশন থেকে অনুমতি নিয়ে দিনাজপুরে তায়কোয়ান্দো শেখানোর ক্লাব খুললেন কোচ মো. এরশাদ আলী। ২০০৯ সালে ৪৫ বছর বয়সে নতুন করে সেই ক্লাবে তায়কোয়ান্দো শেখার এক বছরে পেয়ে গেলেন ব্ল্যাক বেল্টও। ২০১১ সালে জাতীয় তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জিতলেন ব্রোঞ্জ পদকও। সাফল্য এলেও বাধা এল নিজের পরিবার আর পেশাগত দিক থেকে। মধ্যবয়স্ক একজন লোকের তায়কোয়ান্ডো চর্চাকে নিজ শহরের লোকজন বলতে শুরু করল ‘বুড়ো বয়সের ভীমরতি’! এত বাধায় অভিমান থেকে ভালোবাসার তায়কোয়ান্দো থেকে সরেও দাঁড়ালেন জাকির। টানা সাত বছর তায়কোয়ান্দো থেকে দূরে থাকায় ওজন এক লাফে ৬৬ থেকে বেড়ে দাঁড়াল ৮৭ কেজিতে। দেহে বাসা বাধলো কঠিন এক অসুখ!

জাকির হোসেনকে সুস্থ করে তুলতে অতঃপর তায়কোয়ান্দো চর্চার অধিকার ফিরিয়ে দিল পরিবার। ২০১৯ থেকে আবার ভালোবাসার জায়গায় ফিরলেন জাকির। দুই বছর পর বাংলাদেশ গেমসে অংশ নিয়ে গড়লেন ইতিহাস। ৩২-ঊর্ধ্ব পুরুষদের পুমস ইভেন্টে অংশ নিয়ে এবারও জিতেছেন ব্রোঞ্জ পদক।

৫৬ বছর বয়সে পদক জিতে প্রমাণ করেছেন, বয়স নয়; ভালোবাসা আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে যেকোনো বয়সেই কঠিনেরে জয় করা সম্ভব!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত