Ajker Patrika

অচেনা ফুটসালে বাংলাদেশের পা

আনোয়ার সোহাগ, ঢাকা
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৫০
কদিন আগে ফুটসাল খেলোয়াড়দের ট্রায়াল নিয়েছে বাফুফে। ছবি: বাফুফে
কদিন আগে ফুটসাল খেলোয়াড়দের ট্রায়াল নিয়েছে বাফুফে। ছবি: বাফুফে

ফুটবলের কাছাকাছি হলেও ফুটসাল খেলার নিয়ম ও ধরন ভিন্ন । বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে ফুটসালের চর্চা থাকলেও আনুষ্ঠানিক যাত্রা বাফুফে শুরু করল মাত্রই । এ উপলক্ষে গতকাল বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনও করে তারা। খেলাটির আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন আনোয়ার সোহাগ

সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসেছিলেন প্রশ্নের উত্তর দিতে। বাংলাদেশ ফুটসাল কোচ সাঈদ খোদারাহমি উল্টো নিজেই প্রশ্ন শুরু করলেন। বাংলাদেশ কতগুলো ফুটসাল স্টেডিয়াম আছে, কয়জন খেলোয়াড় আছেন, কয়জন কোচ-রেফারি আছে?

কোনো প্রশ্নেরই উত্তর ছিল না। তখন খোদারাহমি বলে ওঠেন, বাংলাদেশে ফুটসালের জন্ম হচ্ছে আজ (গতকাল)। কথাটা একেবারে যে ভুল বলেছেন, তা অবশ্য নয়। তাঁর কাঁধে চড়ে ফুটসালের যুগে পা রাখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ফুটসালকে সাধারণত ফুটবলের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ বলা হয়। যদিও নিয়মসহ খেলার ধরনে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ফুটবলের মতো ফুটসালও ফিফার অধীনে একটা খেলা। আনুষ্ঠানিকভাবে খেলাটির সঙ্গে নিজেদের পরিচয় হয়নি বাংলাদেশের। এএফসির ডাকে সাড়া দিয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে।

দেশে ফুটসালকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত কোনো অবকাঠামোই গড়ে ওঠেনি। নেই কোনো স্টেডিয়াম, কোর্ট বা কোনো কিছু। বাফুফেতে ফুটসালের কমিটি আগেও ছিল, কিন্তু দৃশ্যমান কোনো কাজ করতে পারেনি। সেই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠছে এবার। শূন্য থেকে শুরু করে ফুটসালেও ছাপ রাখতে চায় বাফুফে। ৩ মাসের চুক্তিতে ইরানি কোচকে আনা সে কারণেই।

ফুটসাল কমিটির চেয়ারম্যান ইমরানুর রহমান গতকাল বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের যে অবকাঠামো নেই, এটা সত্যি। তবে আমাদের স্বপ্ন আছে সেখানে পৌঁছানোর। আজ মাত্র একটি বেবি স্টেপ শুরু হচ্ছে। তাঁর (খোদারাহমি) মধ্যে ফুটসাল নিয়ে আবেগ ও নিবেদন আছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, তিনিই সঠিক ব্যক্তি। আমরা চেষ্টা করব ভালো কিছু করার।’

সঠিক অবকাঠামো ছাড়া যে উন্নতি সম্ভব নয়, তা ভালো করেই জানেন খোদারাহমি, ‘স্টেডিয়াম ছাড়া অনুশীলনই করা যায় না। কিন্তু এটা খুব কঠিন, আবার সহজও। যদি আপনি বারবার বলেন, অত্যন্ত কঠিন, অসম্ভব, তখন সেটা হবে না। কিন্তু যদি সরকার সাহায্য করে, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সাহায্য করে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল ও হাইস্কুলে সহায়তা করে, তাহলে সম্ভব।’

এশিয়ান কাপ বাছাই সামনে রেখে ট্রায়াল থেকে ৬৩০ খেলোয়াড়ের মধ্যে ৫২ খেলোয়াড় বাছাই করেছে বাফুফে। আর একজন রয়েছেন প্রবাসী। সেই সংখ্যাটা টুর্নামেন্ট শুরুর ১০ দিন আগে ১৪তে নামিয়ে আনবেন খোদারাহমি। তবে তিনি রয়েছেন তারকার খোঁজে। বললেন, ‘হতে পারে, বাংলাদেশের কোথাও তারকা খেলোয়াড় আছে। সেই খেলোয়াড়কে খুঁজতে হবে। কারণ, ভালো ফলের জন্য তারকা খেলোয়াড় থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানের খেলোয়াড় দিয়ে হয় না। কিন্তু প্রতিভাবান খেলোয়াড় কীভাবে খুঁজে বের করবেন? আপনাকে একটি শক্তিশালী লিগ গড়ে তুলতে হবে।’

ছেলেদের পাশাপাশি নারী ফুটসাল শুরু করতে চান তাবিথ আউয়াল। বাফুফে সভাপতি বললেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য খুবই পরিষ্কার। ফুটসালে লিগ হবে, এখন ছেলেদের নিয়ে নেমেছি, আমরা মেয়েদেরও অন্তর্ভুক্ত করব। পরে যখন নারী টুর্নামেন্টে আমরা সুযোগ পাব, সেটাকে কেন্দ্র করে আমরা নারী ফুটসালের দিকে ঝুঁকব। আমাদের লক্ষ্য একদমই পরিষ্কার এবং খুবই লম্বা।’

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে শক্তিশালী গ্রুপেই পড়েছে বাংলাদেশ। ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া পরিচিত মুখ হলেও বাংলাদেশ র‍্যাঙ্কিংয়ে নামই তুলতে পারেনি। খোদারাহমির প্রতিশ্রুতি, ‘আমি আমার শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করব। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে সবাই যেন ফুটসাল নিয়ে ভাবতে শুরু করে। সবাই আগ্রহী হয়।’

উদাহরণ টেনে খোদারাহমি ইরানের নিজ শহরের কথা বলেছেন বারবার। যেখানে রয়েছে হাজারের বেশি স্টেডিয়াম। ইরানের মতো না হোক, তবে তাঁর হাত ধরে ফুটসালে একটা ধাপে যেতে চায় বাংলাদেশ।

দল ও খেলোয়াড় সংখ্যা

প্রতি দলে সর্বোচ্চ ১৪ জন খেলোয়াড় রাখা যাবে। মাঠে খেলতে পারবেন ৫ জন (গোলকিপারসহ)। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলোয়াড় বদল করা যাবে। নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই।

খেলার সময়

দুই অর্ধে ২০ মিনিট করে মোট ৪০ মিনিট খেলা হবে। মাঝখানে ১০ মিনিটের বিরতি। প্রতি অর্ধে প্রতি দল একবার করে টাইমআউট (১ মিনিট) নিতে পারে। ম্যাচ ড্র হলে দুই অর্ধে ৫ মিনিট করে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে। তখনো ফল নির্ধারিত না হলে শুটআউটে নির্ধারিত হবে।

মাঠের পরিধি

ফুটসাল সাধারণত ইনডোর কোর্ট ও কাঠের মেঝেতে খেলা হয়। আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য মাঠের দৈর্ঘ্য ৩৮-৪২ মিটার ও প্রস্থ ২০-২৫ মিটার থাকতে হয়। গোলপোস্টের উচ্চতা থাকবে ২ মিটার, প্রস্থ ৩ মিটার।

ফাউল ও পেনাল্টি

প্রতি অর্ধে একটি দল সর্বোচ্চ ৫টি ফাউল করতে পারবে। ষষ্ঠ ফাউলের সময় প্রতিপক্ষ দল গোলপোস্টের ১০ মিটার দূর থেকে ফ্রি-কিক নিতে পারবে। ফ্রি-কিকের সময় অন্য দলের ফুটবলারদের ৫ মিটার দূরে থাকতে হবে। গোললাইন থেকে ৬ মিটার দূরত্বে পেনাল্টি কিক নেওয়া যাবে।

কার্ড

ফুটবলের মতো ফুটসালেও রয়েছে হলুদ কার্ড ও লাল কার্ড। কোনো দলের খেলোয়াড় লাল কার্ড পেলে মাঠ থেকে চলে যেতে হবে। অন্তত ২ মিনিট পর্যন্ত সেই দলকে ৪ জন নিয়ে খেলতে হবে। তবে এর মধ্যে প্রতিপক্ষ দল গোল করলে আবার ৫ জন নিয়ে খেলতে পারবে তারা।

গোলকিপারের নিয়ম

কোনো গোলকিপার ৪ সেকেন্ডের বেশি বল হাতে রাখতে পারবেন না।

রেফারি

ফুটসালে সাইডলাইনে টাইমকিপারের পাশে থেকে খেলা পরিচালনা করেন রেফারি। তাঁর বিপরীত পাশে অবস্থান করেন সহকারী রেফারি। তৃতীয় রেফারি বেঞ্চের খেলোয়াড়দের আচরণ দেখভাল করেন। ম্যাচের সময়, ফাউলের গণনার জন্য একজন টাইমকিপার থাকেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত