Ajker Patrika

গুলিস্তানের জার্সি ব্যবসায়ীদেরও ‘সহায়’ মেসি

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২১, ১০: ১৮
গুলিস্তানের জার্সি ব্যবসায়ীদেরও ‘সহায়’ মেসি

১০ আগস্ট বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে আনুষ্ঠানিক নাম লিখিয়েছেন লিওনেল মেসি। পরদিন প্যারিসে মাত্র ৩০ মিনিটে বিক্রি হয়ে যায় পিএসজিতে মেসির নতুন ‘৩০ নম্বর’ জার্সি।

মেসিকে নিয়ে মাতামাতির ঢেউটা আছড়ে পড়েছে ফ্রান্স থেকে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূরের বাংলাদেশেও। মেসিকে নিয়ে উন্মাদনার এ ঢেউটা সহায়তা করছে বাংলাদেশের ক্রীড়াসামগ্রী ব্যবসায়ীদের লোকসান পুষিয়ে নিতে।

একাধিক লকডাউনে গত বছরের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত মোট চার মাস বন্ধ ছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামসংলগ্ন খেলাধুলার সামগ্রী বিক্রি করা দোকানগুলো। ক্রিকেট ব্যাট, ফুটবল, খেলার জার্সি বিক্রি করে যে দোকানগুলোর একসময় মাসিক বিক্রি ছিল ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা, লকডাউনের কবলে পড়ে সেটি নেমে এসেছে ২-৩ লাখ টাকায়। দোকানভাড়া, কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করে এখন ব্যবসায় টিকে থাকাই দায় এসব প্রতিষ্ঠানের। লকডাউনের ধাক্কা সামলাতে না পেরে ছোট আকারের কিছু দোকান এর মধ্যে বন্ধও হয়ে গেছে। শুধু গুলিস্তানই নয়, বাংলাদেশজুড়েই দৃশ্যটা এমন বলে জানালেন বাংলাদেশের অন্যতম পুরোনো ক্রীড়াসামগ্রী বিক্রির দোকান বাংলাদেশ স্পোর্টসের স্বত্বাধিকারী মো. শামীম।

বাংলাদেশে ক্রীড়াসামগ্রীর দোকান সাধারণত দুই ধরনের। এক ধরনের দোকানগুলোয় বিক্রি হয়ে জার্সিসহ সাধারণ খেলাধুলার জিনিস। আরেক শ্রেণির দোকানে বিক্রি হয় ব্যায়ামের সরঞ্জামাদি। লকডাউনের সময় মানুষের স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ায় অনলাইনে মোটামুটি ভালোই বিক্রিবাট্টা হয়েছে ব্যায়ামের জিনিসপত্রের। বিপাকে পড়েছেন যাঁরা অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে পরিচিত নন তাঁরা। প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে লকডাউনের সময়টাতে দোকান বন্ধ রেখেছিলেন এই ব্যবসায়ীরা। তাঁরা কর্মীদের বেতন পরিশোধে হিমশিম খেয়েছেন। ক্রীড়াসামগ্রী বিক্রেতা ব্যবসায়ীদের নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে গড়ে উঠেছে ‘বাংলাদেশ স্পোর্টস গুডস মার্চেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’।

এককভাবে সরকারের সঙ্গে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে দর-কষাকষি সম্ভব নয় বলে এবার এককাট্টা হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সংগঠনটির সভাপতি মো. শামীম জানালেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত বছরে ৫০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকার ক্রীড়া পণ্যের ব্যবসা করেছেন তাঁরা। গত দুই বছরে সেটা নেমে এসেছে ৫০ শতাংশে। ১০ হাজার মানুষের এই শিল্প এখন হুমকির মুখেও বলে জানালেন শামীম।

এই ব্যবসার সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায়। ‘স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রচুর জার্সি, ফুটবল, ব্যাট বিক্রি হতো। দুই বছর ধরে সেটা বন্ধ। আরেকটা লকডাউন হলে হয়তো আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না’—বলছিলেন কোয়ালিটি স্পোর্টসের বিপণনকর্মী নাজিমউদ্দিন।

ক্রিকেট ব্যাট বাদে জার্সি ও অধিকাংশ ক্রীড়া পণ্য আসে চীন ও থাইল্যান্ড থেকে। ব্যাটের আমদানি হয় পাশের দেশ ভারত কিংবা পাকিস্তান থেকেও। বড় বড় ক্লাবের উন্নতমানের রেপ্লিকা জার্সি দেশে তৈরি হলেও সেগুলো এই দেশের দোকান পর্যন্ত পৌঁছায় না। স্থানীয়ভাবে যেসব জার্সি তৈরি হয় তার অধিকাংশই বিক্রি হয় ফুটপাতে। ১১ জুলাই কোপার ফাইনালে পুলিশের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেও ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা ভালোই ব্যবসা করেছেন আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের জার্সি বিক্রি করে।

সরেজমিনে কাল একাধিক দোকান ঘুরে দেখা গেল, এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে জার্সি ও ফুটবল। মেসির পিএসজিতে যাওয়ার পর তাঁর ‘৩০ নম্বর’ জার্সি ব্যবসায়ীদের কাছে রীতিমতো ‘হট কেক’! এক সপ্তাহ আগেই পিএসজির বেশির ভাগ জার্সি বিক্রি হয়ে গেছে। বিশ্বকাপ বা বড় সিরিজ-টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ সাফল্য পেলে বাড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি বিক্রি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ আর কোপা আমেরিকার ফাইনালের সময় লকডাউন থাকায় রীতিমতো হাহাকার করেছেন ব্যবসায়ীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত