Ajker Patrika

লড়াইটা এখনো শেষ হয়নি বাংলাদেশের

নিজস্ব প্রতিবেদক, বেঙ্গালুরু থেকে 
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৩, ২১: ৫২
লড়াইটা এখনো শেষ হয়নি বাংলাদেশের

হোটেল রেনেসাঁর বাইরে দাঁড়ানো তারিক কাজী ও বাংলাদেশ দলের চিকিৎসক সালেহ উদ্দিন মাহমুদ। কথা বলার জন্য অনুরোধ করতেই যেন পালিয়ে বাঁচলেন তারিক। শুধু বলে গেলেন, ‘জানেনই তো, সময় মানেই টাকা (হাসি) !...’

বেঙ্গালুরুতে আজকের দিনটি বাংলাদেশ দলের জন্য হতে পারত ব্যস্তময় দিন। কুয়েতকে হারিয়ে ইতিহাস গড়তে পারলে আজ হয়তো টিম মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকতেন ফুটবলাররা, কোচ হাভিয়ের কাবরেরা সাজাতেন ভারতের বিপক্ষে ফাইনালের রণ কৌশল। কিন্তু ১০৫ মিনিটের গোলে কুয়েতের কাছে হেরে শেষ চারেই থেমেছে বাংলাদেশের সাফ শিরোপার স্বপ্ন। আগামীকাল ভোরে বিমানে ওঠার আগে পুরো দলকে দেওয়া হয়েছিল ‘যেখানে খুশি, সেখানে ঘুরতে’ যাওয়ার লাইসেন্স। গত ৫ জুন শুরু হয়েছিল সাফকে ঘিরে বাংলাদেশের প্রস্তুতি। কম্বোডিয়া হয়ে বেঙ্গালুরুতে সাফ খেলে ২৮ দিন পর এক খণ্ড অবসর বাংলাদেশের ফুটবলারদের। 

ছুটি পেয়ে কেউ ছুটলেন বেঙ্গালুরু শহর ঘুরতে, কেউ গেলেন প্রিয়জনের জন্য কেনাকাটা করতে। কোচ হাভিয়ের কাবরেরা গেছেন টিপু সুলতানের ঐতিহাসিক দরবার দেখতে। আবার কোনো কোনো ফুটবলার রইলেন হোটেলেই। নিজের মতো করে করলেন জিম সেশন। যেমন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো নিজের মতো করে করেছেন জিম। জিম করে যখন লবিতে এলেন তখন লাল চোখ দেখে দেখে বোঝা গেল, ১০৫ মিনিটে গোল খাওয়ার যন্ত্রণায় রাতে ঠিকভাবে ঘুম হয়নি তাঁর।

গতকাল কুয়েতের শক্তিশালী আক্রমণভাগকে প্রায় একাই ঠেকিয়ে রেখেছিলেন জিকো। অসংখ্য সুযোগ হারানোর পর কুয়েত একবারই হারাতে পারল জিকোকে, তাতেই পাল্টে গেল ম্যাচের ফল। ২০০৫ সালের পর আরেকটি ফাইনালের এক ম্যাচ দূর থেকে বাংলাদেশের বিদায়। 

সেমিফাইনাল থেকে বিদায় ঘটলেও বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ দলকেই দেখেছেন লাল-সবুজের ফুটবল সমর্থকেরা। যে দলটা আগের সাফগুলোতে গোলের হাঁসফাঁস করে মরেছে, সেই দল চার ম্যাচে করেছে ৬ গোল। কাউন্টার অ্যাটাক-নির্ভর ফুটবলের ধারণা থেকে বের হয়ে বিল্ড আপ বা বল পায়ে খেলে বাংলাদেশের ফুটবলাররা দিয়েছেন নিজেদের পাল্টে ফেলার নমুনা। এই সাফে দর্শকেরা যেমন শেখ মোরসালিন আর রাকিব হোসেনের ঝলক যেমন দেখেছেন, তেমনি দেখেছেন ‘নতুন’ এক বাংলাদেশকেও। যেই বাংলাদেশ বলের দখলে গতিময়, একই সঙ্গে চোখের জন্য প্রশান্তিদায়ক। 

বেঙ্গালুরু সাফে বাংলাদেশ দলকে ঘিরে বহুল চর্চিত বিষয়গুলোর একটি ছিল ‘বিল্ড আপ’ ফুটবল। গতকাল যেমন কুয়েত ম্যাচে গোল কিকে জিকো নিজে তেমন শটই নেননি। এক টাচে বল দিয়েছেন তপু বর্মণকে। তপুর পা হয়ে বল কখনো বিশ্বনাথ ঘোষ আবার কখনো মাঝমাঠ থেকে বল গেছে আক্রমণে রাকিব-মোরসালিনের পায়ে। একদম নিচ থেকে আক্রমণে যাওয়ার ধারণা নিজেদের মধ্যে কত ধারণ করতে পারল বাংলাদেশ দল সেই সম্পর্কে বলেছেন লাল-সবুজ ডিফেন্ডার রহমত মিয়া। 

রহমত মিয়া বলেছেন, ‘গত মার্চে সৌদি আরব সফর থেকেই কিন্তু আমরা একটা থিম (ধারণা) নিয়ে কাজ করছিলাম। আমরা পাসিং ফুটবল নিয়ে কাজ করা শুরু করি। তখন থেকেই চেষ্টা ছিল সেটাকে কীভাবে আরও ভালো করা যায়। আমাদের কিন্তু আগে সক্ষমতা কম ছিল। সৌদি ক্যাম্পে আমাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল যে কীভাবে সাফে এই পাসিং ফুটবলকে কাজে লাগানো যায়। এটা এক-দুই দিন কিংবা এক-দুই মাসে হয়নি। এই পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল আরও সাত-আট মাস আগে থেকে।’ 

প্রতিপক্ষ বুঝে সাফে একেক সময়ে একেক কৌশলে খেলিয়েছে বাংলাদেশ। কম্বোডিয়া সফরে সেখানকার স্থানীয় দল তিফি আর্মির ম্যাচটাতে ভালোভাবে ফুটবলারদের সক্ষমতা বাজিয়ে দেখেছেন কাবরেরা, করেছেন নিজের পরিকল্পনার ‘ফাইন টিউনিং’। কুয়েত ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এই পরিকল্পনার কথাই খানিকটা রেগে গিয়ে বলেছিলেন কাবরেরা। প্রীতি ম্যাচে খোঁড়ান বাংলাদেশ কেন টুর্নামেন্টে এসে ভালো খেলে সেই প্রশ্নের জবাবে বেশ কড়াভাবেই স্প্যানিশ কোচ বলেছিলেন, ‘টুর্নামেন্টে আমরা এ কারণেই ভালো খেলি যে কারণ আমরা প্রীতি ম্যাচে পরিশ্রম করি। কোনো কিছুই অল্প সময়ে হয়ে যায় না, যা হচ্ছে সব দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফল।’ 

কাবরেরার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফল কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে বা হবে সেটা বোঝা যাবে আগামী অক্টোবরে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে। সাফে ফাইনালে খেলতে না পারার হতাশা থাকলেও দলের লড়াকু মানসিকতা আশা জাগাচ্ছে ডিফেন্ডার তপু বর্মণকে। সাফেই বাংলাদেশ থামছে না সেটাও মনে করিয়ে দিতে চাইলেন সেই সেন্টার ডিফেন্ডার, ‘বিশ্বকাপ বাছাইয়ে যদি আমরা আরও ভালো খেলি তাহলে সেটা আরও ইতিবাচক হবে দেশের জন্য। আমাদের যে লক্ষ্য সেটা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। যদি আমরা ভালো খেলা উপহার দিতে পারি, একটা ট্রফি উপহার দিতে পারি সেটা দেশের ফুটবলকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত