Ajker Patrika

জিম্বাবুয়ের সোনালি ক্রিকেট এখন শুধুই স্মৃতি

ভানু গোপাল রায়, ঢাকা
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯: ৩৮
জিম্বাবুয়ের সোনালি ক্রিকেট এখন শুধুই স্মৃতি

উগান্ডার ইতিহাসের দিনেই যেন ক্ষতটা আরও বেড়েছে জিম্বাবুয়ের। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে না পারার ক্ষত। নব্বই দশকের অন্যতম সেরা দলটি যেন এখন ক্রিকেটের মানচিত্র থেকে সরে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে।

সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা কম হওয়ায় জিম্বাবুয়ের সুযোগ না পাওয়ার ঘটনাকে কোনোভাবে মেনে নেওয়া গেলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে বিষয়টা একদম ভিন্ন। অবশ্য দুবারই তাদের হৃদয় ভেঙেছে বাছাইপর্বের সাঁকো উতরাতে না পারায়। শুধু তারা নয়, সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপে সুযোগ পায়নি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজও। 

২০ দল নিয়ে আগামী বছর সংক্ষিপ্ত সংস্করণের বিশ্বকাপটি হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। কিন্তু ২০ দলের মধ্যেও নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেননি সিকান্দার রাজারা। বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর তাই বুঝতে পারছেন না দেশে ফিরলে কী ঘটতে পারে। আফ্রিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে কেনিয়াকে ১১০ রানে হারানোর পর জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক রাজা বলেছেন, ‘আমি জানি না দেশে ফিরলে তখন কী ঘটতে পারে।’ অধিনায়ক যেমন বুঝতে পারছেন না কী ঘটবে, তেমনি যেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটও অনিশ্চয়তার মধ্যে। অনেকটা আফ্রিকা মহাদেশের আরেক দল কেনিয়ার মতো তাদের অবস্থা। 

কেনিয়ার মতো জিম্বাবুয়েরও একই অবস্থা হতে পারে, এমনটা অবশ্য কয়েক বছর আগেই জানিয়েছিলেন দলটির সাবেক অধিনায়ক অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল। ২০১৪ সালে এক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি জানান, এভাবে চলতে থাকলে বছর দুয়েকের মধ্যে কেনিয়ার অবস্থা হতে পারে জিম্বাবুয়ের।সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়ার পর এভাবেই হুডিতে মুখ ঢেকেছিলেন সিকান্দার রাজা

২০১৯ সালে ক্যাম্পবেলের কথাই যেন অনেকটা সত্যি হলো। সে বছর জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড নিষেধাজ্ঞা পায় আইসিসি থেকে। বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ থাকায় তাদের নিষেধাজ্ঞা দেয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পরে অবশ্য সেই নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি মেলে।

আইসিসির কাছ থেকে মুক্তি পেলেও নব্বই দশকের সেই সোনালি সময় অবশ্য আর ফিরে পায়নি জিম্বাবুয়ে। ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত স্মরণীয় সময় কাটিয়েছে দলটি। বড় বড় দলকে হারানোর শক্তি পেয়েছিল দুই ফ্লাওয়ার ভাই অ্যান্ডি ও গ্রান্ট, অলরাউন্ডার হিথ স্ট্রিক, পেসার হেনরি ওলোঙ্গাদের মতো ক্রিকেটারদের সৌজন্যে। কিন্তু তাঁদের শূন্যস্থান পূরণের মতো খেলোয়াড় এখন নেই জিম্বাবুয়ে দলে। আবার যে কজন দায়িত্ব নিতে পারতেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে জাতীয় দল বাদ দিয়ে কাউন্টি ক্রিকেটকে বেছে নেন। এই তালিকায় গ্যারি ব্যালান্স, ব্রেন্ডন টেলর, কাইল জার্ভিস ও গ্রায়েম ক্রেমাররা ছিলেন অন্যতম। 

জিম্বাবুয়ে দল ছেড়ে অন্যত্র যাওয়াটা অবশ্য ক্রিকেটারদের দোষের কিছু ছিল না। কেননা জাতীয় দলের হয়ে খেলে আর্থিক চাহিদা পূরণ হচ্ছিল না। আর্থিকভাবে জিম্বাবুয়ে এতটাই দুর্দশাগ্রস্ত দল যে তার প্রমাণ পাওয়া যায় রায়ান বার্লের এক পোস্টেই। ২০২১ সালে সামাজিক মাধ্যমে জুতার তলা খুলে যাওয়ার পর সেটায় আঠা লাগানোর ছবি পোস্ট করেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটার। এটা দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, এক জোড়া নতুন জুতা কেনার সামর্থ্যও তাঁদের নেই।

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের অধঃপতনের শুরুটা অবশ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। দেশটির স্বাধীনতার নায়ক ক্ষমতার লোভে পরে স্বৈরশাসক বনে যান। তাঁর শাসনামলেই ২০০৩ সালে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে বর্ণবাদের বীজ বপন করা হয়। যে বীজের কারণে ২০০৩ বিশ্বকাপের পর সোনালি প্রজন্মের দলটি ধ্বংস হয়ে যায়। প্রথম কোপটা পড়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও ওলোঙ্গার ওপর। মুগাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ কালো আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামায় দলে দুজনের পথ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এরপর অধিনায়ক হিথ স্ট্রিকসহ অন্যান্য খেলোয়াড়ের ওপর শাস্তির খড়্গ নেমে আসে। সে সময়ই শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটারদের বাদ দিয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে দল সাজায় বোর্ড। নতুন অধিনায়ক তাতেন্দা তাইবুর দলে একমাত্র শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটার ছিলেন ব্রেন্ডন টেলর। সে সময় মুগাবে শুধু বোর্ডের ওপরেই নয়, খেলোয়াড়দের নিজস্ব জমির ওপরও হস্তক্ষেপ করেন। অনেক ক্রিকেটারের জমি সরকারিভাবে কেড়ে নেন তিনি। তাঁর দুর্নীতি ও স্বৈরশাসনের কবলে একসময়ের সমৃদ্ধিশালী দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয়েছিল। ক্রিকেট বোর্ডও এর বাইরে ছিল না। 

আর্থিক অবস্থার মতো জিম্বাবুয়ে দলের পারফরম্যান্স এখন নিবু নিবু। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মাঝে মাঝে জ্বলে উঠে নিভে যায় তারা। টানা দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া তারই প্রমাণ। তাদের মতো এমন করুণ অবস্থায় আর কোনো টেস্ট খেলুড়ে দল পড়েনি কখনো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত