পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে নিষেধাজ্ঞা দিল পিসিবি, কাহিনি কী

ইংল্যান্ডে সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নস অব লিজেন্ডস (ডব্লুসিএল) টুর্নামেন্টটা শেষ হয়েছে গতকাল। এজবাস্টনে ফাইনালে পাকিস্তানকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইনাল শেষের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই পাকিস্তানকে দুঃসংবাদ শোনাল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

চ্যাম্পিয়নশিপে ভবিষ্যতে পাকিস্তান দলের অংশগ্রহণের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আজ আরোপ করেছে পিসিবি। এক বিবৃতিতে বোর্ড দাবি করেছে, ডব্লুসিএল আয়োজকেরা নির্দিষ্ট একটি জাতীয়তাবাদী বয়ানে পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ, এবারের ডব্লুসিএলে পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নসের বিপক্ষে ভারত চ্যাম্পিয়নস দুটি ম্যাচ খেলতে চায়নি। টুর্নামেন্টের আয়োজক ইজ মাই ট্রিপ ভারতের এমন কর্মকাণ্ডে সায় দিয়েছে। তাতেই মূলত খেপেছে পিসিবি। যেখানে গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারত খেলতে অস্বীকৃতি জানানোর পরও দুই দলের মধ্যে পয়েন্ট ভাগাভাগি করা হয়েছিল। যে ভারত ম্যাচ বর্জন করেছে, তাদের পয়েন্ট দেওয়ার ব্যাপারটি ‘ভণ্ডামি ও পক্ষপাতদুষ্ট’ মনে করছে পিসিবি। গতকাল বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের ভার্চ্যুয়াল বৈঠক শেষে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ আয়োজকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝেরেছে পিসিবি।

এজবাস্টনে ২০ জুলাই ভারত-পাকিস্তান ডব্লিউসিএলের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ম্যাচের আগের দিন শিখর ধাওয়ান, হরভজন সিং, ইউসুফ পাঠান, সুরেশ রায়নাসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জানা গিয়েছিল। তখন জানা গিয়েছিল, ধাওয়ান ১১ মে এমন সিদ্ধান্ত (পাকিস্তান ম্যাচ বয়কট) নিয়েছিলেন। সরাসরি না বললেও ধাওয়ানের কথাতে তখন বোঝা গিয়েছিল, এ বছরের এপ্রিলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের গুলিতে পর্যটক নিহতের ঘটনা প্রভাব ফেলেছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ওপর।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বয়কটের পর তখন ক্ষমাও চেয়েছিল ডব্লিউসিএল কর্তৃপক্ষ। তবু ম্যাচ বাতিল করে আয়োজক কর্তৃপক্ষের ক্ষমা চাওয়াটা পিসিবির কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে। পিসিবি বলেছে, ‘অনুভূতিতে আঘাতের জন্য ডব্লুসিএলের ক্ষমাপ্রার্থনা হাস্যকর। আর এটার মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃতভাবে এটাও স্বীকার করা হয় যে এটা বাতিলের (ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ) পেছনে ক্রিকেটীয় মেধা নয়, বরং একটা নির্দিষ্ট জাতীয়তাবাদী বয়ানের কাছে মাথা নত করা হয়েছে। সংবেদনশীলতার ছদ্মবেশে আসা এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সম্প্রদায়ের কাছে একটি অগ্রহণযোগ্য বার্তা পাঠায়।’

গ্রুপ পর্বে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি হলেও সেমিফাইনালে সেটা সম্ভব হয়নি। ভারত খেলতে অস্বীকৃতি জানানোয় পাকিস্তান ওয়াকওভার পেয়ে উঠে যায় ফাইনালে। রাজনীতি যেখানে মিশে গেছে, সেখানে ক্রিকেটার পাঠানো পিসিবির কাছে অযৌক্তিক। পিসিবি বলছে, ‘আমাদের ক্রিকেটারদের এমন কোনো ইভেন্টে অংশ নিতে দেব না, যেখানে খেলার চেতনা বিকৃত রাজনীতির আড়ালে ঢাকা পড়ে। এটা ক্রীড়ানৈতিকতা ও ভদ্রলোকের খেলার মৌলিক ভাবধারার ওপর প্রশ্নবোধক চিহ্ন তুলে দেয়।’

পাকিস্তান ও ভারতের পাশাপাশি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের নিয়ে ১৮ জুলাই শুরু হয়েছিল ডব্লুসিএল। এজবাস্টনে গত রাতে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে পাকিস্তান নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৫ রান করেছে। জয়ের লক্ষ্যে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা ১৬.৫ ওভারে ১ উইকেটে করে ১৯৭ রান। এবি ডি ভিলিয়ার্সের সেঞ্চুরির (১২০*) পাশাপাশি ফিফটি করেছেন জিন পল ডুমিনি। ২৮ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫০ রান করে অপরাজিত থাকেন ডুমিনি। পাকিস্তানি স্পিনার সাঈদ আজমল নিয়েছেন হাশিম আমলার (১৪) উইকেট। ডি ভিলিয়ার্স একই সঙ্গে ম্যান অব দ্য ফাইনাল, ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট দুটি পুরস্কারই পেয়েছেন।