Ajker Patrika

ব্যথা পেলে গাছও ‘চিৎকার’ করে: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

ব্যথা বা যন্ত্রণায় গাছও ‘চিৎকার’ করে! অবশ্য গাছের এই চিৎকার অন্য প্রাণীদের মতো নয়। গাছ কোনো পারিপার্শ্বিক চাপ যেমন: খরা, আঘাত, কাটা ইত্যাদির প্রতিক্রিয়ায় আলট্রাসনিক কম্পাঙ্ক তৈরি করে। এতে আঙুল ফোটানো বা কম্পিউটার মাউসের ক্লিক করার মতো শব্দ তৈরি কহয়। তবে এসব শব্দ মানুষের শ্রবণসীমার বাইরে। 

 ২০২৩ সালে সেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, গাছপালা আশপাশের পরিবেশে প্রভাবে তাদের দুর্দশার কথা বলার জন্য এসব শব্দ ব্যবহার করতে পারে। 

ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী লিলাচ হাদানি বলেন, এমন কিছু শব্দ আছে যা আমরা শুনতে পাই না। তবে এগুলো তথ্য বহন করে। এমন কিছু প্রাণী আছে যারা শব্দগুলো শুনতে পারে। তাই শাব্দিক মিথস্ক্রিয়া ঘটার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। 

উদ্ভিদ সব সময় পোকামাকড় ও অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। আবার এসব জীবের মধ্যে অনেকেই যোগাযোগের জন্য শব্দ ব্যবহার করে। তাই উদ্ভিদের শব্দ ব্যবহার করাই স্বাভাবিক। 

চাপ বা পীড়নের মধ্যে থাকা গাছ নিষ্ক্রিয় থাকে না। সেসময় তারা কিছু নাটকীয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। সেসময় কিছু শক্তিশালী ঘ্রাণ নিঃসরণ করতে পারে বা রং ও আকৃতিরও পরিবর্তন করতে পারে। 

এসব পরিবর্তন আশপাশের অন্যান্য গাছপালাকে সম্ভাব্য বিপদের জন্য সতর্ক করতে পারে। ফলে এর প্রতিক্রিয়ায় অন্য গাছগুলো নিজস্ব প্রতিরক্ষা বাড়ায় বা উদ্ভিদের ক্ষতি করতে পারে এমন কীটপতঙ্গ মোকাবিলা করার জন্য অন্য প্রাণীদের আকৃষ্ট করে। 

উদ্ভিদ শব্দের মতো অন্যান্য ধরনের সংকেত তৈরি করে কিনা তা স্পষ্ট নয়। গাছপালা শব্দ শনাক্ত করতে পারে বলে কয়েক বছর আগে হাদানি ও তাঁর সহকর্মীরা এক গবেষণায় আবিষ্কার করে। তাই স্বাভাবিকভাবে বিজ্ঞানীদের মনে আরেক প্রশ্ন উদ্ভূত হয় যে, গাছেরা নিজেই এগুলো তৈরি করতে পারে কিনা। 

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার জন্য গবেষকেরা বিভিন্ন পরিবেশে টমেটো ও তামাক গাছের কার্যকলাপ রেকর্ড করেন। প্রথমত তাঁরা চাপমুক্ত পরিবেশে গাছের কার্যকলাপ রেকর্ড করেন। এরপর এমন গাছের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয় যেগুলো অনেক দিন ধরে পানি পায়নি। আবার ডালপালা কাটার পরও গাছের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়। প্রথমে একটি শব্দ রোধী অ্যাকুস্টিক চেম্বারে এসব রেকর্ড করা হয়। একটি সাধারণ গ্রিনহাউস পরিবেশেও একই পরীক্ষা করা হয়। 

চাপযুক্ত পরিবেশে থাকা গাছ, ডাল কাটা গাছ ও পানি না পাওয়া গাছগুলো থেকে উৎপন্ন শব্দের মধ্যে পার্থক্য জানার জন্য গবেষকেরা একটি মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমকে প্রশিক্ষণ দেন। 

গাছগুলো আঙুল ফোটানো বা কম্পিউটার মাউসের ক্লিক করার মতো যেসব শব্দ উৎপন্ন করে সেগুলো অনেক উচ্চ–কম্পাঙ্কের। এগুলো শ্রবণোত্তর শব্দ, অর্থাৎ মানুষ শুনতে পায় না। এগুলো শুধু ১ মিটারের (৩ দশমিক ৩ ফিট) মধ্যে শোনা যায়। স্বাভাবিক পরিবেশে গাছ কোনো শব্দ তৈরি করে না। 

প্রতিকূল পরিবেশে গাছ অনেক শব্দ উৎপন্ন করে। প্রজাতি ভেদে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪০টি ক্লিকের মতো শব্দ উৎপন্ন করে। আর পানি–বঞ্চিত গাছও শব্দ উৎপন্ন করে। গাছ পানিশূন্যতার দৃশ্যমান লক্ষণ দেখানোর আগে আরও ক্লিক ক্লিক শব্দ তৈরি করে। শুকিয়ে যেতে থাকা গাছে এই শব্দ বাড়তে থাকে। 

মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম শব্দগুলোর মধ্যে পার্থক্য বের করতে পারে। সেই সঙ্গে উদ্ভিদের কোন প্রজাতি এসব শব্দ তৈরি করে তাও বের করা গেছে। শুধু টমেটো বা তামাক গাছই শব্দ উৎপন্ন করে না। গবেষক দলটি বিভিন্ন গাছপালা পরীক্ষা করে দেখেন, শব্দ উৎপন্ন করা গাছের সাধারণ কার্যকলাপ। গবেষণায় দেখা যায়, গম, ভুট্টা, আঙুর, ক্যাকটাস ও হেনবিট সব গাছই প্রতিকূল পরিবেশে শব্দ তৈরি করে। 

তবে এখনো অনেক কিছু অজানা রয়েছে। কারণ শব্দগুলো কীভাবে উৎপাদিত হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। পূর্ববর্তী গবেষণায়, পানিশূন্য পরিবেশে থাকা উদ্ভিদে ক্যাভিটেশন (গহ্বর সৃষ্টি) প্রক্রিয়া দেখা যায়। এই প্রক্রিয়ায় গাছের শাখা–প্রশাখায় বায়ু বুদ্‌বুদ তৈরি ও প্রসারিত হয় এবং চুপসে যায়। এতে মানুষের আঙুল ফোটানোর মতো শব্দ তৈরি হয়। 

অন্যান্য যন্ত্রণাদায়ক অবস্থাও গাছকে শব্দ তৈরিতে প্ররোচিত করে কিনা তা স্পষ্ট নয়। রোগজীবাণু, অত্যধিক তাপমাত্রা ও অন্যান্য প্রতিকূল অবস্থাও উদ্ভিদে শব্দ তৈরি করতে পারে। 

এই গবেষণায় আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে যে, কম্পিউটার অ্যালগরিদমের মাধ্যমে উদ্ভিদের তৈরি শব্দ শনাক্ত করার পাশাপাশি পার্থক্য করতেও শিখতে পারে। তাই অন্যান্য জীবের ক্ষেত্রেও এই অ্যালগরিদম ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব জীব বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে উদ্ভিদের সৃষ্ট শব্দে সাড়া দিতে শিখতে পারে। 

হাদানি বলেন, যেসব পতঙ্গ উদ্ভিদের গায়ে ডিম পাড়তে চায় বা কোনো প্রাণী উদ্ভিদকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করতে চায়, এসব শব্দ তাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। 

মানুষ এসব শব্দ শুনতে পেলে বিপদগ্রস্ত উদ্ভিদকে সাহায্য করতে পারে। যেমন: তৃষ্ণার্ত গাছপালা মরে যাওয়ার আগেই পানি দিয়ে এদের জীবন বাঁচানো যাবে। 

হাদানি বলেন, ‘এখন আমরা জানতে পেরেছি যে, গাছেরাও শব্দ করে। তাই পরবর্তী প্রশ্ন হলো—শব্দগুলো কে শুনছে? এখন আমরা এসব শব্দের প্রতি অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রতিক্রিয়া খুঁজে দেখছি। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে শব্দ শনাক্ত এবং ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়াও খুঁজে পাওয়া চেষ্টা করা হচ্ছে।’ 

তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত