Ajker Patrika

হাজতখানায় লেনদেনে দায় কার

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ
বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কিন্তু ক্ষমতার হাতবদল হলেই কোনো জাদুমন্ত্রের বলে মানুষের স্বভাব-চরিত্র আমূল বদলে যেতে পারে না। অপরাধপ্রবণতা হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে না।

দেশে এখনো যে নীতি-নিয়মবহির্ভূত কাজকর্ম অব্যাহত আছে, তার প্রমাণ আজকের পত্রিকায় শুক্রবারে ‘হাজতখানায় পুলিশের সামনেই আসামির লাখ টাকা লেনদেন’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি খবর। গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানার হাজতখানার ভেতরে বাদী ও আসামির টাকা লেনদেনের ঘটনার এক রহস্যকাহিনির বয়ান আছে খবরটিতে।

খবরে বলা হয়েছে, টুটুল সরকার ও আরিফ নামের দুই ব্যক্তির যৌথ ঠিকাদারি ব্যবসা রয়েছে। টঙ্গীর নৌঘাট ইজারার টাকার লেনদেন নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। আরিফের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৬ অক্টোবর যৌথ বাহিনী টুটুলকে আটক করে টঙ্গী পূর্ব থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। থানায় আইনি সহায়তা দিতে গিয়ে আটক হন টুটুলের আইনজীবী মো. ইব্রাহিম হোসেন।

আইনজীবী কোন অপরাধে আটক হলেন, সেটা অবশ্য খবরে স্পষ্ট হয়নি। তবে খবর থেকে জানা যায়, টুটুল আমেরিকান নাগরিক এবং এলাকায় তাঁর অনেক সম্পদ ও প্রভাব রয়েছে। এই সম্পদ ও প্রভাবের কারণেই কি টুটুল থানা-হাজতে থেকে বাদীর সঙ্গে আপস-মীমাংসায় উপনীত হয়ে বাদীকে ১৯ লাখ টাকা দিয়ে ওই দিনই জামিনে মুক্ত হতে সক্ষম হন?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, থানার হাজতখানার ভেতরে হলুদ গেঞ্জি ও সাদা প্যান্ট পরে বসে রয়েছেন টুটুল। লোহার শিকের ফাঁক দিয়ে হাজতখানার ভেতর থেকে গুনে গুনে টাকার বান্ডিল হাতবদল করছেন দুই ব্যক্তির সঙ্গে। পাশে অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পোশাক পরা এক কনস্টেবল।

ঘটনাটি রহস্যগল্পের মতো। হাজতখানায় বসে কীভাবে এত টাকার লেনদেন সম্ভব হলো? পুলিশ কি তাহলে একটুও বদলায়নি? পরিদর্শক আলমগীর অবশ্য বলেছেন টাকা লেনদেনের ঘটনার সঙ্গে পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো পুলিশ সদস্য টাকা নেননি। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটি মামলার বাদী ও বিবাদী নিজেরা আপস করে টাকা লেনদেন করেছেন।

পাঠক লক্ষ করুন, পুলিশ পরিদর্শক টাকা লেনদেনের কথা অস্বীকার করেননি। অস্বীকার করেছেন এর সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এতগুলো টাকা কীভাবে হাজতে ঢুকল, আবার নিরাপদে বাইরে চলে গেল? পুলিশের এই জেগে ঘুমানোর বিষয়টিই কি স্বাভাবিক?

হাজতখানার দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল মুকতাদিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আসাদুজ্জামানকে শোকজ ও মহানগর পুলিশের উত্তর বিভাগে বদলি করা হয়েছে। আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে ডিউটি অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে।

এই লঘুদণ্ডেই যদি ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটে তাহলে এমন ‘লেনদেন’ না কমে বরং বাড়বেই। নয় কি?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত