Ajker Patrika

ভয়াবহ!

সম্পাদকীয়
ভয়াবহ!

সাদা চোখে ঘটনাটির দিকে তাকালে মনে হতে পারে, ঠিকই তো আছে। একজন মানুষকে যিনি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছেন, তাঁকে তো গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করাই যায়। খুনির আবার বিচার কী? কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বোঝা যাবে, এই যুক্তির অসারতা। যদি সবাই এইভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিতে থাকেন, তাহলে আদতে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না। যে যার মতো আইন বানিয়ে নেবে এবং যে কাউকে কোনো যুক্তি ছাড়াই হত্যা করতে পারবে। এই ভয়াবহতা উপলব্ধি করা না হলে সত্যিই সংকটে পড়ে যাবে দেশ।

আমরা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার একটি ঘটনা ধরে কথাগুলো বলছি। ঘটনার শুরু গত ৪ এপ্রিল। তবে এখন বিষয়টি আলোচনায় এসেছে একজন আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে। কী কারণে গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হলেন সাগর প্রামাণিক, তা খতিয়ে দেখতে গিয়েই বেরিয়ে এল থলের বিড়াল। ৪ এপ্রিল বাগমারার রনশিবাড়ি গ্রামে আমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি আবদুর রাজ্জাক নামের আরেকজনকে ছুরিকাঘাত করলে তিনি মারা যান। ঘটনার পর বাজারের লোকজন আমিনুলকে ধরে মারধর করে আটকে রাখেন। পুলিশের কাছে যখন এ খবর পৌঁছে যায়, তখন তারা চলে আসে ঘটনাস্থলে এবং আমিনুলকে তাদের হেফাজতে নেয়।

কিন্তু উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে আমিনুলকে ছিনিয়ে নেয়। এরপর গণপিটুনি দিয়ে আমিনুলকে হত্যা করে। মানে কী দাঁড়ালো? আমিনুল হত্যা করেছে একজনকে এবং সে কারণে আমিনুলকে হত্যা করেছেন অন্যরা। আমিনুলকে আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দিলে আইন রক্ষা হতো। কিন্তু কে তার পরোয়া করে? আর পুলিশ? পুলিশের মনের জোর এখনো যে ফিরে আসেনি, রাজপথে উত্তেজিত জনতার বাক্যবর্ষণে কুপোকাত অসহায় পুলিশ সদস্যদের দেখলেই তা বোঝা যায়। এ ক্ষেত্রেও সে রকম ঘটনা ঘটেছিল কি না, কে জানে। ভেবে দেখুন, আমিনুলকে যখন গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছিল, তখন বাগমারা থানার পুলিশ সদস্যরা তা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেই পুলিশ সদস্যদেরও পিটিয়েছে এই আইন অমান্যকারী জনতা। সাতজন পুলিশ সদস্য তাতে আহত হয়েছিলেন।

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার গোয়ালবাড়ী এলাকা থেকে র‍্যাব-৫-এর একটি দল সাগর প্রামাণিককে গ্রেপ্তার করেছে। আমিনুলকে হত্যা করার দায়ে তিনি একজন অভিযুক্ত। এ পর্যন্ত ‘পিটুনিবিশারদ’ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আইনশৃঙ্খলা না মানলে তারও যে পরিণতি আছে, সে কথা অনেকেই ভুলে যান। আমিনুলকে হত্যার দায়ে এই অভিযুক্ত ‘উত্তেজিত জনতা’রও তো বিচার হবে। তারা কেন নিজ উদ্যোগে নিজেদের এ রকম এক বাজে অবস্থার মধ্যে নিপতিত করল, তার জবাব কে দেবে?

‘মারের জবাব মার’ কবিতায় খাটে বটে, কিন্তু আদতে বাস্তব জীবনে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে বাধ্য। আইনকে নিজের মতো চলতে দেওয়া শিখতে হয়। এটা থাকতে হয় আচরিত জীবনধারণ পদ্ধতির মধ্যে। আর তা না থাকলে অরাজকতাই বাড়তে থাকে কেবল। বাগমারার ঘটনা তারই ইঙ্গিত দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ