Ajker Patrika

ইউক্রেনের সঙ্গে বৈঠকের পর হতাশ মার্কিন কর্মকর্তারা, রেগে আগুন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেনেভার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে এভাবেই মুখ ভার করে বের হতে দেখা গেছে মার্কিন কর্মকর্তাদের। ছবি: বিবিসি
জেনেভার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে এভাবেই মুখ ভার করে বের হতে দেখা গেছে মার্কিন কর্মকর্তাদের। ছবি: বিবিসি

ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ থামাতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চলমান শান্তি উদ্যোগের বৈঠকের পর হঠাৎই উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তার মেঘ ঘনীভূত হয়েছে। বাংলাদেশ সময় রোববার রাতে বিবিসির এক লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও মার্কিন সেনাবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিসকলকে জেনেভার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বের হতে দেখা গেছে। নিরাপত্তা দল এবং সামরিক উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা তাঁদের ঘিরে রেখেছিলেন। এ সময় সাংবাদিকেরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেনকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলেও—মার্কিন কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বৈঠকের আগে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের বক্তব্যে আলোচনার পরিবেশ আশাব্যঞ্জক মনে হচ্ছিল। তাঁরা ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ভালোর দিকেই এগোচ্ছে। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই পরিস্থিতি বদলে যায়। মার্কিন প্রতিনিধিরা প্রায় আধঘণ্টা ১৮ তম তলায় আলোচনার কক্ষটিতে একা অবস্থান করার পর ওয়াশিংটন থেকে আসে এক তীব্র বার্তা। ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বড় হাতের অক্ষরে লেখেন—‘ইউক্রেনের নেতারা আমাদের প্রচেষ্টার জন্য কোনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনি এবং ইউরোপ রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।’

ট্রাম্প আরও দাবি করেন—তিনি এমন এক যুদ্ধ উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন যা কখনো ঘটারই কথা ছিল না, আর এই যুদ্ধ সব পক্ষেরই ক্ষতি করছে। তাঁর অভিযোগ, ইউরোপের রাশিয়া থেকে তেল কেনা এবং ইউক্রেনের কৃতজ্ঞতা না দেখানো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।

তবে বিশ্লেষকেরা মত দিয়েছেন, ট্রাম্পের অভিযোগের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। অতীতের বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ টেনে তাঁরা বলছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বহুবার প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। দুই বছর আগে রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে জেলেনস্কির বিরুদ্ধে ‘কৃতজ্ঞতা না দেখানোর’ অভিযোগ ওঠার পর থেকে জেলেনস্কি নিয়মিতভাবে মার্কিন সহায়তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আসছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পরও তিনি একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।

এদিকে জেলেনস্কি এক্স মাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি ক্রোয়েশিয়া ও লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে জেনেভার আলোচনার আপডেট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা এমন এক ফলাফলের অপেক্ষায় আছি, যা সত্যিকারের এবং স্থায়ী শান্তির পথ তৈরি করবে।’ এ সময় তিনি ইউক্রেনকে যারা সমর্থন করছেন, বিশ্বের এমন সব নেতা ও জনগণের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৮ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই প্রস্তাবের পর ইউরোপের দেশগুলোও ২৪ দফার আরেকটি প্রস্তাব দিয়েছে। দুই প্রস্তাবের মধ্যে মৌলিক বেশ কিছু পার্থক্য দেখা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বনে বাস করছিল একটি পরিবার— বাধা হলেন ইতালির আদালত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তিন সন্তানের সঙ্গে ট্রেভ্যালিওন ও ক্যাথরিন দম্পতি। ছবি: দ্য টাইমস
তিন সন্তানের সঙ্গে ট্রেভ্যালিওন ও ক্যাথরিন দম্পতি। ছবি: দ্য টাইমস

ইতালির মধ্যাঞ্চলে একটি প্রত্যন্ত বনে অফ-গ্রিড বা সম্পূর্ণ স্বনির্ভর জীবনযাপন করছিল পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার। এই পরিবারে তিন শিশু ছাড়াও তাদের বাবা-মা ছিলেন। কিন্তু পরিবারটির কথিত সেই ‘আদর্শ জীবন’ হঠাৎ থমকে গেছে আদালতের হস্তক্ষেপে।

রোববার (২৩ নভেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশে ওই পরিবারের তিন শিশুকে সরিয়ে এনে একটি গির্জা-পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে তাদের বাবা-মায়ের দেখা করার সুযোগও সীমিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারটির আইনজীবী।

ইতালিতে এই ঘটনা ‘বিম্বি নেল বোস্কো’ বা ‘বনের শিশু’ হিসেবে ইতিমধ্যে আলোড়ন তুলেছে। তিন শিশুকে তাদের পরিবার তথা বাবা-মায়ের কাছে ফেরত দেওয়ার দাবিতে হাজারো মানুষ অনলাইনে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।

শিশুদের বাবা ৫১ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক নাথান ট্রেভ্যালিওন পেশায় ছিলেন শেফ। তাঁর সঙ্গী ৪৫ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় ক্যাথরিন বার্মিংহাম একজন অশ্বারোহন প্রশিক্ষক ছিলেন। আদালতের নথি অনুযায়ী, তাঁদের সন্তানদের মধ্যে একজন আট বছরের এবং বাকি দুজন ছয় বছর বয়সী যমজ।

আদালতের আদেশে বলা হয়েছে—পরিবারটি বসবাস অনুপযোগী একটি ভবনে বসবাস করছে। তাদের কোনো স্থায়ী আয় নেই, সামাজিক যোগাযোগ নেই, বাড়িতে শৌচাগারও নেই, আর শিশুরা স্কুলে যায় না। এসব মিলিয়ে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এই অভিযোগেই বাবা-মায়ের অভিভাবকত্ব স্থগিত করা হয়।

আইনজীবী জিওভান্নি আঙ্গেলুচ্চি জানিয়েছেন, পরিবারটি আগুন জ্বালিয়ে ঘর গরম রাখে এবং সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে আলো পায় ও ডিভাইসে চার্জ দেয়। তারা মাইক্রোপ্লাস্টিক এড়াতে এবং ব্যয় কমাতে পানির লাইন খুলে ফেলেছে। এর বদলে কূপের পানি ব্যবহার করছে। ঘরের ভেতরে টয়লেট নেই, বাইরে কম্পোস্টিং টয়লেট ব্যবহার করছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই পরিবারের পাঁচজনই বনে পাওয়া বন্য মাশরুম খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল। এরপর থেকেই সামাজিক সেবা বিভাগ তাদের ওপর নজরদারি শুরু করে। শিশুদের নিয়মিত চিকিৎসা ও স্কুলে পাঠানোর সুপারিশ জানানো হলেও পরিবারটি তা মানেনি বলে অভিযোগ।

এদিকে শিশুদের বাবা ট্রেভ্যালিওন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘শিশুরা সুখেই ছিল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ভদ্র আর সুস্থ ছিল—তাহলে এই বন্ধন ভাঙা হচ্ছে কেন?’

ঘটনাটি ইতালির রাজনীতিতেও প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘উদ্বেগজনক’ বলেছেন এবং ন্যায়মন্ত্রীকে বিষয়টি দেখতে বলেছেন। উপপ্রধানমন্ত্রী ম্যাত্তেও সালভিনি এটিকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়ে পরের সপ্তাহে পরিবারটির সেই বাড়িটি পরিদর্শনের ঘোষণা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, পরিবারটি ২০২১ সালে বনাঞ্চলের ওই বাড়িটি কিনেছিল। স্থানীয় মেয়র জিউসেপে মাসচিউল্লি বলছেন, কিছু শর্ত যেমন—পানির লাইন পুনঃস্থাপন এবং শিশুদের শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে স্কুলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের বিষয়গুলো মেনে চললে সমস্যার সমাধান সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ ভারতেরই অংশ: রাজনাথ সিং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ছবি: এএনআই
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ছবি: এএনআই

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, বর্তমানে সিন্ধু প্রদেশ ভারতের অংশ না হলেও, সভ্যতাগত ঐতিহ্যের দিক থেকে এটি একসময় ভারতেরই অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে বিভাজনের পর সেটা পাকিস্তানে চলে যায়, ভবিষ্যতে সেই অঞ্চল আবারও ভারতে ফিরে আসতে পারে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ রোববার দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেছেন রাজনাথ সিং। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা আবারও উসকে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লিতে আয়োজিত ‘সিন্ধি সমাজ সম্মেলনে’ রাজনাথ সিং বলেন, ‘সভ্যতার দিক থেকে সিন্ধু সব সময় ভারতেরই অংশ থাকবে। ভূরাজনৈতিক সীমান্ত কখনোই চূড়ান্ত বা স্থায়ী নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ সিন্ধুর ভূমি ভারতের অংশ না-ও হতে পারে, কিন্তু সভ্যতাগতভাবে সিন্ধু সব সময়ই ভারতের অংশ। আর ভূমির কথা বলতে গেলে—সীমান্ত বদলায়। কে জানে, কাল-পরশুই হয়তো সিন্ধু আবার ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।’

রাজনাথ সিং তাঁর বক্তব্যে বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আদবানির প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, বিভাজনের এত দশক পরও অনেক সিন্ধি হিন্দু সিন্ধুর বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি।

তিনি বলেন, ‘সারা ভারতের হিন্দুরা সিন্ধু নদকে পবিত্র মনে করে। সিন্ধুর বহু মুসলমানও বিশ্বাস করতেন সিন্ধুর পানি মক্কার জমজমের পানির মতোই পবিত্র—এটিও আদবানিজির লেখারই উদ্ধৃতি।’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সিন্ধুর মানুষ আজ পৃথিবীর যেখানেই থাকুন না কেন, আপনারা সব সময় ভারতেরই মানুষ এবং ভারতেরই অংশ। মে মাসে যখন অপারেশন সিঁদুর চলছিল, তখন আমাদের উচিত ছিল পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর দখল করে নেওয়া।’

তবে এমন ধারণা শুধু রাজনাথ সিংয়ের একার নয়। অপারেশন সিঁদুরের সময় অনেক ভারতীয়ই এমন মন্তব্য করেছিলেন। তাঁরা বলেন, ভারতের উচিত ছিল পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের দিকে অগ্রসর হয়ে নিজেদের ভূখণ্ড পুনর্দখল করা।

তাই রাজনাথ সিংয়ের এমন বক্তব্য বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর এই বক্তব্য ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা আবারও উসকে দিতে পারে। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের কড়া প্রতিক্রিয়াও আনতে পারে।

প্রসঙ্গত, বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ একসময় ছিল ভারতের সিন্ধি জনগোষ্ঠীর (ইন্দো-আর্য জাতিগোষ্ঠী) আদি নিবাস। এখানেই গড়ে উঠেছিল প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতা, যা ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভিয়েতনামে বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসে ৯০ জনের মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ৫৬
ভিয়েতনামে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ছবি: এএফপি
ভিয়েতনামে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ছবি: এএফপি

ভিয়েতনামে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯০-এ দাঁড়িয়েছে। আরও ১২ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। টানা কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টি আর ভূমিধসের পর আজ রোববার দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-মধ্য ভিয়েতনাম দেশটির সবচেয়ে বড় কফি উৎপাদনকারী এলাকা। পাশাপাশি মনোরম সমুদ্রসৈকতের জন্যও পরিচিত। অক্টোবরের শেষ দিক থেকে এই অঞ্চলে অবিরাম বর্ষণ চলছে। জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলো পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে মধ্য ভিয়েতনামের অন্যান্য অঞ্চলেও বৃষ্টিপাত ১ হাজার ৯০০ মিলিমিটার ছাড়িয়েছে। তবে ঝড় ও বন্যায় অঞ্চলটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

১৬ নভেম্বরের পর থেকে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬০ জনের বেশি ছিল মধ্যাঞ্চলের পার্বত্য ডাক-লাক প্রদেশের বাসিন্দা। সেখানে ১০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ডুবে গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

গত সপ্তাহে গিয়া লাই ও ডাক-লাক প্রদেশে উদ্ধারকর্মীরা নৌকা নিয়ে ঘরবাড়ির জানালা ভেঙে, ছাদ কেটে মানুষকে বের করে আনেন। ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, বিপদাপন্ন মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছিল।

বিন-দিন প্রদেশের উপকূলীয় শহর কুই নিয়নের বন্যাকবলিত হাসপাতালগুলোতে উদ্ধারকর্মীরা খাবার আর পানি পৌঁছে দেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় দৈনিক থান নিয়েন। হাসপাতালের চিকিৎসক ও রোগীরা জানান, তাঁরা তিন দিন ধরে শুধু ইনস্ট্যান্ট নুডলস আর পানি খেয়ে বেঁচে ছিলেন।

ডাক-লাক প্রদেশের বা নদীর পানি গত বৃহস্পতিবার ভোরে দুই জায়গায় ১৯৯৩ সালের রেকর্ড ভেঙে আরও ওপরে উঠে যায়। খানহ হোয়া প্রদেশের কাই নদীর পানিও নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।

দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বলছে, এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর ফসল পানিতে নষ্ট হয়েছে।

সরকার অনুমান করছে, এই বন্যায় এখন পর্যন্ত অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ দশমিক ৯৮ ট্রিলিয়ন ডং, ডলার হিসেবে প্রায় ৩৪১ মিলিয়ন।

দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়ায় ভিয়েতনামে ২৭৯ জনের মৃত্যু বা নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারী বৃষ্টি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বলছে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এসব চরম আবহাওয়া আরও ঘনঘন ও ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্পের ২৮ দফার বিপরীতে ইউরোপের ২৪ দফা প্রস্তাব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২১ নভেম্বর ইউক্রেনের কিয়েভে অনুষ্ঠিত একটি স্মরণানুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও তাঁর স্ত্রী ওলেনা। ছবি: রয়টার্স
গত ২১ নভেম্বর ইউক্রেনের কিয়েভে অনুষ্ঠিত একটি স্মরণানুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও তাঁর স্ত্রী ওলেনা। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৮ দফা প্রস্তাবের বিপরীতে এবার ২৪ দফার একটি প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। দুটি প্রস্তাবেই যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা কাঠামো তৈরির কথা বলা হলেও দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকারগত বিষয়ে এই দুটির মধ্যে রয়েছে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।

ট্রাম্পের প্রস্তাবের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাশিয়া–যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ অংশীদারত্ব পুনর্গঠন, রাশিয়াকে পুনরায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ফিরিয়ে আনা এবং ইউক্রেনকে সীমিত শর্তে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদান। তাঁর প্রস্তাবে ইউক্রেনকে স্থায়ীভাবে ন্যাটো বহির্ভূত রাখার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইউরোপীয় প্রস্তাবের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ইউরোপীয় দেশগুলো বলেছে—ইউক্রেন ন্যাটো সদস্যপদ পাবে কি পাবে না, সেই সিদ্ধান্ত শুধু এই জোটের অভ্যন্তরীণ ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। কোনো বাইরের চাপের ওপর তা নির্ভর করবে না।

দুই প্রস্তাবের সবচেয়ে বড় অমিল দেখা গেছে, ইউক্রেনের ভূখণ্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ট্রাম্পের নথিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে—ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে বাস্তবিকভাবে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও তা মেনে নেবে। এ ছাড়া খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার নিয়ন্ত্রণ রেখা ‘ফ্রিজ’ করার কথাও উল্লেখ রয়েছে। এর বিপরীতে, ইউরোপীয় প্রস্তাবে ভূখণ্ডের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের মতে, যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণ কার্যকর হওয়ার পরই আলোচনা এবং এই আলোচনার সূচনা হবে বর্তমান নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে—এ ক্ষেত্রে আগাম কোনো স্বীকৃতি নয়।

নিরাপত্তা কাঠামো নিয়েও দুই প্রস্তাবে বড় ফারাক রয়েছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে ৬ লাখে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে এবং ন্যাটোর কার্যক্রম থেকে ইউক্রেনকে দূরে রাখার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তবে ইউরোপীয় দেশগুলো বলছে ঠিক উল্টো। তাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী—ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী বা প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর কোনো সীমা আরোপ করা যাবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের অধীনে একটি আর্টিক্যাল-৫ এর মতো বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা গ্যারান্টি থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশটিতে মিত্রদেশগুলোর সৈন্য মোতায়েনেরও শর্ত দেওয়া হয়েছে।

অর্থনৈতিক বিষয়েও অমিল স্পষ্ট। ট্রাম্পের প্রস্তাবে রয়েছে রাশিয়ার জব্দ তহবিলের বড় অংশ দুই দেশের যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্পে ব্যবহার এবং রাশিয়াকে ধাপে ধাপে জি-৮-এ ফেরানো। ইউরোপীয় পরিকল্পনা বলছে—রাশিয়া ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত সম্পদ মুক্ত হবে না এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারও হবে সীমিত ও ধীরে ধীরে।

ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবে বড় ধরনের অবকাঠামো ও প্রযুক্তি-ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে প্রধান বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের লাভের শর্তও রয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপের পরিকল্পনা বলছে—ইউক্রেনের পুনর্গঠন হবে রাশিয়ার দায় স্বীকার ও ক্ষতিপূরণের ভিত্তিতে, কোনো রাজনৈতিক শর্ত ছাড়াই।

তবে মানবাধিকার ও মানবিক ইস্যুতে উভয় নথিতেই কিছু মিল রয়েছে। যেমন—বন্দী বিনিময়, অপহৃত শিশুদের ফেরত পাঠানো, যুদ্ধাহতদের সহযোগিতা। তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় এসবকে বড় কাঠামোর উপ-উপাদান হিসেবে দেখা হয়েছে। ইউরোপীয় প্রস্তাবে এগুলো শর্তবিহীন ও অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি রাখা হয়েছে।

মোটকথা—ট্রাম্পের ২৮ দফায় যুদ্ধ থামাতে সমঝোতা ও ভূখণ্ড ছাড়ের বিনিময়ে নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে রাশিয়া বড় সুবিধা পাবে। আর ইউরোপীয় ২৪ দফায় জোর দেওয়া হয়েছে, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, ন্যাটো–ইইউ সদস্যপদ এবং আক্রমণকারী রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার ওপর শর্ত আরোপের ওপর। ফলে দুই প্রস্তাবের মধ্যে মতপার্থক্য এতটাই মৌলিক যে, বাস্তবে কোনটি আলোচনার ভিত্তি হতে পারে—তা নিয়েই এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত