Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্পের ২৮ দফার বিপরীতে ইউরোপের ২৪ দফা প্রস্তাব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২১ নভেম্বর ইউক্রেনের কিয়েভে অনুষ্ঠিত একটি স্মরণানুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও তাঁর স্ত্রী ওলেনা। ছবি: রয়টার্স
গত ২১ নভেম্বর ইউক্রেনের কিয়েভে অনুষ্ঠিত একটি স্মরণানুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও তাঁর স্ত্রী ওলেনা। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৮ দফা প্রস্তাবের বিপরীতে এবার ২৪ দফার একটি প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। দুটি প্রস্তাবেই যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা কাঠামো তৈরির কথা বলা হলেও দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকারগত বিষয়ে এই দুটির মধ্যে রয়েছে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।

ট্রাম্পের প্রস্তাবের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাশিয়া–যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ অংশীদারত্ব পুনর্গঠন, রাশিয়াকে পুনরায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ফিরিয়ে আনা এবং ইউক্রেনকে সীমিত শর্তে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদান। তাঁর প্রস্তাবে ইউক্রেনকে স্থায়ীভাবে ন্যাটো বহির্ভূত রাখার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইউরোপীয় প্রস্তাবের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ইউরোপীয় দেশগুলো বলেছে—ইউক্রেন ন্যাটো সদস্যপদ পাবে কি পাবে না, সেই সিদ্ধান্ত শুধু এই জোটের অভ্যন্তরীণ ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। কোনো বাইরের চাপের ওপর তা নির্ভর করবে না।

দুই প্রস্তাবের সবচেয়ে বড় অমিল দেখা গেছে, ইউক্রেনের ভূখণ্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ট্রাম্পের নথিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে—ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে বাস্তবিকভাবে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও তা মেনে নেবে। এ ছাড়া খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার নিয়ন্ত্রণ রেখা ‘ফ্রিজ’ করার কথাও উল্লেখ রয়েছে। এর বিপরীতে, ইউরোপীয় প্রস্তাবে ভূখণ্ডের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের মতে, যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণ কার্যকর হওয়ার পরই আলোচনা এবং এই আলোচনার সূচনা হবে বর্তমান নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে—এ ক্ষেত্রে আগাম কোনো স্বীকৃতি নয়।

নিরাপত্তা কাঠামো নিয়েও দুই প্রস্তাবে বড় ফারাক রয়েছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে ৬ লাখে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে এবং ন্যাটোর কার্যক্রম থেকে ইউক্রেনকে দূরে রাখার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তবে ইউরোপীয় দেশগুলো বলছে ঠিক উল্টো। তাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী—ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী বা প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর কোনো সীমা আরোপ করা যাবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের অধীনে একটি আর্টিক্যাল-৫ এর মতো বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা গ্যারান্টি থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশটিতে মিত্রদেশগুলোর সৈন্য মোতায়েনেরও শর্ত দেওয়া হয়েছে।

অর্থনৈতিক বিষয়েও অমিল স্পষ্ট। ট্রাম্পের প্রস্তাবে রয়েছে রাশিয়ার জব্দ তহবিলের বড় অংশ দুই দেশের যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্পে ব্যবহার এবং রাশিয়াকে ধাপে ধাপে জি-৮-এ ফেরানো। ইউরোপীয় পরিকল্পনা বলছে—রাশিয়া ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত সম্পদ মুক্ত হবে না এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারও হবে সীমিত ও ধীরে ধীরে।

ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবে বড় ধরনের অবকাঠামো ও প্রযুক্তি-ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে প্রধান বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের লাভের শর্তও রয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপের পরিকল্পনা বলছে—ইউক্রেনের পুনর্গঠন হবে রাশিয়ার দায় স্বীকার ও ক্ষতিপূরণের ভিত্তিতে, কোনো রাজনৈতিক শর্ত ছাড়াই।

তবে মানবাধিকার ও মানবিক ইস্যুতে উভয় নথিতেই কিছু মিল রয়েছে। যেমন—বন্দী বিনিময়, অপহৃত শিশুদের ফেরত পাঠানো, যুদ্ধাহতদের সহযোগিতা। তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় এসবকে বড় কাঠামোর উপ-উপাদান হিসেবে দেখা হয়েছে। ইউরোপীয় প্রস্তাবে এগুলো শর্তবিহীন ও অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি রাখা হয়েছে।

মোটকথা—ট্রাম্পের ২৮ দফায় যুদ্ধ থামাতে সমঝোতা ও ভূখণ্ড ছাড়ের বিনিময়ে নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে রাশিয়া বড় সুবিধা পাবে। আর ইউরোপীয় ২৪ দফায় জোর দেওয়া হয়েছে, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, ন্যাটো–ইইউ সদস্যপদ এবং আক্রমণকারী রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার ওপর শর্ত আরোপের ওপর। ফলে দুই প্রস্তাবের মধ্যে মতপার্থক্য এতটাই মৌলিক যে, বাস্তবে কোনটি আলোচনার ভিত্তি হতে পারে—তা নিয়েই এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ