রুমা মোদক
মহামারিকালে আমরা এক বিরাট রূপান্তরিত পৃথিবীর মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছি। সব দিক থেকেই ‘নিউ নরমাল’। নরমাল অথচ নিউ। আমি তাকেই বলছি রূপান্তরিত। আমাদের নৈমিত্তিক স্বাভাবিক জীবনের সব কাজকে বদলে দিয়েছে মহামারি। এই বদলে দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়টি হলো ইন্টারনেট। হাতের মুঠোয় ডিভাইস আর অন্তর্জালের বদৌলতে বদলে যাওয়া আমাদের নিউ নরমাল পৃথিবী।
এখানে আমাদের সন্তানেরা ক্লাস করে অন্তর্জালে, আমরা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং সারি অন্তর্জালে, বাজার-সওদা থেকে ডাক্তার-চিকিৎসা। আজ যখন পৃথিবী ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসছে, মহামারি বিজ্ঞানের আবিষ্কার ভ্যাকসিনের কাছে মাথা নত করে পিছু হটছে, তখনো আমরা কিন্তু আমাদের এই প্রযুক্তিনির্ভরতা থেকে বের হতে চাইছি না; বরং এর যে সুবিধা তাকে নিজেদের প্রয়োজনে হাজার গুণ কার্যকরী করে ব্যবহার করছি।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের দেশে এক নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে অনলাইন ব্যবসায়। ঘরে ঘরে নারী উদ্যোক্তা। এক বছর আগেও যা ছিল অকল্পনীয়। নারীরা ভাবতেন, ব্যবসা করলে লোকে কী বলবে! নারী শুধু নয়, নারীসংশ্লিষ্ট সামাজিক পরিবেশও এ ভাবনার বাইরে ছিল না।
আমি অবাক হয়ে দেখি যে নারীর হাতের স্পেশাল মেনু শুধু পরিবার আর অতিথি আপ্যায়নে সীমাবদ্ধ ছিল, সেই নারী আজ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তাঁর রান্না পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। আর পোশাকনির্ভর ব্যবসার কথা বলাই বাহুল্য।
অনলাইন ব্যবসার কয়েকটি ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক রয়েছে। এই ব্যবসায় সংযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের হার বেশি। এর কারণ প্রথমত ঘরে বসে, পরিবারের দায়দায়িত্ব পালন করার আবশ্যিকতার পরে এই কাজটুকু করা যায়। এতে যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়, তেমনি নিজের সুপ্ত মেধা-প্রতিভা-যোগ্যতারও যোগ্য মর্যাদা ও কার্যকরী ফলাফল লাভ করা যায়। দ্বিতীয়ত, আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক যে নারীসমাজ এত দিন আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, প্রযুক্তির খাতিরে তাঁরা সেই সুযোগটি নিতে পারছেন সহজেই। তৃতীয়ত, অনলাইন ব্যবসার প্রসারে আমরা নারীদের কিছু অনলাইন লাইভ, পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখছি। আমাদের মেয়েরা যে কত সপ্রতিভ, যুগোপযোগী, আত্মবিশ্বাসী আর আধুনিক, এই লাইভগুলো না দেখলে তা জানাই হতো না।
অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজে পেশাগত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনরত নারীর সংখ্যাও আমাদের চারপাশে কম নয়। কিন্তু অনলাইন ব্যবসায় জড়িত তাঁরা, যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো চাকরি বা পেশায় নিয়োজিত নন। এই যে ঘরে ঘরে নারীদের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা, এর প্রভাব হবে সুদূর প্রসারী। পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক পরিবর্তনেও, সামাজিক মূল্যবোধ ও রীতি-পদ্ধতির রক্ষণশীলতা অতিক্রম করে নতুন সমাজ বিনির্মাণেও।
কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে আমি প্রথমেই যেটি শনাক্ত করি তা হলো, নিয়ন্ত্রণহীনতা। এমনিতেই সার্বিকভাবে আমাদের বাজার নিয়ন্ত্রিত নয়।
অনলাইন ব্যবসা ও নারী উদ্যোক্তাদের এই ব্যবসাসংশ্লিষ্টতা শুরুতেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে। পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ভোক্তামহলে, কাঙ্ক্ষিত পণ্য নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠছে, পণ্যের দরদাম বা ফেরত, এক্সচেঞ্জ নিয়ে যথেষ্ট পেশাদারির পরিচয় দিচ্ছেন না। এই অনলাইন ব্যবসায় যেহেতু হাতে হাতে যাচাই করে পণ্য কেনার সুযোগ নেই, এ ক্ষেত্রে সততা ও পেশাদারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি সংশ্লিষ্টদের; যাতে বিক্রেতা এবং ভোক্তা কারোরই ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না এবং হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া পৃথিবীর কোনো সমাজ এগিয়ে যেতে পারেনি। মহামারিকাল ‘প্রয়োজন’ জননী হয়ে নারীদের সুযোগ ও সম্ভাবনা বিপুলভাবে উন্মোচিত করে দিয়েছে। নারীরা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নীরব বিপ্লবের সূচনা করেছেন। সামান্য ভুলের কারণে এই বিপ্লবকে বৃথা হতে দেওয়া যাবে না কোনোভাবেই।
লেখক: সাহিত্যিক
মহামারিকালে আমরা এক বিরাট রূপান্তরিত পৃথিবীর মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছি। সব দিক থেকেই ‘নিউ নরমাল’। নরমাল অথচ নিউ। আমি তাকেই বলছি রূপান্তরিত। আমাদের নৈমিত্তিক স্বাভাবিক জীবনের সব কাজকে বদলে দিয়েছে মহামারি। এই বদলে দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়টি হলো ইন্টারনেট। হাতের মুঠোয় ডিভাইস আর অন্তর্জালের বদৌলতে বদলে যাওয়া আমাদের নিউ নরমাল পৃথিবী।
এখানে আমাদের সন্তানেরা ক্লাস করে অন্তর্জালে, আমরা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং সারি অন্তর্জালে, বাজার-সওদা থেকে ডাক্তার-চিকিৎসা। আজ যখন পৃথিবী ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসছে, মহামারি বিজ্ঞানের আবিষ্কার ভ্যাকসিনের কাছে মাথা নত করে পিছু হটছে, তখনো আমরা কিন্তু আমাদের এই প্রযুক্তিনির্ভরতা থেকে বের হতে চাইছি না; বরং এর যে সুবিধা তাকে নিজেদের প্রয়োজনে হাজার গুণ কার্যকরী করে ব্যবহার করছি।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের দেশে এক নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে অনলাইন ব্যবসায়। ঘরে ঘরে নারী উদ্যোক্তা। এক বছর আগেও যা ছিল অকল্পনীয়। নারীরা ভাবতেন, ব্যবসা করলে লোকে কী বলবে! নারী শুধু নয়, নারীসংশ্লিষ্ট সামাজিক পরিবেশও এ ভাবনার বাইরে ছিল না।
আমি অবাক হয়ে দেখি যে নারীর হাতের স্পেশাল মেনু শুধু পরিবার আর অতিথি আপ্যায়নে সীমাবদ্ধ ছিল, সেই নারী আজ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তাঁর রান্না পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। আর পোশাকনির্ভর ব্যবসার কথা বলাই বাহুল্য।
অনলাইন ব্যবসার কয়েকটি ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক রয়েছে। এই ব্যবসায় সংযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের হার বেশি। এর কারণ প্রথমত ঘরে বসে, পরিবারের দায়দায়িত্ব পালন করার আবশ্যিকতার পরে এই কাজটুকু করা যায়। এতে যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়, তেমনি নিজের সুপ্ত মেধা-প্রতিভা-যোগ্যতারও যোগ্য মর্যাদা ও কার্যকরী ফলাফল লাভ করা যায়। দ্বিতীয়ত, আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক যে নারীসমাজ এত দিন আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, প্রযুক্তির খাতিরে তাঁরা সেই সুযোগটি নিতে পারছেন সহজেই। তৃতীয়ত, অনলাইন ব্যবসার প্রসারে আমরা নারীদের কিছু অনলাইন লাইভ, পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখছি। আমাদের মেয়েরা যে কত সপ্রতিভ, যুগোপযোগী, আত্মবিশ্বাসী আর আধুনিক, এই লাইভগুলো না দেখলে তা জানাই হতো না।
অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজে পেশাগত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনরত নারীর সংখ্যাও আমাদের চারপাশে কম নয়। কিন্তু অনলাইন ব্যবসায় জড়িত তাঁরা, যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো চাকরি বা পেশায় নিয়োজিত নন। এই যে ঘরে ঘরে নারীদের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা, এর প্রভাব হবে সুদূর প্রসারী। পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক পরিবর্তনেও, সামাজিক মূল্যবোধ ও রীতি-পদ্ধতির রক্ষণশীলতা অতিক্রম করে নতুন সমাজ বিনির্মাণেও।
কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে আমি প্রথমেই যেটি শনাক্ত করি তা হলো, নিয়ন্ত্রণহীনতা। এমনিতেই সার্বিকভাবে আমাদের বাজার নিয়ন্ত্রিত নয়।
অনলাইন ব্যবসা ও নারী উদ্যোক্তাদের এই ব্যবসাসংশ্লিষ্টতা শুরুতেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে। পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ভোক্তামহলে, কাঙ্ক্ষিত পণ্য নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠছে, পণ্যের দরদাম বা ফেরত, এক্সচেঞ্জ নিয়ে যথেষ্ট পেশাদারির পরিচয় দিচ্ছেন না। এই অনলাইন ব্যবসায় যেহেতু হাতে হাতে যাচাই করে পণ্য কেনার সুযোগ নেই, এ ক্ষেত্রে সততা ও পেশাদারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি সংশ্লিষ্টদের; যাতে বিক্রেতা এবং ভোক্তা কারোরই ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না এবং হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া পৃথিবীর কোনো সমাজ এগিয়ে যেতে পারেনি। মহামারিকাল ‘প্রয়োজন’ জননী হয়ে নারীদের সুযোগ ও সম্ভাবনা বিপুলভাবে উন্মোচিত করে দিয়েছে। নারীরা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নীরব বিপ্লবের সূচনা করেছেন। সামান্য ভুলের কারণে এই বিপ্লবকে বৃথা হতে দেওয়া যাবে না কোনোভাবেই।
লেখক: সাহিত্যিক
আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে ‘বঞ্চিত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো’ কর্মকর্তাদের মধ্যে ১১৯ জন ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়ে সচিব হয়েছেন। গত মাসে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতিপূরণ পাবেন।
১৯ ঘণ্টা আগেমার্চ মাস চলছে। এখনো লাখ লাখ শিক্ষার্থী তাদের সম্পূর্ণ পাঠ্যপুস্তক পায়নি। এটিকে যদি আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থা না বলি, তাহলে আর কোনটাকে বলব? শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। প্রথম দিকে আমরা দেখলাম বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সমন্বয়কদের নামে হেনস্তা করা হচ্ছে।
১৯ ঘণ্টা আগেপ্রবীণ বয়সে অনেকের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসে এবং গুরুত্ব কমতে থাকে। দীর্ঘ জীবনলাভের মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেন। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে ভালো লাগে। অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের চোখের সামনে দেখলে জীবনের নানা চড়াই-উতরাইয়ের কথা মনে পড়ে।
১৯ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন প্রকাশিত পত্রিকায় যদি পড়তে হয় ৮ বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, তাহলে দিবসটির মূল প্রতিপাদ্যই ম্লান হয়ে পড়ে। ঘটনাটির নৃশংসতা বিবেচনা করুন। মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে এসেছে ৮ বছর বয়সী অভয়া (কল্পিত নাম)।
১৯ ঘণ্টা আগে