মামুনুর রশীদ
‘ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন’—সত্য অনেক সময়ই কল্পনার চেয়েও ভয়ংকর। সত্যের সংজ্ঞা কখনো গল্প, উপন্যাস, নাটকের বাস্তবতা থেকেও অবিশ্বাস্য। প্রায় প্রতিদিনই আমরা এমন সব ঘটনা দেখতে পাচ্ছি, যা কল্পনা বা অনুমানকে হার মানিয়ে দিচ্ছে। খুনোখুনি, মারামারি সব সমাজেই আছে। কিন্তু একটি হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্য দিবালোকে কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই উল্লাস প্রকাশ করে ভিডিওতে ধারণ করার বিষয় একেবারেই কল্পনার বাইরে। শুধু হত্যাকাণ্ড নয়, ধর্ষণের বিষয়েও একই ধরনের ঘটনা দেখা গেছে। একটি-দুটি ঘটনা হলে সরকারি ভাষ্যে বলা হতো ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। কিন্তু জানা এবং অজানা বিষয় মিলিয়ে বহু স্থানে বহুভাবে এসব বিনা প্রতিবাদে ঘটে যাচ্ছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তারা মহানন্দে বর্ষপূর্তির প্রজেক্ট করে যাচ্ছেন। ঘটনা হয়ে গেলে কিছু পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে থাকে সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন সরকার। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কিছু কঠোর বক্তব্য দিয়ে ঘটনার উপসংহার টেনে আসছেন।
একটি অত্যন্ত অমানবিক, মধ্যযুগীয় বর্বরতা অবশেষে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে তরলীকরণ করা প্রায় সমাপ্ত হয়ে গেছে। বলা হয়েছিল আগস্ট অভ্যুত্থান জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার, মতপ্রকাশের একটি উপায় হিসেবে দেখা দেবে। কিন্তু এ রকম মানবসংহারী হওয়ার তো কথা ছিল না। সমন্বয়কদের কর্মকাণ্ড, নতুন দল গঠন, নানা ধরনের অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জড়াবার কথা ছিল? বিপুল অস্ত্রের কোনো হিসাব মিলছে না। এসব দেখার প্রয়োজন বোধ করছে না অন্তর্বর্তী সরকার।
নির্বাচন নিয়ে এই অন্তর্বর্তী সরকারের সত্যি কোনো গরজ আছে বলে মনে হচ্ছে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে অর্থহীন আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে একদল। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের যেহেতু নিয়োগকর্তা তারাই, তাই তিনিও যেন উচ্চবাচ্য করছেন না। তিনি ব্যস্ত থাকছেন তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থে অর্থহীন বিদেশযাত্রা নিয়ে। নির্বাচন দিয়ে যে এই অন্তর্বর্তী সরকার চলে যাবে, তারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
যাহোক, এ হচ্ছে সাম্প্রতিক ঘটনা। কিন্তু মানুষের মনোজগতে তার যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে, দেশটা যে নানাভাবে বাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের একজন লোকও কি বুঝতে পারছেন না? উপদেষ্টা পরিষদের সভাগুলো শুধু পরস্পর পিঠ চাপড়ানিতেই শেষ হয়ে যায়। সঙ্গে কিছুটা চা-বিস্কুটই তার পরিণতি। বারবার মনে প্রশ্ন জাগছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান আসলে করছেনটা কী? পিনাকীর নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের সব গৌরবগাথার অবসান ঘটিয়েছেন, রিসেট বাটন টিপেছেন, ৩২ নম্বর ভেঙেছেন, বিজয় সরণির ম্যুরাল ভেঙেছেন, বুলডোজারের সংস্কৃতির সূচনা করেছেন। এই প্রধান কি ভাবছেন আজকেই পৃথিবীর শেষ দিন, আগামীকাল আর সূর্য উঠবে না?
এ দেশের অনেক রাজনীতিবিদ, কর্মী, তাঁবেদার, আমলা ভাবেন, আজকেই শেষ দিন, আগামীকাল আর সূর্য উঠবে না। ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। তাই তাঁরা যা খুশি তা-ই করে থাকেন। এসব থেকেই তাঁদের মধ্যে কাণ্ডজ্ঞানহীনতার জন্ম হয় এবং তাঁরা অতীত, মানে নিকট অতীত থেকেও কোনো শিক্ষা নেন না। গত এক বছরের হিসাব নিলে বোঝা যাবে, এই ক্ষমতাসীন সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডেই জনসম্পৃক্ততা দেখা যায়নি। সব ক্ষেত্রেই স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি স্বেচ্ছাচার হচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে। অনতিবিলম্বে সরকারের উচিত হবে এই মন্ত্রণালয়ের অর্থ অপচয়ের হিসাব নেওয়া। জানা গেছে, এখন প্রজেক্টের ভারে মন্ত্রণালয়টি দিশেহারা।
অন্তর্বর্তী সরকার তো একটা সময় চলে যাবে। কিন্তু অর্থবিষয়ক জটিলতা থাকলে তার সমাধানের কোনো পথ থাকবে না। অর্থের বিষয়ে আমাদের অপচয়ের শেষ নেই। কিন্তু যেটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল, তার কোনো সমাধান নেই। আমাদের সমাজের যে মূল্যবোধগুলো অবশেষ ছিল, তা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নানাভাবে সর্বনাশের পথ তৈরি করেছে। কিছু অকারণ তাত্ত্বিক এর সঙ্গে জুটে গিয়ে হাজার বছরের বাঙালির যে মানবিক সংস্কৃতি ছিল, তাকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এই সংস্কৃতির নবরূপায়ণ কীভাবে হুট করে কয়েক দিনের মধ্যে সম্ভব, এই তাত্ত্বিকেরা হয়তো জানেন না।
পাকিস্তান ২৪ বছরে পারেনি, আবার সেনাশাসনের ১৫ বছরে জামায়াতের পুনর্বাসন সম্ভব হয়েছে আংশিকভাবে। কিন্তু সংস্কৃতির রূপান্তর সম্ভব হয়নি। এখানকার উৎপাদনব্যবস্থা, জলবায়ু, মাটি, মানুষকে মিলিয়ে যে সমাজ, (যদিও গত ৫৪ বছরে তাকে ভেঙেচুরে একটা বিকৃত অবস্থা তৈরি করার চেষ্টা চলেছে) তার সবটাকে পাল্টানো সম্ভব কি না, তা-ও ভাববার বিষয়। এসব নিয়ে না ভেবে যাঁরা এ দেশে রাজনীতি করছেন, বিশেষ করে বাম ধারার রাজনীতিবিদেরা, যাঁদের এত ত্যাগ-তিতিক্ষা থাকা সত্ত্বেও আজকে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে একসঙ্গে বসতে হচ্ছে। এই প্রবণতার কারণে যদি মৌলবাদী শক্তির আংশিক বিজয়ও হয়, তবু বাম ধারা আরেক ধাপ পিছিয়ে যাবে। অবশ্য প্রাচীন প্রবাদ, ‘নাই মামার চাইতে কানা মামা ভালো’ মেনে নিলে কোনো অসুবিধা নেই।
আমরা যে জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলাম, তখনকার দিনের শিক্ষাব্যবস্থা যে মূল্যবোধের জন্ম দিয়েছিল, তা এমনই এক ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে, যার পরিণতি এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষা-সংস্কৃতিবিহীনতা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রখরভাবে বিরাজ করছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও কৃষক-শ্রমিকদের মধ্যে একধরনের প্রকৃত শিক্ষা ও মূল্যবোধ দেখা যেত, যার একটা বড় অংশ এখনো আছে। কিন্তু সচেতনতা ছাড়া রাজনৈতিক দলের সদস্যদের শুধু জিন্দাবাদ দেওয়ার দক্ষতা অর্জন করা যে কী ভয়ংকর, তা সব কালেই দেখা গেছে। বর্তমানে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। একটা খুবই জনপ্রিয় কথা এদের মধ্যে চালু আছে—গত ১৬ বছরে আমরা কিছু খেতে পারিনি, অন্য দল খেয়েছে। তাই এই খাওয়াদাওয়াটা তাদের জন্য ন্যায্য! অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মীদের এটাও শেখায়নি যে, রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা মানে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপার নয়। কারণ, নেতারাও এই কর্মকাণ্ডের মধ্যে থাকেন। তাই দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে খাওয়াদাওয়ার বিষয়টা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, যা নেতাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
অশিক্ষার রাজনীতি যে কী ভয়ংকর, তা আমরা বছরের পর বছর দেখেছি। রাজনীতির পেশি যখন জনকল্যাণের কাজে না লাগিয়ে অন্যের সম্পদ দখল করার কাজে ব্যবহার করা হয়, তা শুধু রাষ্ট্রকে এক নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যায়। মানুষের নিরাপত্তার আরেকটি আশ্রয় ‘আইন’ অসহায় হয়ে পড়ে। কারণ, তার পেছনে থাকে রাষ্ট্রক্ষমতা। তাই দেখা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন মানুষের মধ্যে একটা স্বস্তি কাজ করে। কারণ, আইন তখন চাপমুক্ত হয়ে প্রয়োগ করতে পারে। এবারেই তার ব্যতিক্রম দেখা গেল। আইন রক্ষাকারীরা প্রয়োগের চেষ্টাও করছে না। সেনাবাহিনী এই সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। এবারে সেনাপ্রধান প্রকাশ্যে নাগরিকদের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করেননি। সেনাবাহিনী যদিও মাঠে থেকেছে কিন্তু সেনা উদ্যোগ বলতে যা বোঝায়, তা দেখা যায়নি। বরং স্বাধীনতার যেসব স্মারক প্রকাশ্যে ভাঙা হচ্ছিল, সেখানে সেনাবাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। ক্ষমতার নির্দেশ—সে ন্যায়-অন্যায় যে কারণেই হোক—তাকেই মেনে চলেছে।
শহীদ মিনার ২৫ মার্চ রাতে ভেঙে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছিল যে, সেখানে মসজিদ হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যাদের কথামতো চলছে, তাদের এটুকু কাণ্ডজ্ঞানই নেই যে, মুক্তিযুদ্ধের পরে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সে নির্দেশ কে মানল? কারণ, শহীদ মিনার তো ইটের মিনার নয়, স্মৃতির মিনার। বর্তমানে যেসব ভাস্কর্য, মিনার ভাঙা হচ্ছে সেগুলো কিন্তু মানুষের স্মৃতির মণিকোঠায় রাখা সম্পদ। এসব কোনো সভ্য দেশে ভাঙে? হাজার হাজার বছরের সংস্কৃতি মানুষ রক্ষা করে চলেছে—এটাই তো সভ্যতা। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সারা বিশ্বে কী দেখলেন?
জুলাই শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে তাড়াহুড়া করে রাষ্ট্রের টাকায় গণমিনার তোলা হবে। এ থেকে শিক্ষা নিতে হয়—এইসব স্থাপনাকে স্মৃতিতে রাখবার সুযোগটাই নষ্ট হয়ে গেল। জোর করে কি সবকিছু হয়? আমি এই পত্রিকাতেই লিখেছিলাম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় রাখার প্রয়োজন নেই। এ তারই প্রমাণ যে, মন্ত্রী-উপদেষ্টা যিনিই দায়িত্বে থাকেন, তাঁরই দায়িত্বহীনতার সুফল এগুলো।
লেখক:– নাট্যব্যক্তিত্ব
‘ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন’—সত্য অনেক সময়ই কল্পনার চেয়েও ভয়ংকর। সত্যের সংজ্ঞা কখনো গল্প, উপন্যাস, নাটকের বাস্তবতা থেকেও অবিশ্বাস্য। প্রায় প্রতিদিনই আমরা এমন সব ঘটনা দেখতে পাচ্ছি, যা কল্পনা বা অনুমানকে হার মানিয়ে দিচ্ছে। খুনোখুনি, মারামারি সব সমাজেই আছে। কিন্তু একটি হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্য দিবালোকে কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই উল্লাস প্রকাশ করে ভিডিওতে ধারণ করার বিষয় একেবারেই কল্পনার বাইরে। শুধু হত্যাকাণ্ড নয়, ধর্ষণের বিষয়েও একই ধরনের ঘটনা দেখা গেছে। একটি-দুটি ঘটনা হলে সরকারি ভাষ্যে বলা হতো ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। কিন্তু জানা এবং অজানা বিষয় মিলিয়ে বহু স্থানে বহুভাবে এসব বিনা প্রতিবাদে ঘটে যাচ্ছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তারা মহানন্দে বর্ষপূর্তির প্রজেক্ট করে যাচ্ছেন। ঘটনা হয়ে গেলে কিছু পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে থাকে সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন সরকার। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কিছু কঠোর বক্তব্য দিয়ে ঘটনার উপসংহার টেনে আসছেন।
একটি অত্যন্ত অমানবিক, মধ্যযুগীয় বর্বরতা অবশেষে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে তরলীকরণ করা প্রায় সমাপ্ত হয়ে গেছে। বলা হয়েছিল আগস্ট অভ্যুত্থান জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার, মতপ্রকাশের একটি উপায় হিসেবে দেখা দেবে। কিন্তু এ রকম মানবসংহারী হওয়ার তো কথা ছিল না। সমন্বয়কদের কর্মকাণ্ড, নতুন দল গঠন, নানা ধরনের অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জড়াবার কথা ছিল? বিপুল অস্ত্রের কোনো হিসাব মিলছে না। এসব দেখার প্রয়োজন বোধ করছে না অন্তর্বর্তী সরকার।
নির্বাচন নিয়ে এই অন্তর্বর্তী সরকারের সত্যি কোনো গরজ আছে বলে মনে হচ্ছে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে অর্থহীন আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে একদল। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের যেহেতু নিয়োগকর্তা তারাই, তাই তিনিও যেন উচ্চবাচ্য করছেন না। তিনি ব্যস্ত থাকছেন তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থে অর্থহীন বিদেশযাত্রা নিয়ে। নির্বাচন দিয়ে যে এই অন্তর্বর্তী সরকার চলে যাবে, তারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
যাহোক, এ হচ্ছে সাম্প্রতিক ঘটনা। কিন্তু মানুষের মনোজগতে তার যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে, দেশটা যে নানাভাবে বাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের একজন লোকও কি বুঝতে পারছেন না? উপদেষ্টা পরিষদের সভাগুলো শুধু পরস্পর পিঠ চাপড়ানিতেই শেষ হয়ে যায়। সঙ্গে কিছুটা চা-বিস্কুটই তার পরিণতি। বারবার মনে প্রশ্ন জাগছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান আসলে করছেনটা কী? পিনাকীর নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের সব গৌরবগাথার অবসান ঘটিয়েছেন, রিসেট বাটন টিপেছেন, ৩২ নম্বর ভেঙেছেন, বিজয় সরণির ম্যুরাল ভেঙেছেন, বুলডোজারের সংস্কৃতির সূচনা করেছেন। এই প্রধান কি ভাবছেন আজকেই পৃথিবীর শেষ দিন, আগামীকাল আর সূর্য উঠবে না?
এ দেশের অনেক রাজনীতিবিদ, কর্মী, তাঁবেদার, আমলা ভাবেন, আজকেই শেষ দিন, আগামীকাল আর সূর্য উঠবে না। ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। তাই তাঁরা যা খুশি তা-ই করে থাকেন। এসব থেকেই তাঁদের মধ্যে কাণ্ডজ্ঞানহীনতার জন্ম হয় এবং তাঁরা অতীত, মানে নিকট অতীত থেকেও কোনো শিক্ষা নেন না। গত এক বছরের হিসাব নিলে বোঝা যাবে, এই ক্ষমতাসীন সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডেই জনসম্পৃক্ততা দেখা যায়নি। সব ক্ষেত্রেই স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি স্বেচ্ছাচার হচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে। অনতিবিলম্বে সরকারের উচিত হবে এই মন্ত্রণালয়ের অর্থ অপচয়ের হিসাব নেওয়া। জানা গেছে, এখন প্রজেক্টের ভারে মন্ত্রণালয়টি দিশেহারা।
অন্তর্বর্তী সরকার তো একটা সময় চলে যাবে। কিন্তু অর্থবিষয়ক জটিলতা থাকলে তার সমাধানের কোনো পথ থাকবে না। অর্থের বিষয়ে আমাদের অপচয়ের শেষ নেই। কিন্তু যেটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল, তার কোনো সমাধান নেই। আমাদের সমাজের যে মূল্যবোধগুলো অবশেষ ছিল, তা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নানাভাবে সর্বনাশের পথ তৈরি করেছে। কিছু অকারণ তাত্ত্বিক এর সঙ্গে জুটে গিয়ে হাজার বছরের বাঙালির যে মানবিক সংস্কৃতি ছিল, তাকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এই সংস্কৃতির নবরূপায়ণ কীভাবে হুট করে কয়েক দিনের মধ্যে সম্ভব, এই তাত্ত্বিকেরা হয়তো জানেন না।
পাকিস্তান ২৪ বছরে পারেনি, আবার সেনাশাসনের ১৫ বছরে জামায়াতের পুনর্বাসন সম্ভব হয়েছে আংশিকভাবে। কিন্তু সংস্কৃতির রূপান্তর সম্ভব হয়নি। এখানকার উৎপাদনব্যবস্থা, জলবায়ু, মাটি, মানুষকে মিলিয়ে যে সমাজ, (যদিও গত ৫৪ বছরে তাকে ভেঙেচুরে একটা বিকৃত অবস্থা তৈরি করার চেষ্টা চলেছে) তার সবটাকে পাল্টানো সম্ভব কি না, তা-ও ভাববার বিষয়। এসব নিয়ে না ভেবে যাঁরা এ দেশে রাজনীতি করছেন, বিশেষ করে বাম ধারার রাজনীতিবিদেরা, যাঁদের এত ত্যাগ-তিতিক্ষা থাকা সত্ত্বেও আজকে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে একসঙ্গে বসতে হচ্ছে। এই প্রবণতার কারণে যদি মৌলবাদী শক্তির আংশিক বিজয়ও হয়, তবু বাম ধারা আরেক ধাপ পিছিয়ে যাবে। অবশ্য প্রাচীন প্রবাদ, ‘নাই মামার চাইতে কানা মামা ভালো’ মেনে নিলে কোনো অসুবিধা নেই।
আমরা যে জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলাম, তখনকার দিনের শিক্ষাব্যবস্থা যে মূল্যবোধের জন্ম দিয়েছিল, তা এমনই এক ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে, যার পরিণতি এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষা-সংস্কৃতিবিহীনতা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রখরভাবে বিরাজ করছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও কৃষক-শ্রমিকদের মধ্যে একধরনের প্রকৃত শিক্ষা ও মূল্যবোধ দেখা যেত, যার একটা বড় অংশ এখনো আছে। কিন্তু সচেতনতা ছাড়া রাজনৈতিক দলের সদস্যদের শুধু জিন্দাবাদ দেওয়ার দক্ষতা অর্জন করা যে কী ভয়ংকর, তা সব কালেই দেখা গেছে। বর্তমানে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। একটা খুবই জনপ্রিয় কথা এদের মধ্যে চালু আছে—গত ১৬ বছরে আমরা কিছু খেতে পারিনি, অন্য দল খেয়েছে। তাই এই খাওয়াদাওয়াটা তাদের জন্য ন্যায্য! অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মীদের এটাও শেখায়নি যে, রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা মানে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপার নয়। কারণ, নেতারাও এই কর্মকাণ্ডের মধ্যে থাকেন। তাই দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে খাওয়াদাওয়ার বিষয়টা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, যা নেতাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
অশিক্ষার রাজনীতি যে কী ভয়ংকর, তা আমরা বছরের পর বছর দেখেছি। রাজনীতির পেশি যখন জনকল্যাণের কাজে না লাগিয়ে অন্যের সম্পদ দখল করার কাজে ব্যবহার করা হয়, তা শুধু রাষ্ট্রকে এক নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যায়। মানুষের নিরাপত্তার আরেকটি আশ্রয় ‘আইন’ অসহায় হয়ে পড়ে। কারণ, তার পেছনে থাকে রাষ্ট্রক্ষমতা। তাই দেখা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন মানুষের মধ্যে একটা স্বস্তি কাজ করে। কারণ, আইন তখন চাপমুক্ত হয়ে প্রয়োগ করতে পারে। এবারেই তার ব্যতিক্রম দেখা গেল। আইন রক্ষাকারীরা প্রয়োগের চেষ্টাও করছে না। সেনাবাহিনী এই সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। এবারে সেনাপ্রধান প্রকাশ্যে নাগরিকদের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করেননি। সেনাবাহিনী যদিও মাঠে থেকেছে কিন্তু সেনা উদ্যোগ বলতে যা বোঝায়, তা দেখা যায়নি। বরং স্বাধীনতার যেসব স্মারক প্রকাশ্যে ভাঙা হচ্ছিল, সেখানে সেনাবাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। ক্ষমতার নির্দেশ—সে ন্যায়-অন্যায় যে কারণেই হোক—তাকেই মেনে চলেছে।
শহীদ মিনার ২৫ মার্চ রাতে ভেঙে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছিল যে, সেখানে মসজিদ হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যাদের কথামতো চলছে, তাদের এটুকু কাণ্ডজ্ঞানই নেই যে, মুক্তিযুদ্ধের পরে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সে নির্দেশ কে মানল? কারণ, শহীদ মিনার তো ইটের মিনার নয়, স্মৃতির মিনার। বর্তমানে যেসব ভাস্কর্য, মিনার ভাঙা হচ্ছে সেগুলো কিন্তু মানুষের স্মৃতির মণিকোঠায় রাখা সম্পদ। এসব কোনো সভ্য দেশে ভাঙে? হাজার হাজার বছরের সংস্কৃতি মানুষ রক্ষা করে চলেছে—এটাই তো সভ্যতা। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সারা বিশ্বে কী দেখলেন?
জুলাই শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে তাড়াহুড়া করে রাষ্ট্রের টাকায় গণমিনার তোলা হবে। এ থেকে শিক্ষা নিতে হয়—এইসব স্থাপনাকে স্মৃতিতে রাখবার সুযোগটাই নষ্ট হয়ে গেল। জোর করে কি সবকিছু হয়? আমি এই পত্রিকাতেই লিখেছিলাম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় রাখার প্রয়োজন নেই। এ তারই প্রমাণ যে, মন্ত্রী-উপদেষ্টা যিনিই দায়িত্বে থাকেন, তাঁরই দায়িত্বহীনতার সুফল এগুলো।
লেখক:– নাট্যব্যক্তিত্ব
দায়ী আমরা সবাই। তেজগাঁও ও কুর্মিটোলার বিমানবন্দর দুটি ১৯৪৫ সালে তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান যখন হলো, তখন তেজগাঁওয়ে বিমানবন্দর করা হলো বেশ বড় আকারে। এরপর ১৯৬৪ সালে নগরায়ণ ও জনসংখ্যা বাড়ার কারণে তেজগাঁওয়ের বদলে কুর্মিটোলার বিমানবন্দর বড় পরিসরে চালু করার পরিকল্পনা করা হয়।
১৩ ঘণ্টা আগেউত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা গোটা জাতিকে গভীর বেদনায় নিমজ্জিত করেছে। শিশুর কান্না, অভিভাবকের আর্তনাদ কেবল কারও ব্যক্তিগত ক্ষত বা ক্ষতি নয়, বরং একটি রাষ্ট্রের অবকাঠামোগত দুর্বলতার দিকটিকে সামনে এনেছে। প্রশিক্ষণ বিমান কোথায় চালানো উচিত,
১৩ ঘণ্টা আগেএনজিওর নাট্যকলা ও ডোনার ড্রামা ‘আপনার এনজিও কী করে?’ ‘আমরা “জলবায়ু সচেতনতা” নিয়ে কাজ করি।’ ‘অবশ্যই! নিজে এসি রুমে বসে চা খেয়ে বোঝাই, কীভাবে গরিবকে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে হয়!’ ‘আমরা প্রচারণা চালাই—“পৃথিবী বাঁচাও”, আর তাতে ৫০ লাখ টাকার প্রজেক্ট ফান্ড পাই।’
১৩ ঘণ্টা আগেগণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের এ রকম লেজেগোবরে অবস্থা কেন হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সরকারের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
১৩ ঘণ্টা আগে