Ajker Patrika

লোভ সব অনিষ্টের মূল

ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
লোভ সব অনিষ্টের  মূল

মানবজীবনে কিছু স্বভাব রয়েছে, যেগুলো আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় এবং মানবতার জন্য ক্ষতিকারক। তার মধ্যে লোভ বা মোহ একটি। এটি সব অনিষ্টের মূল। এই মন্দ গুণ কখনো ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তিসমষ্টির নীতি ও চরিত্রকে আহত করে, কখনো তাদের আত্মিক কিংবা জৈবিক পরিচ্ছন্ন অবস্থাকে ত্রুটিগ্রস্ত করে সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি বিনষ্ট করে।

এই মন্দকর্ম যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখন ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অগ্রগতির পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। তখন গোটা সমাজ অশান্তি, অনাচার ও অপকর্মের তিমিরে পতিত হয়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে লোভ করলেও কেবল সম্পদ ও সম্মানের লোভটি জনসমক্ষে পরিলক্ষিত হয়। তাই সাধারণত সম্পদ ও সম্মানের প্রতি বিশেষ আকর্ষণকেই লোভ বা মোহ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এটি মানব চরিত্রের ঘৃণিত ব্যাধি এবং বহু ব্যাধির জননী। লোভের কারণেই মানুষে মানুষে ঝগড়া-বিবাদ হয়। এটি মানুষকে বহু আকাঙ্ক্ষার পেছনে ধাবিত করে। পরিণতিতে তার শুধু পেরেশানিই বৃদ্ধি পায়। মানুষের লোভ কোনোভাবেই কমে না, বরং দিনদিন তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমনকি মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছেও মানুষ সম্পদ ও সম্মানের লোভে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। এ বিষয়ে সাবধান করে মহান আল্লাহ সুরা তাকাছুরের ১-২ আয়াতে বলেন, ‘প্রাচুর্যের লোভ-লালসা তোমাদের গাফিল রাখে। এমনকি তোমরা কবরস্থানে পৌঁছে যাও।’

তিনি সুরা নিসার ৩২ আয়াতে বলেন, ‘যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে অপর কারও ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, তোমরা তার লালসা কোরো না।’ উল্লিখিত আয়াতসমূহে সম্পদের প্রতি লোভ-লালসা করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা, যারা লোভ-লালসা করে, পরকালে তাদের পরিণতি খুবই ভয়াবহ ও নিন্দনীয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ যাকে যে সম্পদ ও সম্মান প্রদান করেছেন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকা একজন মুমিনের দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুরা ত্বহার ১৩১ আয়াতে বলেন, 
‘আমি এদের বিভিন্ন প্রকার লোককে পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব জীবনের 
সৌন্দর্যস্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, আপনি সেসব বস্তুর প্রতি 
দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না। আপনার পালনকর্তার দেওয়া রিজিক সর্বোৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।’

লোভের পরিণতি সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘আদমসন্তান দিনে দিনে বৃদ্ধ হয় আর তার মনের ভেতরে দুটি জিনিস যৌবন পেতে থাকে—একটি হলো সম্পদের প্রতি মোহ, অপরটি হলো তার আয়ুর প্রতি মোহ।’ (বুখারি)
মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘আদমসন্তান যদি দুই পর্বতসম সম্পদের মালিক হয়, তবু কামনা করে তৃতীয়টি। আদমসন্তানের মোহক্ষুধা মাটি ছাড়া 
অন্য কিছু পূর্ণ করতে পারে না। তবে 
যে তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা 
কবুল করেন।’

হাদিসগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, লোভ সব অনিষ্টের মূল। সম্পদের লোভের মর্মকথা হচ্ছে জনগণের মনের ওপর আধিপত্য বিস্তারের কামনা করা বা এরূপ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা যে সবার মন যেন আমার প্রতি আকৃষ্ট থাকে, সবাই যেন আমার প্রশংসা করে।

মান-সম্মানের এহেন লিপ্সা ব্যক্তির দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিরীহ ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়া দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে দ্বারা যতটুকু ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তার চেয়ে সম্মান ও সম্পদের লিপ্সার দ্বারা দ্বীনের ক্ষতির আশঙ্কা অধিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই উম্মতের প্রথম সফলতা এসেছে বিশ্বাস ও নিরাসক্তির মধ্য দিয়ে, আর তাদের প্রথম ধ্বংস আসবে কৃপণতা ও লোভের মধ্য দিয়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির জন্য এক একটি পরীক্ষার বিষয় আছে, আর আমার উম্মতের পরীক্ষার বিষয় হলো সম্পদ।’ (তিরমিজি) 
লোভের ন্যায় ঘৃণিত ও নিন্দনীয় স্বভাব থেকে নিজে বাঁচি এবং অপরকে বাঁচার পরামর্শ প্রদান করলেই সমাজ হবে নির্মল ও পূতপবিত্র। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

রাবির অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি পেছাল, পাবে ৫ কোটি শিশু-কিশোর

রাশিয়া খুবই বড় শক্তি, চুক্তি ছাড়া ইউক্রেনের কোনো গতি নেই: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত