Ajker Patrika

ট্রাম্প হারেননি, জিতেছেন পুতিন

রাজিউল হাসান
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছে। পুরো বিশ্বের নজর ছিল সেদিকে।

সাধারণত যেটা হয়, দুই দেশের নেতারা যখন মুখোমুখি হন, তখন বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বসেন হিসাবনিকাশে। তাঁরা বের করার চেষ্টা করেন, বৈঠক থেকে কে বেশি অর্জন করলেন, কে কম। সোজা কথায়, কে হারলেন আর কে জিতলেন, তা নির্ধারণের চেষ্টা করেন বিশেষজ্ঞরা। সে হিসাবে বলতে গেলে শুক্রবারের বৈঠকে ট্রাম্প হারেননি, তবে জিতেছেন পুতিন। কীভাবে?

পুতিন প্রায় ১০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পা রেখেছেন। তাঁর মাথায় ঝুলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। ইউক্রেন থেকে বেআইনিভাবে শিশুদের জোরপূর্বক রাশিয়ায় স্থানান্তরের অভিযোগে ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এই পরোয়ানার পর পুতিনের বিদেশসফর অনেকাংশে কমে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য আইসিসির সদস্য নয়। কাজেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের বাধ্যবাধকতাও নেই তার। তবে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ইউক্রেনের পক্ষে রয়েছে, সবচেয়ে বেশি সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। সে দিক থেকে ইউক্রেনের পক্ষের এক পরাশক্তির মাটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে হাজির হওয়া নিঃসন্দেহে পুতিনের জন্য একটি অর্জন।

পুতিনের এই অর্জনকে আরও উজ্জ্বল করেছেন ট্রাম্প, তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে, নিজের লিমোজিনে চড়িয়ে। শুধু তা-ই নয়, পুতিনকে যখন অভ্যর্থনা জানান ট্রাম্প, সে সময় তাঁদের চারপাশ ঘিরে ছিল যুদ্ধবিমান। এ যেন এক রাজকীয় অভ্যর্থনা।

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে কে কী অর্জন করেছেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে বৈঠকের পর দুজনেই দাবি করেছেন, বৈঠক গঠনমূলক হয়েছে। পুতিন বারবার আলাস্কা এবং মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে সাগরের ওপারে নিজ দেশের ভূখণ্ডের ভৌগোলিক অবস্থান উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিবেশী উল্লেখ করেছেন। সারা বিশ্বের সামনে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিবেশী আখ্যা দিয়ে পুতিন মূলত বিশ্বমঞ্চের কূটনীতিতে নিজের পুনরাবির্ভাবকেই জানান দিয়েছেন। এটিও তাঁর একটি অর্জন।

সবচেয়ে বড় অর্জনের কথাটি সবশেষে বলছি। গতকালের এই বৈঠকের আগেই চাউর হয়েছিল, ট্রাম্প প্রয়োজনে ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা এলাকা রাশিয়াকে দিয়ে যুদ্ধ থামাতে চান। এমনকি আলাস্কা যাওয়ার আগমুহূর্তেও তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের হয়ে কথা বলতে পুতিনের সঙ্গে বসবেন না। এ কথার একটাই অর্থ—ট্রাম্প রাশিয়াকে খুশি করে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে চান। তাঁর এই মনোভাবই পুতিনের সবচেয়ে বড় জয়।

তাহলে ট্রাম্প কী করে হারলেন না? কারণ, ট্রাম্প ইউক্রেনের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টাই করছেন না। তিনি যুদ্ধ থামাতে চান রাশিয়াকে খুশি করে। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু হারানোর নেই। বরং ইউক্রেন যুদ্ধ থামলে মার্কিন অর্থনীতি থেকে যে পরিমাণ অর্থ সহযোগিতা হিসেবে ইউক্রেনে যাচ্ছে, তা বন্ধ হবে। হয়তো তখন ইউক্রেন পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্র কাজ শুরু করবে। তবে তাতে মুনাফা অর্জনের সুযোগ থাকবে। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ কোনো কিছু যোগ করছে না, বরং অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সে দিক থেকে হিসাব করলে ট্রাম্প আসলে এই বৈঠকে কিছু হারাননি।

ভবিষ্যতে আলাস্কার এই বৈঠক নিয়ে আরও চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এই বৈঠকের ভূমিকা কতটা থাকবে, তা-ও বেরিয়ে আসবে। তবে একটা কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, ট্রাম্পের কাছ থেকে লালগালিচা সংবর্ধনা নিয়ে, তাঁর লিমোজিনে চড়ে পুতিন শুক্রবার বিশ্বকে যা দেখালেন, তা এর আগে খুব কম বিশ্বনেতার ভাগ্যেই জুটেছে। সে হিসাবে আগামী দিনে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে পুতিনের প্রভাব আরও বাড়ার সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে।

লেখক: সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

রাবির অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি পেছাল, পাবে ৫ কোটি শিশু-কিশোর

রাশিয়া খুবই বড় শক্তি, চুক্তি ছাড়া ইউক্রেনের কোনো গতি নেই: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত