রুশা চৌধুরী
‘যা খুশি তাই করতে পারো,
গায়ের জোরে রাখো মারো—
যার গায়ে সব ব্যথা বাজে
তিনি যা সন সেটাই সবে।’
এমন করে ভেতরটা দেখিয়ে দিতে পারতেন একজনই—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
‘একই পথ আছে ওরে, চলো সেই রাস্তা ধরে,
যে আসে তারই পিছে চলিস নে’
অন্ধ অনুসরণে ব্যস্ত ভেতো বাঙালির বুঝতে বুঝতে আজও বড্ড সময় লেগে যায়। মজ্জাগত এই স্বভাব যে আমাদের ভীষণ প্রবল,
‘তোরা পথের ধারে ব্যথা নিয়ে করিস ঘাঁটাঘাঁটি—
কেবল করিস ঘাঁটাঘাঁটি।।’
বিস্ময় লাগে না? কেমন করে এমন সবটা বুঝে নিয়েছিলেন তিনি? আজও যে আমজনতা বারবার
তার নিজের শক্তি ভুলে যায়! তিনি কিন্তু ঠিকই
লিখে গেছিলেন,
‘কিছু মোর নেই ক্ষমতা সে যে ঘোর মিথ্যে কথা’
এই মিথ্যেটাকে সত্যি বানিয়ে রাখার মন্ত্রই বারবার শেখানোর চেষ্টা চলেছে এই ভূখণ্ডে। তাই যেখানে এই কথাগুলো লেখা আছে, তা ভেঙে ফেলবার বিবিধ কারসাজি চলে। নিজের ভেতরের সত্যিকারের শক্তিটাকে বারবার ভুলে গিয়ে অন্যের ভুলটাকেই অনুসরণ করতে থাকি। দুষ্ট বুদ্ধিগুলো কখনো ভারত দিয়ে, কখনো ধর্ম দিয়ে, কখনো চীন-আমেরিকা দিয়ে গুণ করার চেষ্টা চলতে থাকে।
দুঃখ হলো, এই দেশে আজও সবচেয়ে বড় কারসাজি ধর্ম দিয়েই করা যায়। তাই খড়্গের নিচে পড়তে হয় কখনো রবীন্দ্রনাথকে, লালনকে; কখনো নিজের ঐতিহ্যকে। কিন্তু তাঁদের কাছে যে খড়্গও মনোহর লাগত, যা বাঁকা বিদ্যুতে আঁকা দেখেছিলেন তাঁরা! তাই তো তাঁদের তীব্র চেতনা আজও ‘কঠিন লোহা’ হয়ে সঙ্গোপনে যত্নে আছে বাঙালির মনের গভীরে তা ভুলিয়ে দেবার চেষ্টা। এতটা শক্তি মনে নিয়েও অজান্তেই এমন মানুষদের বারবার প্রশ্নবিদ্ধ, ক্রুশবিদ্ধ, স্বার্থপরতার আঘাতে জর্জরিত করে বাঙালি। এটাও বাঙালির এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য!
যত দিন যাচ্ছে, বিস্ময় বাড়ছে। বাইরের চাকচিক্যের কাছে হেরে যাচ্ছে ভেতরের উদারতা। কেন আপামর বাঙালি উদার হতে শিখল না? কেন দাঁতের বদলে দাঁতই তুলে নিতে হবে? কেন ইট মারলে পাটকেলটা আরও জোরে ছুড়তে হবে? ছুড়ে দেওয়া সেই পাটকেল নিজের ভাই-বোন বা স্বজনের গায়েই যে লাগবে, সেই বোধটা কেন এত ভোঁতা?
এই আমরাই কিন্তু বড় বড় দুর্যোগের সময় কিচ্ছু না রেখে সবটা বিলিয়ে দিতে কার্পণ্য করি না। তাহলে? ভুলটা কোথায়? কারা আমাদের খেপিয়ে বেড়াচ্ছে? তবে কি সেই গানটা জীবনভর বয়েই বেড়াতে হবে আমাদের—‘জানি না ফুরাবে কবে বৃথা প্রশ্নের হয়রানি...’
যাকে ভুল বলে টেনে নামালাম, জর্জরিত করলাম, তার ভুলের ছাপেই আবারও পা দিতে হচ্ছে কেন? কেন প্রতিশোধস্পৃহা জাতিগত বিভেদ ডেকে আনছে? আমজনতা দিন-রাত জীবনের পেছনে ছুটতে ছুটতে নাভিশ্বাস, যা চায় তাই কেন তাদের কাছে সোনার হরিণ হয়ে যাবে?
আজ সংকটে দিনের গায়ে ছায়া, রাতের বুকে হাহাকার, স্বজনের শরীরে রক্ত, ঐতিহ্যের অস্তিত্ব। তবে কি আমাদের ৫২ বছরের দেশটার সমস্ত স্বপ্ন আঁতুড় না কাটতেই মিথ্যে হয়ে যাবে? তার চেয়ে বড় কথা, মাত্র ৫২ বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই অমোঘ সময়টাকেও অস্বীকার করতে চাইছে আজকাল! এই সবই যে হুজুগে বাঙালিকে খেপিয়ে দেওয়ার, ভড়কে দেওয়ার বা লক্ষ্যহীন করার সেই অনাদিকাল থেকে চলে আসা খেলা, তা জেনে-বুঝে বড় হয়েও কেন তবে ভুলের ফাঁদে পড়তে হচ্ছে বারবার?
মন অসাড় হয়ে আসে যখন ভাবি কেন আজও এমন করেই বলতে হবে? আবার সেই তার কথায় ফিরে যাই,
‘ভালো মানুষ নই রে মোরা ভালো মানুষ নই—
গুণের মধ্যে ওই আমাদের, গুণের মধ্যে ওই।।’
গুরুদেব, মন কেন তবু ভালো মানুষ আজও আছে বিশ্বাস করতে বলে? কেন বারবার গীতবিতানটা এত আপন মনে হয়?
লেখক: রুশা চৌধুরী
আবৃত্তিশিল্পী
‘যা খুশি তাই করতে পারো,
গায়ের জোরে রাখো মারো—
যার গায়ে সব ব্যথা বাজে
তিনি যা সন সেটাই সবে।’
এমন করে ভেতরটা দেখিয়ে দিতে পারতেন একজনই—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
‘একই পথ আছে ওরে, চলো সেই রাস্তা ধরে,
যে আসে তারই পিছে চলিস নে’
অন্ধ অনুসরণে ব্যস্ত ভেতো বাঙালির বুঝতে বুঝতে আজও বড্ড সময় লেগে যায়। মজ্জাগত এই স্বভাব যে আমাদের ভীষণ প্রবল,
‘তোরা পথের ধারে ব্যথা নিয়ে করিস ঘাঁটাঘাঁটি—
কেবল করিস ঘাঁটাঘাঁটি।।’
বিস্ময় লাগে না? কেমন করে এমন সবটা বুঝে নিয়েছিলেন তিনি? আজও যে আমজনতা বারবার
তার নিজের শক্তি ভুলে যায়! তিনি কিন্তু ঠিকই
লিখে গেছিলেন,
‘কিছু মোর নেই ক্ষমতা সে যে ঘোর মিথ্যে কথা’
এই মিথ্যেটাকে সত্যি বানিয়ে রাখার মন্ত্রই বারবার শেখানোর চেষ্টা চলেছে এই ভূখণ্ডে। তাই যেখানে এই কথাগুলো লেখা আছে, তা ভেঙে ফেলবার বিবিধ কারসাজি চলে। নিজের ভেতরের সত্যিকারের শক্তিটাকে বারবার ভুলে গিয়ে অন্যের ভুলটাকেই অনুসরণ করতে থাকি। দুষ্ট বুদ্ধিগুলো কখনো ভারত দিয়ে, কখনো ধর্ম দিয়ে, কখনো চীন-আমেরিকা দিয়ে গুণ করার চেষ্টা চলতে থাকে।
দুঃখ হলো, এই দেশে আজও সবচেয়ে বড় কারসাজি ধর্ম দিয়েই করা যায়। তাই খড়্গের নিচে পড়তে হয় কখনো রবীন্দ্রনাথকে, লালনকে; কখনো নিজের ঐতিহ্যকে। কিন্তু তাঁদের কাছে যে খড়্গও মনোহর লাগত, যা বাঁকা বিদ্যুতে আঁকা দেখেছিলেন তাঁরা! তাই তো তাঁদের তীব্র চেতনা আজও ‘কঠিন লোহা’ হয়ে সঙ্গোপনে যত্নে আছে বাঙালির মনের গভীরে তা ভুলিয়ে দেবার চেষ্টা। এতটা শক্তি মনে নিয়েও অজান্তেই এমন মানুষদের বারবার প্রশ্নবিদ্ধ, ক্রুশবিদ্ধ, স্বার্থপরতার আঘাতে জর্জরিত করে বাঙালি। এটাও বাঙালির এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য!
যত দিন যাচ্ছে, বিস্ময় বাড়ছে। বাইরের চাকচিক্যের কাছে হেরে যাচ্ছে ভেতরের উদারতা। কেন আপামর বাঙালি উদার হতে শিখল না? কেন দাঁতের বদলে দাঁতই তুলে নিতে হবে? কেন ইট মারলে পাটকেলটা আরও জোরে ছুড়তে হবে? ছুড়ে দেওয়া সেই পাটকেল নিজের ভাই-বোন বা স্বজনের গায়েই যে লাগবে, সেই বোধটা কেন এত ভোঁতা?
এই আমরাই কিন্তু বড় বড় দুর্যোগের সময় কিচ্ছু না রেখে সবটা বিলিয়ে দিতে কার্পণ্য করি না। তাহলে? ভুলটা কোথায়? কারা আমাদের খেপিয়ে বেড়াচ্ছে? তবে কি সেই গানটা জীবনভর বয়েই বেড়াতে হবে আমাদের—‘জানি না ফুরাবে কবে বৃথা প্রশ্নের হয়রানি...’
যাকে ভুল বলে টেনে নামালাম, জর্জরিত করলাম, তার ভুলের ছাপেই আবারও পা দিতে হচ্ছে কেন? কেন প্রতিশোধস্পৃহা জাতিগত বিভেদ ডেকে আনছে? আমজনতা দিন-রাত জীবনের পেছনে ছুটতে ছুটতে নাভিশ্বাস, যা চায় তাই কেন তাদের কাছে সোনার হরিণ হয়ে যাবে?
আজ সংকটে দিনের গায়ে ছায়া, রাতের বুকে হাহাকার, স্বজনের শরীরে রক্ত, ঐতিহ্যের অস্তিত্ব। তবে কি আমাদের ৫২ বছরের দেশটার সমস্ত স্বপ্ন আঁতুড় না কাটতেই মিথ্যে হয়ে যাবে? তার চেয়ে বড় কথা, মাত্র ৫২ বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই অমোঘ সময়টাকেও অস্বীকার করতে চাইছে আজকাল! এই সবই যে হুজুগে বাঙালিকে খেপিয়ে দেওয়ার, ভড়কে দেওয়ার বা লক্ষ্যহীন করার সেই অনাদিকাল থেকে চলে আসা খেলা, তা জেনে-বুঝে বড় হয়েও কেন তবে ভুলের ফাঁদে পড়তে হচ্ছে বারবার?
মন অসাড় হয়ে আসে যখন ভাবি কেন আজও এমন করেই বলতে হবে? আবার সেই তার কথায় ফিরে যাই,
‘ভালো মানুষ নই রে মোরা ভালো মানুষ নই—
গুণের মধ্যে ওই আমাদের, গুণের মধ্যে ওই।।’
গুরুদেব, মন কেন তবু ভালো মানুষ আজও আছে বিশ্বাস করতে বলে? কেন বারবার গীতবিতানটা এত আপন মনে হয়?
লেখক: রুশা চৌধুরী
আবৃত্তিশিল্পী
১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে প্রতিবছর পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ঐতিহাসিক দিনটির স্মরণ-উৎসবের সূচনা করতেন। কিন্তু, মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের প্রতিবছরের অনুষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত থাকতেন। স্বাধীন বাংলাদেশের
১ দিন আগেইসরায়েল যে অসংখ্য অপরাধের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেছে, তার মধ্যে ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা অন্যতম নৃশংস হিসেবে বিবেচিত। সময়ের পরিক্রমায় এই নিষ্পাপ শিশুদের হত্যার স্মৃতি মুছে যায়নি। এই তালিকায় রয়েছে ২০০০ সালে বাবার কোলে আশ্রয় নেওয়া ১২ বছর বয়সী মুহাম্মদ আল-দুররা এবং ২০২৪ সালে ৫ বছর বয়সী হিন্দ রজব
১ দিন আগেঅনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশ, ভারত, লাওস ও ভিয়েতনামে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ‘পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এশিয়া প্যাসিফিক’ (পানাপ)নামের গবেষণা সংস্থা ‘সোয়িং হার্ম: দ্য মাল্টিফেসেটেড ইমপ্যাক্ট অব পেস্টিসাইডস ইন ফোর কান্ট্রিজ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছে, যা এসব
১ দিন আগেসূর্যোদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এবার যে নববর্ষের আগমন, তা রাঙিয়ে দিয়ে যাক প্রত্যেক মানুষের জীবন। বাংলা নববর্ষের উজ্জীবনী সুধায় স্নান করুক মানুষ। আশা ও আকাঙ্ক্ষার স্বপ্নপূরণে সার্থক হোক পৃথিবী। গ্লানি, জ্বরা মুছে গিয়ে অগ্নিস্নানে ধরণিকে শুচি করার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ...
৩ দিন আগে