মযহারুল ইসলাম বাবলা
আমাদের জাতীয়তাবাদী লড়াই-সংগ্রামে নানাভাবেই ত্রিপুরা রাজ্যের সংশ্লিষ্টতা উপেক্ষা করা যাবে না। ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের যে বাঁক তৈরি করেছিল, সেটাও ছিল ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলাকে কেন্দ্র করে। ওই মামলায় অভিযুক্ত কর্নেল শওকত আলী প্রকাশ্যে এবং তাঁর বইয়ে লিখেছেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা মিথ্যা ছিল না। ওই মামলার পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৩ সালে আগরতলায় গিয়েছিলেন।
ত্রিপুরার সাংবাদিক হরিভূষণ পাল আগরতলার ‘জাগরণ’ পত্রিকার সম্পাদক জিতেন্দ্র চন্দ পালের বরাত দিয়ে তাঁর রচিত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ফিরে দেখা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘শেখ মুজিবের থাকার ব্যবস্থা করা হয় অরুন্ধতীনগরে উমেশ বাবুর [ত্রিপুরার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহ] বাসস্থানে। যেটি প্রকৃতপক্ষে শচীন্দ্রলাল বাবুর ভগ্নি হেমাঙ্গিনী দেবীর বাড়ি।’
সাংবাদিক এবিএম মূসার ‘আমার দেশ সে সময়’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ‘কুর্মিটোলা সেনানিবাসের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে শেখ মুজিব তাঁদেরকে মুক্ত করার জন্য সাংবাদিক আতাউস সামাদের মাধ্যমে মওলানা ভাসানীকে অনুরোধ করেন।’ ওই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মওলানা ভাসানী তীব্র গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিলের দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হককে সেনানিবাসে হত্য করা হয়। মিছিলে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় আসাদ, মতিউর প্রমুখকে। অপ্রতিরোধ্য গণ-অভ্যুত্থানে মামলা প্রত্যাহারে আইয়ুব খান বাধ্য হন। অভিযুক্ত সবাই বেকসুর মুক্তি পান। পদচ্যুত হয়ে ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হন সামরিক শাসক আইয়ুব খান।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা রাজ্যের অপরিসীম অবদানের কথাও ভোলার নয়। আমাদের সীমানার তিন দিকবেষ্টিত ত্রিপুরা রাজ্য। ১৯৭১ সালে আত্মরক্ষার্থে সীমানা পেরিয়ে ১৪ লাখ জনসংখ্যা-অধ্যুষিত ত্রিপুরার জনগণ আমাদের ১৬ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয়সহ সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল। মেলাঘরে গঠিত হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিশাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। মেলাঘরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছিল।
আমাদের বামপন্থীদের তখন প্রধান দুটি ধারা ছিল। একটি মস্কোপন্থী, অপরটি চীনপন্থী। মস্কোপন্থীরা সিপিআই দলের সহযোগিতা লাভ করেছিল। এতে তারা পৃথক প্রশিক্ষণশিবির, ট্রানজিট ক্যাম্প গঠন করতে পেরেছিল। বাংলাদেশের প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়ন সহানুভূতিশীল হওয়ায় তাদের কর্মকাণ্ড সর্বক্ষেত্রেই উন্মুক্ত হয়ে যায়। অপরদিকে চীনপন্থীদের চরম বৈরী পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছিল। কারণ, চীনের অবস্থান ছিল পাকিস্তানের পক্ষে।
আগরতলায় চীনপন্থীদের সাহায্য-সহযোগিতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন সদ্য প্রয়াত সিপিএমের ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড গৌতম দাশ। সিপিএম নেতা কমরেড নৃপেন চক্রবর্তীর নির্দেশে তিনি আশ্রয়সহ সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলেন।
বাদিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রমুখের সহযোগিতায়ও সক্রিয় ছিলেন। আগরতলার মেলারমাঠের সিপিএমের রাজ্য কমিটির অফিসে কয়েকবার তাঁর সঙ্গে নানা বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনাকালে জেনেছিলাম, ঢাকার প্রেসক্লাবে বোমার সেলে আহত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ আগরতলা পৌঁছে তাঁরই আশ্রয়ে ছিলেন। তবে আঘাতের স্থানে পচন ধরলে গৌতম দাশ কালবিলম্ব না করে ফয়েজ আহমদকে গাড়ি করে ধর্মনগরে নিয়ে গিয়ে কলকাতাগামী ট্রেনে তুলে দিয়েছিলেন। কলকাতায় চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ফয়েজ ভাই স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে যুক্ত হন এবং রণাঙ্গনে গিয়ে যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করে স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচার করেন। সাংবাদিক কামাল লোহানীও আগরতলা গিয়ে গৌতম দাশের আশ্রয়ে থেকে পরে কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে যোগ দেন। ভাসানীর অনুসারী যাঁরা আগরতলায় গিয়েছিলেন, তাঁদের সবারই আশ্রয় জুটেছিল গৌতম দাশের প্রত্যক্ষ সহায়তায়। আগরতলায় গৌতম দাশের আশ্রয়ে চীনপন্থী নেতাদের তালিকা দীর্ঘতর বলেই সেটা প্রকাশে বিরত রইলাম। তাঁর সহযোগিতায় প্রচুর চীনপন্থী মেলাঘর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণের সুযোগ লাভ করেছিলেন।
কমরেড গৌতম দাশ আরও বলেছিলেন, ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাক-ভারত যুদ্ধের কথা। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাদের রিপোর্টে ভারত সরকারকে জানিয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তান সম্পূর্ণরূপে অরক্ষিত। ভারতীয় বাহিনীর পক্ষে অনায়াসে পূর্ব পাকিস্তান দখলে নেওয়া সম্ভব। ত্রিপুরার রাজনৈতিক নেতা ও জনগণ বাঙালি-অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাই তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ ও দখলের কোনো দাবি তোলেননি।
উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর বিভক্তিকরণের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য ভেঙে রাজ্য সৃষ্টিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অখণ্ড ভারত রক্ষার তাগিদেই করেছিল। উত্তর-পূর্বের কতিপয় রাজ্য ভারত রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছিল। ভারত সরকার কঠোর হস্তে ওই সব আন্দোলন দমন করার ফলে তারা সশস্ত্র পন্থা গ্রহণ করে। বাংলাদেশের জেনারেল জিয়া, এরশাদ ও বিএনপি সরকার তাদের আশ্রয় দিয়ে নানাভাবে মদদ দিয়েছিল। বাংলাদেশের ভূখণ্ড সশস্ত্র পন্থা অবলম্বনকারীদের জন্য বেশ কটি সামরিক প্রশিক্ষণশিবির স্থাপনের সুযোগসহ অস্ত্র সরবরাহে ভূমিকা পালন করেছিল। পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ অস্ত্র সরবরাহ করত সশস্ত্রপন্থীদের। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সব সামরিক প্রশিক্ষণশিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কতিপয়কে আটক করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরও করেছে। ভারত সরকারের অনুরোধক্রমে সশস্ত্রপন্থীদের বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ উচ্ছেদের কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতে স্থিতি ফিরে এসেছে। একমাত্র বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ভূমিকার জন্যই উত্তর-পূর্ব ভারত এখন শান্ত-স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। সশস্ত্রপন্থীদের জন্য ভারত সরকারকে সামরিক খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হতো। সামরিক সেই ব্যয়াধিক্য থেকে ভারত রাষ্ট্রের মুক্তি লাভ ঘটেছে।
কমরেড গৌতম দাশের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল। আগরতলার মেলারমাঠের সিপিএমের রাজ্য দপ্তরে সাক্ষাৎ, দীর্ঘ আলোচনা। ঢাকায় ফিরে আসার পর প্রায়ই ফোনালাপ হতো। হায়দার আকবর খান রনো ভাই করোনায় আক্রান্ত হলে তিনি আমাকে তাঁর শারীরিক অবস্থা প্রতিদিন জানানোর অনুরোধ করেন। রনো ভাই সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। হঠাৎ হায়দার আনোয়ার খান জুনো ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁকে সে সংবাদ জানানোর পর ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে তাঁর নিত্যকার সংবাদ জানানোর অনুরোধ করেন। আমি তাঁকে জুনো ভাইয়ের শারীরিক অবনতি এবং মৃত্যুর সংবাদ জানানোর পর ফোনে অনেকক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে যান।
ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক ভাইয়ের ঘরের মেঝেতে পড়ে কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ার সংবাদ জেনে তিনি কলকাতা থেকে অর্থোপেডিক সার্জন পাঠানোর উদ্যোগ নেন। এদিকে রফিক ভাইয়ের অপারেশন করে কৃত্রিম হাড় সংযোজন চূড়ান্ত হয়েছে জানাই। রফিক ভাইকে ফোন করা যাবে কি না? আমি সম্মতি জানালে তিনি ফোনে রফিক ভাইয়ের সঙ্গে বেশ কদিন নিয়মিত কথা বলেন।
১৬ সেপ্টেম্বর সকালে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড গৌতম দাশ কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু কমরেড গৌতম দাশের হঠাৎ চলে যাওয়া আমাদের যেমন ব্যথিত করেছে, তেমনি করেছে শোকাতুর। কমরেড গৌতম দাশের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর অকুণ্ঠ ভালোবাসা এবং লাল সালাম কমরেড।
আমাদের জাতীয়তাবাদী লড়াই-সংগ্রামে নানাভাবেই ত্রিপুরা রাজ্যের সংশ্লিষ্টতা উপেক্ষা করা যাবে না। ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের যে বাঁক তৈরি করেছিল, সেটাও ছিল ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলাকে কেন্দ্র করে। ওই মামলায় অভিযুক্ত কর্নেল শওকত আলী প্রকাশ্যে এবং তাঁর বইয়ে লিখেছেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা মিথ্যা ছিল না। ওই মামলার পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৩ সালে আগরতলায় গিয়েছিলেন।
ত্রিপুরার সাংবাদিক হরিভূষণ পাল আগরতলার ‘জাগরণ’ পত্রিকার সম্পাদক জিতেন্দ্র চন্দ পালের বরাত দিয়ে তাঁর রচিত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ফিরে দেখা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘শেখ মুজিবের থাকার ব্যবস্থা করা হয় অরুন্ধতীনগরে উমেশ বাবুর [ত্রিপুরার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহ] বাসস্থানে। যেটি প্রকৃতপক্ষে শচীন্দ্রলাল বাবুর ভগ্নি হেমাঙ্গিনী দেবীর বাড়ি।’
সাংবাদিক এবিএম মূসার ‘আমার দেশ সে সময়’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ‘কুর্মিটোলা সেনানিবাসের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে শেখ মুজিব তাঁদেরকে মুক্ত করার জন্য সাংবাদিক আতাউস সামাদের মাধ্যমে মওলানা ভাসানীকে অনুরোধ করেন।’ ওই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মওলানা ভাসানী তীব্র গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিলের দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হককে সেনানিবাসে হত্য করা হয়। মিছিলে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় আসাদ, মতিউর প্রমুখকে। অপ্রতিরোধ্য গণ-অভ্যুত্থানে মামলা প্রত্যাহারে আইয়ুব খান বাধ্য হন। অভিযুক্ত সবাই বেকসুর মুক্তি পান। পদচ্যুত হয়ে ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হন সামরিক শাসক আইয়ুব খান।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা রাজ্যের অপরিসীম অবদানের কথাও ভোলার নয়। আমাদের সীমানার তিন দিকবেষ্টিত ত্রিপুরা রাজ্য। ১৯৭১ সালে আত্মরক্ষার্থে সীমানা পেরিয়ে ১৪ লাখ জনসংখ্যা-অধ্যুষিত ত্রিপুরার জনগণ আমাদের ১৬ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয়সহ সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল। মেলাঘরে গঠিত হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিশাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। মেলাঘরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছিল।
আমাদের বামপন্থীদের তখন প্রধান দুটি ধারা ছিল। একটি মস্কোপন্থী, অপরটি চীনপন্থী। মস্কোপন্থীরা সিপিআই দলের সহযোগিতা লাভ করেছিল। এতে তারা পৃথক প্রশিক্ষণশিবির, ট্রানজিট ক্যাম্প গঠন করতে পেরেছিল। বাংলাদেশের প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়ন সহানুভূতিশীল হওয়ায় তাদের কর্মকাণ্ড সর্বক্ষেত্রেই উন্মুক্ত হয়ে যায়। অপরদিকে চীনপন্থীদের চরম বৈরী পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছিল। কারণ, চীনের অবস্থান ছিল পাকিস্তানের পক্ষে।
আগরতলায় চীনপন্থীদের সাহায্য-সহযোগিতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন সদ্য প্রয়াত সিপিএমের ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড গৌতম দাশ। সিপিএম নেতা কমরেড নৃপেন চক্রবর্তীর নির্দেশে তিনি আশ্রয়সহ সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলেন।
বাদিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রমুখের সহযোগিতায়ও সক্রিয় ছিলেন। আগরতলার মেলারমাঠের সিপিএমের রাজ্য কমিটির অফিসে কয়েকবার তাঁর সঙ্গে নানা বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনাকালে জেনেছিলাম, ঢাকার প্রেসক্লাবে বোমার সেলে আহত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ আগরতলা পৌঁছে তাঁরই আশ্রয়ে ছিলেন। তবে আঘাতের স্থানে পচন ধরলে গৌতম দাশ কালবিলম্ব না করে ফয়েজ আহমদকে গাড়ি করে ধর্মনগরে নিয়ে গিয়ে কলকাতাগামী ট্রেনে তুলে দিয়েছিলেন। কলকাতায় চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ফয়েজ ভাই স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে যুক্ত হন এবং রণাঙ্গনে গিয়ে যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করে স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচার করেন। সাংবাদিক কামাল লোহানীও আগরতলা গিয়ে গৌতম দাশের আশ্রয়ে থেকে পরে কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে যোগ দেন। ভাসানীর অনুসারী যাঁরা আগরতলায় গিয়েছিলেন, তাঁদের সবারই আশ্রয় জুটেছিল গৌতম দাশের প্রত্যক্ষ সহায়তায়। আগরতলায় গৌতম দাশের আশ্রয়ে চীনপন্থী নেতাদের তালিকা দীর্ঘতর বলেই সেটা প্রকাশে বিরত রইলাম। তাঁর সহযোগিতায় প্রচুর চীনপন্থী মেলাঘর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণের সুযোগ লাভ করেছিলেন।
কমরেড গৌতম দাশ আরও বলেছিলেন, ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাক-ভারত যুদ্ধের কথা। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাদের রিপোর্টে ভারত সরকারকে জানিয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তান সম্পূর্ণরূপে অরক্ষিত। ভারতীয় বাহিনীর পক্ষে অনায়াসে পূর্ব পাকিস্তান দখলে নেওয়া সম্ভব। ত্রিপুরার রাজনৈতিক নেতা ও জনগণ বাঙালি-অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাই তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ ও দখলের কোনো দাবি তোলেননি।
উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর বিভক্তিকরণের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য ভেঙে রাজ্য সৃষ্টিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অখণ্ড ভারত রক্ষার তাগিদেই করেছিল। উত্তর-পূর্বের কতিপয় রাজ্য ভারত রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছিল। ভারত সরকার কঠোর হস্তে ওই সব আন্দোলন দমন করার ফলে তারা সশস্ত্র পন্থা গ্রহণ করে। বাংলাদেশের জেনারেল জিয়া, এরশাদ ও বিএনপি সরকার তাদের আশ্রয় দিয়ে নানাভাবে মদদ দিয়েছিল। বাংলাদেশের ভূখণ্ড সশস্ত্র পন্থা অবলম্বনকারীদের জন্য বেশ কটি সামরিক প্রশিক্ষণশিবির স্থাপনের সুযোগসহ অস্ত্র সরবরাহে ভূমিকা পালন করেছিল। পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ অস্ত্র সরবরাহ করত সশস্ত্রপন্থীদের। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সব সামরিক প্রশিক্ষণশিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কতিপয়কে আটক করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরও করেছে। ভারত সরকারের অনুরোধক্রমে সশস্ত্রপন্থীদের বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ উচ্ছেদের কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতে স্থিতি ফিরে এসেছে। একমাত্র বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ভূমিকার জন্যই উত্তর-পূর্ব ভারত এখন শান্ত-স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। সশস্ত্রপন্থীদের জন্য ভারত সরকারকে সামরিক খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হতো। সামরিক সেই ব্যয়াধিক্য থেকে ভারত রাষ্ট্রের মুক্তি লাভ ঘটেছে।
কমরেড গৌতম দাশের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল। আগরতলার মেলারমাঠের সিপিএমের রাজ্য দপ্তরে সাক্ষাৎ, দীর্ঘ আলোচনা। ঢাকায় ফিরে আসার পর প্রায়ই ফোনালাপ হতো। হায়দার আকবর খান রনো ভাই করোনায় আক্রান্ত হলে তিনি আমাকে তাঁর শারীরিক অবস্থা প্রতিদিন জানানোর অনুরোধ করেন। রনো ভাই সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। হঠাৎ হায়দার আনোয়ার খান জুনো ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁকে সে সংবাদ জানানোর পর ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে তাঁর নিত্যকার সংবাদ জানানোর অনুরোধ করেন। আমি তাঁকে জুনো ভাইয়ের শারীরিক অবনতি এবং মৃত্যুর সংবাদ জানানোর পর ফোনে অনেকক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে যান।
ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক ভাইয়ের ঘরের মেঝেতে পড়ে কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ার সংবাদ জেনে তিনি কলকাতা থেকে অর্থোপেডিক সার্জন পাঠানোর উদ্যোগ নেন। এদিকে রফিক ভাইয়ের অপারেশন করে কৃত্রিম হাড় সংযোজন চূড়ান্ত হয়েছে জানাই। রফিক ভাইকে ফোন করা যাবে কি না? আমি সম্মতি জানালে তিনি ফোনে রফিক ভাইয়ের সঙ্গে বেশ কদিন নিয়মিত কথা বলেন।
১৬ সেপ্টেম্বর সকালে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড গৌতম দাশ কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু কমরেড গৌতম দাশের হঠাৎ চলে যাওয়া আমাদের যেমন ব্যথিত করেছে, তেমনি করেছে শোকাতুর। কমরেড গৌতম দাশের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর অকুণ্ঠ ভালোবাসা এবং লাল সালাম কমরেড।
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
৩ ঘণ্টা আগেমানুষের জীবনে আতঙ্ক বা ভয় একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়। পারিপার্শ্বিকতার কারণে ছোটবেলা থেকেই ভূত-প্রেত, দেও-দৈত্য, রাক্ষস-খোক্কস প্রভৃতি শব্দ ও কল্পিত ভয়ংকর রূপ বা চেহারা অন্তরে গেঁথে যায় এবং সেখান থেকেই আতঙ্কের যাত্রা হয়েছে শুরু। একটু উনিশ-বিশ হলেই ভয় লাগে, বুক ধড়ফড় করে ওঠে।
৩ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছে। পুরো বিশ্বের নজর ছিল সেদিকে। সাধারণত যেটা হয়, দুই দেশের নেতারা যখন মুখোমুখি হন, তখন বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বসেন হিসাবনিকাশে।
৩ ঘণ্টা আগেপ্রায় সময়ই খবর হয়, যানজটের কারণে রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পারে না অ্যাম্বুলেন্স এবং পথেই রোগীর মৃত্যু। ২০১৮ সালে সড়ক আন্দোলনের সময়টায় যখন দ্রুত ও সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আন্দোলনকারীরা আলাদা লেন করে দিল...
৪ ঘণ্টা আগে