Ajker Patrika

কৌতুকের রাজনীতি রাজনীতির কৌতুক

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, ০৭: ৫৫
কৌতুকের রাজনীতি রাজনীতির কৌতুক

—হ্যালো, হ্যালো শব্দযন্ত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে।

হ্যাঁ, যেকোনো অনুষ্ঠান শুরুর আগে মাইক্রোফোন পরীক্ষার এমন ঘোষণা অনেকেই শুনেছেন। বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে গণমাধ্যমে খবর আসে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব রাত ৮টায় সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনসংক্রান্ত বিশেষ ঘোষণা দেবেন। অনেকেই উৎসাহিত হয়ে উঠলেন। সাংবাদিকদের তৎপরতা বেড়ে গেল। নির্বাচনের দিন-তারিখ বুঝি ঠিক হয়ে গেল! কীভাবে ব্রেকিং নিউজ দেওয়া হবে, সেসব পরিকল্পনাও হয়ে গেল! নির্বাচনে আগ্রহী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের চোখেমুখে আনন্দের রশ্মি। বিলম্বে নির্বাচন চাওয়া নেতাদের ফোন ব্যস্ত হয়ে উঠল—ব্যাপারটা কী, কোথায় আবার অঘটন ঘটল! এক ধরনের টান টান উত্তেজনার মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব জানালেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের সব প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ। তাহলে নির্বাচন কবে? আবারও উত্তেজনা! মাইক্রোফোন পরীক্ষা হলো, অনুষ্ঠান শুরু হবে কখন? জানা গেল, নির্বাচন হবে সেই ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিলে।

নির্বাচনের দিন-তারিখ নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও ভোটভিখারিরা মাঠে নেমে পড়েছেন ঠিকই। বিএনপি নেতা-কর্মীরা খোশ মেজাজে আছেন। তাঁরা ধরেই নিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচনের মাঠে তাঁরা হারার চিন্তা করতে পারেন না। ওদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম কামান দেগেই চলেছেন। তিনি বলেছেন, চোর ও দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিতরা ক্ষমতায় গেলে দেশ আবারও দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসন দেশের মানুষ দেখেছেন। নতুন করে তাদের আর পরীক্ষা নেওয়ার কিছু নেই। তাই ইসলামি দলগুলোকে এবার দেশের মানুষ দায়িত্ব দিতে চায়।

বিএনপির উদ্দেশে সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, তাদের চাঁদাবাজিতে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। তাদের কারণে লোকজন দোকানপাট খুলতে পারে না। অথচ নিজ দলের নেত্রীর সম্মান তারা রাখতে পারেনি। তাদের নেতা দেশে পর্যন্ত ফিরতে পারেনি। সুতরাং যাদের কাছে দল ও নেতারা নির্ভরযোগ্য নয়, তাদের কাছে দেশের মানুষেরও নির্ভরতার কিছু নেই।

সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম আরও বলেন, দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ইসলামি দলগুলো এলে সাম্য ও ন্যায়ের পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশ পরিচালনা করবে। কোনো গরিব থাকবে না দেশে। ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য নিরসন করে সব ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হবে।

হুজুরের এই উদ্দীপনাময় ও আশাব্যঞ্জক বক্তৃতায় দেশের মানুষের মধ্যে কতটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে পারছে, তা মাপা সম্ভব হয়নি।

তবে হঠাৎ মনে পড়ল একটি কৌতুক। এটা নতুন নয়। আসলে পুরোনো এই পৃথিবীতে কোনো কিছুই নতুন নয়। পুরোনো জিনিসই নতুন করে ঘুরেফিরে আসে। তো, সেই কৌতুকটি হলো: জেলে এক নতুন কয়েদি এল। তাকে দেখে এগিয়ে এল বয়স্ক কয়েদি—

‘কী করেছিলে?’

‘একটা দোকান লুট করেছিলাম।’

‘আরে ধুর ধুর, দোকান লুট, মানে ছিঁচকে চোর। দেশে এত এত ব্যাংক থাকতে লুট করতে গেলে দোকান?’

627_1072025_33246070

হতাশ কণ্ঠে নতুন কয়েদি বলল, ‘ব্যাংকে টাকা থাকলে ব্যাংকেই হানা দিতাম। দেশের সব ব্যাংকের সব টাকা তো নেতারা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন। ব্যাংকে আর টাকা কোথায়?’

ধরা যাক, পরের নির্বাচনে ক্ষমতায় গেল ইসলামি দলগুলো। দেশে কি তখন গরিব থাকবে না? নাকি তখনো মানুষকে জিজ্ঞেস করতে হবে, ‘হুজুর, আপনি বলেছিলেন আপনারা ক্ষমতায় গেলে দেশে কোনো গরিব থাকবে না। তাহলে আমি এখন ভিক্ষা করছি কেন?’

হুজুর হয়তো তসবি হাতে বলবেন, ‘আরে বোকা, সব আল্লাহর হুকুম। হাতের পাঁচ আঙুল কি এক সমান হয়? গাছতলা আর বহুতলার ব্যবধান কোনো দিন ঘুচবে না।’

ক্ষমতায় যাওয়ার আগে সবাই বলে—আমরা ক্ষমতা পেলে দেশ বদলে ফেলব। কেউ বলে ‘ইসলামি রাষ্ট্র করব’, কেউ বলে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব’, কেউ বলে ‘ডিজিটালকে স্মার্ট করব’।

কিন্তু ক্ষমতা বদলের পর দেখা যায়, যথা পূর্বং, তথা পরং।

মনে আছে তো সেই কৌতুকটির কথা? নির্বাচনে এ দলকে হারিয়ে ক্ষমতার মসনদে বি দল। সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে আর্মি নামানো হয়েছে। সন্দেহবশত একজন পথচারীকে ধরল সেনা সদস্যরা। তল্লাশি করে কিছু পাওয়া গেল না। ছেড়ে দেওয়ার আগে পথচারীকে দশবার কান ধরে ওঠবস

করতে বলা হলো। লোকটি দশবারের জায়গায় বিশবার ওঠবস করল।

‘ওকি আপনাকে দশবার করতে বললাম, বিশবার করলেন কেন?’

‘দশবার আপনারা বললেন তাই, আর দশবার করলাম বি দলকে ভোট দিয়েছি সে জন্য।’

দেশের অবস্থা সম্পর্কে এক ত্রিকালদর্শী ব্যক্তিকে মন্তব্য করতে বলা হলে তিনি বললেন,

‘দেশে আর রাজনীতি নাই, কেবল কৌতুকই আছে। শুধু ভোট দেওয়ার পর বুঝি—এই কৌতুকটার পাঞ্চ লাইন ছিল আমার জীবন!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

পারটেক্স এমডি রুবেল আজিজের ১১৬ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

পাওনা টাকা চাওয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধরের পর বললেন, ‘আমি যুবদলের সভাপতি, জানস?’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত