ফারুক মেহেদী
করোনার দেড় বছর পর মোটামুটি সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা, অফিস-আদালত সবই এখন পুরোদমে চালু হয়েছে। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হলেও অর্থনীতি স্বাভাবিক হয়েছে বলা যাবে না। আর শিগগিরই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে, এমনটিও মনে করার কারণ নেই। এখন সবাই গত দেড় বছরের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কবে নাগাদ তা পুরোপুরি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মূলত করোনাই সার্বিক অর্থনীতিকে পিছিয়ে দিয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়; বৈশ্বিক অর্থনীতিই আক্রান্ত হয়েছে করোনার ছোবলে। তবে বাংলাদেশ ততটা আক্রান্ত হয়নি যতটা বিশ্বের অন্য অনেক দেশে হয়েছে। তারপরও অর্থনীতিতে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা সামলে উঠতে একটা সময় তো লাগবেই।
আমরা যখন করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার কথা বলছি, আর আপাত দৃষ্টিতে মনে করছি সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে; ঠিক তখনই অর্থনীতিতে একটি নীরব চাপ অনুভূত হচ্ছে! গত এক সপ্তাহে দেশের কয়েকজন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হচ্ছে, তা এখনো হয়তো অনেকের দৃষ্টির আড়ালে, কিন্তু ক্রমেই তা অর্থনীতিতে রেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে। কেন অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হচ্ছে? কীভাবে তৈরি হচ্ছে এ চাপ?
বিশ্ববাজারে এখন জ্বালানি তেলের দাম হু হু করে বাড়ছে। গত তিন বছরের মধ্যে ব্যারেলপ্রতি দাম রেকর্ড ৮০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২০ সালে যেখানে ২৫ ডলারে নেমে এসেছিল দাম, তা এখন ৮০ ডলার ছাড়িয়ে। ফলে বৈশ্বিকভাবে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে সব ধরনের পণ্যে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সরাসরি জ্বালানি তেলের পেছনে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ বেড়ে যাচ্ছে, এতে সরকারের লোকসানের পাশাপাশি নিত্যপণের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশ যে কয়টি পণ্য বিপুল হারে আমদানি করে, বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল, জ্বালানি তেল, চিনি, ভোজ্যতেল, গম, তুলা ইত্যাদি আমদানিতে ব্যয় বাড়ছে।
পাশাপাশি কয়েক মাস ধরে পণ্য পরিবহন বা ফ্রেইটের খরচও মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। বিভিন্ন হিসাব থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে ক্রুড অয়েলের দাম অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়েছে। গমের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ। তুলার দাম প্রতি পাউন্ডে বেড়েছে প্রায় ১ ডলার, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পণ্য পরিবহনের খরচ বা ফ্রেইট। এ সময়ে ফ্রেইট প্রায় তিন গুণ বা তার চেয়েও বেশি বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। ফলে এসব পণ্যের পেছনে ডলার খরচ হয়ে যাচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি হারে। এতে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। পণ্য আমদানির পেছনে ডলার খরচের পাশাপাশি সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করায় মানুষের বিদেশ ভ্রমণ বাড়ছে, বিদেশে বেড়ানো, পড়াশোনার জন্য বিদেশযাত্রার হার বাড়ছে। এর পেছনেও ডলার খরচ বাড়ছে। ফলে সম্প্রতি ডলারের দামও বাড়ছে। আনুষ্ঠানিক বাজারে প্রতি ডলার ৮৫ টাকার বেশি, তবে খোলাবাজারে এর দাম আরও বেড়ে প্রায় ৮৯ টাকায় পৌঁছেছে।
সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার মজুতে একটা টান পড়বে সামনের দিনগুলোতে, এটা বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে। একদিকে ডলারের চাহিদা বাড়ছে, বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে ডলার সরবরাহের পথ সংকুচিত হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। করোনার কারণে চলাচল বন্ধ থাকায় অবৈধ বা হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর সুযোগ কমে গিয়েছিল। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার বেশি ছিল। অথচ সবকিছু স্বাভাবিক হতে না হতেই তিন মাস ধরে এ ধারা নিম্নমুখী। মানে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা কমে গেছে। আর জুলাই-আগস্ট সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি কমেছে প্রায় ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অথচ একই সময়ে আমদানি বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবে তা চাপ তৈরি হচ্ছে।
একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমছে, অন্যদিকে আমদানি ব্যয় বেশি হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের পেছনে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তা ভোক্তার ওপর মুদ্রাস্ফীতির চাপ তৈরি করছে। কারণ, প্রতিটি নিত্যপণ্য আগের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। করোনার কারণে গত দেড় বছরে মানুষের আয় কমেছে, অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। তাঁদের জীবনযাত্রা টিকিয়ে রাখতে কঠিন সংগ্রাম করছেন; সেখানে নতুন করে সব ধরনের পণ্যের পেছনে বাড়তি দাম দিচ্ছেন। এটা তাঁদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। একটা সময় চালের দাম সহনীয় থাকলেও বর্তমানে বাজারে চালের সরবরাহেও টান পড়েছে। ফলে সরকার বাজার স্বাভাবিক রাখতে বিপুল হারে চাল আমদানি করছে। চাল, তেল, চিনি, আটার মতো একেবারে অত্যাবশ্যক প্রায় প্রতিটি পণ্যের জন্য তাঁদের এখন অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এটা সামনের দিনগুলোতে দেশের মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটাও সরকারের জন্য নীরবে একটা চাপ তৈরি করছে।
সরকার সময়মতো পদক্ষেপ নেয় না। যখন সমস্যা প্রকট হয় তখন প্রতিক্রিয়া দেখায়। অর্থনীতিতে যে নীরব চাপ তৈরি হচ্ছে, এর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনার ঝুঁকি এখনো কেটে যায়নি। বিপুল পরিমাণ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের সবাইকে পুনর্বাসন করা সম্ভব হয়নি। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তাঁদের আবারও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চাপ আছে সরকারের ওপর। যেসব শিল্প ও সেবা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জন্য পুনরুদ্ধার কার্যক্রম কী হবে, সেটা এখনো ঠিক করা হয়নি। অথচ তা করার চাপ আছে। দেশি-বিদেশি, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে রাজস্ব আয়ের প্রবাহ বাড়ানো এ সময়ের একটি চ্যালেঞ্জ। ভারতে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে পেট্রলের দাম বেড়ে আরও একটি নতুন রেকর্ড হয়েছে। ডিজেলের দামও ওপরের দিকে ছুটছে। যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে সর্বোচ্চ দামের পুরোনো রেকর্ড।
ভারতে জ্বালানির দাম বাড়ার ফলে বাংলাদেশ থেকে তা পাচারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম ভারতের চেয়ে কম। ফলে বাংলাদেশ সরকার যদি ভর্তুকি দিয়ে আগের দামে জ্বালানি তেল বিক্রি করে, একটি চক্র তা ভারতে বেশি দামে বিক্রি করার জন্য পাচার করতে পারে। এর পাশাপাশি সরকারই বা কত দিন বাড়তি দামে জ্বালানি তেল কিনে এনে কম দামে বিক্রি করতে পারবে, সেটাও বিবেচনার বিষয়। এতে সরকারের ভর্তুকির চাপ বাড়বে। আবার দাম বাড়ালেও তা ভোক্তাকে সরাসরি আক্রান্ত করবে। তখন পরিবহন খরচ বাড়ার পাশাপাশি সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামও আরেক দফা বাড়বে। ফলে সাধারণ ভোক্তা সবদিক থেকে ভোগান্তিতে পড়বে। এটাও বেলা শেষে সরকারের জন্য চাপ তৈরি করবে। মোট কথা, করোনার চ্যালেঞ্জ না সামলাতেই নীরবে সরকারের সামনে আরও বড় অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এখন সরকার এসব চাপ সামলাতে কী ধরনের অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে, সেটাই দেখার বিষয়।
করোনার দেড় বছর পর মোটামুটি সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা, অফিস-আদালত সবই এখন পুরোদমে চালু হয়েছে। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হলেও অর্থনীতি স্বাভাবিক হয়েছে বলা যাবে না। আর শিগগিরই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে, এমনটিও মনে করার কারণ নেই। এখন সবাই গত দেড় বছরের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কবে নাগাদ তা পুরোপুরি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মূলত করোনাই সার্বিক অর্থনীতিকে পিছিয়ে দিয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়; বৈশ্বিক অর্থনীতিই আক্রান্ত হয়েছে করোনার ছোবলে। তবে বাংলাদেশ ততটা আক্রান্ত হয়নি যতটা বিশ্বের অন্য অনেক দেশে হয়েছে। তারপরও অর্থনীতিতে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা সামলে উঠতে একটা সময় তো লাগবেই।
আমরা যখন করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার কথা বলছি, আর আপাত দৃষ্টিতে মনে করছি সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে; ঠিক তখনই অর্থনীতিতে একটি নীরব চাপ অনুভূত হচ্ছে! গত এক সপ্তাহে দেশের কয়েকজন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হচ্ছে, তা এখনো হয়তো অনেকের দৃষ্টির আড়ালে, কিন্তু ক্রমেই তা অর্থনীতিতে রেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে। কেন অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হচ্ছে? কীভাবে তৈরি হচ্ছে এ চাপ?
বিশ্ববাজারে এখন জ্বালানি তেলের দাম হু হু করে বাড়ছে। গত তিন বছরের মধ্যে ব্যারেলপ্রতি দাম রেকর্ড ৮০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২০ সালে যেখানে ২৫ ডলারে নেমে এসেছিল দাম, তা এখন ৮০ ডলার ছাড়িয়ে। ফলে বৈশ্বিকভাবে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে সব ধরনের পণ্যে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সরাসরি জ্বালানি তেলের পেছনে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ বেড়ে যাচ্ছে, এতে সরকারের লোকসানের পাশাপাশি নিত্যপণের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশ যে কয়টি পণ্য বিপুল হারে আমদানি করে, বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল, জ্বালানি তেল, চিনি, ভোজ্যতেল, গম, তুলা ইত্যাদি আমদানিতে ব্যয় বাড়ছে।
পাশাপাশি কয়েক মাস ধরে পণ্য পরিবহন বা ফ্রেইটের খরচও মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। বিভিন্ন হিসাব থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে ক্রুড অয়েলের দাম অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়েছে। গমের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ। তুলার দাম প্রতি পাউন্ডে বেড়েছে প্রায় ১ ডলার, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পণ্য পরিবহনের খরচ বা ফ্রেইট। এ সময়ে ফ্রেইট প্রায় তিন গুণ বা তার চেয়েও বেশি বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। ফলে এসব পণ্যের পেছনে ডলার খরচ হয়ে যাচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি হারে। এতে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। পণ্য আমদানির পেছনে ডলার খরচের পাশাপাশি সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করায় মানুষের বিদেশ ভ্রমণ বাড়ছে, বিদেশে বেড়ানো, পড়াশোনার জন্য বিদেশযাত্রার হার বাড়ছে। এর পেছনেও ডলার খরচ বাড়ছে। ফলে সম্প্রতি ডলারের দামও বাড়ছে। আনুষ্ঠানিক বাজারে প্রতি ডলার ৮৫ টাকার বেশি, তবে খোলাবাজারে এর দাম আরও বেড়ে প্রায় ৮৯ টাকায় পৌঁছেছে।
সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার মজুতে একটা টান পড়বে সামনের দিনগুলোতে, এটা বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে। একদিকে ডলারের চাহিদা বাড়ছে, বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে ডলার সরবরাহের পথ সংকুচিত হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। করোনার কারণে চলাচল বন্ধ থাকায় অবৈধ বা হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর সুযোগ কমে গিয়েছিল। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার বেশি ছিল। অথচ সবকিছু স্বাভাবিক হতে না হতেই তিন মাস ধরে এ ধারা নিম্নমুখী। মানে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা কমে গেছে। আর জুলাই-আগস্ট সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি কমেছে প্রায় ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অথচ একই সময়ে আমদানি বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবে তা চাপ তৈরি হচ্ছে।
একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমছে, অন্যদিকে আমদানি ব্যয় বেশি হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের পেছনে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তা ভোক্তার ওপর মুদ্রাস্ফীতির চাপ তৈরি করছে। কারণ, প্রতিটি নিত্যপণ্য আগের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। করোনার কারণে গত দেড় বছরে মানুষের আয় কমেছে, অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। তাঁদের জীবনযাত্রা টিকিয়ে রাখতে কঠিন সংগ্রাম করছেন; সেখানে নতুন করে সব ধরনের পণ্যের পেছনে বাড়তি দাম দিচ্ছেন। এটা তাঁদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। একটা সময় চালের দাম সহনীয় থাকলেও বর্তমানে বাজারে চালের সরবরাহেও টান পড়েছে। ফলে সরকার বাজার স্বাভাবিক রাখতে বিপুল হারে চাল আমদানি করছে। চাল, তেল, চিনি, আটার মতো একেবারে অত্যাবশ্যক প্রায় প্রতিটি পণ্যের জন্য তাঁদের এখন অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এটা সামনের দিনগুলোতে দেশের মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটাও সরকারের জন্য নীরবে একটা চাপ তৈরি করছে।
সরকার সময়মতো পদক্ষেপ নেয় না। যখন সমস্যা প্রকট হয় তখন প্রতিক্রিয়া দেখায়। অর্থনীতিতে যে নীরব চাপ তৈরি হচ্ছে, এর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনার ঝুঁকি এখনো কেটে যায়নি। বিপুল পরিমাণ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের সবাইকে পুনর্বাসন করা সম্ভব হয়নি। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তাঁদের আবারও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চাপ আছে সরকারের ওপর। যেসব শিল্প ও সেবা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জন্য পুনরুদ্ধার কার্যক্রম কী হবে, সেটা এখনো ঠিক করা হয়নি। অথচ তা করার চাপ আছে। দেশি-বিদেশি, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে রাজস্ব আয়ের প্রবাহ বাড়ানো এ সময়ের একটি চ্যালেঞ্জ। ভারতে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে পেট্রলের দাম বেড়ে আরও একটি নতুন রেকর্ড হয়েছে। ডিজেলের দামও ওপরের দিকে ছুটছে। যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে সর্বোচ্চ দামের পুরোনো রেকর্ড।
ভারতে জ্বালানির দাম বাড়ার ফলে বাংলাদেশ থেকে তা পাচারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম ভারতের চেয়ে কম। ফলে বাংলাদেশ সরকার যদি ভর্তুকি দিয়ে আগের দামে জ্বালানি তেল বিক্রি করে, একটি চক্র তা ভারতে বেশি দামে বিক্রি করার জন্য পাচার করতে পারে। এর পাশাপাশি সরকারই বা কত দিন বাড়তি দামে জ্বালানি তেল কিনে এনে কম দামে বিক্রি করতে পারবে, সেটাও বিবেচনার বিষয়। এতে সরকারের ভর্তুকির চাপ বাড়বে। আবার দাম বাড়ালেও তা ভোক্তাকে সরাসরি আক্রান্ত করবে। তখন পরিবহন খরচ বাড়ার পাশাপাশি সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামও আরেক দফা বাড়বে। ফলে সাধারণ ভোক্তা সবদিক থেকে ভোগান্তিতে পড়বে। এটাও বেলা শেষে সরকারের জন্য চাপ তৈরি করবে। মোট কথা, করোনার চ্যালেঞ্জ না সামলাতেই নীরবে সরকারের সামনে আরও বড় অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এখন সরকার এসব চাপ সামলাতে কী ধরনের অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে, সেটাই দেখার বিষয়।
অনেকেরই সংশয় ছিল। কারও কিছুটা হালকা, কারও আবার গভীর। কেউ কেউ শঙ্কিতও ছিলেন। দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নিয়ে। এদের সবার সেই সব সংশয় ও শঙ্কা এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। ফলে দেশের শাসনব্যবস্থার গণতান্ত্রিক রূপান্তরকামী সাধারণ মানুষের জন্য তা হয়ে উঠেছে অশনিসংকেত। হ্যাঁ, এই কথাগুলো হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয়
৭ ঘণ্টা আগেন্যায়বিচার, সংস্কার ও বৈষম্য বিলোপের দাবি থেকে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের অনেকেই অপরাধ চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) নেতার উন্মুক্ত চাঁদাবাজির ঘটনা এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
৭ ঘণ্টা আগেআমাদের সর্বসাধারণের মনে একটা প্রশ্ন সব সময়ই ঘুরপাক খায়—ভগবান যেহেতু অজ, তাহলে তাঁর আবার জন্ম কিসের? এই প্রশ্নের উত্তর ভগবান নিজেই গীতায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। গীতায় ভগবান বলেছেন, তিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি অজ অর্থাৎ জন্মরহিত হওয়া সত্ত্বেও এই জড়জগতে জন্মগ্রহণ করেন। কেন তিনি জন্মগ্রহণ
৭ ঘণ্টা আগেএকসময় ভরা মৌসুমে এ দেশের সাধারণ মানুষও ইলিশ কিনতে পারত। কিন্তু অনেক বছর থেকে ইলিশ শুধু উচ্চবিত্ত মানুষেরাই কিনতে পারছে। বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় এর আকাশছোঁয়া দামের কারণে এখন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে নেই ইলিশ। এখন ভরা মৌসুমে ইলিশের দাম বাড়া নিয়ে ১৫ আগস্ট আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ
৭ ঘণ্টা আগে