অরুণ কর্মকার
অনেকেরই সংশয় ছিল। কারও কিছুটা হালকা, কারও আবার গভীর। কেউ কেউ শঙ্কিতও ছিলেন। দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নিয়ে। এদের সবার সেই সব সংশয় ও শঙ্কা এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। ফলে দেশের শাসনব্যবস্থার গণতান্ত্রিক রূপান্তরকামী সাধারণ মানুষের জন্য তা হয়ে উঠেছে অশনিসংকেত। হ্যাঁ, এই কথাগুলো হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সেই নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছেন। সে ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে চিঠি পেয়ে নির্বাচন কমিশনও সেইভাবে প্রস্তুতি শুরু করেছে। এই দিন তিনেক আগেও মালয়েশিয়া সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টা সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখন সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য প্রস্তুত।
কিন্তু ঘটনাবলি তো তার আগেই অন্যদিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। নির্বাচনের সময় ঘোষণার দু-এক দিনের মধ্যেই জামায়াতে ইসলামী প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্র এবং এখন পর্যন্ত অঘোষিত জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির দাবিতে দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। একই সঙ্গে জামায়াত এই ঘোষণাও করে রেখেছে যে, তাদের দলীয় অবস্থান অনুযায়ী সংসদের উভয় কক্ষেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এখন তারা সেই আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন করছে বলেও শোনা যাচ্ছে। জামায়াতের এই আন্দোলনমুখী অবস্থান বিশেষভাবে লক্ষণীয় এই কারণে যে, দলটি জুলাই অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও সফলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ সমর্থক এবং দেশে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে বিশ্বাসী। তবে তারা আগামী ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে উপরি উক্ত কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষের দাবি তুলেছে।
দ্বিতীয়ত, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ১০ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘অনেকে মনে করছেন যে রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়ে গেছে। নির্বাচন হবে। কেউ সরকারে যাবে, কেউ বিরোধী দলে। পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে এখনো মেঘ ঘনিয়ে আছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেও শঙ্কা কাটেনি। দেশে আগামী দিনে নানা ধরনের রাজনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে এবং সেই সংকট থেকে দেশ আবারও ওয়ান-ইলেভেন কিংবা ফ্যাসিবাদের দিকে যেতে পারে।’ নুরুল হক নুর হয়তো একটি ছোট দলের নেতা। কিন্তু তাঁর কথা এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত করা এবং সংঘটনের ক্ষেত্রে তাঁর এবং তাঁর দলের বিশেষ ভূমিকা ছিল। অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পরেও অভ্যুত্থানের স্ট্রাইকিং ফোর্স ছাত্র নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান মেন্টর ছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাঁর শঙ্কা তাই বিশেষ কিছুর ইঙ্গিতবহ হতে পারে বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে।
তৃতীয়ত, ছাত্র নেতৃত্বের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ মেন্টর লেখক ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার ১২ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো পরিবেশ বিরাজমান নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সরকারের অনেক অর্জন থাকলেও রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা গ্রহণযোগ্য নয়।...শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া সংবিধানের অধীনে কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। আমলা বেচাকেনা করে নির্বাচনী বৈতরণি পার করার পুরোনো কৌশল জনগণ মেনে নেবে না। গণসার্বভৌমত্ব কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’ তিনি ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সংবিধান সংশোধনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের অধীন করেছেন।
চতুর্থত, ওই একই দিনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না।’ এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুব শক্তি আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয় তাহলে আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, সংস্কারের জন্য একটি নতুন সংবিধানের জন্য রক্ত দিয়েছিল, সেই মরদেহটা সরকারের ফেরত দিতে হবে। একই সংবিধানে একই ফ্যাসিবাদী সিস্টেমে নির্বাচনে যাচ্ছি। তাহলে এতগুলো মানুষের শহীদ হওয়ার দরকার কী ছিল? ...আর একটা ফ্যাসিবাদের কারখানা রয়ে গেছে এখনো—বঙ্গভবন। এটার পতন আপনাদের হাত ধরে হবে ইনশা আল্লাহ।’
পঞ্চমত, ওই একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন চাই। তবে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জুলাই সনদে একবিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না। জুলাই সনদের যে উদ্দেশ্য, তা প্রতিষ্ঠা করেই এনসিপি নির্বাচনে অংশ নেবে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে পারবে না।’ এনসিপির এই শীর্ষ নেতাও বিদ্যমান ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনকে কার্যত নাকচ করে দিয়েছেন।
ষষ্ঠত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১৩ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দাবিটি নতুন করে তুলেছে। এ ছাড়া তারা জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় ও সব স্থানীয় নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ
বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে। এসব দাবিতে তারা অবস্থান নিলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনিশ্চিতই হয়ে যায়। একসময়ের কট্টর জামায়াতবিরোধী এই ইসলামি দলটির সঙ্গে সম্প্রতি জামায়াত এবং এনসিপির রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা লক্ষণীয়।
এগুলো তো অত্যন্ত স্পষ্ট এবং সরাসরি অশনিসংকেত হিসেবে প্রতীয়মান। এ ছাড়া কিছু সংকেত পাওয়া যাচ্ছে পরোক্ষভাবে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আতিথ্য গ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়া। অন্য কিছু দূতাবাসেও তাঁদের যাতায়াতের খবরাখবর প্রায় নিয়মিতই প্রকাশিত হয়। তবে সম্প্রতি সংবিধান সংস্কার কমিশনের সভাপতি এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আতিথ্য গ্রহণ সবারই বিশেষ নজর কেড়েছে।
এখন কথা হলো, জুলাই অভ্যুত্থানের মতো একটি গণ-অভ্যুত্থানের পরও যদি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এবং নেতাদের সংবিৎ না ফেরে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে যদি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে জটিল করে তোলা হয়, সেটাও জাতির জন্য অশনিসংকেতই বটে।
লেখক:– জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
অনেকেরই সংশয় ছিল। কারও কিছুটা হালকা, কারও আবার গভীর। কেউ কেউ শঙ্কিতও ছিলেন। দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নিয়ে। এদের সবার সেই সব সংশয় ও শঙ্কা এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। ফলে দেশের শাসনব্যবস্থার গণতান্ত্রিক রূপান্তরকামী সাধারণ মানুষের জন্য তা হয়ে উঠেছে অশনিসংকেত। হ্যাঁ, এই কথাগুলো হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সেই নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছেন। সে ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে চিঠি পেয়ে নির্বাচন কমিশনও সেইভাবে প্রস্তুতি শুরু করেছে। এই দিন তিনেক আগেও মালয়েশিয়া সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টা সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখন সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য প্রস্তুত।
কিন্তু ঘটনাবলি তো তার আগেই অন্যদিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। নির্বাচনের সময় ঘোষণার দু-এক দিনের মধ্যেই জামায়াতে ইসলামী প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্র এবং এখন পর্যন্ত অঘোষিত জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির দাবিতে দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। একই সঙ্গে জামায়াত এই ঘোষণাও করে রেখেছে যে, তাদের দলীয় অবস্থান অনুযায়ী সংসদের উভয় কক্ষেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এখন তারা সেই আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন করছে বলেও শোনা যাচ্ছে। জামায়াতের এই আন্দোলনমুখী অবস্থান বিশেষভাবে লক্ষণীয় এই কারণে যে, দলটি জুলাই অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও সফলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ সমর্থক এবং দেশে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে বিশ্বাসী। তবে তারা আগামী ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে উপরি উক্ত কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষের দাবি তুলেছে।
দ্বিতীয়ত, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ১০ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘অনেকে মনে করছেন যে রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়ে গেছে। নির্বাচন হবে। কেউ সরকারে যাবে, কেউ বিরোধী দলে। পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে এখনো মেঘ ঘনিয়ে আছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেও শঙ্কা কাটেনি। দেশে আগামী দিনে নানা ধরনের রাজনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে এবং সেই সংকট থেকে দেশ আবারও ওয়ান-ইলেভেন কিংবা ফ্যাসিবাদের দিকে যেতে পারে।’ নুরুল হক নুর হয়তো একটি ছোট দলের নেতা। কিন্তু তাঁর কথা এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত করা এবং সংঘটনের ক্ষেত্রে তাঁর এবং তাঁর দলের বিশেষ ভূমিকা ছিল। অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পরেও অভ্যুত্থানের স্ট্রাইকিং ফোর্স ছাত্র নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান মেন্টর ছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাঁর শঙ্কা তাই বিশেষ কিছুর ইঙ্গিতবহ হতে পারে বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে।
তৃতীয়ত, ছাত্র নেতৃত্বের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ মেন্টর লেখক ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার ১২ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো পরিবেশ বিরাজমান নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সরকারের অনেক অর্জন থাকলেও রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা গ্রহণযোগ্য নয়।...শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া সংবিধানের অধীনে কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। আমলা বেচাকেনা করে নির্বাচনী বৈতরণি পার করার পুরোনো কৌশল জনগণ মেনে নেবে না। গণসার্বভৌমত্ব কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’ তিনি ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সংবিধান সংশোধনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের অধীন করেছেন।
চতুর্থত, ওই একই দিনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না।’ এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুব শক্তি আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয় তাহলে আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, সংস্কারের জন্য একটি নতুন সংবিধানের জন্য রক্ত দিয়েছিল, সেই মরদেহটা সরকারের ফেরত দিতে হবে। একই সংবিধানে একই ফ্যাসিবাদী সিস্টেমে নির্বাচনে যাচ্ছি। তাহলে এতগুলো মানুষের শহীদ হওয়ার দরকার কী ছিল? ...আর একটা ফ্যাসিবাদের কারখানা রয়ে গেছে এখনো—বঙ্গভবন। এটার পতন আপনাদের হাত ধরে হবে ইনশা আল্লাহ।’
পঞ্চমত, ওই একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন চাই। তবে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জুলাই সনদে একবিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না। জুলাই সনদের যে উদ্দেশ্য, তা প্রতিষ্ঠা করেই এনসিপি নির্বাচনে অংশ নেবে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে পারবে না।’ এনসিপির এই শীর্ষ নেতাও বিদ্যমান ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনকে কার্যত নাকচ করে দিয়েছেন।
ষষ্ঠত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১৩ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দাবিটি নতুন করে তুলেছে। এ ছাড়া তারা জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় ও সব স্থানীয় নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ
বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে। এসব দাবিতে তারা অবস্থান নিলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনিশ্চিতই হয়ে যায়। একসময়ের কট্টর জামায়াতবিরোধী এই ইসলামি দলটির সঙ্গে সম্প্রতি জামায়াত এবং এনসিপির রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা লক্ষণীয়।
এগুলো তো অত্যন্ত স্পষ্ট এবং সরাসরি অশনিসংকেত হিসেবে প্রতীয়মান। এ ছাড়া কিছু সংকেত পাওয়া যাচ্ছে পরোক্ষভাবে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আতিথ্য গ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়া। অন্য কিছু দূতাবাসেও তাঁদের যাতায়াতের খবরাখবর প্রায় নিয়মিতই প্রকাশিত হয়। তবে সম্প্রতি সংবিধান সংস্কার কমিশনের সভাপতি এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আতিথ্য গ্রহণ সবারই বিশেষ নজর কেড়েছে।
এখন কথা হলো, জুলাই অভ্যুত্থানের মতো একটি গণ-অভ্যুত্থানের পরও যদি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এবং নেতাদের সংবিৎ না ফেরে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে যদি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে জটিল করে তোলা হয়, সেটাও জাতির জন্য অশনিসংকেতই বটে।
লেখক:– জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ন্যায়বিচার, সংস্কার ও বৈষম্য বিলোপের দাবি থেকে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের অনেকেই অপরাধ চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) নেতার উন্মুক্ত চাঁদাবাজির ঘটনা এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
৯ ঘণ্টা আগেআমাদের সর্বসাধারণের মনে একটা প্রশ্ন সব সময়ই ঘুরপাক খায়—ভগবান যেহেতু অজ, তাহলে তাঁর আবার জন্ম কিসের? এই প্রশ্নের উত্তর ভগবান নিজেই গীতায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। গীতায় ভগবান বলেছেন, তিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি অজ অর্থাৎ জন্মরহিত হওয়া সত্ত্বেও এই জড়জগতে জন্মগ্রহণ করেন। কেন তিনি জন্মগ্রহণ
৯ ঘণ্টা আগেএকসময় ভরা মৌসুমে এ দেশের সাধারণ মানুষও ইলিশ কিনতে পারত। কিন্তু অনেক বছর থেকে ইলিশ শুধু উচ্চবিত্ত মানুষেরাই কিনতে পারছে। বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় এর আকাশছোঁয়া দামের কারণে এখন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে নেই ইলিশ। এখন ভরা মৌসুমে ইলিশের দাম বাড়া নিয়ে ১৫ আগস্ট আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ
৯ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকায় ১৩ আগস্ট একটি সংবাদ পড়ে এবং এ বিষয়ে টিভি চ্যানেলের সংবাদ দেখে মর্মাহত হয়েছিলাম। এভাবে কেউ কোনো দেশের একটি প্রাকৃতিক সম্পদের বিনাশ ঘটাতে পারে? আজকের পত্রিকায় ‘সাদাপাথরের সৌন্দর্য হারানোর কান্না’ শিরোনামের সে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই শুরু হয় পাথর
১ দিন আগে