ড. মঞ্জুরে খোদা
জুলাই অভ্যুত্থান ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলাপ-তৎপরতা শুরু হয়। অবশেষে ২৮ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ নেতৃত্বে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি-এনসিপি) নামের সেই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। শুধু তা-ই নয়, এই সংগঠনের সাবেক সমন্বয়কদের নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ নামের একটি নতুন ছাত্রসংগঠনের জন্ম হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি। এই সংগঠনের আদর্শ-কর্মসূচি, মূল দর্শন ও নীতি কী, তা এখনো পরিষ্কার নয়। শিগগিরই হয়তো সেই বিষয়গুলো জানা যাবে। তবে এই বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা হচ্ছে। এই সংগঠনের নেতৃত্ব যেভাবে নতুন বাংলাদেশ ও নতুন রাজনীতির কথা বলছেন, সেটা নিয়ে মানুষের কৌতূহল অধিক। তাঁরা আসলে কী নতুন রাজনীতি জন্ম দিতে চাইছেন? অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল, গত সাত মাসে তার অনেকটাই মিলিয়ে গেছে। সেই কারণে নতুন দলের আত্মপ্রকাশে অনেকেই বলছেন, রাতারাতি একটি নতুন দল গঠন করার কাজটা যতটা সহজ, একটি নতুন রাজনীতি গড়ে তোলা ততটাই কঠিন।
একটি নতুন দল গঠনের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে তার মূলনীতি ঘোষণা ও গঠনপ্রক্রিয়া তৈরি করা। তার ভিত্তিতে জনমত গঠন ও ঘোষিত নীতি-কর্মসূচির আলোকে সম্মেলন-কনভেনশনের আহ্বান করা। সেখানে সদস্যদের মতামত ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচন ও সংগঠনের করণীয় ও লক্ষ্য অর্জনের কৌশল নির্ধারণ করা, এটাই সাধারণ রীতি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের নেতৃত্বে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ ও ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ ছাত্র ও অভিভাবক সংগঠনের জন্ম দেওয়া হলো, সে ক্ষেত্রে এমন কোনো কিছু অনুসরণ করা হয়নি। দুই সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ট জটিলতা ও দলাদলি হয়েছে, বিশেষ করে ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রীতিমতো প্রকাশ্যে সংঘাত পর্যন্ত হয়েছে। সংগঠনের আত্মপ্রকাশের শুরুতেই তাদের মধ্যে যে সংঘাতের ঘটনা ঘটল, তা প্রচণ্ড হতাশার। এই যদি নতুন সংগঠনের শুরুর চিত্র হয় তাহলে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে কীভাবে আশাবাদী হই?
যাঁরা এত দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠন বন্ধের কথা বলেছেন, হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে যে ৯ দফা দেওয়া হয়েছিল, তাতে ‘দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের’ কথা ছিল। তাঁরাই এখন ছাত্রসংগঠন করলেন। তারপর ছাত্রসংগঠনের প্রতিষ্ঠালগ্নেই যে দৃশ্য মানুষ দেখল, তা ছাত্রলীগের ভয়ংকর রূপের কথাই মনে করিয়ে দেয়নি কি?
একটি সংগঠনের মধ্যে মারামারি, দ্বন্দ্ব-বিভেদ হয় সাধারণত সংগঠনটির নীতি-আদর্শ ও নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়ার কারণে। নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া যদি সুষ্ঠু ও সুস্থ গণতান্ত্রিক হয় তাহলে সেখানে এসব হওয়ার কথা নয়। সংগঠনের উদ্দেশ্য যদি ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধার হয়, সেখানে যদি সামাজিক দায় না থাকে, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিই মুখ্য হয়ে ওঠে, তাহলে সংঘাত হবেই। ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে যে অভিযোগকে পুঁজি করে নতুন সংগঠনের জন্ম, সে-ও যদি একই রাজনীতি অনুসরণ করে, তাহলে সেখানে নতুনত্বের কী ঘটল? এই চিত্র কি ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে মানুষের মনে আরও নেতিবাচকতার জন্ম দেবে না?
জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অনেকের বক্তব্যে যেমন আশার কথা ছিল, আবার সেখানে কিছু বিষয় এসেছে যা অনেকের কাছে দুর্ভেদ্য ও অনভিপ্রেত। যেমন, সেখানে সেকেন্ড রিপাবলিক তথা দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেছেন যে তিনি বোঝেন না আসলে সেকেন্ড রিপাবলিক বিষয়টি কী। বিএনপির আরেক নেতা রিজভী বলেছেন, এরা সভায় অনেক ভালো ভালো কথা বলেছে কিন্তু তাদের বক্তব্যে কোনো রাজনৈতিক দর্শন তিনি পাননি।
নতুন বাংলাদেশ ও নতুন ধারার রাজনীতির কথা যাঁরা বলছেন তাঁদের কর্ম ও কথাবার্তায় তেমন ব্যতিক্রম কিছু চোখে পড়ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে তাঁরা বর্তমান পরিস্থিতিকে একটি সুযোগ মনে করছেন। কারণ, তাঁদেরই কোনো কোনো সহপাঠী-সহযোদ্ধা চাকরির সামান্য দাবি থেকে ক্ষমতার শীর্ষ পদে আছেন। সর্বোচ্চ বেতন-ভাতা-সম্মান, অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন, তাহলে তাঁরা কেন বঞ্চিত হবেন? সুতরাং যেকোনোভাবে রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে নেতৃত্ব অর্জন করতে পারলে সম্মান-প্রতিষ্ঠা, বিত্ত অর্জন করতে পারবেন—হয়তো এই মানসিকতা কাজ করছে।
ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন ও অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের আচরণ, জীবনযাপন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি নিয়ে প্রচারমাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে। সেটা হলে তাঁদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অতীত ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে কি পার্থক্য করার সুযোগ আছে? যেমন অন্তর্বর্তী সরকার কয়েকবার ঘোষণা দিয়েও উপদেষ্টা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করতে পারেনি! কেন পারেনি? সেখানেও কি আওয়ামী ভূত? ছাত্র উপদেষ্টাসহ অভ্যুত্থান নেতাদের অনেকে কীভাবে দামি গাড়ি-বাড়ির মালিক হলেন, সে প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে কোথায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও পরিবর্তন?
নবগঠিত ছাত্রসংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নীতি-আদর্শ-কর্মসূচি কী? তেমন কোনো তথ্য খুঁজে পেলাম না। কিন্তু তাদের বলা-বক্তব্যে যতটা বুঝলাম ইসলামি মূল্যবোধ ও মনোভাবাপন্ন একটি দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল। তাদের বক্তব্য অনেকটা এ দেশের ইসলামপন্থী ও ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরূপ। সেটা হলে এখানে সংগঠন ও রাজনীতির দিক থেকে নতুনত্বের কিছু নেই, কেননা এই দর্শন, বিশ্বাস ও কর্মসূচির দল ইতিমধ্যে এ দেশে অনেকগুলো আছেই।
নতুন দলের নেতৃত্বের একাংশ ক্ষমতায় ছিল, এখনো আছে। তাদের যদি প্রশ্ন করা হয় অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাড়া গত ৭ মাসে তাদের সাফল্য কী, তারা কি এমন কিছু করতে পেরেছে যা জনগণকে বলার মতো? ৩২ নম্বর থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, মেলা, উৎসব, সংস্কৃতিসহ প্রতিপক্ষ ও অপছন্দের অনেক কিছুর ওপরই সারা দেশে ঘোষণা দিয়ে মব সন্ত্রাস হয়েছে। অভ্যুত্থান-উত্তর পরিস্থিতিতে যে অরাজকতা, নৈরাজ্য ও নাশকতা চলেছে, তার বিরুদ্ধে কি তাদের পক্ষ থেকে কোথাও জনমত গঠন ও প্রতিরোধ হয়েছে? আমার চোখে পড়েনি। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়ার পুরো কৃতিত্ব ও সুবিধাই তারা ভোগ করছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জুলাই অভ্যুত্থান সংগঠিত হলেও তাদের কাজে দেখা যায় নানা ধরনের অসংগতি ও বৈষম্য। সরকারি একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকলেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শ্রেণি-পেশার কোনো প্রতিনিধিত্ব সেখানে নেই। সমন্বয়ক হিসেবেও একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের চার-পাঁচজনই মূলত সব ধরনের ক্ষমতার চর্চা করছে। মানুষ তাদের প্রতি যে আস্থা রাখবে, সমর্থন করবে কিসের ভিত্তিতে? নবগঠিত এই দুই দলের নেতৃত্বের মধ্যে তেমন বিনয়, উদারতা ও সহনশীলতা লক্ষণীয় নয়। বরং দেখছি ঔদ্ধত্য, অহংকার, ভেঙে দেব, গুঁড়িয়ে দেব, নির্মূল করব ইত্যাদি অসহিষ্ণু কথাবার্তা!
এ দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী চেয়েছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক, পরিবারতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারার বাইরে একটি সৎ, দেশপ্রেমিক, মানবিক, উদার, বৈষম্যহীন, কল্যাণমূলক, ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাজনৈতিক ধারা গড়ে উঠুক এবং তাদের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাক, কিন্তু সেটা হয়নি। তার বদলে যদি কোনো পশ্চাৎপদ, রক্ষণশীল, সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ধারা তৈরি হয় তাহলে তার প্রতি মানুষের সমর্থন ও সহানুভূতি থাকবে—আমার তা মনে হয় না।
লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
জুলাই অভ্যুত্থান ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলাপ-তৎপরতা শুরু হয়। অবশেষে ২৮ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ নেতৃত্বে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি-এনসিপি) নামের সেই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। শুধু তা-ই নয়, এই সংগঠনের সাবেক সমন্বয়কদের নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ নামের একটি নতুন ছাত্রসংগঠনের জন্ম হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি। এই সংগঠনের আদর্শ-কর্মসূচি, মূল দর্শন ও নীতি কী, তা এখনো পরিষ্কার নয়। শিগগিরই হয়তো সেই বিষয়গুলো জানা যাবে। তবে এই বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা হচ্ছে। এই সংগঠনের নেতৃত্ব যেভাবে নতুন বাংলাদেশ ও নতুন রাজনীতির কথা বলছেন, সেটা নিয়ে মানুষের কৌতূহল অধিক। তাঁরা আসলে কী নতুন রাজনীতি জন্ম দিতে চাইছেন? অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল, গত সাত মাসে তার অনেকটাই মিলিয়ে গেছে। সেই কারণে নতুন দলের আত্মপ্রকাশে অনেকেই বলছেন, রাতারাতি একটি নতুন দল গঠন করার কাজটা যতটা সহজ, একটি নতুন রাজনীতি গড়ে তোলা ততটাই কঠিন।
একটি নতুন দল গঠনের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে তার মূলনীতি ঘোষণা ও গঠনপ্রক্রিয়া তৈরি করা। তার ভিত্তিতে জনমত গঠন ও ঘোষিত নীতি-কর্মসূচির আলোকে সম্মেলন-কনভেনশনের আহ্বান করা। সেখানে সদস্যদের মতামত ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচন ও সংগঠনের করণীয় ও লক্ষ্য অর্জনের কৌশল নির্ধারণ করা, এটাই সাধারণ রীতি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের নেতৃত্বে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ ও ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ ছাত্র ও অভিভাবক সংগঠনের জন্ম দেওয়া হলো, সে ক্ষেত্রে এমন কোনো কিছু অনুসরণ করা হয়নি। দুই সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ট জটিলতা ও দলাদলি হয়েছে, বিশেষ করে ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রীতিমতো প্রকাশ্যে সংঘাত পর্যন্ত হয়েছে। সংগঠনের আত্মপ্রকাশের শুরুতেই তাদের মধ্যে যে সংঘাতের ঘটনা ঘটল, তা প্রচণ্ড হতাশার। এই যদি নতুন সংগঠনের শুরুর চিত্র হয় তাহলে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে কীভাবে আশাবাদী হই?
যাঁরা এত দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠন বন্ধের কথা বলেছেন, হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে যে ৯ দফা দেওয়া হয়েছিল, তাতে ‘দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের’ কথা ছিল। তাঁরাই এখন ছাত্রসংগঠন করলেন। তারপর ছাত্রসংগঠনের প্রতিষ্ঠালগ্নেই যে দৃশ্য মানুষ দেখল, তা ছাত্রলীগের ভয়ংকর রূপের কথাই মনে করিয়ে দেয়নি কি?
একটি সংগঠনের মধ্যে মারামারি, দ্বন্দ্ব-বিভেদ হয় সাধারণত সংগঠনটির নীতি-আদর্শ ও নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়ার কারণে। নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া যদি সুষ্ঠু ও সুস্থ গণতান্ত্রিক হয় তাহলে সেখানে এসব হওয়ার কথা নয়। সংগঠনের উদ্দেশ্য যদি ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধার হয়, সেখানে যদি সামাজিক দায় না থাকে, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিই মুখ্য হয়ে ওঠে, তাহলে সংঘাত হবেই। ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে যে অভিযোগকে পুঁজি করে নতুন সংগঠনের জন্ম, সে-ও যদি একই রাজনীতি অনুসরণ করে, তাহলে সেখানে নতুনত্বের কী ঘটল? এই চিত্র কি ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে মানুষের মনে আরও নেতিবাচকতার জন্ম দেবে না?
জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অনেকের বক্তব্যে যেমন আশার কথা ছিল, আবার সেখানে কিছু বিষয় এসেছে যা অনেকের কাছে দুর্ভেদ্য ও অনভিপ্রেত। যেমন, সেখানে সেকেন্ড রিপাবলিক তথা দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেছেন যে তিনি বোঝেন না আসলে সেকেন্ড রিপাবলিক বিষয়টি কী। বিএনপির আরেক নেতা রিজভী বলেছেন, এরা সভায় অনেক ভালো ভালো কথা বলেছে কিন্তু তাদের বক্তব্যে কোনো রাজনৈতিক দর্শন তিনি পাননি।
নতুন বাংলাদেশ ও নতুন ধারার রাজনীতির কথা যাঁরা বলছেন তাঁদের কর্ম ও কথাবার্তায় তেমন ব্যতিক্রম কিছু চোখে পড়ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে তাঁরা বর্তমান পরিস্থিতিকে একটি সুযোগ মনে করছেন। কারণ, তাঁদেরই কোনো কোনো সহপাঠী-সহযোদ্ধা চাকরির সামান্য দাবি থেকে ক্ষমতার শীর্ষ পদে আছেন। সর্বোচ্চ বেতন-ভাতা-সম্মান, অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন, তাহলে তাঁরা কেন বঞ্চিত হবেন? সুতরাং যেকোনোভাবে রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে নেতৃত্ব অর্জন করতে পারলে সম্মান-প্রতিষ্ঠা, বিত্ত অর্জন করতে পারবেন—হয়তো এই মানসিকতা কাজ করছে।
ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন ও অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের আচরণ, জীবনযাপন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি নিয়ে প্রচারমাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে। সেটা হলে তাঁদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অতীত ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে কি পার্থক্য করার সুযোগ আছে? যেমন অন্তর্বর্তী সরকার কয়েকবার ঘোষণা দিয়েও উপদেষ্টা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করতে পারেনি! কেন পারেনি? সেখানেও কি আওয়ামী ভূত? ছাত্র উপদেষ্টাসহ অভ্যুত্থান নেতাদের অনেকে কীভাবে দামি গাড়ি-বাড়ির মালিক হলেন, সে প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে কোথায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও পরিবর্তন?
নবগঠিত ছাত্রসংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নীতি-আদর্শ-কর্মসূচি কী? তেমন কোনো তথ্য খুঁজে পেলাম না। কিন্তু তাদের বলা-বক্তব্যে যতটা বুঝলাম ইসলামি মূল্যবোধ ও মনোভাবাপন্ন একটি দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল। তাদের বক্তব্য অনেকটা এ দেশের ইসলামপন্থী ও ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরূপ। সেটা হলে এখানে সংগঠন ও রাজনীতির দিক থেকে নতুনত্বের কিছু নেই, কেননা এই দর্শন, বিশ্বাস ও কর্মসূচির দল ইতিমধ্যে এ দেশে অনেকগুলো আছেই।
নতুন দলের নেতৃত্বের একাংশ ক্ষমতায় ছিল, এখনো আছে। তাদের যদি প্রশ্ন করা হয় অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাড়া গত ৭ মাসে তাদের সাফল্য কী, তারা কি এমন কিছু করতে পেরেছে যা জনগণকে বলার মতো? ৩২ নম্বর থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, মেলা, উৎসব, সংস্কৃতিসহ প্রতিপক্ষ ও অপছন্দের অনেক কিছুর ওপরই সারা দেশে ঘোষণা দিয়ে মব সন্ত্রাস হয়েছে। অভ্যুত্থান-উত্তর পরিস্থিতিতে যে অরাজকতা, নৈরাজ্য ও নাশকতা চলেছে, তার বিরুদ্ধে কি তাদের পক্ষ থেকে কোথাও জনমত গঠন ও প্রতিরোধ হয়েছে? আমার চোখে পড়েনি। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়ার পুরো কৃতিত্ব ও সুবিধাই তারা ভোগ করছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জুলাই অভ্যুত্থান সংগঠিত হলেও তাদের কাজে দেখা যায় নানা ধরনের অসংগতি ও বৈষম্য। সরকারি একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকলেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শ্রেণি-পেশার কোনো প্রতিনিধিত্ব সেখানে নেই। সমন্বয়ক হিসেবেও একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের চার-পাঁচজনই মূলত সব ধরনের ক্ষমতার চর্চা করছে। মানুষ তাদের প্রতি যে আস্থা রাখবে, সমর্থন করবে কিসের ভিত্তিতে? নবগঠিত এই দুই দলের নেতৃত্বের মধ্যে তেমন বিনয়, উদারতা ও সহনশীলতা লক্ষণীয় নয়। বরং দেখছি ঔদ্ধত্য, অহংকার, ভেঙে দেব, গুঁড়িয়ে দেব, নির্মূল করব ইত্যাদি অসহিষ্ণু কথাবার্তা!
এ দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী চেয়েছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক, পরিবারতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারার বাইরে একটি সৎ, দেশপ্রেমিক, মানবিক, উদার, বৈষম্যহীন, কল্যাণমূলক, ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাজনৈতিক ধারা গড়ে উঠুক এবং তাদের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাক, কিন্তু সেটা হয়নি। তার বদলে যদি কোনো পশ্চাৎপদ, রক্ষণশীল, সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ধারা তৈরি হয় তাহলে তার প্রতি মানুষের সমর্থন ও সহানুভূতি থাকবে—আমার তা মনে হয় না।
লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
কাশ্মীরের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝিলাম নদী। কাশ্মীর উপত্যকা হলো ঝিলামের উত্তর ভাগের অংশ। উপত্যকাটি ১৩৭ কিলোমিটার লম্বা এবং ৩০ থেকে ৪০ কিমি চওড়া। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে সেখানে অনেকে বেড়াতে যান। ১৯৪৭ সালের আগে কেউ ভাবতে পারেননি যে কাশ্মীর হয়ে
৭ ঘণ্টা আগেসমাজের ধনী গরিব বৈষম্যের দূরত্বটাকে কমিয়ে, সম্পদের অধিকতর সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে, একটি সুখী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদা সম্পন্ন পণ্যের মূল্য নির্ধারণে একটি নতুন প্রস্তাবনা পেশ করছি। প্রথমেই বলে রাখি, এই উদ্যোগটি হবে সীমিত আকারের এবং এর সাফল্যের ভিত্তিতে এটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে
৮ ঘণ্টা আগেরাখাইনে মানবিক করিডরের প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য একদিকে মানবিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ, অন্যদিকে চরম ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি। মিয়ানমারের জান্তা, বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও ভারত-চীনের প্রতিক্রিয়া না বুঝে করিডর চালু করলে তা ‘প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদে’ পরিণত হতে পারে। ভারতের কালাদান প্রকল্প ও চীনের ২১ বিলিয়ন ডলারের
১০ ঘণ্টা আগেসহজ কথা বলা যেমন সহজ নয়, তেমনি সহজ নয় আমাদের দেশে রাজনৈতিক বিষয়ে একমত হওয়া। আমাদের দেশে যত মাথা, তত মত—যে যার মতে অটল, নিজের বক্তব্যে অনড়। ফলে এখানে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোই যেন যুদ্ধ জয়ের সমান। রাজনীতি তো আর গণিতের সূত্র নয়, যেখানে সবাই একই জবাব মেনে নেবে; এখানে আবেগ, স্বার্থ, বিশ্বাস আর...
১৯ ঘণ্টা আগে