
অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের-বিএমইউ (সাবেক পিজি হাসপাতাল) ভাইস চ্যান্সেলর। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্যের (একাডেমিক) দায়িত্ব পালন করেছেন। যে গতিতে পৃথিবী থেকে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিঃশেষ হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতের চিকিৎসাব্যবস্থার পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে এবং এখান থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

বিশ্বব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্ট সংক্রামক রোগ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক প্রচলিত আছে, তার বেশির ভাগই এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর কারণ কী?
বিশ্বব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্ট অথবা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে আমরা যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকি, সেটা গুরুতর মাত্রায় প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এটার জন্য সকল পর্যায়ই দায়ী। যেকোনো রোগ হওয়ার সময় প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা যায়, আমরা যখন-তখন যেকোনো অসুখে অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছি। কিন্তু তার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষ করে ভাইরাস ইনফেকশনে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশের ফার্মেসিগুলোতে অহরহ অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা হচ্ছে। বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করার নিয়ম থাকলেও, তা মানা হচ্ছে না। প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হচ্ছে। আর একটা বিষয়, প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমেও এটা হচ্ছে। ডাক্তারদেরও প্রেসক্রাইব করার ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব আছে। কখন, কী প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হবে, কোন ধরনের রোগী এটা ব্যবহার করতে পারবে—এসব নির্ণয়ে চিকিৎসকদের প্রেসক্রাইব করার ক্ষেত্রেও দুর্বলতা দেখা যায়। সেই জায়গায় আমাদের সংশোধন হওয়া খুব দরকার।
এ কারণে অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এবং যথাযথভাবে এটা ব্যবহার না করা মানে পুরোমাত্রার ডোজ ব্যবহার বা না খাওয়ার কারণে এর কার্যকারিতা নেই। ফলে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস অতিমাত্রায় প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। একসময় দেখা যায় যে, কোনো অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না।
ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি ঠেকানো যাচ্ছে না কেন?
সারা বিশ্বে কোথাও ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা বা বিক্রি করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশে আইন অনুযায়ী ফার্মেসিগুলোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করার বিধান আছে, সেটা কোথাও মানা হয় না। ফার্মেসিগুলো সেলসম্যান দিয়ে চালানো হচ্ছে। যাদের ওষুধবিজ্ঞান বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই। সেই জ্ঞান না থাকার কারণে তাদের মধ্যে কোনো বোধ বা সচেতনতা কাজ করে না। তাঁদের উপলব্ধিই হয় না যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি করা যায় না। এটা আইনবিরোধী এবং স্বাস্থ্যবিরোধী কর্মকাণ্ড।
আবার বেশির ভাগ ফার্মেসির মালিকের কাছে শুধু ব্যবসা এবং লাভ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে জরুরি বিষয়, আইনটাও যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। আমাদের দেশে অনেক ফার্মেসির দোকান আছে এবং অন্যদিকে হাজার হাজার ফার্মাসিস্ট বেকার হয়ে বসে আছেন। এ রকম বেকার ফার্মাসিস্টদের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। সেটা করা হচ্ছে না। দেশের সব ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্টদের নিয়োগের ব্যবস্থা কার্যকর করা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে পারি।
অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা থাকছে না, এ অবস্থায় নতুনভাবে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা যাচ্ছে না কেন?
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। একদিকে ব্যাকটেরিয়ার রেজিট্যান্স হবে, অন্যদিকে অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হতে থাকবে। সেটা হলে তো কোনো সমস্যা ছিল না। যে পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে উঠছে, সে পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি বা আবিষ্কার করা যাচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ হলো, আসলে চিকিৎসাবিজ্ঞান এটার সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না। আর যত সহজে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে ওঠে, তত সহজে অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা যায় না। সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমরা হেরে যাচ্ছি।
রেজিস্ট্যান্সের কারণে সার্জারি, কেমোথেরাপি, অঙ্গ প্রতিস্থাপন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?
অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে এবং ডোজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গাইডলাইন পালন করা উচিত সবারই। যাঁরা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কোন সময়ে, কোন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে, সেটা ওই হাসপাতালের অতীতে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার যে পরিসংখ্যান এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের যে প্যাটার্ন, সেটা অনুসরণ করে প্রয়োগ করতে হবে। এ জন্য সারা দেশের সব হাসপাতালের একটা গাইডলাইন থাকা দরকার। সেই গাইডলাইন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু আমাদের গাইডলাইন নেই, সেহেতু আমরা নির্দিষ্ট রোগীর জন্য সেটা দিয়ে থাকি। সে জন্য হাসপাতালগুলোতে কোনো রোগী ভর্তি হলে, তাকে বেশি মাত্রার, অ্যাডভান্স এবং রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। আবার কেমোথেরাপি বা অঙ্গ প্রতিস্থাপন বা যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম—সেই ধরনের রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। কোন সময়ে এবং কোন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে সেটা হাসপাতালগুলো নির্দিষ্ট করলে, এতে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগও কমবে, খরচ কমবে এবং অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিস্ট্যান্সও কমবে। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রে সেসবের কোনোটাই মানা হয় না।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় বাংলাদেশে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা আছে কি?
এটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় আমাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা আছে। যেটা এখন আংশিকভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। তবে যে ব্যাপক মাত্রার সমস্যা হিসেবে আমরা ভুক্তভোগী, সে রকমভাবে সেটা পর্যাপ্ত নয়। যেমন আমাদের হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, ইনফেকশন কন্ট্রোল সিস্টেম এবং গাইডলাইনের বিষয়গুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এটা দ্রুত কার্যকর করা প্রয়োজন।
২০২৩ সালের এক জরিপ মতে, পরীক্ষাগারে নিশ্চিত হওয়া ছয়টির মধ্যে একটি সংক্রামক রোগ অ্যান্টিবায়োটিকে সারানো যাচ্ছে না। রক্ত, অন্ত্র, মূত্রনালি এবং যৌন সংক্রমণের মতো সাধারণ সংক্রামক রোগে ৪০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর। বোঝা যাচ্ছে পরিস্থিতি ভয়াবহ। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী?
এখান থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি শুধু যে কারণে ইনফেকশন হয়, সে কারণগুলো খুঁজে বের করা। সব হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগের একটা পরিসংখ্যান থাকা দরকার। যেমন কোন ইনফেকশনের জন্য কোন অ্যান্টিবায়োটিকটা কার্যকর, সেটা সুনির্দিষ্ট করা। এরপর শুরুতে অতিমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়া এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের যে বিভিন্ন পর্যায় আছে, সেগুলোকে অনুসরণ করে আগে প্রাথমিক পর্যায়ের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া এবং গাইডলাইন মেনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলে এটা কার্যকর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।
এখন কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, অতিমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকগুলো কাজ করছে না, কিন্তু পুরোনো দিনের অনেক অ্যান্টিবায়োটিক ভালো কাজ করছে। এগুলো কম ব্যবহারের কারণে ভালো কাজ করছে। সে কারণে আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের ধরন নিশ্চিত হওয়া, নির্দিষ্ট গাইডলাইন অনুসরণ করা গেলে আমরা এখান থেকে মুক্তি পেতে পারি।
যাঁরা নিম্ন আয়ের মানুষ, তাঁরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন না। তাঁরা বাধ্য হয়ে ফার্মেসিতে যান। আর ফার্মেসির লোকেরা হাই ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। এখান থেকে কীভাবে রক্ষা পেতে পারি?
গরিব মানুষের জন্য আমাদের সরকারি আয়োজন আছে। আমাদের দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে কম খরচে চিকিৎসা পাওয়া যায়। বাস্তবতা হচ্ছে, তাঁরা সেখানে যাচ্ছেন না। তবে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া বন্ধ করা গেলে, এগুলো কোনো সমস্যা হিসেবে থাকবে না।
আইন কার্যকর এবং অসচেতনতার ব্যাপার আছে। সে ক্ষেত্রে কী করণীয়?
সচেতনতার পাশাপাশি আইন কার্যকর করতে হবে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, দেশের সব ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
সামগ্রিকভাবে এ থেকে রক্ষা পেতে আপনার কোনো পরামর্শ আছে?
স্বাস্থ্য শুধু মানুষের একার বিষয় নয়। এটাকে এখন বলা হয় ‘ওয়ান হেলথ’। ওয়ান হেলথের মধ্যে প্রাণী থেকে শুরু করে হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগল, গাছপালা—সবকিছুই এটার মধ্যে যুক্ত। পৃথিবীর সবকিছু এমনকি পৃথিবীর বাইরের বিষয়গুলোও এর সঙ্গে যুক্ত। এটার জন্য আমাদের সবকিছুকে আনতে হবে। ধরুন, কেউ যদি মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়, তাহলে সেটা মুরগিটাকে ব্যাকটেরিয়া-প্রতিরোধী করছে, সেটা আবার মানুষকে সংক্রামিত করছে। একইভাবে গরুকে যদি সেটা দেওয়া হয়, সেটাও গরুকে ব্যাকটেরিয়া-প্রতিরোধী করবে। সে কারণে সেটা মানুষকেও সংক্রামিত করতে বাধ্য।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ‘ওয়ান হেলথ’কে সামগ্রিকভাবে কার্যকর করে ইনফেকশন প্রিভেনশন কন্ট্রোল সিস্টেমকে সব হাসপাতালে কার্যকর করতে হবে। এটা ব্যয়বহুল হলেও সামগ্রিকভাবে চিকিৎসার অর্থ ব্যয় কমে যাবে। আর দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার গাইডলাইনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ফার্মেসিগুলোতে রাষ্ট্রীয় আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে আমরা এখান থেকে রক্ষা পাব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
বিশ্বব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্ট সংক্রামক রোগ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক প্রচলিত আছে, তার বেশির ভাগই এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর কারণ কী?
বিশ্বব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্ট অথবা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে আমরা যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকি, সেটা গুরুতর মাত্রায় প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এটার জন্য সকল পর্যায়ই দায়ী। যেকোনো রোগ হওয়ার সময় প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা যায়, আমরা যখন-তখন যেকোনো অসুখে অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছি। কিন্তু তার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষ করে ভাইরাস ইনফেকশনে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশের ফার্মেসিগুলোতে অহরহ অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা হচ্ছে। বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করার নিয়ম থাকলেও, তা মানা হচ্ছে না। প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হচ্ছে। আর একটা বিষয়, প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমেও এটা হচ্ছে। ডাক্তারদেরও প্রেসক্রাইব করার ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব আছে। কখন, কী প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হবে, কোন ধরনের রোগী এটা ব্যবহার করতে পারবে—এসব নির্ণয়ে চিকিৎসকদের প্রেসক্রাইব করার ক্ষেত্রেও দুর্বলতা দেখা যায়। সেই জায়গায় আমাদের সংশোধন হওয়া খুব দরকার।
এ কারণে অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এবং যথাযথভাবে এটা ব্যবহার না করা মানে পুরোমাত্রার ডোজ ব্যবহার বা না খাওয়ার কারণে এর কার্যকারিতা নেই। ফলে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস অতিমাত্রায় প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। একসময় দেখা যায় যে, কোনো অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না।
ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি ঠেকানো যাচ্ছে না কেন?
সারা বিশ্বে কোথাও ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা বা বিক্রি করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশে আইন অনুযায়ী ফার্মেসিগুলোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করার বিধান আছে, সেটা কোথাও মানা হয় না। ফার্মেসিগুলো সেলসম্যান দিয়ে চালানো হচ্ছে। যাদের ওষুধবিজ্ঞান বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই। সেই জ্ঞান না থাকার কারণে তাদের মধ্যে কোনো বোধ বা সচেতনতা কাজ করে না। তাঁদের উপলব্ধিই হয় না যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি করা যায় না। এটা আইনবিরোধী এবং স্বাস্থ্যবিরোধী কর্মকাণ্ড।
আবার বেশির ভাগ ফার্মেসির মালিকের কাছে শুধু ব্যবসা এবং লাভ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে জরুরি বিষয়, আইনটাও যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। আমাদের দেশে অনেক ফার্মেসির দোকান আছে এবং অন্যদিকে হাজার হাজার ফার্মাসিস্ট বেকার হয়ে বসে আছেন। এ রকম বেকার ফার্মাসিস্টদের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। সেটা করা হচ্ছে না। দেশের সব ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্টদের নিয়োগের ব্যবস্থা কার্যকর করা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে পারি।
অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা থাকছে না, এ অবস্থায় নতুনভাবে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা যাচ্ছে না কেন?
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। একদিকে ব্যাকটেরিয়ার রেজিট্যান্স হবে, অন্যদিকে অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হতে থাকবে। সেটা হলে তো কোনো সমস্যা ছিল না। যে পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে উঠছে, সে পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি বা আবিষ্কার করা যাচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ হলো, আসলে চিকিৎসাবিজ্ঞান এটার সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না। আর যত সহজে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে ওঠে, তত সহজে অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা যায় না। সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমরা হেরে যাচ্ছি।
রেজিস্ট্যান্সের কারণে সার্জারি, কেমোথেরাপি, অঙ্গ প্রতিস্থাপন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?
অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে এবং ডোজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গাইডলাইন পালন করা উচিত সবারই। যাঁরা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কোন সময়ে, কোন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে, সেটা ওই হাসপাতালের অতীতে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার যে পরিসংখ্যান এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের যে প্যাটার্ন, সেটা অনুসরণ করে প্রয়োগ করতে হবে। এ জন্য সারা দেশের সব হাসপাতালের একটা গাইডলাইন থাকা দরকার। সেই গাইডলাইন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু আমাদের গাইডলাইন নেই, সেহেতু আমরা নির্দিষ্ট রোগীর জন্য সেটা দিয়ে থাকি। সে জন্য হাসপাতালগুলোতে কোনো রোগী ভর্তি হলে, তাকে বেশি মাত্রার, অ্যাডভান্স এবং রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। আবার কেমোথেরাপি বা অঙ্গ প্রতিস্থাপন বা যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম—সেই ধরনের রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। কোন সময়ে এবং কোন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে সেটা হাসপাতালগুলো নির্দিষ্ট করলে, এতে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগও কমবে, খরচ কমবে এবং অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিস্ট্যান্সও কমবে। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রে সেসবের কোনোটাই মানা হয় না।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় বাংলাদেশে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা আছে কি?
এটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় আমাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা আছে। যেটা এখন আংশিকভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। তবে যে ব্যাপক মাত্রার সমস্যা হিসেবে আমরা ভুক্তভোগী, সে রকমভাবে সেটা পর্যাপ্ত নয়। যেমন আমাদের হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, ইনফেকশন কন্ট্রোল সিস্টেম এবং গাইডলাইনের বিষয়গুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এটা দ্রুত কার্যকর করা প্রয়োজন।
২০২৩ সালের এক জরিপ মতে, পরীক্ষাগারে নিশ্চিত হওয়া ছয়টির মধ্যে একটি সংক্রামক রোগ অ্যান্টিবায়োটিকে সারানো যাচ্ছে না। রক্ত, অন্ত্র, মূত্রনালি এবং যৌন সংক্রমণের মতো সাধারণ সংক্রামক রোগে ৪০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর। বোঝা যাচ্ছে পরিস্থিতি ভয়াবহ। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী?
এখান থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি শুধু যে কারণে ইনফেকশন হয়, সে কারণগুলো খুঁজে বের করা। সব হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগের একটা পরিসংখ্যান থাকা দরকার। যেমন কোন ইনফেকশনের জন্য কোন অ্যান্টিবায়োটিকটা কার্যকর, সেটা সুনির্দিষ্ট করা। এরপর শুরুতে অতিমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়া এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের যে বিভিন্ন পর্যায় আছে, সেগুলোকে অনুসরণ করে আগে প্রাথমিক পর্যায়ের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া এবং গাইডলাইন মেনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলে এটা কার্যকর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।
এখন কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, অতিমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকগুলো কাজ করছে না, কিন্তু পুরোনো দিনের অনেক অ্যান্টিবায়োটিক ভালো কাজ করছে। এগুলো কম ব্যবহারের কারণে ভালো কাজ করছে। সে কারণে আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের ধরন নিশ্চিত হওয়া, নির্দিষ্ট গাইডলাইন অনুসরণ করা গেলে আমরা এখান থেকে মুক্তি পেতে পারি।
যাঁরা নিম্ন আয়ের মানুষ, তাঁরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন না। তাঁরা বাধ্য হয়ে ফার্মেসিতে যান। আর ফার্মেসির লোকেরা হাই ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। এখান থেকে কীভাবে রক্ষা পেতে পারি?
গরিব মানুষের জন্য আমাদের সরকারি আয়োজন আছে। আমাদের দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে কম খরচে চিকিৎসা পাওয়া যায়। বাস্তবতা হচ্ছে, তাঁরা সেখানে যাচ্ছেন না। তবে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া বন্ধ করা গেলে, এগুলো কোনো সমস্যা হিসেবে থাকবে না।
আইন কার্যকর এবং অসচেতনতার ব্যাপার আছে। সে ক্ষেত্রে কী করণীয়?
সচেতনতার পাশাপাশি আইন কার্যকর করতে হবে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, দেশের সব ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
সামগ্রিকভাবে এ থেকে রক্ষা পেতে আপনার কোনো পরামর্শ আছে?
স্বাস্থ্য শুধু মানুষের একার বিষয় নয়। এটাকে এখন বলা হয় ‘ওয়ান হেলথ’। ওয়ান হেলথের মধ্যে প্রাণী থেকে শুরু করে হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগল, গাছপালা—সবকিছুই এটার মধ্যে যুক্ত। পৃথিবীর সবকিছু এমনকি পৃথিবীর বাইরের বিষয়গুলোও এর সঙ্গে যুক্ত। এটার জন্য আমাদের সবকিছুকে আনতে হবে। ধরুন, কেউ যদি মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়, তাহলে সেটা মুরগিটাকে ব্যাকটেরিয়া-প্রতিরোধী করছে, সেটা আবার মানুষকে সংক্রামিত করছে। একইভাবে গরুকে যদি সেটা দেওয়া হয়, সেটাও গরুকে ব্যাকটেরিয়া-প্রতিরোধী করবে। সে কারণে সেটা মানুষকেও সংক্রামিত করতে বাধ্য।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ‘ওয়ান হেলথ’কে সামগ্রিকভাবে কার্যকর করে ইনফেকশন প্রিভেনশন কন্ট্রোল সিস্টেমকে সব হাসপাতালে কার্যকর করতে হবে। এটা ব্যয়বহুল হলেও সামগ্রিকভাবে চিকিৎসার অর্থ ব্যয় কমে যাবে। আর দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার গাইডলাইনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ফার্মেসিগুলোতে রাষ্ট্রীয় আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে আমরা এখান থেকে রক্ষা পাব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি ফিরে এসেছে। কিন্তু আসলেই কি ফিরে এসেছে? ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়েছিলেন। ১৪ বছর পর বর্তমান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ আগের সে রায়কে ত্রুটিপূর্ণ...
১৪ মিনিট আগে
আমাদের শিকড় বাংলাদেশে। কিন্তু প্রবাসে বাংলাদেশের ডানা মেলে উড়ে চলা এখন সবার নজরে পড়ছে। বলা উচিত, বেশ কিছু বছর থেকে এই অগ্রযাত্রা আর বিস্তার দেখছে সিডনি। রাজনীতি এবং ধর্মান্ধতা ছাড়া আর কিছুই আমাদের বিভক্ত করতে পারে না।
১৭ মিনিট আগে
কমরেড দাউদ হোসেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। যিনি বিগত পাঁচ দশকের অধিক সময় ধরে নিজের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেছেন। তাঁর নিরলস লড়াইয়ের ইতি টেনে ২১ নভেম্বর বেলা ১১টায় তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।
২০ মিনিট আগে
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলেই সবার মনে পড়ে যায়—ঢাকা এক অপরিকল্পিত নগরী। যে যার মতো করে আইন অনুসরণ না করে এখানে তৈরি করে নিয়েছে বাড়িঘর, যেখানে-সেখানে ফেলছে আবর্জনা, সরকারি জায়গা দখল করে বসিয়েছে দোকান—এ রকম আরও কত কি!
২৪ মিনিট আগেমাসুদ কামাল

তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি ফিরে এসেছে। কিন্তু আসলেই কি ফিরে এসেছে? ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়েছিলেন। ১৪ বছর পর বর্তমান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ আগের সে রায়কে ত্রুটিপূর্ণ আখ্যায়িত করে বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে ফিরে এসেছে দেশের সাধারণ ভোটারদের প্রিয় সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। তাহলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যেটা হওয়ার কথা, সেটা কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হচ্ছে? না, তা হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না? আদালত বলেছেন, এবার হবে না, তাই হচ্ছে না। আদালত কেন বললেন? এ প্রশ্নের আর জবাব নেই।
আদালত যেহেতু নিজে থেকে কারণটা বলেননি, তাই আইনজীবীদের ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। রায়ে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত বিধানগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে পুনর্বহাল হলেও তার প্রয়োগ কার্যকর হবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮ খ(১) এবং অনুচ্ছেদ ৫৮ গ(২)-এর বিধান অনুযায়ী। বিষয়টি বুঝতে আগে এই দুটি অনুচ্ছেদ সম্পর্কে জানতে হবে। ত্রয়োদশ সংশোধনী আইনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত ৫৮ খ(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর বা মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে যে তারিখে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কার্যভার গ্রহণ করেন, সেই তারিখ থেকে সংসদ গঠিত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদের কার্যভার গ্রহণ করার তারিখ পর্যন্ত মেয়াদে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, উপদেষ্টা নিয়োগ ইত্যাদি সংক্রান্ত ৫৮ গ(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, সংসদ ভেঙে দেওয়ার বা ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্য উপদেষ্টারা নিযুক্ত হবেন।
এখনই কার্যকর করতে গেলে এখানে বলা বিধান অনুযায়ী কিছু জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু এবার সংসদ তো ভেঙে দেওয়া হয়েছে আরও অনেক আগে, এক বছর তিন মাস সময় আগে। এভাবে দেখতে গেলে বিষয়টি আসলেই জটিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সংবিধানকে হুবহু মানতে গেলে অনেক কিছুই তো জটিল। সে জটিলতাগুলো এড়ানো যাচ্ছে কীভাবে? তখন বলা হচ্ছে, সময়ের প্রয়োজনে সেগুলো করা হচ্ছে।
‘সময়ের প্রয়োজন’—এটা কেবল একটা কথার কথা নয়। আসলেই গত বছরের আগস্ট থেকে অনেক কিছুই এ দেশে আর সংবিধান মেনে হয়নি। সংবিধান মেনে গণ-আন্দোলন হয়নি; কিংবা শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাননি। সংবিধান মেনে সংসদও ভেঙে দেওয়া হয়নি। শুরুতে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে চলে গেছেন, তাই রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। পরে দেখা গেল, অতি গুরুত্বপূর্ণ সেই ‘পদত্যাগপত্র’ আর পাওয়া যাচ্ছে না। সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় রাষ্ট্রপতি একবার জানালেন পর্যন্ত, সে রকম কোনো পদত্যাগপত্র তিনি পাননি। আবার এই যে অন্তর্বর্তী সরকার, সংবিধানে তো ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ বিষয়টিই নেই। তারপরও তারা আছে তো? দেশও চালাচ্ছে। সবই হচ্ছে ‘সময়ের প্রয়োজনে’।
সময়ের দোহাই দিয়ে যদি এত কিছু হতে পারে, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি চালুর ক্ষেত্রে এত আইন আর সংবিধানের দোহাই কেন? তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গিয়েছিল সেই ২০১১ সালে। তার পর থেকে, ১৪টি বছর ধরে বিএনপি-জামায়াতসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রধান দাবি ছিল এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালুর। এই দাবি আদায় করতে গিয়ে তাদের অগণিত নেতা-কর্মী-সমর্থক জীবন দিয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা করা হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। এই যে এত ত্যাগ, এত ভোগান্তি, সেটা কি এখন মূল্যহীন হয়ে গেল? সামনে নির্বাচন; কিন্তু সেই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হওয়া দরকার, এটাই এখন সময়ের দাবি, এ কথাটা কোনো রাজনৈতিক দল বলছে না কেন?
তাহলে কি ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রকারান্তরে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারই? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল নীতিটা কী? সেটা হচ্ছে, নির্বাচনের সময় দেশে এমন একটা সরকার থাকবে, যে সরকারের কোনো উপদেষ্টা নির্বাচন করবেন না। নির্বাচনে অংশ নেওয়া কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি তাঁদের কোনো পক্ষপাতিত্ব থাকবে না। সরকার চালাতে গিয়ে তাঁরা কোনো নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ নেবেন না, কেবল দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করবেন। কিন্তু এই সরকারের দুজন উপদেষ্টা আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, এটা এখন স্পষ্ট। একজন উপদেষ্টা এরই মধ্যে তো জানিয়েই দিয়েছেন, তিনি ধানমন্ডি এলাকা থেকে নির্বাচন করছেন। তিনি এনসিপি, বিএনপি নাকি জামায়াত—কোন দলের প্রার্থী হবেন, কাদের কাছ থেকে সমর্থন লাভ করবেন?
আমাদের মতো দেশে ক্ষমতার শীর্ষে থাকলে সব সময় একটি বলয় চারপাশ ঘিরে থাকে। তাদের কারণে শীর্ষে থাকা ব্যক্তিটি বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে পারেন না। আমার কেন যেন মনে হয়, প্রধান উপদেষ্টাও এখন সে রকম বলয় দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছেন।
এত কিছুর পরও বিএনপি বা জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দলগুলো কেন এবারের নির্বাচন থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটা তুলছে না? রায়ের পর বিএনপি বা জামায়াতপন্থী সব আইনজীবীকেই দেখা গেছে, পাঁচ বছর পর থেকে চালুর বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে মেনে নিয়েছেন। এটা আমার কাছে কিছুটা বিস্ময়কর ঠেকেছে। মনে হয়েছে, তাঁরা এতটা স্বার্থপর হতে পারেন! তাঁদের কাছে ক্ষমতাটাই আসল, জনগণ কী চায় বা না চায়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাঁরা মনে করছেন, বর্তমান সরকারই তাঁদের ক্ষমতায় পৌঁছে দিতে পারবে। তাই তাঁরা সরকারকে চটাতে চান না। কিন্তু জনগণের মতামত বা চাহিদার দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেন না।
মানুষ কিন্তু হতাশ। অন্তত আমি আমার নিজের কথা বলতে পারি। আমার কেন যেন মনে হয়, এবারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে, ভবিষ্যতে আর কোনোদিন এমন সরকারের অধীনে ভোট দেওয়ার সুযোগ আর না-ও পেতে পারি। সামনে কোন সরকার আসবে, তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে তারাও আওয়ামী লীগ সরকারের মতো এ ব্যবস্থাকে বাতিল করে দেবে কি না, কে জানে। দীর্ঘ ১৪ বছর যে তত্ত্বাবধায়কের জন্য তারা এত ব্যাকুল ছিল, সেটা পাওয়ার পরও পাঁচ বছর পর থেকে বাস্তবায়নের বিষয়টি তারা এত সহজে কীভাবে মেনে নেয়, সেটিও আমার বুঝে আসে না।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি ফিরে এসেছে। কিন্তু আসলেই কি ফিরে এসেছে? ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়েছিলেন। ১৪ বছর পর বর্তমান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ আগের সে রায়কে ত্রুটিপূর্ণ আখ্যায়িত করে বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে ফিরে এসেছে দেশের সাধারণ ভোটারদের প্রিয় সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। তাহলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যেটা হওয়ার কথা, সেটা কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হচ্ছে? না, তা হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না? আদালত বলেছেন, এবার হবে না, তাই হচ্ছে না। আদালত কেন বললেন? এ প্রশ্নের আর জবাব নেই।
আদালত যেহেতু নিজে থেকে কারণটা বলেননি, তাই আইনজীবীদের ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। রায়ে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত বিধানগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে পুনর্বহাল হলেও তার প্রয়োগ কার্যকর হবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮ খ(১) এবং অনুচ্ছেদ ৫৮ গ(২)-এর বিধান অনুযায়ী। বিষয়টি বুঝতে আগে এই দুটি অনুচ্ছেদ সম্পর্কে জানতে হবে। ত্রয়োদশ সংশোধনী আইনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত ৫৮ খ(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর বা মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে যে তারিখে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কার্যভার গ্রহণ করেন, সেই তারিখ থেকে সংসদ গঠিত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদের কার্যভার গ্রহণ করার তারিখ পর্যন্ত মেয়াদে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, উপদেষ্টা নিয়োগ ইত্যাদি সংক্রান্ত ৫৮ গ(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, সংসদ ভেঙে দেওয়ার বা ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্য উপদেষ্টারা নিযুক্ত হবেন।
এখনই কার্যকর করতে গেলে এখানে বলা বিধান অনুযায়ী কিছু জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু এবার সংসদ তো ভেঙে দেওয়া হয়েছে আরও অনেক আগে, এক বছর তিন মাস সময় আগে। এভাবে দেখতে গেলে বিষয়টি আসলেই জটিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সংবিধানকে হুবহু মানতে গেলে অনেক কিছুই তো জটিল। সে জটিলতাগুলো এড়ানো যাচ্ছে কীভাবে? তখন বলা হচ্ছে, সময়ের প্রয়োজনে সেগুলো করা হচ্ছে।
‘সময়ের প্রয়োজন’—এটা কেবল একটা কথার কথা নয়। আসলেই গত বছরের আগস্ট থেকে অনেক কিছুই এ দেশে আর সংবিধান মেনে হয়নি। সংবিধান মেনে গণ-আন্দোলন হয়নি; কিংবা শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাননি। সংবিধান মেনে সংসদও ভেঙে দেওয়া হয়নি। শুরুতে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে চলে গেছেন, তাই রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। পরে দেখা গেল, অতি গুরুত্বপূর্ণ সেই ‘পদত্যাগপত্র’ আর পাওয়া যাচ্ছে না। সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় রাষ্ট্রপতি একবার জানালেন পর্যন্ত, সে রকম কোনো পদত্যাগপত্র তিনি পাননি। আবার এই যে অন্তর্বর্তী সরকার, সংবিধানে তো ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ বিষয়টিই নেই। তারপরও তারা আছে তো? দেশও চালাচ্ছে। সবই হচ্ছে ‘সময়ের প্রয়োজনে’।
সময়ের দোহাই দিয়ে যদি এত কিছু হতে পারে, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি চালুর ক্ষেত্রে এত আইন আর সংবিধানের দোহাই কেন? তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গিয়েছিল সেই ২০১১ সালে। তার পর থেকে, ১৪টি বছর ধরে বিএনপি-জামায়াতসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রধান দাবি ছিল এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালুর। এই দাবি আদায় করতে গিয়ে তাদের অগণিত নেতা-কর্মী-সমর্থক জীবন দিয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা করা হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। এই যে এত ত্যাগ, এত ভোগান্তি, সেটা কি এখন মূল্যহীন হয়ে গেল? সামনে নির্বাচন; কিন্তু সেই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হওয়া দরকার, এটাই এখন সময়ের দাবি, এ কথাটা কোনো রাজনৈতিক দল বলছে না কেন?
তাহলে কি ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রকারান্তরে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারই? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল নীতিটা কী? সেটা হচ্ছে, নির্বাচনের সময় দেশে এমন একটা সরকার থাকবে, যে সরকারের কোনো উপদেষ্টা নির্বাচন করবেন না। নির্বাচনে অংশ নেওয়া কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি তাঁদের কোনো পক্ষপাতিত্ব থাকবে না। সরকার চালাতে গিয়ে তাঁরা কোনো নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ নেবেন না, কেবল দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করবেন। কিন্তু এই সরকারের দুজন উপদেষ্টা আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, এটা এখন স্পষ্ট। একজন উপদেষ্টা এরই মধ্যে তো জানিয়েই দিয়েছেন, তিনি ধানমন্ডি এলাকা থেকে নির্বাচন করছেন। তিনি এনসিপি, বিএনপি নাকি জামায়াত—কোন দলের প্রার্থী হবেন, কাদের কাছ থেকে সমর্থন লাভ করবেন?
আমাদের মতো দেশে ক্ষমতার শীর্ষে থাকলে সব সময় একটি বলয় চারপাশ ঘিরে থাকে। তাদের কারণে শীর্ষে থাকা ব্যক্তিটি বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে পারেন না। আমার কেন যেন মনে হয়, প্রধান উপদেষ্টাও এখন সে রকম বলয় দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছেন।
এত কিছুর পরও বিএনপি বা জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দলগুলো কেন এবারের নির্বাচন থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটা তুলছে না? রায়ের পর বিএনপি বা জামায়াতপন্থী সব আইনজীবীকেই দেখা গেছে, পাঁচ বছর পর থেকে চালুর বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে মেনে নিয়েছেন। এটা আমার কাছে কিছুটা বিস্ময়কর ঠেকেছে। মনে হয়েছে, তাঁরা এতটা স্বার্থপর হতে পারেন! তাঁদের কাছে ক্ষমতাটাই আসল, জনগণ কী চায় বা না চায়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাঁরা মনে করছেন, বর্তমান সরকারই তাঁদের ক্ষমতায় পৌঁছে দিতে পারবে। তাই তাঁরা সরকারকে চটাতে চান না। কিন্তু জনগণের মতামত বা চাহিদার দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেন না।
মানুষ কিন্তু হতাশ। অন্তত আমি আমার নিজের কথা বলতে পারি। আমার কেন যেন মনে হয়, এবারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে, ভবিষ্যতে আর কোনোদিন এমন সরকারের অধীনে ভোট দেওয়ার সুযোগ আর না-ও পেতে পারি। সামনে কোন সরকার আসবে, তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে তারাও আওয়ামী লীগ সরকারের মতো এ ব্যবস্থাকে বাতিল করে দেবে কি না, কে জানে। দীর্ঘ ১৪ বছর যে তত্ত্বাবধায়কের জন্য তারা এত ব্যাকুল ছিল, সেটা পাওয়ার পরও পাঁচ বছর পর থেকে বাস্তবায়নের বিষয়টি তারা এত সহজে কীভাবে মেনে নেয়, সেটিও আমার বুঝে আসে না।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের-বিএমইউ (সাবেক পিজি হাসপাতাল) ভাইস চ্যান্সেলর। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্যের (একাডেমিক) দায়িত্ব পালন করেছেন। যে গতিতে পৃথিবী থেকে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিঃশেষ হচ্ছে...
১ দিন আগে
আমাদের শিকড় বাংলাদেশে। কিন্তু প্রবাসে বাংলাদেশের ডানা মেলে উড়ে চলা এখন সবার নজরে পড়ছে। বলা উচিত, বেশ কিছু বছর থেকে এই অগ্রযাত্রা আর বিস্তার দেখছে সিডনি। রাজনীতি এবং ধর্মান্ধতা ছাড়া আর কিছুই আমাদের বিভক্ত করতে পারে না।
১৭ মিনিট আগে
কমরেড দাউদ হোসেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। যিনি বিগত পাঁচ দশকের অধিক সময় ধরে নিজের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেছেন। তাঁর নিরলস লড়াইয়ের ইতি টেনে ২১ নভেম্বর বেলা ১১টায় তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।
২০ মিনিট আগে
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলেই সবার মনে পড়ে যায়—ঢাকা এক অপরিকল্পিত নগরী। যে যার মতো করে আইন অনুসরণ না করে এখানে তৈরি করে নিয়েছে বাড়িঘর, যেখানে-সেখানে ফেলছে আবর্জনা, সরকারি জায়গা দখল করে বসিয়েছে দোকান—এ রকম আরও কত কি!
২৪ মিনিট আগেঅজয় দাশগুপ্ত

আমাদের শিকড় বাংলাদেশে। কিন্তু প্রবাসে বাংলাদেশের ডানা মেলে উড়ে চলা এখন সবার নজরে পড়ছে। বলা উচিত, বেশ কিছু বছর থেকে এই অগ্রযাত্রা আর বিস্তার দেখছে সিডনি। রাজনীতি এবং ধর্মান্ধতা ছাড়া আর কিছুই আমাদের বিভক্ত করতে পারে না। মাঝেমধ্যে এমন সব অনুষ্ঠান বা আয়োজনে যাই, অন্তরের শক্তি দেখে বিস্মিত হই। এ যেন এক প্রাণের স্পন্দন। এ যেন বহু দূরে বাংলা-বাঙালির শিকড়ের সঙ্গে বর্তমানের মেলবন্ধন।
আজ আমি যে মানুষটির কথা লিখছি তিনি সিডনি এসেছিলেন প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে। আমি যখন কলেজের সীমানা পেরিয়ে উচ্চতর পাঠের চেষ্টা চালাচ্ছিলাম, তিনি তখন প্রশান্ত পাড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ভাবতেই আমি রোমাঞ্চিত হই। আজকাল যেমন বিদেশে যাওয়া ছেলের হাতের মোয়ার মতো, আকছার মানুষজন দেশের বাইরে চলে যায়, তখন তেমনটি ছিল না। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের নামও জানত না বহু দেশ। বহু জাতির কাছে আমরা ছিলাম এলিয়েন বা আগন্তুক। আমার এক গায়ক বন্ধু থাকেন সিডনিতে। বাংলাদেশে ব্যান্ড গানের শুরুর সময়টায় তাঁর গান ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সুদর্শন মামুন আমাকে একবার বলেছিলেন বাঙালিবিহীন তখনকার অজি জগতের সঙ্গে বসবাস তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। শহর থেকে অনেক দূরে তখনকার অস্ট্রেলিয়ায় সাদা মানুষদের সঙ্গে থাকাটা নানা কারণে ছিল কঠিন। সেই চাপ—বাংলা বলতে না পারার কষ্ট আর মনোবেদনায় মানুষের কত রকমের পরিবর্তন ঘটতে পারে। যেমন তাঁর মাথার কেশ উধাও হয়ে যাওয়া!
অথচ যাঁর কথা লিখছি, এখনো তাঁর মাথা চুলে ভরা। বয়স তাঁকে সেভাবে স্পর্শ করতে পারেনি। বেশ কিছু বছর ধরে আমি তাঁর সঙ্গে যাতায়াত করি। যাতায়াত বলতে কোনো অনুষ্ঠানে দুজনের দাওয়াত থাকলে একসঙ্গে যাই। ট্রেনে-বাসে চড়ে এই যাওয়ায় আমাদের সঙ্গী গরম শিঙাড়া আর চা। আড্ডাবাজ মানুষটিকে ২৯ বছর ধরে চিনলেও এই আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে অনেক পরে। এখনো তিনি আমার চেয়ে সতেজ আর বলিষ্ঠ। একের অধিক অনুষ্ঠান থাকলে আমি যেকোনো একটা বেছে নিই, তিনি তা করেন না। অবশ্য করতে পারেনও না। তাঁর চাহিদা বেশি। দীর্ঘকাল ধরে সিডনিতে বসবাসরত এ মানুষটির নাম গামা আবদুল কাদির। ধর্ম-বর্ণ-দল-মতনির্বিশেষে যিনি সবার আপনজন।
আমি কেন তাঁর কথা লিখছি? তাঁর মতো অগ্রজদের সম্মান জানালে আমরা সবাই উপকৃত হব। আজকে চারদিকে যখন অসম্মান আর অমর্যাদার লড়াই, সে পরিবেশ বিদেশেও অশুভ ছায়া ফেলছে বৈকি। ক্রমাগত উত্তেজনা আর ক্রোধ বাঙালির অনেক কিছু কেড়ে নিচ্ছে। সে বাস্তবতায় এ মানুষটিকে যে সবাই সম্মান করেন, এটা বড় ব্যাপার মনে করি।
মাত্র গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম নারীদের সংগঠন পড়ুয়ার আসরের হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন স্মরণে এক বর্ণিল আয়োজনে। পড়ুয়ার আসর আপন প্রাণের আলো জ্বালিয়ে এক রোববার হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করেছিল। হুমায়ূনের লেখা তাঁর স্মৃতি, তাঁর স্মরণে বারবার জেগে উঠছিল মুক্তিযুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত এমনই হলো যে, পাঠ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মুক্তিযোদ্ধা শাহদাত ভাই। সে অশ্রু আমাদেরও স্পর্শ করে গেছে।
এই আয়োজনে পড়ুয়ার আসর চার গুণী বাংলাদেশিকে সম্মাননা জানিয়েছে। তাঁরা নিজ নিজ কৃতিত্বে সমুজ্জ্বল। আমার অগ্রজ বন্ধু সিডনির অভিভাবকতুল্য সংগঠক গামা আবদুল কাদিরও এ সম্মাননাপ্রাপ্তদের একজন। তিনি পাওয়ায় আমি ও আমার মতো অনেকেই আপ্লুত হয়েছিলাম। প্রথমবারের মতো তারা এই সম্মাননা দিল। যার একটি গেল গামা ভাইয়ের হাতে। গামা কাদির লেখক নন, গবেষকও নন। তিনি সাহিত্য ভালোবাসেন, শিল্পানুরাগী। কিন্তু তাঁকে এড়ানোর সাধ্য নেই। যে কারণে পড়ুয়ার আসর তাঁকে জানিয়েছে যথোপযুক্ত সম্মাননা।
এরপর এক সপ্তাহ পার না হতেই এই তো দুদিন আগে তিনি পেলেন অজি মূলধারার আরেকটি সম্মাননা। এ যাত্রায় তিনি লাভ করলেন ‘কিংসফোর্ড স্মিথ কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’। এটি অত্যন্ত সম্মানের। যে কারণে এ পুরস্কার হাতে তুলে দিয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট মিনিস্টার ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড ম্যাট থিসেল্থওয়েট এমপি।
এ বিষয়ে বিদেশ বার্তা নামের মিডিয়া লিখেছে:
‘ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা ও শিকড়কে অক্ষুণ্ন রেখে অস্ট্রেলিয়ার সমাজ ও জীবনযাত্রার সঙ্গে প্রবাসীদের সেতুবন্ধ গড়ে তুলতে কয়েকজন সচেতন প্রবাসী প্রতিষ্ঠা করেন “বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব অস্ট্রেলিয়া”, যা এখনো প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে ইতিহাসসমৃদ্ধ সংগঠন। উদ্দেশ্য ছিল, পরিচয়ের শিকড় রক্ষা করে বাঙালি কমিউনিটির ঐক্যের পতাকা উঁচু রাখা।
এই সংগঠনের তিনবার সাধারণ সম্পাদক এবং পাঁচবার সভাপতি হিসেবে গামা আবদুল কাদির ছিলেন কমিউনিটির সামনে অনুপ্রেরণার প্রতীক। প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ, সাংস্কৃতিক চর্চা, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, নতুন প্রজন্মের পরিচয়বোধ—সবকিছুতেই তাঁর নিবেদিত উপস্থিতি ছিল অবিচ্ছেদ্য। অনেকেই তাঁকে বলেন “কমিউনিটির অভিভাবক”, আবার অনেকে তাঁকে মনে করেন “অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালির প্রথম ঠিকানা”।’
গামা ভাই মানুষ হিসেবে যে পরোপকারী তা আমার চেয়ে ভালো কজন জানেন, জানি না। যখনই দেশ থেকে আসা কোনো তরুণ-তরুণী বিপদাপন্ন হয় বা অসুবিধায় পড়ে আমাকে জানায়, আমি প্রথমেই গামা ভাইয়ের শরণাপন্ন হই। আমি জানি তিনি একটা বিহিত করবেন। মূল যে বিষয়টি—এ মানুষ অর্ধশতাব্দী ধরে সিডনিতে বসবাস করলেও মনেপ্রাণে বাঙালি। প্রগতিশীল ধারার একজন আলোকিত মানুষ।
একটা সময় পর মানুষের বন্ধুত্বে বয়স আর বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। আমার অবশ্য যৌবন থেকেই বয়সী মানুষদের সঙ্গে গভীর নৈকট্য। সেটা প্রয়াত সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত বা আজাদী সম্পাদক মরহুম অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ যে-ই হোন না কেন, তাঁরা ছিলেন আমার মাথার ছাতা, কিন্তু অগ্রজ অভিভাবক বন্ধুর শীতল ছায়ার মতো।
গামা আবদুল কাদিরের সম্মাননা মূলত যাঁরা বিদেশে সামাজিক কর্মকাণ্ড করেন বা সমাজ ও জাতির প্রতি নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের জন্য সুখবর। তিনি একা চলার মানুষ। এই একলা চলায় যে শক্তি তাঁর কারণেই আজ তিনি নন্দিত। একই সঙ্গে এটাও প্রমাণ করেছেন, জীবনের কোনো কাজই ফেলনা না বা সমাজের হিতসাধনের কাজ একদিন না একদিন তার ন্যায্য সম্মান পাবেই। গামা আবদুল কাদিরের মতো বর্ষীয়ান বাংলাদেশিরা আমাদের অহংকার। আমাদের শিকড়ের সঙ্গে আত্মার যোগ।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট

আমাদের শিকড় বাংলাদেশে। কিন্তু প্রবাসে বাংলাদেশের ডানা মেলে উড়ে চলা এখন সবার নজরে পড়ছে। বলা উচিত, বেশ কিছু বছর থেকে এই অগ্রযাত্রা আর বিস্তার দেখছে সিডনি। রাজনীতি এবং ধর্মান্ধতা ছাড়া আর কিছুই আমাদের বিভক্ত করতে পারে না। মাঝেমধ্যে এমন সব অনুষ্ঠান বা আয়োজনে যাই, অন্তরের শক্তি দেখে বিস্মিত হই। এ যেন এক প্রাণের স্পন্দন। এ যেন বহু দূরে বাংলা-বাঙালির শিকড়ের সঙ্গে বর্তমানের মেলবন্ধন।
আজ আমি যে মানুষটির কথা লিখছি তিনি সিডনি এসেছিলেন প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে। আমি যখন কলেজের সীমানা পেরিয়ে উচ্চতর পাঠের চেষ্টা চালাচ্ছিলাম, তিনি তখন প্রশান্ত পাড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ভাবতেই আমি রোমাঞ্চিত হই। আজকাল যেমন বিদেশে যাওয়া ছেলের হাতের মোয়ার মতো, আকছার মানুষজন দেশের বাইরে চলে যায়, তখন তেমনটি ছিল না। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের নামও জানত না বহু দেশ। বহু জাতির কাছে আমরা ছিলাম এলিয়েন বা আগন্তুক। আমার এক গায়ক বন্ধু থাকেন সিডনিতে। বাংলাদেশে ব্যান্ড গানের শুরুর সময়টায় তাঁর গান ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সুদর্শন মামুন আমাকে একবার বলেছিলেন বাঙালিবিহীন তখনকার অজি জগতের সঙ্গে বসবাস তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। শহর থেকে অনেক দূরে তখনকার অস্ট্রেলিয়ায় সাদা মানুষদের সঙ্গে থাকাটা নানা কারণে ছিল কঠিন। সেই চাপ—বাংলা বলতে না পারার কষ্ট আর মনোবেদনায় মানুষের কত রকমের পরিবর্তন ঘটতে পারে। যেমন তাঁর মাথার কেশ উধাও হয়ে যাওয়া!
অথচ যাঁর কথা লিখছি, এখনো তাঁর মাথা চুলে ভরা। বয়স তাঁকে সেভাবে স্পর্শ করতে পারেনি। বেশ কিছু বছর ধরে আমি তাঁর সঙ্গে যাতায়াত করি। যাতায়াত বলতে কোনো অনুষ্ঠানে দুজনের দাওয়াত থাকলে একসঙ্গে যাই। ট্রেনে-বাসে চড়ে এই যাওয়ায় আমাদের সঙ্গী গরম শিঙাড়া আর চা। আড্ডাবাজ মানুষটিকে ২৯ বছর ধরে চিনলেও এই আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে অনেক পরে। এখনো তিনি আমার চেয়ে সতেজ আর বলিষ্ঠ। একের অধিক অনুষ্ঠান থাকলে আমি যেকোনো একটা বেছে নিই, তিনি তা করেন না। অবশ্য করতে পারেনও না। তাঁর চাহিদা বেশি। দীর্ঘকাল ধরে সিডনিতে বসবাসরত এ মানুষটির নাম গামা আবদুল কাদির। ধর্ম-বর্ণ-দল-মতনির্বিশেষে যিনি সবার আপনজন।
আমি কেন তাঁর কথা লিখছি? তাঁর মতো অগ্রজদের সম্মান জানালে আমরা সবাই উপকৃত হব। আজকে চারদিকে যখন অসম্মান আর অমর্যাদার লড়াই, সে পরিবেশ বিদেশেও অশুভ ছায়া ফেলছে বৈকি। ক্রমাগত উত্তেজনা আর ক্রোধ বাঙালির অনেক কিছু কেড়ে নিচ্ছে। সে বাস্তবতায় এ মানুষটিকে যে সবাই সম্মান করেন, এটা বড় ব্যাপার মনে করি।
মাত্র গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম নারীদের সংগঠন পড়ুয়ার আসরের হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন স্মরণে এক বর্ণিল আয়োজনে। পড়ুয়ার আসর আপন প্রাণের আলো জ্বালিয়ে এক রোববার হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করেছিল। হুমায়ূনের লেখা তাঁর স্মৃতি, তাঁর স্মরণে বারবার জেগে উঠছিল মুক্তিযুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত এমনই হলো যে, পাঠ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মুক্তিযোদ্ধা শাহদাত ভাই। সে অশ্রু আমাদেরও স্পর্শ করে গেছে।
এই আয়োজনে পড়ুয়ার আসর চার গুণী বাংলাদেশিকে সম্মাননা জানিয়েছে। তাঁরা নিজ নিজ কৃতিত্বে সমুজ্জ্বল। আমার অগ্রজ বন্ধু সিডনির অভিভাবকতুল্য সংগঠক গামা আবদুল কাদিরও এ সম্মাননাপ্রাপ্তদের একজন। তিনি পাওয়ায় আমি ও আমার মতো অনেকেই আপ্লুত হয়েছিলাম। প্রথমবারের মতো তারা এই সম্মাননা দিল। যার একটি গেল গামা ভাইয়ের হাতে। গামা কাদির লেখক নন, গবেষকও নন। তিনি সাহিত্য ভালোবাসেন, শিল্পানুরাগী। কিন্তু তাঁকে এড়ানোর সাধ্য নেই। যে কারণে পড়ুয়ার আসর তাঁকে জানিয়েছে যথোপযুক্ত সম্মাননা।
এরপর এক সপ্তাহ পার না হতেই এই তো দুদিন আগে তিনি পেলেন অজি মূলধারার আরেকটি সম্মাননা। এ যাত্রায় তিনি লাভ করলেন ‘কিংসফোর্ড স্মিথ কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’। এটি অত্যন্ত সম্মানের। যে কারণে এ পুরস্কার হাতে তুলে দিয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট মিনিস্টার ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড ম্যাট থিসেল্থওয়েট এমপি।
এ বিষয়ে বিদেশ বার্তা নামের মিডিয়া লিখেছে:
‘ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা ও শিকড়কে অক্ষুণ্ন রেখে অস্ট্রেলিয়ার সমাজ ও জীবনযাত্রার সঙ্গে প্রবাসীদের সেতুবন্ধ গড়ে তুলতে কয়েকজন সচেতন প্রবাসী প্রতিষ্ঠা করেন “বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব অস্ট্রেলিয়া”, যা এখনো প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে ইতিহাসসমৃদ্ধ সংগঠন। উদ্দেশ্য ছিল, পরিচয়ের শিকড় রক্ষা করে বাঙালি কমিউনিটির ঐক্যের পতাকা উঁচু রাখা।
এই সংগঠনের তিনবার সাধারণ সম্পাদক এবং পাঁচবার সভাপতি হিসেবে গামা আবদুল কাদির ছিলেন কমিউনিটির সামনে অনুপ্রেরণার প্রতীক। প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ, সাংস্কৃতিক চর্চা, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, নতুন প্রজন্মের পরিচয়বোধ—সবকিছুতেই তাঁর নিবেদিত উপস্থিতি ছিল অবিচ্ছেদ্য। অনেকেই তাঁকে বলেন “কমিউনিটির অভিভাবক”, আবার অনেকে তাঁকে মনে করেন “অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালির প্রথম ঠিকানা”।’
গামা ভাই মানুষ হিসেবে যে পরোপকারী তা আমার চেয়ে ভালো কজন জানেন, জানি না। যখনই দেশ থেকে আসা কোনো তরুণ-তরুণী বিপদাপন্ন হয় বা অসুবিধায় পড়ে আমাকে জানায়, আমি প্রথমেই গামা ভাইয়ের শরণাপন্ন হই। আমি জানি তিনি একটা বিহিত করবেন। মূল যে বিষয়টি—এ মানুষ অর্ধশতাব্দী ধরে সিডনিতে বসবাস করলেও মনেপ্রাণে বাঙালি। প্রগতিশীল ধারার একজন আলোকিত মানুষ।
একটা সময় পর মানুষের বন্ধুত্বে বয়স আর বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। আমার অবশ্য যৌবন থেকেই বয়সী মানুষদের সঙ্গে গভীর নৈকট্য। সেটা প্রয়াত সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত বা আজাদী সম্পাদক মরহুম অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ যে-ই হোন না কেন, তাঁরা ছিলেন আমার মাথার ছাতা, কিন্তু অগ্রজ অভিভাবক বন্ধুর শীতল ছায়ার মতো।
গামা আবদুল কাদিরের সম্মাননা মূলত যাঁরা বিদেশে সামাজিক কর্মকাণ্ড করেন বা সমাজ ও জাতির প্রতি নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের জন্য সুখবর। তিনি একা চলার মানুষ। এই একলা চলায় যে শক্তি তাঁর কারণেই আজ তিনি নন্দিত। একই সঙ্গে এটাও প্রমাণ করেছেন, জীবনের কোনো কাজই ফেলনা না বা সমাজের হিতসাধনের কাজ একদিন না একদিন তার ন্যায্য সম্মান পাবেই। গামা আবদুল কাদিরের মতো বর্ষীয়ান বাংলাদেশিরা আমাদের অহংকার। আমাদের শিকড়ের সঙ্গে আত্মার যোগ।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট

অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের-বিএমইউ (সাবেক পিজি হাসপাতাল) ভাইস চ্যান্সেলর। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্যের (একাডেমিক) দায়িত্ব পালন করেছেন। যে গতিতে পৃথিবী থেকে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিঃশেষ হচ্ছে...
১ দিন আগে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি ফিরে এসেছে। কিন্তু আসলেই কি ফিরে এসেছে? ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়েছিলেন। ১৪ বছর পর বর্তমান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ আগের সে রায়কে ত্রুটিপূর্ণ...
১৪ মিনিট আগে
কমরেড দাউদ হোসেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। যিনি বিগত পাঁচ দশকের অধিক সময় ধরে নিজের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেছেন। তাঁর নিরলস লড়াইয়ের ইতি টেনে ২১ নভেম্বর বেলা ১১টায় তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।
২০ মিনিট আগে
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলেই সবার মনে পড়ে যায়—ঢাকা এক অপরিকল্পিত নগরী। যে যার মতো করে আইন অনুসরণ না করে এখানে তৈরি করে নিয়েছে বাড়িঘর, যেখানে-সেখানে ফেলছে আবর্জনা, সরকারি জায়গা দখল করে বসিয়েছে দোকান—এ রকম আরও কত কি!
২৪ মিনিট আগেশ্রদ্ধাঞ্জলি
বিপ্লব রঞ্জন সাহা

কমরেড দাউদ হোসেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। যিনি বিগত পাঁচ দশকের অধিক সময় ধরে নিজের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেছেন। তাঁর নিরলস লড়াইয়ের ইতি টেনে ২১ নভেম্বর বেলা ১১টায় তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
কমরেড দাউদ হোসেনের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়েছিল বিংশ শতকের ষাটের দশকের শুরুর দিকে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে হাতেখড়ির মাধ্যমে। তখন থেকেই তাঁর ভাবনাজুড়ে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার বিষয়টি পাকাপোক্তভাবে গেঁথে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৬৩-৬৪ সালে রবীন্দ্রচর্চা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলন ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয় অংশ নেন। দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার জন্য প্রয়োজনে সশস্ত্র সংগ্রামের পথেও ঝাঁপিয়ে পড়তে তিনি মানসিকভাবে তৈরি ছিলেন এবং সেই লক্ষ্যে সংগঠন বিস্তারের কর্মপ্রয়াস গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের নিবর্তনমূলক শাসন থেকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সমমনাদের নিয়ে ‘পূর্ববাংলা জাতীয় মুক্তি সংস্থা’ গঠন করেন।
দাউদ হোসেনের নেতৃত্বে যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামে পূর্ববাংলা জাতীয় মুক্তি সংস্থার (জামুস) গোপন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান সামরিক আইনে জামুস সদস্যদের বিরুদ্ধে গুরুতর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। গ্রেপ্তার এড়িয়ে দাউদ হোসেন চলে যান গুপ্ত রাজনৈতিক জীবনে, যা ব্যাহত করে তাঁর ছাত্রজীবনকে। মাথার ওপর ঝুলতে থাকে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের হুলিয়া।
১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কমিউনিস্ট আন্দোলন মস্কো-পিকিং লাইনে বিভাজিত হওয়ার পরপর ‘শ্রমিক মুক্তি সংঘ’ সংগঠনটি গড়ে ওঠে। জাতীয় মুক্তিসংগ্রামকে সমাজবিপ্লবের পথে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৬৮ সালে তিনি শ্রমিক-কৃষক কর্মী সংঘে যোগদান করেন এবং কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে লিপ্ত হন। ১৯৬৯ সালে মুক্তিযুদ্ধের ড্রেস রিহার্সালখ্যাত ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে জামুস সদস্যরা এবং কর্মী সংঘ দাউদ হোসেনের নেতৃত্বে সক্রিয় অংশ নেন এবং ৬ দফা ও ১১ দফার সমর্থনে কৃষক সমিতির মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকায় জনমত গঠন করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শতধাবিভক্ত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে ক্রিয়াশীল নানামুখী দল-উপদলের সমন্বয়ে কলকাতায় বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম সমন্বয় কমিটি গড়ে তুলতে শ্রমিক-কৃষক কর্মী সংঘের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সমন্বয় কমিটির অন্যতম সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পর শ্রমিক-কৃষক কর্মী সংঘ ‘বাংলাদেশ কমিউনিস্ট কর্মী সংঘ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। সংঘের প্রয়োজনে তিনি নিজ গ্রামে বসবাস শুরু করেন এবং কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে অবলম্বন করেন, যাতে নিয়োজিত থাকেন দীর্ঘ ১৪ বছর। এ সময় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করেন একটি হাইস্কুল। এ ছাড়া অত্র এলাকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও পরিচালনায় পালন করেন মুখ্য ভূমিকা।
১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে এক ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কর্মী সংঘ ও কৃষক সমিতির কয়েক ডজন নেতা-কর্মীসহ গ্রেপ্তার হন। আদালতের বিচারে তাঁরা সবাই নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং ১৯৭৭ সালে মুক্তি পান।
১৯৮০ সালে যশোর থেকে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘সাপ্তাহিক শনিবার’ পত্রিকা, যা দুই বছর টিকে ছিল।
’৮৪ সালে কমিউনিস্ট আন্দোলনে ক্রিয়াশীল পার্টিগুলোর তাত্ত্বিক দেউলিয়াত্ব তুলে ধরতে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদে গভীরভাবে আস্থাশীল থেকে সূচনা করেন লাগাতার ধারাবাহিক মতাদর্শিক সংগ্রাম। এ সংগ্রামকে কার্যকরের লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে ঢাকায় চলে আসেন।
ষাটের দশকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন যখন মস্কো ও পিকিং লাইনে বিভাজিত হয়, তখন থেকেই তিনি ছিলেন এই ঘোরতর বিরোধী। এই বিভক্তির বিলোপবাদী পেটিবুর্জোয়া চরিত্র উন্মোচনে তত্ত্বগত সংগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরতে দেশীয় প্রাসঙ্গিকতায় লেনিনের অর্থশাস্ত্রীয় গ্রন্থাদির অনুবাদকর্ম শুরু করেন এবং লেনিনের ‘বাজার প্রসঙ্গ’, ‘নারোদবাদের অর্থনৈতিক মর্মবস্তু’, ‘অর্থনৈতিক রোমান্টিকতাবাদ’-এর বঙ্গানুবাদ সংঘ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৮-৮৯ সালে উল্লিখিত লেনিনের তিনটি গ্রন্থের বঙ্গানুবাদের মাধ্যমে বঙ্গীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় পার্টিগুলোর মতাদর্শিক দেউলিয়াত্বের কার্যকরণ বিশ্লেষণ করে প্রতিটি গ্রন্থের ভূমিকায় বিদ্যমান পার্টিগুলোর শ্রেণি অবস্থান ও বাস্তবতা তুলে ধরেন।
বিভিন্ন কমিউনিস্ট দল-উপদল থেকে বেরিয়ে আসা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে নিয়মিত পাঠচক্র সংগঠিত করে। এসব পাঠচক্রের মধ্যে ছিল ‘মার্ক্সবাদ চর্চাকেন্দ্র’, ‘মার্ক্সবাদ অনুশীলন সমিতি’ ও ‘পর্যালোচনা পরিষদ’। দাউদ হোসেন অনূদিত ও প্রকাশিত লেনিনের গ্রন্থসমূহ পাঠ করে নিয়মিত পাঠচক্রে অংশগ্রহণকারী কর্মীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে কমিউনিস্ট কর্মী সংঘের অংশগ্রহণে পাঠচক্রগুলোর সমন্বয়ে গড়ে তোলেন যৌথ পাঠচক্র। পরবর্তী সময়ে যৌথ পাঠচক্রগুলো সর্বসম্মতিক্রমে ১৯৮৯ সালের ১ ডিসেম্বর যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট কর্মী সংঘে যোগদান করে।
১৯৯০-৯১ সালের কালপর্বে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বজুড়ে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকটকালে কমিউনিস্ট কর্মী সংঘের কার্যকলাপ সীমিত গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়লে দাউদ হোসেন ‘সাপ্তাহিক রোববার’ পত্রিকায় সিনিয়র সহসম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে লেখালেখির কাজ অব্যাহত রাখেন। তাঁর অনূদিত ও সম্পাদিত আরও কয়েকটি বই হলো ‘আমারে কবর দিও হাঁটুভাঙার বাঁকে’, লেনিনের ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ’, ফজলুল কাদের কাদেরী সংকলিত ‘বাংলাদেশ জেনোসাইড অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড প্রেস’-এর বঙ্গানুবাদ। গুয়াতেমালার নোবেল বিজয়ী রেড ইন্ডিয়ান নারীনেত্রী রিগোবার্তা মেনচু রচিত আত্মজীবনী ‘আমি রিগোবার্তা মেনচু’ এবং ‘সীমান্ত পেরিয়ে’ গ্রন্থ দুটি।
এ ছাড়া তাঁর প্রবন্ধ সংকলনগ্রন্থ ‘বিংশ শতাব্দীর শেষবাঁকের দ্বান্দ্বিকতা’। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় আন্দ্রেই আনিকিন রচিত মস্কোর প্রগতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘অর্থশাস্ত্র বিকাশের ধারা’ গ্রন্থটি। এরপর তিনি প্রকাশ করেন কৌটিল্য রচিত ‘কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থটি। কার্ল মার্ক্স রচিত ‘ডাস ক্যাপিটাল’-এর ইংরেজি তিন খণ্ডের বঙ্গানুবাদ তাঁর হাতেই সম্পাদিত হয়ে ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে পাঁচটি পৃথক খণ্ডে।
২০০১ সালে বঙ্গীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনে প্রাধান্যশীল পেটিবুর্জোয়া ধারাগুলোর সমালোচনা করে লেখেন ‘মার্ক্সবাদের বঙ্গীয় স্বরূপ’ গ্রন্থটি।
অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী আজীবন সংগ্রামী কমরেড দাউদ হোসেন তত্ত্বগত সংগ্রামের গুরুত্ব উপলব্ধি করে পেশা হিসেবে লেখনী ও প্রকাশনাকে বেছে নিয়েছিলেন। এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই মহতী কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। কমরেড দাউদ হোসেন তাঁর সৃজনশীল কর্মের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

কমরেড দাউদ হোসেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। যিনি বিগত পাঁচ দশকের অধিক সময় ধরে নিজের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেছেন। তাঁর নিরলস লড়াইয়ের ইতি টেনে ২১ নভেম্বর বেলা ১১টায় তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
কমরেড দাউদ হোসেনের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়েছিল বিংশ শতকের ষাটের দশকের শুরুর দিকে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে হাতেখড়ির মাধ্যমে। তখন থেকেই তাঁর ভাবনাজুড়ে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার বিষয়টি পাকাপোক্তভাবে গেঁথে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৬৩-৬৪ সালে রবীন্দ্রচর্চা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলন ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয় অংশ নেন। দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার জন্য প্রয়োজনে সশস্ত্র সংগ্রামের পথেও ঝাঁপিয়ে পড়তে তিনি মানসিকভাবে তৈরি ছিলেন এবং সেই লক্ষ্যে সংগঠন বিস্তারের কর্মপ্রয়াস গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের নিবর্তনমূলক শাসন থেকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সমমনাদের নিয়ে ‘পূর্ববাংলা জাতীয় মুক্তি সংস্থা’ গঠন করেন।
দাউদ হোসেনের নেতৃত্বে যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামে পূর্ববাংলা জাতীয় মুক্তি সংস্থার (জামুস) গোপন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান সামরিক আইনে জামুস সদস্যদের বিরুদ্ধে গুরুতর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। গ্রেপ্তার এড়িয়ে দাউদ হোসেন চলে যান গুপ্ত রাজনৈতিক জীবনে, যা ব্যাহত করে তাঁর ছাত্রজীবনকে। মাথার ওপর ঝুলতে থাকে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের হুলিয়া।
১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কমিউনিস্ট আন্দোলন মস্কো-পিকিং লাইনে বিভাজিত হওয়ার পরপর ‘শ্রমিক মুক্তি সংঘ’ সংগঠনটি গড়ে ওঠে। জাতীয় মুক্তিসংগ্রামকে সমাজবিপ্লবের পথে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৬৮ সালে তিনি শ্রমিক-কৃষক কর্মী সংঘে যোগদান করেন এবং কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে লিপ্ত হন। ১৯৬৯ সালে মুক্তিযুদ্ধের ড্রেস রিহার্সালখ্যাত ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে জামুস সদস্যরা এবং কর্মী সংঘ দাউদ হোসেনের নেতৃত্বে সক্রিয় অংশ নেন এবং ৬ দফা ও ১১ দফার সমর্থনে কৃষক সমিতির মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকায় জনমত গঠন করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শতধাবিভক্ত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে ক্রিয়াশীল নানামুখী দল-উপদলের সমন্বয়ে কলকাতায় বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম সমন্বয় কমিটি গড়ে তুলতে শ্রমিক-কৃষক কর্মী সংঘের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সমন্বয় কমিটির অন্যতম সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পর শ্রমিক-কৃষক কর্মী সংঘ ‘বাংলাদেশ কমিউনিস্ট কর্মী সংঘ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। সংঘের প্রয়োজনে তিনি নিজ গ্রামে বসবাস শুরু করেন এবং কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে অবলম্বন করেন, যাতে নিয়োজিত থাকেন দীর্ঘ ১৪ বছর। এ সময় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করেন একটি হাইস্কুল। এ ছাড়া অত্র এলাকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও পরিচালনায় পালন করেন মুখ্য ভূমিকা।
১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে এক ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কর্মী সংঘ ও কৃষক সমিতির কয়েক ডজন নেতা-কর্মীসহ গ্রেপ্তার হন। আদালতের বিচারে তাঁরা সবাই নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং ১৯৭৭ সালে মুক্তি পান।
১৯৮০ সালে যশোর থেকে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘সাপ্তাহিক শনিবার’ পত্রিকা, যা দুই বছর টিকে ছিল।
’৮৪ সালে কমিউনিস্ট আন্দোলনে ক্রিয়াশীল পার্টিগুলোর তাত্ত্বিক দেউলিয়াত্ব তুলে ধরতে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদে গভীরভাবে আস্থাশীল থেকে সূচনা করেন লাগাতার ধারাবাহিক মতাদর্শিক সংগ্রাম। এ সংগ্রামকে কার্যকরের লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে ঢাকায় চলে আসেন।
ষাটের দশকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন যখন মস্কো ও পিকিং লাইনে বিভাজিত হয়, তখন থেকেই তিনি ছিলেন এই ঘোরতর বিরোধী। এই বিভক্তির বিলোপবাদী পেটিবুর্জোয়া চরিত্র উন্মোচনে তত্ত্বগত সংগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরতে দেশীয় প্রাসঙ্গিকতায় লেনিনের অর্থশাস্ত্রীয় গ্রন্থাদির অনুবাদকর্ম শুরু করেন এবং লেনিনের ‘বাজার প্রসঙ্গ’, ‘নারোদবাদের অর্থনৈতিক মর্মবস্তু’, ‘অর্থনৈতিক রোমান্টিকতাবাদ’-এর বঙ্গানুবাদ সংঘ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৮-৮৯ সালে উল্লিখিত লেনিনের তিনটি গ্রন্থের বঙ্গানুবাদের মাধ্যমে বঙ্গীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় পার্টিগুলোর মতাদর্শিক দেউলিয়াত্বের কার্যকরণ বিশ্লেষণ করে প্রতিটি গ্রন্থের ভূমিকায় বিদ্যমান পার্টিগুলোর শ্রেণি অবস্থান ও বাস্তবতা তুলে ধরেন।
বিভিন্ন কমিউনিস্ট দল-উপদল থেকে বেরিয়ে আসা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে নিয়মিত পাঠচক্র সংগঠিত করে। এসব পাঠচক্রের মধ্যে ছিল ‘মার্ক্সবাদ চর্চাকেন্দ্র’, ‘মার্ক্সবাদ অনুশীলন সমিতি’ ও ‘পর্যালোচনা পরিষদ’। দাউদ হোসেন অনূদিত ও প্রকাশিত লেনিনের গ্রন্থসমূহ পাঠ করে নিয়মিত পাঠচক্রে অংশগ্রহণকারী কর্মীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে কমিউনিস্ট কর্মী সংঘের অংশগ্রহণে পাঠচক্রগুলোর সমন্বয়ে গড়ে তোলেন যৌথ পাঠচক্র। পরবর্তী সময়ে যৌথ পাঠচক্রগুলো সর্বসম্মতিক্রমে ১৯৮৯ সালের ১ ডিসেম্বর যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট কর্মী সংঘে যোগদান করে।
১৯৯০-৯১ সালের কালপর্বে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বজুড়ে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকটকালে কমিউনিস্ট কর্মী সংঘের কার্যকলাপ সীমিত গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়লে দাউদ হোসেন ‘সাপ্তাহিক রোববার’ পত্রিকায় সিনিয়র সহসম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে লেখালেখির কাজ অব্যাহত রাখেন। তাঁর অনূদিত ও সম্পাদিত আরও কয়েকটি বই হলো ‘আমারে কবর দিও হাঁটুভাঙার বাঁকে’, লেনিনের ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ’, ফজলুল কাদের কাদেরী সংকলিত ‘বাংলাদেশ জেনোসাইড অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড প্রেস’-এর বঙ্গানুবাদ। গুয়াতেমালার নোবেল বিজয়ী রেড ইন্ডিয়ান নারীনেত্রী রিগোবার্তা মেনচু রচিত আত্মজীবনী ‘আমি রিগোবার্তা মেনচু’ এবং ‘সীমান্ত পেরিয়ে’ গ্রন্থ দুটি।
এ ছাড়া তাঁর প্রবন্ধ সংকলনগ্রন্থ ‘বিংশ শতাব্দীর শেষবাঁকের দ্বান্দ্বিকতা’। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় আন্দ্রেই আনিকিন রচিত মস্কোর প্রগতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘অর্থশাস্ত্র বিকাশের ধারা’ গ্রন্থটি। এরপর তিনি প্রকাশ করেন কৌটিল্য রচিত ‘কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থটি। কার্ল মার্ক্স রচিত ‘ডাস ক্যাপিটাল’-এর ইংরেজি তিন খণ্ডের বঙ্গানুবাদ তাঁর হাতেই সম্পাদিত হয়ে ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে পাঁচটি পৃথক খণ্ডে।
২০০১ সালে বঙ্গীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনে প্রাধান্যশীল পেটিবুর্জোয়া ধারাগুলোর সমালোচনা করে লেখেন ‘মার্ক্সবাদের বঙ্গীয় স্বরূপ’ গ্রন্থটি।
অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী আজীবন সংগ্রামী কমরেড দাউদ হোসেন তত্ত্বগত সংগ্রামের গুরুত্ব উপলব্ধি করে পেশা হিসেবে লেখনী ও প্রকাশনাকে বেছে নিয়েছিলেন। এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই মহতী কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। কমরেড দাউদ হোসেন তাঁর সৃজনশীল কর্মের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের-বিএমইউ (সাবেক পিজি হাসপাতাল) ভাইস চ্যান্সেলর। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্যের (একাডেমিক) দায়িত্ব পালন করেছেন। যে গতিতে পৃথিবী থেকে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিঃশেষ হচ্ছে...
১ দিন আগে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি ফিরে এসেছে। কিন্তু আসলেই কি ফিরে এসেছে? ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়েছিলেন। ১৪ বছর পর বর্তমান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ আগের সে রায়কে ত্রুটিপূর্ণ...
১৪ মিনিট আগে
আমাদের শিকড় বাংলাদেশে। কিন্তু প্রবাসে বাংলাদেশের ডানা মেলে উড়ে চলা এখন সবার নজরে পড়ছে। বলা উচিত, বেশ কিছু বছর থেকে এই অগ্রযাত্রা আর বিস্তার দেখছে সিডনি। রাজনীতি এবং ধর্মান্ধতা ছাড়া আর কিছুই আমাদের বিভক্ত করতে পারে না।
১৭ মিনিট আগে
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলেই সবার মনে পড়ে যায়—ঢাকা এক অপরিকল্পিত নগরী। যে যার মতো করে আইন অনুসরণ না করে এখানে তৈরি করে নিয়েছে বাড়িঘর, যেখানে-সেখানে ফেলছে আবর্জনা, সরকারি জায়গা দখল করে বসিয়েছে দোকান—এ রকম আরও কত কি!
২৪ মিনিট আগেসম্পাদকীয়

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলেই সবার মনে পড়ে যায়—ঢাকা এক অপরিকল্পিত নগরী। যে যার মতো করে আইন অনুসরণ না করে এখানে তৈরি করে নিয়েছে বাড়িঘর, যেখানে-সেখানে ফেলছে আবর্জনা, সরকারি জায়গা দখল করে বসিয়েছে দোকান—এ রকম আরও কত কি! কিন্তু একটা বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এ শহরটি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে পারে, এ কথা কেউ মনেও রাখে না।
পরপর চারটি ভূমিকম্প হওয়ায় এখন রাজধানীর বাসিন্দারা বুঝতে পারছেন, কতটা অবহেলা করেছেন শহরটিকে। একটু বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ঢাকার পরিণতি হবে ভয়াবহ। দেশের রাজধানী শহরটিতে নিয়মকানুন আছে ঠিকই; কিন্তু সে নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা থেকে কেউই পিছিয়ে থাকতে চায় না। একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, নগর-পরিকল্পনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি বসবাসের সুযোগ আছে এখানে। বিল্ডিং কোড না মেনেই তৈরি হচ্ছে একের পর এক বাড়ি। বিল্ডিং কোড না মানার এই ‘হ্যাডম’ কী করে তৈরি হলো, তা নিয়ে শুধু বিস্ময় প্রকাশ করলেই চলবে না, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সরল সত্য হলো, ঢাকা মহানগরীর বেশির ভাগ বাড়ি তৈরির সময় বিল্ডিং কোড মানা হয়নি।
মনে করিয়ে দিতে চাই, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। এ শহরকে নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। কে কোন পথে আইন ভঙ্গ করে শহরটিকে নিয়ন্ত্রণহীন করে ফেলবে, তার ঠিক নেই। ভূমিকম্পের দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার, তার অভাব রয়েছে। কীভাবে সে অভাব কাটিয়ে ওঠা যায়, তা নিয়ে সচেতন হতে হবে।
এখন গভীরভাবে ভাবা দরকার, একটা দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার পর উদ্ধারকাজে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করা প্রাসঙ্গিক, নাকি এ শহরের স্থাপনাগুলোর ভূমিকম্প প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি? ভূমিকম্পের সহনশীলতা নির্ধারণের মানদণ্ড অনুসরণ করে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে পরবর্তী সময়ে ভূমিকম্পে ভবনটি ঝুঁকিতে পড়ে না। কিন্তু তা মানা হয় না বললেই চলে।
ভূমিকম্পের সময় করণীয় কী, সে বিষয়টি নিয়েও সচেতনতা নেই। বেশির ভাগ মানুষের কাছেই তা অজানা। তাদের সচেতন করে তুলতে হবে। কেন আমরা এ রকম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলাম, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩০-৩৫ বছর ধরে ঢাকা শহরটি যেভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে, তার একটি বড় অংশই হয়েছে নরম মাটির ওপর। নরম মাটিতে নির্মিত অবকাঠামো ভূমিকম্পের সময় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এসব জায়গায় ভবন নির্মাণের সময় ঝুঁকির কথাটা মাথায় রাখা হয়নি। কীভাবে এসব স্থাপনা গড়ে উঠল, তা-ও খুঁজে বের করা দরকার।
ঢাকাকে ভূমিকম্পের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে হলে ইতিমধ্যে নির্মিত ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নির্মাণকাজের সময় বিল্ডিং কোড মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। বিপদ আসার আগেই প্রস্তুতি দরকার।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলেই সবার মনে পড়ে যায়—ঢাকা এক অপরিকল্পিত নগরী। যে যার মতো করে আইন অনুসরণ না করে এখানে তৈরি করে নিয়েছে বাড়িঘর, যেখানে-সেখানে ফেলছে আবর্জনা, সরকারি জায়গা দখল করে বসিয়েছে দোকান—এ রকম আরও কত কি! কিন্তু একটা বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এ শহরটি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে পারে, এ কথা কেউ মনেও রাখে না।
পরপর চারটি ভূমিকম্প হওয়ায় এখন রাজধানীর বাসিন্দারা বুঝতে পারছেন, কতটা অবহেলা করেছেন শহরটিকে। একটু বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ঢাকার পরিণতি হবে ভয়াবহ। দেশের রাজধানী শহরটিতে নিয়মকানুন আছে ঠিকই; কিন্তু সে নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা থেকে কেউই পিছিয়ে থাকতে চায় না। একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, নগর-পরিকল্পনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি বসবাসের সুযোগ আছে এখানে। বিল্ডিং কোড না মেনেই তৈরি হচ্ছে একের পর এক বাড়ি। বিল্ডিং কোড না মানার এই ‘হ্যাডম’ কী করে তৈরি হলো, তা নিয়ে শুধু বিস্ময় প্রকাশ করলেই চলবে না, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সরল সত্য হলো, ঢাকা মহানগরীর বেশির ভাগ বাড়ি তৈরির সময় বিল্ডিং কোড মানা হয়নি।
মনে করিয়ে দিতে চাই, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। এ শহরকে নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। কে কোন পথে আইন ভঙ্গ করে শহরটিকে নিয়ন্ত্রণহীন করে ফেলবে, তার ঠিক নেই। ভূমিকম্পের দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার, তার অভাব রয়েছে। কীভাবে সে অভাব কাটিয়ে ওঠা যায়, তা নিয়ে সচেতন হতে হবে।
এখন গভীরভাবে ভাবা দরকার, একটা দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার পর উদ্ধারকাজে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করা প্রাসঙ্গিক, নাকি এ শহরের স্থাপনাগুলোর ভূমিকম্প প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি? ভূমিকম্পের সহনশীলতা নির্ধারণের মানদণ্ড অনুসরণ করে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে পরবর্তী সময়ে ভূমিকম্পে ভবনটি ঝুঁকিতে পড়ে না। কিন্তু তা মানা হয় না বললেই চলে।
ভূমিকম্পের সময় করণীয় কী, সে বিষয়টি নিয়েও সচেতনতা নেই। বেশির ভাগ মানুষের কাছেই তা অজানা। তাদের সচেতন করে তুলতে হবে। কেন আমরা এ রকম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলাম, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩০-৩৫ বছর ধরে ঢাকা শহরটি যেভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে, তার একটি বড় অংশই হয়েছে নরম মাটির ওপর। নরম মাটিতে নির্মিত অবকাঠামো ভূমিকম্পের সময় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এসব জায়গায় ভবন নির্মাণের সময় ঝুঁকির কথাটা মাথায় রাখা হয়নি। কীভাবে এসব স্থাপনা গড়ে উঠল, তা-ও খুঁজে বের করা দরকার।
ঢাকাকে ভূমিকম্পের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে হলে ইতিমধ্যে নির্মিত ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নির্মাণকাজের সময় বিল্ডিং কোড মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। বিপদ আসার আগেই প্রস্তুতি দরকার।

অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের-বিএমইউ (সাবেক পিজি হাসপাতাল) ভাইস চ্যান্সেলর। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্যের (একাডেমিক) দায়িত্ব পালন করেছেন। যে গতিতে পৃথিবী থেকে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিঃশেষ হচ্ছে...
১ দিন আগে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি ফিরে এসেছে। কিন্তু আসলেই কি ফিরে এসেছে? ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়েছিলেন। ১৪ বছর পর বর্তমান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ আগের সে রায়কে ত্রুটিপূর্ণ...
১৪ মিনিট আগে
আমাদের শিকড় বাংলাদেশে। কিন্তু প্রবাসে বাংলাদেশের ডানা মেলে উড়ে চলা এখন সবার নজরে পড়ছে। বলা উচিত, বেশ কিছু বছর থেকে এই অগ্রযাত্রা আর বিস্তার দেখছে সিডনি। রাজনীতি এবং ধর্মান্ধতা ছাড়া আর কিছুই আমাদের বিভক্ত করতে পারে না।
১৭ মিনিট আগে
কমরেড দাউদ হোসেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। যিনি বিগত পাঁচ দশকের অধিক সময় ধরে নিজের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেছেন। তাঁর নিরলস লড়াইয়ের ইতি টেনে ২১ নভেম্বর বেলা ১১টায় তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।
২০ মিনিট আগে