মামুনুর রশীদ
পৃথিবীটাই একটা রঙ্গমঞ্চ। সেখানে সবাই আমরা অভিনেতা-অভিনেত্রী, যাদের প্রত্যেকের রয়েছে প্রবেশ এবং প্রস্থান। শেক্সপিয়ারের এই কথাটির সত্যতা বছরের পর বছর ধরে পরীক্ষিত। এই সংলাপটি সম্ভবত তিনি রচনা করেছিলেন, রাজরাজড়া-সেনাপতিদের উদ্দেশ্য করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সেই ১৯৪৭ সাল থেকে নানা ঘটনাপ্রবাহ দেখে আসছি। পাকিস্তান রাষ্ট্রের পরিণতি দেখেছি। সেখানকার সেনানায়কদের উত্থান-পতন-পরাজয় দেখেছি। লাখো সৈনিক নিয়ে সেনাপতিদের পতন দেখেছি। এ দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা পূরণ হতেও দেখেছি। আবার ক্ষমতার আস্বাদে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকাও দেখেছি।
সেই প্রবণতার কালে স্বাভাবিকভাবেই কিছু দুর্বৃত্তের উত্থান ঘটে। কিন্তু তাদের উৎখাতের সময় গণতান্ত্রিক শক্তির সম্মিলিত উত্থান না ঘটে অচেনা এক শক্তিকে দেখা গেল। কোটা আন্দোলনের সময় তাদের দেখা গেছে। হঠাৎ করেই সরকার পতনের আন্দোলনে তারা জড়িয়ে পড়ল। জনতার ক্ষোভ ও বঞ্চনাকে কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের রক্তক্ষয়কে পুঁজি করে সরকার উৎখাত করে নতুন এক প্রবাসী সেনাপতিকে ডেকে এনে তাদের আজন্মের ক্ষোভ ও প্রতিশোধস্পৃহাকে কাজে লাগিয়ে এক রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ, তার পতাকা, জাতীয় সংগীত, স্বাধীনতার স্থপতিকে অস্বীকার করে নতুন রাষ্ট্র গঠনের পাঁয়তারা শুরু করল।
এর মধ্যে এক বছর গত হয়ে গেল। অনেক সংস্কার হবে রাষ্ট্রের কিন্তু করবে কারা? কারও কারও অভিযোগ, একাত্তরের পরাজিত শক্তি, ক্ষুব্ধ, বঞ্চিত ও প্রতিশোধকামী কিছু প্রবাসী এবং পশ্চিমা মগজধারী বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যবসায়ীরাই এ ক্ষেত্রে এগিয়ে। এনজিওর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই সংস্কার কমিটিতে প্রাধান্য পেয়েছেন। তাঁদের সমস্যা হচ্ছে তাঁরা রাজনীতি বোঝেন না, কিন্তু আলোচনা করতে পারেন। আলোচনাই সার। প্রতিদিনই আলোচনা-ক্লান্ত কিছু রাজনীতিককে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। পাঁচ মিনিটের আলোচনা পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত অবলীলায় টেনে নিতে দেখা যায়। এই আলোচনার যারা প্রধান পক্ষ, তারা কোনো দিন রাজনীতিকদের এ রকম একটা দরবারে আসার সুযোগই পায়নি, আবার কিছু রাজনীতিক আছেন যাঁরা কোনো দিন রাজদরবারে বসার কথা স্বপ্নেও ভাবেননি।
দেশের মানুষ যে ক্রমাগত নিঃস্ব হয়ে চাকরি হারিয়ে অসহায় ও অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন, তার কোনো বিন্দুমাত্র প্রতিফলন দেখা যায় না প্রধান কুশীলবের চেহারায়। তিনি যেন খেলছেন একটা মজার খেলা। পারিষদ নিয়ে রাষ্ট্রের টাকায় যখন যেখানে খুশি ঘুরছেন। সত্য-মিথ্যা বলে এসবকে প্রচার করার জন্য একজন সাংবাদিককেও খুঁজে পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে তাঁর চরিত্র সাধারণ্যেও ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একদল দায়িত্বহীন অন্ধ অনুসারী, যারা সদা প্রস্তুত যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য, যাদের নতুন নামকরণ হয়েছে ‘মব’। কোনো দায়িত্ববান সরকার এইসব শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারে কি না, তা পাঠকমাত্রই উপলব্ধি করতে পারবেন।
এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আইনের শাসনকে তোয়াক্কা না করার অনেক উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। সবশেষ একজন উপদেষ্টার ম্যাগাজিন ধরা পড়ার নজিরও দেখা গেল। প্রধানের স্নেহভাজন এই উপদেষ্টারও কিছু হলো না। এভাবেই আলোচনা, মবতন্ত্র, অকারণে বিদেশ যাত্রা, প্রধানের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন—এসব চলছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মুহুর্মুহু আলোচনা, মব আক্রমণ—সবকিছুই চলছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সামনে এসব ঘটনা হচ্ছে। কিন্তু নাটকের কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এমন অনেক নাটক আমরা মঞ্চ-টেলিভিশন-সিনেমায় দেখে থাকি—যেসব শিল্পকর্মেও এমন ঘটনা ঘটে। কোনো অগ্রগতি হয় না। দর্শক হতাশ হয়ে ফিরে যায়।
সমাজেও একই ঘটনা দেখা যাচ্ছে। ক্রমাগত ছাপা হচ্ছে—রাজপ্রাসাদের ভেতরে অনেক আলোচনা চলছে, সংলাপও চলছে। কিন্তু নাটক আগাচ্ছে না। উপেক্ষিত হচ্ছে একটা বড় দল, যার নাম জনগণ। জনগণও মনে মনে একটা গল্প বানাচ্ছে, কোথাও আবার প্রকাশ্যে। কিন্তু সংগঠিত কোনো রূপ পাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছে, মিছিল-সমাবেশ করে একই কথা বলছে। কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করছে, হঠাৎ আপসহীনেরা আপস করে পরদিনই প্রতিবাদে গর্জে উঠছে। আবার ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারকারী দল অন্তর্বর্তী সরকারকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, কেউ আবার ওয়াজ মাহফিলে ঝড় তুলে দিচ্ছে। প্রচুর খানাপিনা করে বিপুল অর্থ কামিয়ে হেলিকপ্টারে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের কাছে নির্বাচন বিলম্বিত করাই প্রধান কাজ। নির্বাচন হয়ে গেলে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, এত দায়িত্বহীন তারা হতে পারবে না। তখন বিরোধী দল থাকবে। তারা প্রতিবাদ করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সক্রিয় হতে হবে। ঘোলা জলে মাছ শিকারের এ রকম সুবর্ণ সুযোগ আর আসবে না।
বর্তমানে অবশ্য জনমনে একজনের ওপরই সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। সেই সন্দেহ কালক্রমে (সেই কালটি কত দিন, তা-ও অবশ্য বিবেচনার বিষয়) ক্ষোভে এবং যন্ত্রণায় সিক্ত হতে কতটা সময় লাগবে, সেও অনুমান করা যেতে পারে। কিন্তু ঠিক করে তা বলা যাচ্ছে না। তবে মানুষের ক্ষুধার রাজ্যে জীবনটা গদ্যময় হয়ে উঠবে তখন, যখন দিনক্ষণ আর প্রচুর লম্বা হতে পারবে না। যে লম্বা সময় অতীতের শাসকেরা ভোগ করেছেন। অন্তর্বর্তী সত্যই অন্তর্বর্তী—সে এ সময় ভোগ করতে পারবে না।
আমরা অতীতের ভালো ভালো উদাহরণগুলো অনুসরণ করি না। প্রথম দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের কাজটি শেষ করে সসম্মানে দায়িত্ব পালন করে গেছে। তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। দেশের মৌল আদর্শগুলোকে পাল্টাতে চায়নি। কিন্তু এই অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান মেনে শপথ নিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়ে তা ভঙ্গ করছে পদে পদে। সংবিধান পুনর্লিখনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিদেশে অধ্যাপনারত বিশেষজ্ঞ ও কতিপয় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি করতে পারেন? দেশের সংসদ আছে, তার অবকাঠামো আছে। বারবার এই অবকাঠামো ব্যবহার করে গণপ্রতিনিধিরা তাকে কার্যকর করতে দেননি। তার একটা ব্যবস্থা এই অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারত। কী কী করতে পারত, তার একটা তালিকা সাধারণ বুদ্ধিতেই করা যেত। কিন্তু আজ পর্যন্ত মবতন্ত্র ছাড়া গণতন্ত্রের পক্ষে কিছুই তারা করতে পারেনি। কাজের মধ্যে বড় কাজ হয়েছে—লাখ লাখ মামলার ব্যবস্থা করে আইনজীবী, পুলিশ এবং কিছু টাউটের দ্রুত কিছু অর্থ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা। অভ্যুত্থানের একজন নায়ক, শিক্ষাবিদ আইন উপদেষ্টার বিপুল জ্ঞানভান্ডার থেকে জাতির প্রতি এটাই তাঁর অবদান?
আসলে কোনো আন্দোলন বা অভ্যুত্থান যখন দেশের মধ্যে থেকে না হয়ে যদি বিদেশি বুদ্ধি, অর্থ এবং প্রভাবের মাধ্যমে হয়, তাহলে তা ভবিষ্যতে গৌরববর্জিত একটি গন্ডগোল বলে চিহ্নিত হওয়ারই আশঙ্কা। এ সবই একসময় হয়তো জনগণের কাছে বিশাল অপচয় হিসেবে চিহ্নিত হবে। দেশপ্রেমিক জনগণের এখনই উচিত কালক্ষেপণ না করে সংগঠিত হয়ে রুখে দাঁড়ানো। কালক্ষেপণে জাতির ক্ষতি আর ওদের লাভ।
লেখক:– নাট্যব্যক্তিত্ব
পৃথিবীটাই একটা রঙ্গমঞ্চ। সেখানে সবাই আমরা অভিনেতা-অভিনেত্রী, যাদের প্রত্যেকের রয়েছে প্রবেশ এবং প্রস্থান। শেক্সপিয়ারের এই কথাটির সত্যতা বছরের পর বছর ধরে পরীক্ষিত। এই সংলাপটি সম্ভবত তিনি রচনা করেছিলেন, রাজরাজড়া-সেনাপতিদের উদ্দেশ্য করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সেই ১৯৪৭ সাল থেকে নানা ঘটনাপ্রবাহ দেখে আসছি। পাকিস্তান রাষ্ট্রের পরিণতি দেখেছি। সেখানকার সেনানায়কদের উত্থান-পতন-পরাজয় দেখেছি। লাখো সৈনিক নিয়ে সেনাপতিদের পতন দেখেছি। এ দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা পূরণ হতেও দেখেছি। আবার ক্ষমতার আস্বাদে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকাও দেখেছি।
সেই প্রবণতার কালে স্বাভাবিকভাবেই কিছু দুর্বৃত্তের উত্থান ঘটে। কিন্তু তাদের উৎখাতের সময় গণতান্ত্রিক শক্তির সম্মিলিত উত্থান না ঘটে অচেনা এক শক্তিকে দেখা গেল। কোটা আন্দোলনের সময় তাদের দেখা গেছে। হঠাৎ করেই সরকার পতনের আন্দোলনে তারা জড়িয়ে পড়ল। জনতার ক্ষোভ ও বঞ্চনাকে কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের রক্তক্ষয়কে পুঁজি করে সরকার উৎখাত করে নতুন এক প্রবাসী সেনাপতিকে ডেকে এনে তাদের আজন্মের ক্ষোভ ও প্রতিশোধস্পৃহাকে কাজে লাগিয়ে এক রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ, তার পতাকা, জাতীয় সংগীত, স্বাধীনতার স্থপতিকে অস্বীকার করে নতুন রাষ্ট্র গঠনের পাঁয়তারা শুরু করল।
এর মধ্যে এক বছর গত হয়ে গেল। অনেক সংস্কার হবে রাষ্ট্রের কিন্তু করবে কারা? কারও কারও অভিযোগ, একাত্তরের পরাজিত শক্তি, ক্ষুব্ধ, বঞ্চিত ও প্রতিশোধকামী কিছু প্রবাসী এবং পশ্চিমা মগজধারী বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যবসায়ীরাই এ ক্ষেত্রে এগিয়ে। এনজিওর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই সংস্কার কমিটিতে প্রাধান্য পেয়েছেন। তাঁদের সমস্যা হচ্ছে তাঁরা রাজনীতি বোঝেন না, কিন্তু আলোচনা করতে পারেন। আলোচনাই সার। প্রতিদিনই আলোচনা-ক্লান্ত কিছু রাজনীতিককে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। পাঁচ মিনিটের আলোচনা পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত অবলীলায় টেনে নিতে দেখা যায়। এই আলোচনার যারা প্রধান পক্ষ, তারা কোনো দিন রাজনীতিকদের এ রকম একটা দরবারে আসার সুযোগই পায়নি, আবার কিছু রাজনীতিক আছেন যাঁরা কোনো দিন রাজদরবারে বসার কথা স্বপ্নেও ভাবেননি।
দেশের মানুষ যে ক্রমাগত নিঃস্ব হয়ে চাকরি হারিয়ে অসহায় ও অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন, তার কোনো বিন্দুমাত্র প্রতিফলন দেখা যায় না প্রধান কুশীলবের চেহারায়। তিনি যেন খেলছেন একটা মজার খেলা। পারিষদ নিয়ে রাষ্ট্রের টাকায় যখন যেখানে খুশি ঘুরছেন। সত্য-মিথ্যা বলে এসবকে প্রচার করার জন্য একজন সাংবাদিককেও খুঁজে পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে তাঁর চরিত্র সাধারণ্যেও ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একদল দায়িত্বহীন অন্ধ অনুসারী, যারা সদা প্রস্তুত যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য, যাদের নতুন নামকরণ হয়েছে ‘মব’। কোনো দায়িত্ববান সরকার এইসব শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারে কি না, তা পাঠকমাত্রই উপলব্ধি করতে পারবেন।
এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আইনের শাসনকে তোয়াক্কা না করার অনেক উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। সবশেষ একজন উপদেষ্টার ম্যাগাজিন ধরা পড়ার নজিরও দেখা গেল। প্রধানের স্নেহভাজন এই উপদেষ্টারও কিছু হলো না। এভাবেই আলোচনা, মবতন্ত্র, অকারণে বিদেশ যাত্রা, প্রধানের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন—এসব চলছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মুহুর্মুহু আলোচনা, মব আক্রমণ—সবকিছুই চলছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সামনে এসব ঘটনা হচ্ছে। কিন্তু নাটকের কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এমন অনেক নাটক আমরা মঞ্চ-টেলিভিশন-সিনেমায় দেখে থাকি—যেসব শিল্পকর্মেও এমন ঘটনা ঘটে। কোনো অগ্রগতি হয় না। দর্শক হতাশ হয়ে ফিরে যায়।
সমাজেও একই ঘটনা দেখা যাচ্ছে। ক্রমাগত ছাপা হচ্ছে—রাজপ্রাসাদের ভেতরে অনেক আলোচনা চলছে, সংলাপও চলছে। কিন্তু নাটক আগাচ্ছে না। উপেক্ষিত হচ্ছে একটা বড় দল, যার নাম জনগণ। জনগণও মনে মনে একটা গল্প বানাচ্ছে, কোথাও আবার প্রকাশ্যে। কিন্তু সংগঠিত কোনো রূপ পাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছে, মিছিল-সমাবেশ করে একই কথা বলছে। কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করছে, হঠাৎ আপসহীনেরা আপস করে পরদিনই প্রতিবাদে গর্জে উঠছে। আবার ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারকারী দল অন্তর্বর্তী সরকারকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, কেউ আবার ওয়াজ মাহফিলে ঝড় তুলে দিচ্ছে। প্রচুর খানাপিনা করে বিপুল অর্থ কামিয়ে হেলিকপ্টারে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের কাছে নির্বাচন বিলম্বিত করাই প্রধান কাজ। নির্বাচন হয়ে গেলে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, এত দায়িত্বহীন তারা হতে পারবে না। তখন বিরোধী দল থাকবে। তারা প্রতিবাদ করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সক্রিয় হতে হবে। ঘোলা জলে মাছ শিকারের এ রকম সুবর্ণ সুযোগ আর আসবে না।
বর্তমানে অবশ্য জনমনে একজনের ওপরই সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। সেই সন্দেহ কালক্রমে (সেই কালটি কত দিন, তা-ও অবশ্য বিবেচনার বিষয়) ক্ষোভে এবং যন্ত্রণায় সিক্ত হতে কতটা সময় লাগবে, সেও অনুমান করা যেতে পারে। কিন্তু ঠিক করে তা বলা যাচ্ছে না। তবে মানুষের ক্ষুধার রাজ্যে জীবনটা গদ্যময় হয়ে উঠবে তখন, যখন দিনক্ষণ আর প্রচুর লম্বা হতে পারবে না। যে লম্বা সময় অতীতের শাসকেরা ভোগ করেছেন। অন্তর্বর্তী সত্যই অন্তর্বর্তী—সে এ সময় ভোগ করতে পারবে না।
আমরা অতীতের ভালো ভালো উদাহরণগুলো অনুসরণ করি না। প্রথম দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের কাজটি শেষ করে সসম্মানে দায়িত্ব পালন করে গেছে। তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। দেশের মৌল আদর্শগুলোকে পাল্টাতে চায়নি। কিন্তু এই অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান মেনে শপথ নিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়ে তা ভঙ্গ করছে পদে পদে। সংবিধান পুনর্লিখনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিদেশে অধ্যাপনারত বিশেষজ্ঞ ও কতিপয় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি করতে পারেন? দেশের সংসদ আছে, তার অবকাঠামো আছে। বারবার এই অবকাঠামো ব্যবহার করে গণপ্রতিনিধিরা তাকে কার্যকর করতে দেননি। তার একটা ব্যবস্থা এই অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারত। কী কী করতে পারত, তার একটা তালিকা সাধারণ বুদ্ধিতেই করা যেত। কিন্তু আজ পর্যন্ত মবতন্ত্র ছাড়া গণতন্ত্রের পক্ষে কিছুই তারা করতে পারেনি। কাজের মধ্যে বড় কাজ হয়েছে—লাখ লাখ মামলার ব্যবস্থা করে আইনজীবী, পুলিশ এবং কিছু টাউটের দ্রুত কিছু অর্থ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা। অভ্যুত্থানের একজন নায়ক, শিক্ষাবিদ আইন উপদেষ্টার বিপুল জ্ঞানভান্ডার থেকে জাতির প্রতি এটাই তাঁর অবদান?
আসলে কোনো আন্দোলন বা অভ্যুত্থান যখন দেশের মধ্যে থেকে না হয়ে যদি বিদেশি বুদ্ধি, অর্থ এবং প্রভাবের মাধ্যমে হয়, তাহলে তা ভবিষ্যতে গৌরববর্জিত একটি গন্ডগোল বলে চিহ্নিত হওয়ারই আশঙ্কা। এ সবই একসময় হয়তো জনগণের কাছে বিশাল অপচয় হিসেবে চিহ্নিত হবে। দেশপ্রেমিক জনগণের এখনই উচিত কালক্ষেপণ না করে সংগঠিত হয়ে রুখে দাঁড়ানো। কালক্ষেপণে জাতির ক্ষতি আর ওদের লাভ।
লেখক:– নাট্যব্যক্তিত্ব
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছিলেন, বিএনপি তখন ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়ে আসছিল। তবে গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলে তাতে একমত হওয়ার..
২৯ মিনিট আগেআমি তখন ক্লাস টেনের ছাত্র। প্রধান শিক্ষক ডেকে পাঠিয়েছেন শুনে আমি তো রীতিমতো ঘামতে শুরু করে দিয়েছি। এ কে মাহমুদুল হক ছিলেন রাশভারী কিন্তু মজার মানুষ। আবার কড়া বলতে কড়ার গুরু। তিনি ডেকে পাঠাবেন কেন? এই প্রশ্নের জবাব মিলল তাঁর রুমে যাওয়ার পর। হঠাৎ করেই স্কুলে উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা...
৩ ঘণ্টা আগেমানুষের জীবন এক আশ্চর্য দাঁড়িপাল্লার মতো। এক পাশ কানায় কানায় আনন্দ তো অন্য পাশে সমান সমান বিষাদ।
৩ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রামে আলুচাষিরা হিমাগারমালিকদের হারিয়ে দিয়েছেন। হঠাৎ করেই আলুর জন্য হিমাগার ভাড়া বস্তাপ্রতি ৩৫০ টাকার পরিবর্তে কেজিপ্রতি ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করেছিলেন তাঁরা। কৃষকেরা সেই সিদ্ধান্তের তুমুল প্রতিবাদ করেছেন। আন্দোলনের মুখে সব পক্ষ এক হয়ে বসে আগের দামই পুনর্বহাল করে।
৩ ঘণ্টা আগে