মানবর্দ্ধন পাল
১৯৭৫ সালের পনেরোই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আগস্ট সত্যিকার অর্থেই শোকাবহ। বাংলা সাহিত্যের তিন প্রধান কবি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম ও শামসুর রাহমানেরও মৃত্যুমাস এই আগস্ট। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের জাতির পিতার শোকাবহতম হত্যার ভয়াবহতম স্মৃতি। কিন্তু ১৯৭৫-এর পর দেশে এমন দুর্যোগ-দুঃসময় গেছে, যখন এই নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ তো দূরের কথা ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণের সুযোগ ছিল না। ক্ষাত্র শাসক বলপূর্বক রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঁধে চড়ে জাতির কণ্ঠ এমনভাবে চেপে ধরেছিল যে বোবা কান্নারও উপায় ছিল না! জেল-জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতনে স্তব্ধ করে দিয়েছিল জাতির কণ্ঠস্বর। রুদ্ধবাক জাতির অন্তর্বেদনা প্রকাশের সব পথ সিলগালা করে রেখেছিল স্বৈরশাসক।
পঁচাত্তরের পর উসকে দেওয়া হয়েছিল মৌলবাদ ও ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষের গোড়ায় ঢালা হয়েছিল পানি, দেওয়া হয়েছিল সার আর গোপন গর্ত থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রের ইশারায় উঠে এসেছিল স্বাধীনতাবিরোধী কালসাপেরা। পাকিস্তানি ভূতের আছর ও কালসাপের বিষাক্ত দংশনে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল পবিত্র সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি। মুক্তিযুদ্ধের মূল চার স্তম্ভের মধ্যে বাদ দেওয়া হলো সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বিকৃত করা হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে। কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় দেশের অবস্থা তখন ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’। সেই কালো অধ্যায়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূতপ্রেতের তাণ্ডব নৃত্যের ভয়াবহতা দেখেছি একুশ বছর। পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে তাদের অপকীর্তি এতই গভীর ছিল যে তারা একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকারকে রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উচ্ছেদের দিনটি আনন্দের সঙ্গে ‘নাজাত দিবস’ হিসেবে পালন করেছে। নাজাত মানে তো ‘মুক্তি’। কোন মুক্তি, কোথা থেকে মুক্তি পেয়েছিল তারা? শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অগ্রসর একটি নবীন রাষ্ট্রকে আবার ঔপনিবেশিকতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে মিনি পাকিস্তান বানানোর অপচেষ্টা ছাড়া তা আর কিছুই নয়। সেদিন তারা মিটিং-মিছিল, সভা-সমাবেশ করে আনন্দোৎসব করেছে। পনেরোই আগস্ট মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি যাতে শোক দিবস পালন করতে না পারে, তাই প্রথম বলপ্রয়োগ, জেল-জুলুম-অত্যাচার এবং পরে কৌশলের খেলা চলে। নতুন রাজনৈতিক কৌশলে এক তুরুপের তাস মারে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সরকার। পনেরোই আগস্টকে তারা খালেদা জিয়ার জন্মদিন বলে ঘোষণা দিয়ে মহাসমারোহে দেশব্যাপী পালনের অপচেষ্টা চালায়। যত বছর বয়স তত পাউন্ডের কেক কেটে সহাস্যে জন্মদিন পালনের ছবিও আমরা খবরের কাগজে দেখেছি। শোক দিবসের দিনে তাদের ‘দেশনেত্রী’র প্রতারণামূলক জন্মদিন পালন করে তারা প্যারালাল উৎসব করে শোক দিবসের গাম্ভীর্য ম্লান করতে চেয়েছে। কিন্তু তা হয়নি; বরং চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্রই ফাঁস হয়ে গেছে। একজন প্রধানমন্ত্রী যে নিজের জন্মতারিখ নিয়ে স্রেফ হীন রাজনৈতিক স্বার্থে এমন মিথ্যাচার করতে পারেন তা ধারণার অতীত। দেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা অবশেষে প্রমাণ করেছেন তথাকথিত দেশনেত্রীর জন্মদিন তিনটি—স্কুলের কাগজপত্রে একটি, পাসপোর্টে অন্যটি এবং রাজনৈতিকভাবে আরেকটি।
কিন্তু দুর্যোগ-দুঃসময় চিরকাল থাকে না। রাত যত গভীর হয় সূর্যোদয়ের সম্ভাবনাও ততই ঘনিয়ে আসে। তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন: ‘মেঘ ক্ষণিকের সূর্য চির দিবসের।’ এবং ‘মেঘ দেখে তোরা করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।’ এই রাবীন্দ্রিক বাণীর আলোকে এ দেশের মানুষ ক্রমান্বয়ে ভয়কে জয় করতে শিখেছে। তাই আশির দশকের শুরু থেকে লক্ষ করা যায়, ভোরের আলো একটু একটু করে ফুটতে শুরু করেছে। আলো-আঁধারি পরিবেশে তখন আওয়ামী লীগ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা মিলে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ প্রচার করেছে—কখনো সাউন্ড বক্সে, কখনো সদর্পে মাইকে। নিজ নিজ বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দিয়েছে পুষ্পার্ঘ্য। শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারের এই ধারাবাহিকতা পরেও বহমান থাকে এবং তা বর্তমানে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। তখন শোক দিবস মিটিং-মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় কয়েক বছর পর থেকে আয়োজন করা হয় দোয়া মাহফিল ও কাঙালিভোজের। জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চাঁদা তুলে দুপুর পর্যন্ত মাইকে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ ও দেশাত্মবোধক গান বাজানোর পর শুরু হতো দোয়া ও কাঙালিভোজ। এই কাঙালিভোজ নিয়ে কোথাও কোথাও দলাদলি হতে দেখেছি। সেই দলাদলি কখনো পরিণত হয়েছে তর্কাতর্কি, হাতাহাতি এবং মারামারিতেও। সেসব নিন্দনীয় কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও শোক দিবসের এমন অনুষ্ঠান কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত চলে আসছিল এবং দিন দিন এর ব্যাপকতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সামরিক শাসনের কুয়াশাচ্ছন্নতা থেকে বঙ্গবন্ধু আলোকিত হতে শুরু করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু যেমন স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তেমনি পনেরোই আগস্টও এখন জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পূর্ণ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে, সরকারিভাবে পোস্টার ছেপে, জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালিত হচ্ছে এখন জাতীয় শোক দিবস। সরকারি ছুটি থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে আলোচনাসভা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পালিত হচ্ছে জাতীয় শোক দিবস। দলীয় ও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এসব অনুষ্ঠান চলে পুরো আগস্ট মাস। স্থানীয় নেতাদের পোস্টারে-ব্যানারেও ছেয়ে যায় শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জের রাস্তাঘাট। কিন্তু এত কিছুর পরও জাতীয় শোক দিবস পালনে কোথায় যেন রয়ে যায় অপূর্ণতা এবং ফাঁক ও ফাঁকি। অনেকটা দায়সারাভাবে পালিত হচ্ছে সেসব অনুষ্ঠান। আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও অনেকখানে আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেন বহ্বাড়ম্বরে লঘু ক্রিয়া। কয়েক বছর আগে এক উপজেলায় তো দেখেছি শিল্পীদের সংগীত পরিবেশনের এবং বক্তৃতার পোজ দিয়ে ছবি তুলে নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় পত্রিকায় পাঠিয়ে দিয়ে দায়িত্ব সমাপন করেছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অনুষ্ঠান হয় নামকাওয়াস্তে। শিক্ষক-কর্মচারীরা আসেন চাকরি রক্ষায়। শিক্ষার্থীরা থাকে প্রায় অনুপস্থিত। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মাইকে বক্তৃতা ও গান বাজিয়ে নাশতা খেয়ে নমঃনমঃ করে শেষ করা হয় অনুষ্ঠান। তাতে শ্রদ্ধার চেয়ে ভেতরের অশ্রদ্ধার প্রকাশই হয় বেশি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক, গ্রন্থকার
১৯৭৫ সালের পনেরোই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আগস্ট সত্যিকার অর্থেই শোকাবহ। বাংলা সাহিত্যের তিন প্রধান কবি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম ও শামসুর রাহমানেরও মৃত্যুমাস এই আগস্ট। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের জাতির পিতার শোকাবহতম হত্যার ভয়াবহতম স্মৃতি। কিন্তু ১৯৭৫-এর পর দেশে এমন দুর্যোগ-দুঃসময় গেছে, যখন এই নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ তো দূরের কথা ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণের সুযোগ ছিল না। ক্ষাত্র শাসক বলপূর্বক রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঁধে চড়ে জাতির কণ্ঠ এমনভাবে চেপে ধরেছিল যে বোবা কান্নারও উপায় ছিল না! জেল-জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতনে স্তব্ধ করে দিয়েছিল জাতির কণ্ঠস্বর। রুদ্ধবাক জাতির অন্তর্বেদনা প্রকাশের সব পথ সিলগালা করে রেখেছিল স্বৈরশাসক।
পঁচাত্তরের পর উসকে দেওয়া হয়েছিল মৌলবাদ ও ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষের গোড়ায় ঢালা হয়েছিল পানি, দেওয়া হয়েছিল সার আর গোপন গর্ত থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রের ইশারায় উঠে এসেছিল স্বাধীনতাবিরোধী কালসাপেরা। পাকিস্তানি ভূতের আছর ও কালসাপের বিষাক্ত দংশনে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল পবিত্র সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি। মুক্তিযুদ্ধের মূল চার স্তম্ভের মধ্যে বাদ দেওয়া হলো সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বিকৃত করা হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে। কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় দেশের অবস্থা তখন ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’। সেই কালো অধ্যায়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূতপ্রেতের তাণ্ডব নৃত্যের ভয়াবহতা দেখেছি একুশ বছর। পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে তাদের অপকীর্তি এতই গভীর ছিল যে তারা একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকারকে রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উচ্ছেদের দিনটি আনন্দের সঙ্গে ‘নাজাত দিবস’ হিসেবে পালন করেছে। নাজাত মানে তো ‘মুক্তি’। কোন মুক্তি, কোথা থেকে মুক্তি পেয়েছিল তারা? শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অগ্রসর একটি নবীন রাষ্ট্রকে আবার ঔপনিবেশিকতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে মিনি পাকিস্তান বানানোর অপচেষ্টা ছাড়া তা আর কিছুই নয়। সেদিন তারা মিটিং-মিছিল, সভা-সমাবেশ করে আনন্দোৎসব করেছে। পনেরোই আগস্ট মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি যাতে শোক দিবস পালন করতে না পারে, তাই প্রথম বলপ্রয়োগ, জেল-জুলুম-অত্যাচার এবং পরে কৌশলের খেলা চলে। নতুন রাজনৈতিক কৌশলে এক তুরুপের তাস মারে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সরকার। পনেরোই আগস্টকে তারা খালেদা জিয়ার জন্মদিন বলে ঘোষণা দিয়ে মহাসমারোহে দেশব্যাপী পালনের অপচেষ্টা চালায়। যত বছর বয়স তত পাউন্ডের কেক কেটে সহাস্যে জন্মদিন পালনের ছবিও আমরা খবরের কাগজে দেখেছি। শোক দিবসের দিনে তাদের ‘দেশনেত্রী’র প্রতারণামূলক জন্মদিন পালন করে তারা প্যারালাল উৎসব করে শোক দিবসের গাম্ভীর্য ম্লান করতে চেয়েছে। কিন্তু তা হয়নি; বরং চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্রই ফাঁস হয়ে গেছে। একজন প্রধানমন্ত্রী যে নিজের জন্মতারিখ নিয়ে স্রেফ হীন রাজনৈতিক স্বার্থে এমন মিথ্যাচার করতে পারেন তা ধারণার অতীত। দেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা অবশেষে প্রমাণ করেছেন তথাকথিত দেশনেত্রীর জন্মদিন তিনটি—স্কুলের কাগজপত্রে একটি, পাসপোর্টে অন্যটি এবং রাজনৈতিকভাবে আরেকটি।
কিন্তু দুর্যোগ-দুঃসময় চিরকাল থাকে না। রাত যত গভীর হয় সূর্যোদয়ের সম্ভাবনাও ততই ঘনিয়ে আসে। তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন: ‘মেঘ ক্ষণিকের সূর্য চির দিবসের।’ এবং ‘মেঘ দেখে তোরা করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।’ এই রাবীন্দ্রিক বাণীর আলোকে এ দেশের মানুষ ক্রমান্বয়ে ভয়কে জয় করতে শিখেছে। তাই আশির দশকের শুরু থেকে লক্ষ করা যায়, ভোরের আলো একটু একটু করে ফুটতে শুরু করেছে। আলো-আঁধারি পরিবেশে তখন আওয়ামী লীগ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা মিলে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ প্রচার করেছে—কখনো সাউন্ড বক্সে, কখনো সদর্পে মাইকে। নিজ নিজ বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দিয়েছে পুষ্পার্ঘ্য। শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারের এই ধারাবাহিকতা পরেও বহমান থাকে এবং তা বর্তমানে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। তখন শোক দিবস মিটিং-মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় কয়েক বছর পর থেকে আয়োজন করা হয় দোয়া মাহফিল ও কাঙালিভোজের। জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চাঁদা তুলে দুপুর পর্যন্ত মাইকে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ ও দেশাত্মবোধক গান বাজানোর পর শুরু হতো দোয়া ও কাঙালিভোজ। এই কাঙালিভোজ নিয়ে কোথাও কোথাও দলাদলি হতে দেখেছি। সেই দলাদলি কখনো পরিণত হয়েছে তর্কাতর্কি, হাতাহাতি এবং মারামারিতেও। সেসব নিন্দনীয় কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও শোক দিবসের এমন অনুষ্ঠান কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত চলে আসছিল এবং দিন দিন এর ব্যাপকতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সামরিক শাসনের কুয়াশাচ্ছন্নতা থেকে বঙ্গবন্ধু আলোকিত হতে শুরু করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু যেমন স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তেমনি পনেরোই আগস্টও এখন জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পূর্ণ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে, সরকারিভাবে পোস্টার ছেপে, জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালিত হচ্ছে এখন জাতীয় শোক দিবস। সরকারি ছুটি থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে আলোচনাসভা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পালিত হচ্ছে জাতীয় শোক দিবস। দলীয় ও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এসব অনুষ্ঠান চলে পুরো আগস্ট মাস। স্থানীয় নেতাদের পোস্টারে-ব্যানারেও ছেয়ে যায় শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জের রাস্তাঘাট। কিন্তু এত কিছুর পরও জাতীয় শোক দিবস পালনে কোথায় যেন রয়ে যায় অপূর্ণতা এবং ফাঁক ও ফাঁকি। অনেকটা দায়সারাভাবে পালিত হচ্ছে সেসব অনুষ্ঠান। আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও অনেকখানে আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেন বহ্বাড়ম্বরে লঘু ক্রিয়া। কয়েক বছর আগে এক উপজেলায় তো দেখেছি শিল্পীদের সংগীত পরিবেশনের এবং বক্তৃতার পোজ দিয়ে ছবি তুলে নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় পত্রিকায় পাঠিয়ে দিয়ে দায়িত্ব সমাপন করেছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অনুষ্ঠান হয় নামকাওয়াস্তে। শিক্ষক-কর্মচারীরা আসেন চাকরি রক্ষায়। শিক্ষার্থীরা থাকে প্রায় অনুপস্থিত। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মাইকে বক্তৃতা ও গান বাজিয়ে নাশতা খেয়ে নমঃনমঃ করে শেষ করা হয় অনুষ্ঠান। তাতে শ্রদ্ধার চেয়ে ভেতরের অশ্রদ্ধার প্রকাশই হয় বেশি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক, গ্রন্থকার
২০ বছর আগে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অটিজম শব্দটির অস্তিত্ব প্রায় খুঁজে পাওয়া যেত না। অটিজম বিষয়ে মানুষের ধারণা সীমিত ছিল। ঠিক সেই সময়ে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন পরিচালিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ‘কানন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির একটি চারতলা ভাড়া বাড়িতে...
১৮ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয় দেশটা বুঝি ট্রায়াল অ্যান্ড এররের ভিত্তিতে চলছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, এমনকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়েও নানা ধরনের পরীক্ষামূলক তত্ত্ব দেখতে পাচ্ছি। প্রথমে নতুন কিছু একটা বলা হয় বা চালু করা হয়। তারপর দেখা হয়—কতটা বিতর্ক হয় সেটা নিয়ে।
১ দিন আগেসম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দেওয়া ও অস্থায়ী আবাসনসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের ফলে কর্তৃপক্ষ আন্দোলনের দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার পরও প্রত্যাশিত দাবির বাস্তবায়ন না দেখে আবারও...
১ দিন আগেআকৃষ্ট করেছিল, সে বাণী যেন কথার কথায় পরিণত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ভালো একটি ভবিষ্যতের আশা ক্রমেই ধূসরতার দিকে যাচ্ছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোড ও নিউমার্কেট এলাকার মধ্যে থাকা ৫৭টি মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এই মার্কেটগুলো থেকে প্রতি মাসে সেবা খাত...
১ দিন আগে