ফজলুল কবির
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিবিধ সূচকে শনৈঃ শনৈঃ করে উঠছে কেবল। আহা শান্তি। অবকাঠামো, ক্রয়ক্ষমতা, জীবনমান ইত্যাদি হাজারটা সূচক আছে। প্রয়োজনে আরও শত সূচক দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যাবে এই অগ্রগতি। এই তালিকায় কি নির্যাতন-স্পৃহাকেও ঠাঁই দেওয়া যায়? গেলে বেশ ভালো হয়। কারণ, এখানেও এক অবধারিত অগ্রগতির দেখা মিলবে।
কথায় কথায় কলার চেপে ধরা বা হুমকি-ধামকি—এসব এখন সেকেলে কারবার। বেধড়ক পিটিয়ে কাউকে মুমূর্ষু করে ফেলা বা কয়েক মাসের শিশু থেকে শুরু করে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করার মতো নির্যাতনের বহুবিধ উদাহরণ তো সামনেই রয়েছে। সঙ্গে নাটোরে চাঁদা না পেয়ে দোকান কর্মচারীর হাতের আঙুলের নখ উপড়ে নেওয়ার খবরটি জুড়ে নিলে নির্যাতন-স্পৃহা বিচারে মুকুট জয় হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের।
হ্যাঁ, এটা নতুন সংযোজন। এই তো গত শনিবার সন্ধ্যায় নাটোরে চাঁদা না পেয়ে দোকান কর্মচারীর হাতের আঙুলের নখ উপড়ে নিয়েছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। পনেরো বছর বয়সী ওই কিশোরের অপরাধ, সে এমন এক দোকানে কাজ করে, যার মালিক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীদের দাবি করা মাত্র ৩ লাখ টাকার চাঁদা দিতে পারেন না। ফলে তাকে অবধারিতভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে সেই দোকানের মালিককেও। মালিকের সামনেই এই শিশুর তর্জনীর নখ প্লায়ার্স দিয়ে তুলে নেওয়া হয়, সঙ্গে চলে ভিডিও।
নাটোর শহরের কানাইখালী এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের অস্থায়ী কার্যালয়েই ঘটেছে এ ঘটনা। ফয়সাল নামের যে কিশোরের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, সে কাজ করত আবদুস সালাম নামের এক ব্যক্তির দোকানে। সালামের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে বিরোধ চলছিল একরাম হোসেন সুমনের। গত শনিবার সন্ধ্যায় তিনি সালাম ও ফয়সালকে তুলে নিয়ে আসেন যুবলীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে। সেখানে ৩ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি, যা দিতে অস্বীকার করলে সালামের সামনেই ফয়সালের বাম হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়।
দুজন ব্যক্তি দুদিক থেকে ধরে ফয়সালের নখ উপড়ে ফেলার এ দৃশ্য যে কারও পিলে চমকে দেবে। অথচ ফয়সালের আর্তনাদ এই নির্যাতকদের কারও কানেই ঢুকল না! ভিডিওর এপার থেকে দর্শকের গায়ের রোম পর্যন্ত সে চিৎকারে দাঁড়িয়ে যায়। মানসিকভাবে স্থির থাকা যায় না। মুহূর্তেই সবকিছুকে অনর্থক মনে হয়। মানবিকতা, সমব্যথা বা সহানুভূতি—ইত্যাকার শব্দকে তখন রীতিমতো হাস্যকর মনে হয়। অথচ কী অনায়াসে কম বয়সী কিছু তরুণ-যুবা নির্লিপ্তভাবে কাজটি করে চলে!
ঘটনাস্থল নাটোর বলেই মনে হলো, জীবনানন্দ থাকলে আজ কি ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি নতুন করে লিখতেন? কবি নিশ্চয় এমন একটি অঞ্চলে আশ্রয়স্থল হিসেবে বনলতাকে খুঁজে পাওয়ার কথা কখনো ভাবতেন না। কিন্তু তাঁকে কে বোঝাত যে, এটি কোনো অঞ্চলের সংকট নয়। এটা এখন গোটা বাংলাদেশের সংকট। আজ এই অঞ্চল আলোচনায় আসছে, তো কাল অন্য অঞ্চল। কেউ না কেউ, কোনো না কোনো ক্ষমতাবলে নির্যাতন-স্পৃহাকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে, যার একটি অন্যটিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
তাহলে বাংলাদেশের মানুষ কি ক্রমেই নির্যাতন-প্রবণ হয়ে উঠছে? তার এত দিনের যে শান্তিপ্রিয়, সরল পরিচয়, তা কি হঠাৎ করেই বদলে গেল? না হঠাৎ করে তো কিছু হয় না। সবকিছুরই একটা কার্যকারণ সূত্র থাকে। এরও নিশ্চয় আছে। কী সেই কারণ? ক্ষমতা?
প্রশ্নের উত্তর পেতে একটু জন কনরয়ের শরণ নেওয়া যাক। মার্কিন এই লেখক ‘আনস্পিকেবল অ্যাক্টস, অর্ডিনারি পিপল: দ্য ডিনামিকস অব টর্চার’ নামে একটি বই লিখেছেন, যেখানে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্যাতনের কারণে বিচারের আওতায় আসা লোকেদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নির্যাতক মনস্তত্ত্বটি বোঝার একটা চেষ্টা চালিয়েছেন। এই জন কনরয় নির্যাতন-স্পৃহার পেছনের কারণ হিসেবে ক্ষমতাকেই চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলছেন, যে নির্যাতন করে, সে নিজেকে নির্যাতিতের চেয়ে উচ্চ নৈতিক অবস্থানের বলে মনে করে। তারা মনে করে, তারা গোটা জাতিকে-সমাজকে রক্ষায় কাজ করছে। নিজেদের তারা এ ক্ষেত্রে সামনের সারির যোদ্ধা বলে মনে করে। একই সঙ্গে এও মনে করে যে, তারা যা করছে, তার জন্য অন্যদের তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
শুধু তাই নয়, নির্যাতকের দৃষ্টিতে তারা এবং তাদের গোষ্ঠীবদ্ধরা ছাড়া আর কেউ এমনকি মানুষও নয়। নির্যাতকের মন এমনভাবে তৈরি, যা তাকে প্ররোচিত করে অন্যকে ব্যক্তি নয়, বস্তু হিসেবে দেখতে। আর এই দেখার দৃষ্টিটি তাকে দেয় ক্ষমতা। ক্ষমতার সমীকরণে নিজের উপস্থিতি তাকে এতটাই আবিষ্ট করে যে, তার পক্ষে এই সমীকরণের বাইরে থাকা কাউকে আর মানুষ বলে গণ্য করাটা সম্ভব হয় না।
ফয়সালকে যারা নির্যাতন করেছে, ক্ষমতার সমীকরণে তাদের উপস্থিতি আছে ঘোষিতভাবেই। রাষ্ট্রের ক্ষমতার যে বণ্টন, তারই একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ ভোগ করছে তারা। যদিও কেন্দ্রের ক্ষমতাকাঠামো থেকে তারা দূরবর্তী। কিন্তু নির্দিষ্ট অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের একটা ছাড়পত্র তাদের আছে। ফলে তার মঙ্গল-অমঙ্গল ইত্যাদি তারা নির্ধারণ করতে পারে বলে মনে করে। আর এমন নির্ধারক ক্ষমতা যার বা যাদের আছে, সে কেন অন্যকে বস্তু মনে করবে না?
ফয়সালের ক্ষেত্রেও ঠিক এটিই হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠান মালিকের কাছ থেকে টাকা আদায়ের উপায় হিসেবে তার হাতের নখ তাই অনায়াসে তুলে নেওয়া যায়। এমনকি তার মালিকের আরওয়ান মোটরসাইকেল জিম্মি করারও আগে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে ফয়সালের অবস্থান একটি মোটরসাইকেলেরও নিচে। বস্তু বিচারেও সে নিম্নস্তরেরই। যে কারণে নখ ওপড়ানোর সময় তার করা আর্তনাদ কারও কানে পৌঁছায় না। ১৫ বছরের কিশোর হিসেবেও এমনকি সে কারও মনে দয়ার উদ্রেক করতে পারে না।
এই নির্যাতন মনস্তত্ত্ব একমাত্র একটি একচেটিয়া বয়ানের মধ্য দিয়েই তৈরি হতে পারে। হ্যাঁ, ঘটনার পর থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমন কিছু হলে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এ তো প্রতিকার হলো। প্রতিরোধের কী হবে? যে ক্ষমতা সমীকরণের ক্ষুদ্র একটি অংশ হলে এমন মনস্তত্ত্বের জন্ম হয়, সেই সমীকরণের কী হবে? এই সমীকরণের মূল শক্তি যে রাজনীতি, তার কী হবে?
নিশ্চিতভাবে এই ক্ষমতার সমীকরণের দিকে, তার উৎস যে রাজনীতি, তার দিকে এখন তাকানো জরুরি। কারণ, এই সমীকরণ তার অংশীদারদের যা খুশি তাই করার একটা ছাড়পত্র দিচ্ছে। এ কথা অস্বীকারের এখন আর কোনো সুযোগ নেই। তা না হলে সেই বুয়েটছাত্র আবরার হত্যা বা তার আগে ও পরের এত এত ঘটনার পরও এখনো এই ক্ষমতার দম্ভ ও তার প্রয়োগ থাকছে কী করে? যেকোনো ঘটনা ঘটার পর তার জন্য ‘কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ ধরনের বিবৃতি দেওয়া এবং তারপর সব চুপচাপ গিলে ফেলার যে চল, তার ফাঁকেই রয়েছে ফয়সালের উপড়ে ফেলা নখের তলা থেকে রক্তক্ষরণের সূত্রটি। এই সূত্র রাষ্ট্র চোখ বুঁজে অদেখার ভান করলেও মানুষ কিন্তু দেখছে, যারা ক্ষমতার অংশীজন নয় বলেই অগণিত। আর অগণিতকে মূল্য দিতে হয়—এটা পুরোনো ও কার্যকর রেওয়াজ।
ফজলুল কবির, লেখক ও সাংবাদিক
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিবিধ সূচকে শনৈঃ শনৈঃ করে উঠছে কেবল। আহা শান্তি। অবকাঠামো, ক্রয়ক্ষমতা, জীবনমান ইত্যাদি হাজারটা সূচক আছে। প্রয়োজনে আরও শত সূচক দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যাবে এই অগ্রগতি। এই তালিকায় কি নির্যাতন-স্পৃহাকেও ঠাঁই দেওয়া যায়? গেলে বেশ ভালো হয়। কারণ, এখানেও এক অবধারিত অগ্রগতির দেখা মিলবে।
কথায় কথায় কলার চেপে ধরা বা হুমকি-ধামকি—এসব এখন সেকেলে কারবার। বেধড়ক পিটিয়ে কাউকে মুমূর্ষু করে ফেলা বা কয়েক মাসের শিশু থেকে শুরু করে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করার মতো নির্যাতনের বহুবিধ উদাহরণ তো সামনেই রয়েছে। সঙ্গে নাটোরে চাঁদা না পেয়ে দোকান কর্মচারীর হাতের আঙুলের নখ উপড়ে নেওয়ার খবরটি জুড়ে নিলে নির্যাতন-স্পৃহা বিচারে মুকুট জয় হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের।
হ্যাঁ, এটা নতুন সংযোজন। এই তো গত শনিবার সন্ধ্যায় নাটোরে চাঁদা না পেয়ে দোকান কর্মচারীর হাতের আঙুলের নখ উপড়ে নিয়েছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। পনেরো বছর বয়সী ওই কিশোরের অপরাধ, সে এমন এক দোকানে কাজ করে, যার মালিক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীদের দাবি করা মাত্র ৩ লাখ টাকার চাঁদা দিতে পারেন না। ফলে তাকে অবধারিতভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে সেই দোকানের মালিককেও। মালিকের সামনেই এই শিশুর তর্জনীর নখ প্লায়ার্স দিয়ে তুলে নেওয়া হয়, সঙ্গে চলে ভিডিও।
নাটোর শহরের কানাইখালী এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের অস্থায়ী কার্যালয়েই ঘটেছে এ ঘটনা। ফয়সাল নামের যে কিশোরের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, সে কাজ করত আবদুস সালাম নামের এক ব্যক্তির দোকানে। সালামের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে বিরোধ চলছিল একরাম হোসেন সুমনের। গত শনিবার সন্ধ্যায় তিনি সালাম ও ফয়সালকে তুলে নিয়ে আসেন যুবলীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে। সেখানে ৩ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি, যা দিতে অস্বীকার করলে সালামের সামনেই ফয়সালের বাম হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়।
দুজন ব্যক্তি দুদিক থেকে ধরে ফয়সালের নখ উপড়ে ফেলার এ দৃশ্য যে কারও পিলে চমকে দেবে। অথচ ফয়সালের আর্তনাদ এই নির্যাতকদের কারও কানেই ঢুকল না! ভিডিওর এপার থেকে দর্শকের গায়ের রোম পর্যন্ত সে চিৎকারে দাঁড়িয়ে যায়। মানসিকভাবে স্থির থাকা যায় না। মুহূর্তেই সবকিছুকে অনর্থক মনে হয়। মানবিকতা, সমব্যথা বা সহানুভূতি—ইত্যাকার শব্দকে তখন রীতিমতো হাস্যকর মনে হয়। অথচ কী অনায়াসে কম বয়সী কিছু তরুণ-যুবা নির্লিপ্তভাবে কাজটি করে চলে!
ঘটনাস্থল নাটোর বলেই মনে হলো, জীবনানন্দ থাকলে আজ কি ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি নতুন করে লিখতেন? কবি নিশ্চয় এমন একটি অঞ্চলে আশ্রয়স্থল হিসেবে বনলতাকে খুঁজে পাওয়ার কথা কখনো ভাবতেন না। কিন্তু তাঁকে কে বোঝাত যে, এটি কোনো অঞ্চলের সংকট নয়। এটা এখন গোটা বাংলাদেশের সংকট। আজ এই অঞ্চল আলোচনায় আসছে, তো কাল অন্য অঞ্চল। কেউ না কেউ, কোনো না কোনো ক্ষমতাবলে নির্যাতন-স্পৃহাকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে, যার একটি অন্যটিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
তাহলে বাংলাদেশের মানুষ কি ক্রমেই নির্যাতন-প্রবণ হয়ে উঠছে? তার এত দিনের যে শান্তিপ্রিয়, সরল পরিচয়, তা কি হঠাৎ করেই বদলে গেল? না হঠাৎ করে তো কিছু হয় না। সবকিছুরই একটা কার্যকারণ সূত্র থাকে। এরও নিশ্চয় আছে। কী সেই কারণ? ক্ষমতা?
প্রশ্নের উত্তর পেতে একটু জন কনরয়ের শরণ নেওয়া যাক। মার্কিন এই লেখক ‘আনস্পিকেবল অ্যাক্টস, অর্ডিনারি পিপল: দ্য ডিনামিকস অব টর্চার’ নামে একটি বই লিখেছেন, যেখানে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্যাতনের কারণে বিচারের আওতায় আসা লোকেদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নির্যাতক মনস্তত্ত্বটি বোঝার একটা চেষ্টা চালিয়েছেন। এই জন কনরয় নির্যাতন-স্পৃহার পেছনের কারণ হিসেবে ক্ষমতাকেই চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলছেন, যে নির্যাতন করে, সে নিজেকে নির্যাতিতের চেয়ে উচ্চ নৈতিক অবস্থানের বলে মনে করে। তারা মনে করে, তারা গোটা জাতিকে-সমাজকে রক্ষায় কাজ করছে। নিজেদের তারা এ ক্ষেত্রে সামনের সারির যোদ্ধা বলে মনে করে। একই সঙ্গে এও মনে করে যে, তারা যা করছে, তার জন্য অন্যদের তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
শুধু তাই নয়, নির্যাতকের দৃষ্টিতে তারা এবং তাদের গোষ্ঠীবদ্ধরা ছাড়া আর কেউ এমনকি মানুষও নয়। নির্যাতকের মন এমনভাবে তৈরি, যা তাকে প্ররোচিত করে অন্যকে ব্যক্তি নয়, বস্তু হিসেবে দেখতে। আর এই দেখার দৃষ্টিটি তাকে দেয় ক্ষমতা। ক্ষমতার সমীকরণে নিজের উপস্থিতি তাকে এতটাই আবিষ্ট করে যে, তার পক্ষে এই সমীকরণের বাইরে থাকা কাউকে আর মানুষ বলে গণ্য করাটা সম্ভব হয় না।
ফয়সালকে যারা নির্যাতন করেছে, ক্ষমতার সমীকরণে তাদের উপস্থিতি আছে ঘোষিতভাবেই। রাষ্ট্রের ক্ষমতার যে বণ্টন, তারই একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ ভোগ করছে তারা। যদিও কেন্দ্রের ক্ষমতাকাঠামো থেকে তারা দূরবর্তী। কিন্তু নির্দিষ্ট অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের একটা ছাড়পত্র তাদের আছে। ফলে তার মঙ্গল-অমঙ্গল ইত্যাদি তারা নির্ধারণ করতে পারে বলে মনে করে। আর এমন নির্ধারক ক্ষমতা যার বা যাদের আছে, সে কেন অন্যকে বস্তু মনে করবে না?
ফয়সালের ক্ষেত্রেও ঠিক এটিই হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠান মালিকের কাছ থেকে টাকা আদায়ের উপায় হিসেবে তার হাতের নখ তাই অনায়াসে তুলে নেওয়া যায়। এমনকি তার মালিকের আরওয়ান মোটরসাইকেল জিম্মি করারও আগে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে ফয়সালের অবস্থান একটি মোটরসাইকেলেরও নিচে। বস্তু বিচারেও সে নিম্নস্তরেরই। যে কারণে নখ ওপড়ানোর সময় তার করা আর্তনাদ কারও কানে পৌঁছায় না। ১৫ বছরের কিশোর হিসেবেও এমনকি সে কারও মনে দয়ার উদ্রেক করতে পারে না।
এই নির্যাতন মনস্তত্ত্ব একমাত্র একটি একচেটিয়া বয়ানের মধ্য দিয়েই তৈরি হতে পারে। হ্যাঁ, ঘটনার পর থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমন কিছু হলে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এ তো প্রতিকার হলো। প্রতিরোধের কী হবে? যে ক্ষমতা সমীকরণের ক্ষুদ্র একটি অংশ হলে এমন মনস্তত্ত্বের জন্ম হয়, সেই সমীকরণের কী হবে? এই সমীকরণের মূল শক্তি যে রাজনীতি, তার কী হবে?
নিশ্চিতভাবে এই ক্ষমতার সমীকরণের দিকে, তার উৎস যে রাজনীতি, তার দিকে এখন তাকানো জরুরি। কারণ, এই সমীকরণ তার অংশীদারদের যা খুশি তাই করার একটা ছাড়পত্র দিচ্ছে। এ কথা অস্বীকারের এখন আর কোনো সুযোগ নেই। তা না হলে সেই বুয়েটছাত্র আবরার হত্যা বা তার আগে ও পরের এত এত ঘটনার পরও এখনো এই ক্ষমতার দম্ভ ও তার প্রয়োগ থাকছে কী করে? যেকোনো ঘটনা ঘটার পর তার জন্য ‘কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ ধরনের বিবৃতি দেওয়া এবং তারপর সব চুপচাপ গিলে ফেলার যে চল, তার ফাঁকেই রয়েছে ফয়সালের উপড়ে ফেলা নখের তলা থেকে রক্তক্ষরণের সূত্রটি। এই সূত্র রাষ্ট্র চোখ বুঁজে অদেখার ভান করলেও মানুষ কিন্তু দেখছে, যারা ক্ষমতার অংশীজন নয় বলেই অগণিত। আর অগণিতকে মূল্য দিতে হয়—এটা পুরোনো ও কার্যকর রেওয়াজ।
ফজলুল কবির, লেখক ও সাংবাদিক
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২ ঘণ্টা আগেমানুষের জীবনে আতঙ্ক বা ভয় একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়। পারিপার্শ্বিকতার কারণে ছোটবেলা থেকেই ভূত-প্রেত, দেও-দৈত্য, রাক্ষস-খোক্কস প্রভৃতি শব্দ ও কল্পিত ভয়ংকর রূপ বা চেহারা অন্তরে গেঁথে যায় এবং সেখান থেকেই আতঙ্কের যাত্রা হয়েছে শুরু। একটু উনিশ-বিশ হলেই ভয় লাগে, বুক ধড়ফড় করে ওঠে।
২ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছে। পুরো বিশ্বের নজর ছিল সেদিকে। সাধারণত যেটা হয়, দুই দেশের নেতারা যখন মুখোমুখি হন, তখন বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বসেন হিসাবনিকাশে।
২ ঘণ্টা আগেপ্রায় সময়ই খবর হয়, যানজটের কারণে রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পারে না অ্যাম্বুলেন্স এবং পথেই রোগীর মৃত্যু। ২০১৮ সালে সড়ক আন্দোলনের সময়টায় যখন দ্রুত ও সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আন্দোলনকারীরা আলাদা লেন করে দিল...
২ ঘণ্টা আগে