আজকের পত্রিকা ডেস্ক
সাগরে লঘুচাপ আর মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় হচ্ছে ভারী বর্ষণ। লঘুচাপের কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এদিকে ভারী বৃষ্টির কারণে নোয়াখালী, ফেনীসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ভোলায় পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরায় ডুবেছে ফসল-ঘের।
আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পরবর্তী পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে বলেছে, সাগরে লঘুচাপ এবং দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী পাঁচ দিন বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণও হতে পারে।
ডুবল নালা উন্নয়নের ৮২৩ কোটি টাকার প্রকল্প: খুলনা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৮ সালে ৮২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। গত ৭ বছরে ১৯৮টি নালা পুনর্নির্মাণ, ময়ূর নদসহ ১০টি খাল খনন করেছে সিটি করপোরেশন। ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পে প্রায় ৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটির কোনো সুফল এখনো মেলেনি। ভারী বর্ষণে নগরীর অধিকাংশ সড়ক ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়েছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের মূল মাধ্যম হিসেবে পরিচিত নগরীর ২২টি খাল এখনো দখলমুক্ত ও সংস্কার করা হয়নি। নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। অনেক জায়গায় রাস্তার চেয়ে নালা উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। জলাধার ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
জানতে চাইলে কেসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কোহিনুর জাহান বলেন, খুলনা শহর বেশ নিচু। জোয়ারের সময় পানি ঢোকে। আবার যেসব জায়গা দিয়ে পানি সরার কথা, সেখানে পূর্ত বিভাগের কাজ চলছে। রাস্তার কাজের জন্য যেসব বাঁধ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর কিছু কিছু তাঁরা কেটে দিয়েছেন, যাতে পানি সরতে পারে। বৃষ্টির মধ্যে পূর্ত বিভাগের কাজ না করার বিষয়টি প্রশাসককে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নালার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পাম্প স্টেশন ও স্লুইসগেট সংস্কারের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে জলজট অনেকটা কমে যাবে।
এদিকে রাতভর ভারী ও টানা বর্ষণে খুলনা জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুমের ছাদ ধসে পড়েছে। এতে শতাধিক ভলিউম বই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। জানতে চাইলে খুলনা রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডকিপার মাহবুবুর রহমান বলেন, কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে মঙ্গলবার ভোরের দিকে ভবনের মাঝখানের ছাদের একাংশ ধসে পড়ে। সেখানে রাখা শতাধিক বই পানিতে ভিজে গেছে।
ভোলায় জলাবদ্ধতা, শিশুর মৃত্যু, লঞ্চ বন্ধ
ভারী বর্ষণে ভোলার লালমোহন পৌরসভা, চরফ্যাশন উপজেলার চরাঞ্চল, ভোলা শহরের সদর রোড, মুসলিম পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। লালমোহনে জলাবদ্ধতার পানিতে ডুবে গতকাল সকালে জাহিদুল ইসলাম (জাহিদ) নামের দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে পৌরসভার নয়ানীগ্রাম এলাকার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের ছেলে।
শিশুটির বাবা মিজানুর রহমান মুঠোফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সোমবার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টিতে তাঁদের ঘরের বারান্দা তলিয়ে পাশের পুকুর ও জলাশয়ের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। গতকাল সকালে তিনি স্ত্রী ও ৩ ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘরেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই তাঁদের ছোট ছেলে জাহিদ সবার অজান্তে বারান্দায় খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়। সকাল ৯টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীও উত্তাল রয়েছে। এ কারণে ভোলার ইলিশা-লক্ষ্মীপুর রুট, বেতুয়া-ঢাকা, মনপুরা-ঢাকা, হাতিয়া-ঢাকা রুটসহ অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে সি ট্রাক ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর ভোলা নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন।
ডুবে গেছে পটুয়াখালী পৌর শহর
পটুয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৫ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে পৌর শহরের অধিকাংশ এলাকা ও বিভিন্ন সড়ক ডুবে গেছে। কোথাও কোথাও ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল উপজেলার অন্তত অর্ধশত চর এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। এদিকে লঘুচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীতে থেমে থেমে দমকা ও ঝোড়ো বাতাস বইছে।
পটুয়াখালী শহরের রিকশাচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পানিতে শহরের অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেছে। রিকশা চালাতে কষ্ট হয়, তেমন যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না।’ কলাপাড়া পৌর শহরের ষাটোর্ধ্ব রিকশাচালক মোখলেস মিয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় নামতে পারি না। কিন্তু সংসার চলবে কেমনে। রাস্তায় তেমন যাত্রী নেই।
নোয়াখালী, বরগুনায় জলাবদ্ধতা
নোয়াখালীতে সোমবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জেলা শহর মাইজদীর প্রেসক্লাব সড়ক, রেড ক্রিসেন্ট, টাউন হল মোড়, ইসলামিয়া সড়ক, ডিসি সড়ক, মহিলা কলেজ সড়ক, জেলখানা সড়ক, নোয়াখালী সরকারি কলেজ সড়ক, মাইজদী বাজার সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার নিচু এলাকাগুলোয়ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
টানা বর্ষণে বরগুনার আমতলীতেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জলকপাটগুলো থেকে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। তলিয়ে গেছে আউশের খেত ও আমনের বীজতলা।
রেকর্ড বৃষ্টিতে ডুবল ফেনী
ফেনীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে শহরের বেশির ভাগ এলাকা পানির নিচে। গতকাল দুপুরে ফেনী আবহাওয়া অফিস জানায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত) জেলায় ৩৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এটি এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, আগামী ২-৩ দিন এই অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে ফুলগাজী বাজারের শ্রীপুর রোডে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি দোকান ধসে পড়েছে। নিলক্ষ্মী-গাবতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেনী শহরের ডাক্তারপাড়া, সদর হাসপাতাল মোড়, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস, রামপুর, একাডেমি, পাঠানবাড়ি, পেট্রোবাংলাসহ অন্তত ১২টি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
ফেনীতে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। গতকাল রাত ৮টা ২০ মিনিটে মুহুরি নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
মুহুরি নদীর বাঁধে অন্তত সাতটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফেনী বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন মজুমদার।
সাতক্ষীরায় ডুবল ঘের-ফসল
সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় টানা ভারী বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাকা ও কাঁচা রাস্তায় হাঁটুপানি। অনেক দোকানপাট, বাজার ও বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া, খেশরা, জালালপুর, মাগুরা, খলিশখালী, খলিলনগর, ইসলামকাটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমনের বীজতলা, সবজিখেত, মাছের ঘের, পুকুর, কাঁচা রাস্তা ও নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়িতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চল পাটকেলঘাটায় ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন ভোলা, পটুয়াখালী, খুলনা, নোয়াখালী, ফেনী, কলাপাড়া (পটুয়াখালী), আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি, তালা (সাতক্ষীরা) ও পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি]
সাগরে লঘুচাপ আর মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় হচ্ছে ভারী বর্ষণ। লঘুচাপের কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এদিকে ভারী বৃষ্টির কারণে নোয়াখালী, ফেনীসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ভোলায় পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরায় ডুবেছে ফসল-ঘের।
আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পরবর্তী পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে বলেছে, সাগরে লঘুচাপ এবং দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী পাঁচ দিন বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণও হতে পারে।
ডুবল নালা উন্নয়নের ৮২৩ কোটি টাকার প্রকল্প: খুলনা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৮ সালে ৮২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। গত ৭ বছরে ১৯৮টি নালা পুনর্নির্মাণ, ময়ূর নদসহ ১০টি খাল খনন করেছে সিটি করপোরেশন। ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পে প্রায় ৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটির কোনো সুফল এখনো মেলেনি। ভারী বর্ষণে নগরীর অধিকাংশ সড়ক ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়েছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের মূল মাধ্যম হিসেবে পরিচিত নগরীর ২২টি খাল এখনো দখলমুক্ত ও সংস্কার করা হয়নি। নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। অনেক জায়গায় রাস্তার চেয়ে নালা উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। জলাধার ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
জানতে চাইলে কেসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কোহিনুর জাহান বলেন, খুলনা শহর বেশ নিচু। জোয়ারের সময় পানি ঢোকে। আবার যেসব জায়গা দিয়ে পানি সরার কথা, সেখানে পূর্ত বিভাগের কাজ চলছে। রাস্তার কাজের জন্য যেসব বাঁধ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর কিছু কিছু তাঁরা কেটে দিয়েছেন, যাতে পানি সরতে পারে। বৃষ্টির মধ্যে পূর্ত বিভাগের কাজ না করার বিষয়টি প্রশাসককে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নালার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পাম্প স্টেশন ও স্লুইসগেট সংস্কারের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে জলজট অনেকটা কমে যাবে।
এদিকে রাতভর ভারী ও টানা বর্ষণে খুলনা জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুমের ছাদ ধসে পড়েছে। এতে শতাধিক ভলিউম বই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। জানতে চাইলে খুলনা রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডকিপার মাহবুবুর রহমান বলেন, কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে মঙ্গলবার ভোরের দিকে ভবনের মাঝখানের ছাদের একাংশ ধসে পড়ে। সেখানে রাখা শতাধিক বই পানিতে ভিজে গেছে।
ভোলায় জলাবদ্ধতা, শিশুর মৃত্যু, লঞ্চ বন্ধ
ভারী বর্ষণে ভোলার লালমোহন পৌরসভা, চরফ্যাশন উপজেলার চরাঞ্চল, ভোলা শহরের সদর রোড, মুসলিম পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। লালমোহনে জলাবদ্ধতার পানিতে ডুবে গতকাল সকালে জাহিদুল ইসলাম (জাহিদ) নামের দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে পৌরসভার নয়ানীগ্রাম এলাকার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের ছেলে।
শিশুটির বাবা মিজানুর রহমান মুঠোফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সোমবার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টিতে তাঁদের ঘরের বারান্দা তলিয়ে পাশের পুকুর ও জলাশয়ের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। গতকাল সকালে তিনি স্ত্রী ও ৩ ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘরেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই তাঁদের ছোট ছেলে জাহিদ সবার অজান্তে বারান্দায় খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়। সকাল ৯টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীও উত্তাল রয়েছে। এ কারণে ভোলার ইলিশা-লক্ষ্মীপুর রুট, বেতুয়া-ঢাকা, মনপুরা-ঢাকা, হাতিয়া-ঢাকা রুটসহ অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে সি ট্রাক ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর ভোলা নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন।
ডুবে গেছে পটুয়াখালী পৌর শহর
পটুয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৫ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে পৌর শহরের অধিকাংশ এলাকা ও বিভিন্ন সড়ক ডুবে গেছে। কোথাও কোথাও ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল উপজেলার অন্তত অর্ধশত চর এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। এদিকে লঘুচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীতে থেমে থেমে দমকা ও ঝোড়ো বাতাস বইছে।
পটুয়াখালী শহরের রিকশাচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পানিতে শহরের অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেছে। রিকশা চালাতে কষ্ট হয়, তেমন যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না।’ কলাপাড়া পৌর শহরের ষাটোর্ধ্ব রিকশাচালক মোখলেস মিয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় নামতে পারি না। কিন্তু সংসার চলবে কেমনে। রাস্তায় তেমন যাত্রী নেই।
নোয়াখালী, বরগুনায় জলাবদ্ধতা
নোয়াখালীতে সোমবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জেলা শহর মাইজদীর প্রেসক্লাব সড়ক, রেড ক্রিসেন্ট, টাউন হল মোড়, ইসলামিয়া সড়ক, ডিসি সড়ক, মহিলা কলেজ সড়ক, জেলখানা সড়ক, নোয়াখালী সরকারি কলেজ সড়ক, মাইজদী বাজার সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার নিচু এলাকাগুলোয়ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
টানা বর্ষণে বরগুনার আমতলীতেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জলকপাটগুলো থেকে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। তলিয়ে গেছে আউশের খেত ও আমনের বীজতলা।
রেকর্ড বৃষ্টিতে ডুবল ফেনী
ফেনীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে শহরের বেশির ভাগ এলাকা পানির নিচে। গতকাল দুপুরে ফেনী আবহাওয়া অফিস জানায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত) জেলায় ৩৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এটি এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, আগামী ২-৩ দিন এই অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে ফুলগাজী বাজারের শ্রীপুর রোডে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি দোকান ধসে পড়েছে। নিলক্ষ্মী-গাবতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেনী শহরের ডাক্তারপাড়া, সদর হাসপাতাল মোড়, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস, রামপুর, একাডেমি, পাঠানবাড়ি, পেট্রোবাংলাসহ অন্তত ১২টি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
ফেনীতে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। গতকাল রাত ৮টা ২০ মিনিটে মুহুরি নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
মুহুরি নদীর বাঁধে অন্তত সাতটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফেনী বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন মজুমদার।
সাতক্ষীরায় ডুবল ঘের-ফসল
সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় টানা ভারী বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাকা ও কাঁচা রাস্তায় হাঁটুপানি। অনেক দোকানপাট, বাজার ও বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া, খেশরা, জালালপুর, মাগুরা, খলিশখালী, খলিলনগর, ইসলামকাটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমনের বীজতলা, সবজিখেত, মাছের ঘের, পুকুর, কাঁচা রাস্তা ও নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়িতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চল পাটকেলঘাটায় ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন ভোলা, পটুয়াখালী, খুলনা, নোয়াখালী, ফেনী, কলাপাড়া (পটুয়াখালী), আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি, তালা (সাতক্ষীরা) ও পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি]
দেশে গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণঘাতী ক্র্যাকডাউন চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া শেখ হাসিনার একটি ফোনকলের অডিও থেকে এই তথ্য জানা গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বিশেষ ইউনিট বিবিসি আই ওই অডিও ভেরিফাই করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে...
৪ ঘণ্টা আগেঅ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘আইন অঙ্গন যে বাংলাদেশের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে, হাইকোর্ট যে দেশের সবকিছুতে ইন্টারফেয়ার (হস্তক্ষেপ) করতে পারেন, হাইকোর্টের যে ব্যাপক ক্ষমতা সেটি ল রিপোর্টার্স ফোরামের মাধ্যমে সারা দেশ জানতে পারছে। ল রিপোর্টার্স ফোরামের নিউজগুলো যখন ব্যাপক প্রচার...
১৩ ঘণ্টা আগেজুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অফিস কক্ষ ভাঙচুর করেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতরা। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের পাশের অফিসে এই ঘটনা ঘটে। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অফিসে প্রথমে তালা লাগানো হয়। পরে ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে...
১৩ ঘণ্টা আগেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হকের নামে অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া চারটি ব্যাংক হিসাব তাঁর নয় বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি বলছে এটি তাদের ‘করণিক ত্রুটি’।
১৬ ঘণ্টা আগে