Ajker Patrika

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পিটিআইকে তথ্যমন্ত্রী 

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পিটিআইকে তথ্যমন্ত্রী 

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু যখনই বিরোধী দল বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসেছে তখনই এই সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সংখ্যালঘুরা নৃশংসতার শিকার হয়েছে। 

সাক্ষাৎকারে হাছান মাহমুদ অভিযোগ করেন, পাকিস্তান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াত-ই-ইসলামিকে সমর্থন দেওয়া মাধ্যমে এক ধরনের অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং তারা দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং অস্থিতিশীলতাকে উসকে দিচ্ছে। 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত করেছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যখনই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে, তখনই দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং উগ্রবাদী মনোভাব দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে। তাই যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকে তাহলে ঠিক আবারও এই বিষয়গুলোরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। যা ভারতকেও প্রভাবিত করবে।’ 
 
হাছান মাহমুদকে প্রশ্ন করা হয়, ‘সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বিনষ্ট হবে কি না?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, এমনটা হবে। নিশ্চয়ই এটা হবে।’ 

চলতি বছরের শেষ দিকেই অনুষ্ঠিত হতে পারে বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন। হাছান মাহমুদ দাবি করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে হিন্দু এবং দিন্দুত্ববাদ বিরোধী মনোভাব উসকে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল, যারা দেশে রাজনৈতিক স্থিতশীলতা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করেছে।’ 

এ সময় হাছান মাহমুদ অভিযোগ করেন, পাকিস্তান যে জামায়াত এবং বিএনপিকে সহায়তা দিচ্ছে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান বিএনপি এবং জামায়াতকে সহায়তা দিচ্ছে। গত নির্বাচনের আগেও তারা দেশটির কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। এমনকি ১৯৯৯ সালের নির্বাচনের সময় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর কাছ থেকে বিএনপি টাকা নিয়েছিল সে বিষয়ে সংস্থাটির সাবেক প্রধান দেশটির আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন।’ 

এ বছরের নির্বাচনেও পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের আশঙ্কা সরকার করছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু তারা বিএনপির দোসর তাই তারা সব সময়ই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এমনটা করার চেষ্টা করেছে।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘তবে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক চাই। তাদের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।’ 
 
ঢাকা-বেইজিং উষ্ণ সম্পর্ক এবং ভারত-বাংলাদেশর সম্পর্কের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের ভেতরে যে বন্ধন তা অন্য কোনো সম্পর্কের সঙ্গে তুলনীয় নয়। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক রক্তের বন্ধনে বাঁধা। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো—সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। তাই আমাদের বিশ্বের সব দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপের দেশগুলোসহ সব দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক রয়েছে। তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কটা ভিন্ন। এটি অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তুলনীয় নয়।’ 

বাংলাদেশ ও ভারত রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যখন দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল, তখন ভারতীয় সৈন্যরাও আমাদের জন্য যুদ্ধ করেছিল এবং তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল। অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হবে না।’ 

তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গে ভারত সরকারের উদ্দেশ্য খুবই ইতিবাচক উল্লেখ করে পিটিআইকে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা দেখছি যে, ভারত সরকার এ বিষয়ে একটি সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছ কিন্তু এ বিষয়ে আপনাদের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা রয়েছে। ভারতের সংবিধান অনুসারে, এমন সংকটের বিষয়ে রাজ্য সরকারের সম্মতি নিতে হয়। তবে এত কিছুর পরও এ বিষয়ে আমরা ভারত সরকারের উদ্দেশ্য খুব ইতিবাচক বলেই দেখতে পাচ্ছি।’ 

এর আগে, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়ে একটি চুক্তির বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার রাজ্যে পানির অভাবের কথা উল্লেখ করে চুক্তিটি অনুমোদন করতে অস্বীকার করেছিলেন। বিষয়টি উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে উভয় দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। সম্প্রতি, আমরা রুপি এবং টাকার বিনিময়ে বাণিজ্য শুরু করেছি এবং এটি একটি খুবই নতুন মাত্রা।’ 
 
ভারতের মণিপুর রাজ্যে জাতিগত সহিংসতা বাংলাদেশে প্রভাব ফেলছে কিনা এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ খুব অল্প পরিমাণ কুকি সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে। মণিপুরের জাতিগত সংঘাতের বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এ কারণে বাংলাদেশের ওপর এর কোনো প্রভাব নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত