Ajker Patrika

দুর্নীতির মামলায় অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের ২ দিনের রিমান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৩৭
অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাত। ছবি: সংগৃহীত
অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাত। ছবি: সংগৃহীত

অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাতের জামিন নামঞ্জুর করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন। অন্যদিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

আজ বুধবার পৃথক দুই আদালতে জামিনের ও রিমান্ডের আবেদন শুনানি হয়।

১১ জুলাই দুপুরের পর আবুল বারকাতকে দুর্নীতির একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। তদন্ত কর্মকর্তা তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। অন্যদিকে আবুল বারকাতের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু দিনটি শুক্রবার হওয়ায় ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে ছুটি থাকায় রিমান্ড ও জামিনের আবেদন শুনানি হয়নি। সংশ্লিষ্ট আদালতে শুনানি হবে বলে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জানান। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আজ রিমান্ড শুনানির জন্য বারকাতকে ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে হাজির করা হয়। জামিনের আবেদন থাকায় আজ তাঁর জামিন আবেদন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন আইনজীবীকে জামিন শুনানি করতে বলেন। বারকাতের আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম জামিন শুনানি করেন। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে রিমান্ডের আবেদন শুনানি নেওয়ার জন্য ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন। দুপুরের পর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন রিমান্ডের আবেদনের ওপর শুনানি নেন।

শুনানিতে বারকাতের আইনজীবী আদালতকে বলেন, রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আবুল বারকাত একজন অর্থনীতিবিদ। তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঋণ দেওয়ার বিষয়ে ব্যাংকের মাঠপর্যায়ের এবং ব্যাংকের কর্মকর্তারাই সিদ্ধান্ত নেন কাকে ঋণ দেওয়া হবে, কাকে দেওয়া হবে না। ব্যাংক কর্মকর্তাদের নোটের ওপর বা সিদ্ধান্তের ওপর তিনি অনুমোদন দেন শুধু। তিনি বয়স্ক মানুষ। তিনি অসুস্থ। তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

এ পর্যায়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে আবুল বারকাত আদালতকে বলেন, ‘আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। কোনো অর্থ আত্মসাৎ করিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি ও বিধিবিধান মেনে ঋণ অনুমোদন দিয়েছি মাত্র। আমার অনুমোদন দেওয়ায় কোনো অনিয়ম হয়নি।’

১০ জুলাই রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে রাত পৌনে ১২টার দিকে আবুল বারকাতকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। পরে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের বিরুদ্ধে অ্যাননটেক্স গ্রুপকে ঋণের নামে দেওয়া ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. নাজমুল হুসাইন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, সাবেক সহকারী পরিচালক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম, জনতা ব্যাংক পিএলসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত, সাবেক পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, ড. আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, মিসেস সঙ্গীতা আহমেদ, অধ্যাপক ড. নিতাই চন্দ্র নাথ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক এজিএম অজয় কুমার ঘোষ, জনতা ভবন করপোরেট শাখার সাবেক ম্যানেজার (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আজম, ব্যাংকের নির্বাহী প্রকৌশলী (এসএমই ডিপার্টমেন্ট) মো. শাহজাহান, এসইও মো. এমদাদুল হক, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার, সাবেক ডিএমডি মো. গোলাম ফারুক, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক; অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ বাদল, মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ও পরিচালক মো. আবু তালহা।

এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা রেকর্ড তৈরি করে জনতা পিএলসির ভবন শাখা (করপোরেট শাখা) থেকে ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে ঋণের অর্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল-জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অ্যাননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা ঋণ দেয় জনতা ব্যাংক। ২০১২ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ২০২২ সালে ঋণ অনিয়ম অনুসন্ধান করে দুদক প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগের পরিসমাপ্তি ঘটায়। পরে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আবার অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলা করে দুদক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন আবুল বারকাত। তিনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ছিলেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জমকালো দোতলা বাড়িতে দূতাবাস, সামনে সারি সারি কূটনৈতিক গাড়ি—৭ বছর পর জানা গেল ভুয়া

বেনজীরের এক ফ্ল্যাটেই ১৯ ফ্রিজ, আরও বিপুল ব্যবহার সামগ্রী উঠছে নিলামে

অবশেষে রাজি ভারত, ‘জিতেছে বাংলাদেশ’

ই-মেইলে একযোগে ৫৪৭ ব্যাংক কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত, পুনর্বহালের দাবি

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দরে পলাতক আসামি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত