Ajker Patrika

উপেক্ষিত আদালতের নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ৩৯
উপেক্ষিত আদালতের নির্দেশনা

‘ও নদীরে...বলো কোথায় তোমার দেশ/ তোমার নেই কি চলার শেষ’—হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের মতো এখন আর নদী বয়ে চলে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে অনেক নদী। দখল ও দূষণে কত নদী অস্তিত্ব হারিয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। নদী রক্ষায় শক্ত আইনও রয়েছে দেশে। এমনকি নদীকে জীবন্ত সত্তা স্বীকৃতি দিয়ে যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। নদী রক্ষায় দিয়েছেন নির্দেশনা। কিন্তু আড়াই বছরেও আদালতের সেই সব নির্দেশনার বাস্তবায়ন নেই। থেমে নেই নদী দখল আর দূষণ। এমন পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব নদী দিবস। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছর ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘মানুষের জন্য নদী’।

গবেষকেরা বলছেন, শহরের অন্তত ২৮টি নদ-নদী দখল ও দূষণের কবলে। গ্রামের নদীগুলোর প্রবাহ কমছে, হারাচ্ছে নাব্যতা। বালু তোলার কারণেও নদী ধ্বংস হচ্ছে। মৃতপ্রায় এসব নদী বাঁচাতে ২০১৪ সালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় নদী রক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠিত হয়। নদী রক্ষায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আইন আছে বাংলাদেশে। দেশে নদীবিষয়ক এ পর্যন্ত ৩১টি আইন হয়েছে। তার পরও হারিয়ে যাচ্ছে নদী। নদী কমিশন কার্যকর কিছুই করতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকায় নদীমাতৃক বাংলাদেশের উপাধি হারাতে বসেছে দেশ।

গবেষকদের শঙ্কা, এ দেশের নদী না বাঁচলে কৃষি বাঁচবে না। কৃষি না বাঁচলে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। রিভারাইন পিপলের মহাসচিব ও নদী গবেষক শেখ রোকন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ আদালত তিনটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যার একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। নদী রক্ষা ইস্যুতে কমিশনের অবস্থা—ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সরদার।’

আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়, নদীর ব্যাপারে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নদীবিষয়ক যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে নদী কমিশনের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে সবাই। আর ২০১৩ সালের নদী কমিশন আইন সংশোধন ও যুগোপযোগী করতে হবে। গবেষকেরা বলছেন, উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা যত দিন বাস্তবায়িত না হবে, তত দিন কমিশন নদী রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারবে না।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ আদালত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে যে ক্ষমতা দিতে বলেছে, আড়াই বছর পর আজও তা কার্যকর হয়নি। ফলে নদী দখল বা দূষণকারীদের ব্যাপারে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। কেবল সুপারিশ করতে পারে তারা। এই সুযোগে নদী দখল বাড়ছেই।

দেশের মোট ভূমির ৭ শতাংশ নদীপথ। এগুলো কাজে লাগাতে পারলে অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা নদী গবেষণাগারের সমন্বয়ক মনজুরুল কিবরিয়া। আজকের পত্রিকাকে মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, নদী নিয়ে বেসরকারিভাবে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের জ্ঞানভিত্তিক কর্মসূচি দিতে হবে। বুড়িগঙ্গা নিয়ে ৫ শতাধিক সংগঠন কাজ করছে, অথচ এদের কাছেও নদী নিয়ে পরিসংখ্যান বা গবেষণা নেই।

রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান নদী গবেষক মোহাম্মদ এজাজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, যে নদীতে নৌযান চলে না, সেই নদী দ্রুত মারা যায়। নদীতে সেতু নির্মাণ করার সময় পরিকল্পনামাফিক তা করা হচ্ছে না। বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ায় দেখা যায় নিচু করে সেতু নির্মাণের কারণে নদীতে পলি জমে ধীরে ধীরে সেই নদী মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। পানির প্রবাহ বন্ধ হলেই নদী মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। 

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীর। তিনি বর্তমান সরকারের একজন সচিবও। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন। তবে নদী দখল ও দূষণকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে যে পরিমাণ লোকবল দরকার, তা নেই নদী কমিশনের। আর দায়িত্বপালনকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কোনো বাধা পান কি না, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনভাবেই কাজ করছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত