Ajker Patrika

আইসিটি মাফিয়াদের সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রয়োজনে আদালতে যাব: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৭: ১৫
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ফাইল ছবি

টেলিকম ও আইসিটি খাতের মাফিয়াদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে প্রয়োজনে আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। গতকাল রোববার রাতে একটা ফেসবুক পোস্টে এ কথা জানান তিনি।

ফেসবুক পোস্টে ফয়েজ আহমদ লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রের অর্থ সাশ্রয়, আন্তঃপ্রকল্প সমন্বয় এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অত্যন্ত যৌক্তিক কারিগরি সক্ষমতা তৈরি করতে গিয়ে আমি টেলিকম মাফিয়াদের রোষানলে পড়েছি। আমি দস্যুচক্রের কবলে। মাফিয়া সিন্ডিকেটগুলোর মূল চরিত্র এটাই যে, আপনি সৎ থাকবেন মাফিয়া স্বার্থে আঘাত হানবেন, তখন সব হায়েনারা আপনাকে ঘিরে ধরবে।’

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আরও লিখেছেন, ‘আমি রাষ্ট্রের কয় টাকা চুরি করেছি? কীভাবে দুর্নীতি করেছি? তার তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনের মুরোদ দেখাতে পারে না, সাংবাদিকতার নামে করেছে চরিত্র হনন, ব্যক্তিগত আক্রমণ, কার্টুন। শিরোনাম থেকে শুরু করে সাব-টাইটেল এবং কনটেন্ট সর্বত্র। নেই কোনো তথ্য উপাত্ত, নেই দেশের শীর্ষ ২ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেওয়া রিপোর্টের উল্লেখ।’

ফয়েজ আহমদ অভিযোগ করে বলেন, ‘একই মালিক-প্রকাশকের দুই পত্রিকায় একসঙ্গে একই দিনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সিন্ডিকেটেড আক্রমণ করেছে তারা, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এমন কো-অর্ডিনেটেড প্রোপাগান্ডা আগে কখনো হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

কারণ! ভেতর ও বাইরের মাফিয়া টেন্ডারবাজদের স্বার্থ। একটিবারও উল্লেখ করেনি কীভাবে সাবেক সরকারের মন্ত্রী ২য় দরদাতাকে কাজ পাইয়ে দিতে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় প্রভাবিত করেছে, জালিয়াতি করেছে। সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, সাবেক টেলিকম মন্ত্রী জব্বারের পছন্দের কোম্পানি কাজ না পেয়ে এই ঝামেলা শুরু করিয়েছে। জব্বারের পছন্দের লোকেরা আমাকে ক্রমাগত আক্রমণ করছে।’

এসবে তিনি পিছু হটবেন না উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ লিখেছেন, “আমি পিছু হটব না। আমাকে ভয় দেখিয়ে থামিয়ে দেওয়া যাবে না। যেহেতু কোনো দুর্নীতি অনিয়ম করিনি, পদ্ধতিগত কোনো ভায়োলেশন করিনি এবং রাষ্ট্রের কোনো অর্থ চুরি করিনি তাই ‘ভয়’ আমি পাই না! আমি বিন্দু পরিমাণ পাওয়ার এবিউজ করিনি, যা করেছি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে করেছি। একক কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। সরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে, অন্তত শত কোটি টাকার অর্থ সাশ্রয় করতে এবং সংশ্লিষ্ট অপর প্রকল্পগুলোকে প্রাসঙ্গিক রাখতে যেখানে ৩০০ কোটির বেশি অর্থ আগেই ব্যয় হয়ে গিয়েছে।’

সবশেষে বিশেষ সহকারী লিখেছেন, ‘আমি ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে ফাইট করা লোক। প্রয়োজনে মহামান্য আদালতের কাছে যাব, টেলিকম ও আইসিটি সেক্টরের মাফিয়া সিন্ডিকেটের কবর দিব! লড়াই চলবে। হাই মোরাল নিয়েই লড়ব! ইনশাল্লাহ।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিট খারিজ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রাজিউদ্দিন আহমেদের বেঞ্চ আজ সোমবার আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।

এর আগে ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কংগ্রেস নামের একটি দলের মহাসচিব ইয়ারুল ইসলাম রিটটি করেন। নির্বাহী বিভাগ থেকে নির্বাচন কমিশনের সচিব, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা এবং ইলেকটোরাল সার্ভিস কমিশন গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল রিটে।

আইনজীবী ইয়ারুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আদালত বলেছেন—দেশে এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। এখন এই রিট করার উপযুক্ত সময় নয়। পরে আমি রিট উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ চাইলে আদালত খারিজ করে দেন।’

রিটে বলা হয়, নির্বাহী বিভাগের লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও নির্বাচন পরিচালনা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিচার বিভাগের ন্যায় স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনেরও নিজস্ব লোকবল থাকতে হবে। এর জন্য রিটে ‘ইলেকটোরাল সার্ভিস কমিশন’ গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ কংগ্রেস দলের মহাসচিব ইয়ারুল ইসলাম রিট করার পর বলেন, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সব প্রকার সহযোগিতা দেবে। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করে প্রতিটি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগকে দেওয়া হয়। নির্বাহী বিভাগ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের চাহিদা মোতাবেক নির্বাচন পরিচালনা করে। ফলে নির্বাচন নিয়ে নানামুখী বিতর্ক তৈরি হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বুধবার সিইসির তফসিল ঘোষণা রেকর্ড হবে, বিটিভি–বেতারকে ইসির চিঠি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা রেকর্ড করার জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারকে প্রস্তুতি নিতে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ১০ ডিসেম্বর (বুধবার) ভাষণ রেকর্ড করার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ তথ্য জানান।

তফসিলের ভাষণ রেকর্ড প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিলের বিষয়ে ভাষণ দেবেন। এটা ১০ ডিসেম্বর (বুধবার) রেকর্ড করা হবে। এই বিষয়ে বিটিভি ও বেতারকে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

ইসি জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে কমিশন। ভাষণে সিইসি জনগণকে সংসদ ও গণভোট দেওয়া এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাবেন।

গতকাল রোববার নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছিলেন, আজ বিটিভি ও বেতারকে চিঠি পাঠানো হবে।

এদিকে, আগামী বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে কমিশন। এর পরের দিন বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করতে পারে কমিশন। তবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বুধবারও তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫০
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় পার্টিকে (জাপা) মাঠে নামতে না দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। দলটির কার্যালয় নিয়ে নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৭তম সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন তিনি।

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই। জাতীয় পার্টিকে মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না—এই অভিযোগ সঠিক নয়। জাতীয় পার্টির কার্যালয় নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা রয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ, বডি ওর্ন ক্যামেরা কেনা, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণসহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান প্রশিক্ষণ আগামী জানুয়ারিতে সম্পন্ন হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘যেকোনো প্রস্তুতি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রশিক্ষণ অনস্বীকার্য। প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। তাই আমরা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, নিরাপদ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ চলমান রেখেছি, যা আগামী জানুয়ারিতে সম্পূর্ণ শেষ হবে।’

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে, যা সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলবে। তাই এবার সূর্যের আলো চলে গেলেও ভোট গণনা করতে হবে। সে জন্য সব ভোটকেন্দ্রে যেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জুলাই জাদুঘর উন্মুক্ত করে দেওয়ার বিষয়ে নিরাপত্তার ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই জাদুঘর জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আগে আমরা এর নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলাপ করেছি, যাতে দর্শনার্থীরা নিরাপদে জাদুঘরে আসা-যাওয়া করতে পারে।’

রংপুরে এক পুলিশ সদস্যের বাবা-মাকে হত্যার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, আইজিপি বাহারুল আলম ও বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘আল্লাহর পরই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান’, ট্রাইব্যুনালে ক্ষমা চেয়ে বললেন ফজলুর রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৭
বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে আদালত অবমাননার অভিযোগের মুখে ট্রাইব্যুনালের তলবে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান।

আজ সোমবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাসে দাঁড়িয়ে প্রবীণ এই আইনজীবী বিচারকদের উদ্দেশে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘আল্লাহর পরই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান। আমার বয়স ৭৮ বছর। এরকম কথা জীবনে কখনো বলিনি। এই কথা এমন হবে বুঝতে পারিনি।’

কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত এই প্রার্থী লিখিতভাবে আগেই নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার পর আজ সশরীরে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল তাঁকে ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

গত ২৩ নভেম্বর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে অতিথি হয়ে যান ফজলুর রহমান। টকশোর একপর্যায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রসঙ্গ ওঠে। এ সময় তিনি ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করেন, আদালতের নিরপেক্ষতায় হস্তক্ষেপকারী ‘অভ্যন্তরীণ বন্দোবস্ত’ রয়েছে বলে দাবি এবং প্রসিকিউশন প্রসঙ্গে অবমাননাকর মন্তব্য করেন।

প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল তাঁকে তলব করেন এবং তাঁর সব একাডেমিক ও বার কাউন্সিলের সনদ সঙ্গে নিতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ বেলা ১১টার দিকে আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাইব্যুনালে আসেন ফজলুর রহমান।

ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক এজলাসে আসেন বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে। ফজলুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।

শুরুতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুনানি করবেন।’ পরে রুহুল কুদ্দুস কাজল দাঁড়িয়ে বলেন, ‘ফজলুর রহমান সিনিয় আইনজীবী, পলিটিশিয়ান ও মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর বক্তব্যের বিষয়ে আমরা লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছি।’

ফজলুর রহমান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন, পরে আদালত তাঁকে বসার অনুমতি দেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘প্রসিকিউশন আগে বলুক।’ এরপর প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ‘চ্যানেল ২৪-এর মুক্তবাক অনুষ্ঠানে ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি, এই কোর্ট আমি মানি না। প্রতিদিন বলছি এই কোর্ট আমি মানি না।’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা একটু ফজলুর রহমানকে শুনতে চাই।’ ফজলুর রহমান দাঁড়ালে ট্রাইব্যুনাল তাঁর কাছে জানতে চান তিনি এসব কথা বলেছেন কি না? ফজলুর রহমান জবাবে বলেন, ‘আমি এভাবে বলিনি।’

এ সময় ব্যারিস্টার কাজল বলেন, ‘আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা ওনার কাছ থেকে শুনি। উনি যদি বলেন, এগুলো বলিনি, একভাবে কনসিডার করব, আর যদি বলেন বলেছি, আরও বলব, তাহলে অন্যভাবে কনসিডার (বিবেচনা) করব।’

কাজল বলেন, ‘আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘ওনাকে তো আমরা চিনি। তিনি সিনিয়ির পলিটিক্যাল লিডার, সিনিয়র আইনজীবী। কথা হলো তিনি আরও বলবেন কি না? তিনি যা বলেছেন, তা শুধু বাংলাদেশ না সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে। তিনি এসব বললে মানুষ কি মনে করবে?’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এখানে শুধু মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অপরাধেরই বিচার হবে না, আইনে বলা আছে আইন হওয়ার আগে-পরে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে।’

ব্যারিস্টার কাজল বলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনালের বিচার সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। তাই বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘বাইরে আলোচনা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের এখানে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আরে আমরাও তো মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছি। আমার পরিবারে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ‍দিয়েছি, কোন ব্রিজ ভাঙতে হবে দেখিয়ে দিয়েছি, সহযোগিতা করেছি— আমরা মুক্তিযোদ্ধা না, যারা লন্ডনে ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধা? কিন্তু আমরা কখনো এগুলো বলি না। এদেশে কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে না। তাই কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধাদের টানবেন না।’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘গত ১৫ বছর দেখেছি, আপনি কত অন্যায় আর অবিচারের শিকার। হঠাৎ কেন এমন ইউটার্ন?’

ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি আপনাদের এত সম্মান করি, আল্লাহর পরই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান। আমার বয়স ৭৮ বছর। এরকম কথা জীবনে কখনো বলিনি।’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা আশাকরি আপনারা জুডিশিয়ারিকে গাইড করবেন। ভালো-মন্দ দেখবেন। সরকারকে বলবেন, চিফ জাস্টিসকে বলবেন। যেখানে বলা দরকার সেখানে বলবেন।’

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘টকশোতে গেলে যা বলতে চাই না, অনেক সময় তাও মুখ থেকে বের করে ফেলে। এখন সিনিয়ির আইনজীবী বলেন আর মুক্তিযোদ্ধা বলেন—এখন আর সমাজে সম্মানটা পাওয়া যায় না। ফজলুর রহমান এরকম কথা বলবেন, তা কি বিশ্বাসযোগ্য? আদালত সবার ওপরে। বিচার বিভাগ না থাকলে রাষ্ট্র বরবাদ হয়ে যাবে। তারপরও তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছেন। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন।’

পরে ফজলুর রহমানের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘অল দ্য বেস্ট। আরও অনেকদিন বেঁচে থাকেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত