Ajker Patrika

১৫ মাসেও শেষ হলো না ১২০০ জরুরি নিয়োগ

অর্চি হক, ঢাকা
১৫ মাসেও শেষ হলো না ১২০০ জরুরি নিয়োগ

‘ডিজি অফিস মন্ত্রণালয়ে পাঠায়, মন্ত্রণালয় ডিজিতে পাঠায়। সারা দিন বসে থেকেও কর্মকর্তাদের দেখা পাই না। আমাদের সঙ্গে সবাই ছলচাতুরি করছে। এই অফিস সেই ঘুরতে ঘুরতে আমরা ক্লান্ত।’ কথাগুলো বলছিলেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগপ্রত্যাশী উত্তম কুমার।

গত বছর ১৪ মে জরুরি ভিত্তিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনার দেড় মাস পর ২৯ জুন ১ হাজার ২০০ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর পেরিয়ে গেছে এক বছরেরও বেশি সময়। লিখিত-মৌখিক সব ধরনের পরীক্ষাও নেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু সেই নিয়োগ এখনো সম্পন্ন হয়নি।

নিয়োগের ফল প্রকাশের দাবিতে গত মার্চ থেকে দফায় দফায় আবেদন ও আন্দোলন করে আসছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বাস্তবায়ন কমিটি। গত ৯ আগস্ট স্বাস্থ্য ডিজি খুরশীদ আলম তাঁদের আশ্বাস দেন যে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই নিয়োগের সুরাহার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সেই দিনটিও গতকাল কোনো সুরাহা ছাড়াই চলে গেল।

প্রধানমন্ত্রীর জরুরি নির্দেশনার পরেও নিয়োগ আটকে থাকা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দায় চাপাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাঁধে। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যাপার, এখানে তাদের দায় নেই। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে যা জানা গেল, তাতে দেখা যাচ্ছে নিয়োগ আটকে থাকার দায় এড়াতে পারেন না কেউই। এমনকি এই দুই অফিসের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশেই নিয়োগপ্রক্রিয়া আটকে রাখা হয়েছে, এমন অভিযোগও পাওয়া গেল।

গত বছরের ১২, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ২৩ হাজার ৫২২ জন চাকরিপ্রার্থী। উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা গত ২২ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। লিখিত পরীক্ষার পরপরই নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে। এরপর থেকে আটকে গেছে সবকিছু।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমার কাছে এটার কোনো তথ্য নেই। মন্ত্রণালয় জানে এটার কী হবে। যত দূর শুনেছি তদন্ত কমিটি মন্ত্রণালয়ে একটা প্রতিবেদন দিয়েছে। সেটা পর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেটাই করব।’

এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তারও কোনো উত্তর দেননি তিনি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহিবুর রহমান বললেন, ‘এই নিয়োগের সবকিছু ডিজি অফিস জানে। আমরা এটা বলতে পারব না।’ তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিকভাবে স্বাস্থ্যের ডিজিকে নিয়োগের ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত নিতে বলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লিখিত কোনো নির্দেশনা তিনি পাননি।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ আটকে থাকা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, যখন মন্ত্রণালয়ের কেউ অভিযুক্ত হয়, তাঁকে বাঁচিয়ে দেওয়ার খুব সহজ এবং কার্যকরী একটি পথ হলো প্রক্রিয়াটা আটকে রাখা। দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর যখন মানুষ এটা ভুলে যাবে, তখন নিজেদের ইচ্ছামতো আবার এটা শুরু করা যাবে।

প্রবীণ এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, নিয়োগে দুর্নীতি হলে নিয়োগ আটকে রাখাটা অযৌক্তিক। টেকনোলজিস্টের অভাবে সারা দেশের করোনা পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েকজনের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে পুরো দেশের মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে এটা তো হতে পারে না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত