Ajker Patrika

মুক্তিযোদ্ধাদের কবরে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে ক্ষুব্ধ সংসদীয় কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১: ৪২
মুক্তিযোদ্ধাদের কবরে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে ক্ষুব্ধ সংসদীয় কমিটি

সরকারের অর্থায়নে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু সেখানে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। অভিযোগের তদন্ত করতে সংসদ সচিবালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

আজ রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ আসে। 

জানা গেছে, বৈঠকে লালমনিরহাট জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাধি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়া ও নামফলক মুছে যাওয়ার ছবি কমিটির নজরে আসে। পরে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি শাজাহান খান নিজেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। 

বৈঠকে শাজাহান খান বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবিতকালে নানাভাবে অবহেলিত হয়েছেন। মৃত্যুর পরও তাঁদের এই অবহেলা করা হচ্ছে। এটা হতে দেওয়া যায় না, হতে দিতে পারি না।’ 

পরে লালমনিরহাটের ওই ঘটনা তদন্তের পাশাপাশি দেশের অন্য কোথাও এ ধরনের ঘটনা রয়েছে কি না, তা তদন্ত করার সুপারিশ আসে বৈঠক থেকে। 

মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন শাজাহান খান। তিনি বলেন, ‘নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যে নামফলক মুছে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বাঁধাই করার পর কবর ভেঙে পড়ছে। আমরা বলেছি এটা চলবে না। উন্নত মানের মালমসলা ও নামফলকে অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে।’ 

শাজাহান খান বলেন, ‘এসব কবর সরেজমিনে রেখে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। ঘটনার তদন্ত করতে বলেছি। আমি নিজেও কোথাও গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারতের পাশাপাশি কাজের মান যাচাই করি।’ 

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে লালমনিরহাট জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাধি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়া ও নামফলক মুছে যাওয়ার কারণ উদ্ঘাটনে জাতীয় সংসদ সচিবালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। 

বৈঠকে অভিজ্ঞ আইনবিদদের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে জমি/সম্পত্তি-সংক্রান্ত মামলাগুলো পরিচালনার জন্য কমিটি সুপারিশ করে। তা ছাড়া, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গুলিস্তান কমপ্লেক্স ভবনে অবৈধভাবে দখল করা দোকান, চিলেকোঠা, সিঁড়ি এবং নবম তলায় দাহ্য পদার্থের দোকান দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালি করার জন্য সুপারিশ করা হয়। 

বৈঠকে জানানো হয়, বিভিন্ন ব্যাংকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের এফডিআরে ৩২৪ কোটি ৯০ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ টাকা জমা আছে। এ টাকা থেকে তেজগাঁওয়ের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। যাতে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব অধিদপ্তরের পাশাপাশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্যবহারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ আসে বৈঠক থেকে। 

বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো. সিরাজুল ইসলামের দুর্নীতি-সংক্রান্ত সব তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার যাবতীয় পেনশন ও অন্যান্য সুবিধাদি বন্ধ রাখার জন্য কমিটি সুপারিশ করে। 

এদিকে গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গুলিস্তান কমপ্লেক্স ভবন নিয়ে বেসরকারি নাগরিক টেলিভিশন ‘একপেশে’ সংবাদ পরিবেশন করেছে এমন দাবি করে ওই টেলিভিশনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। 

নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, ‘গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভবন নিয়ে অতীতে অনেক অনিয়ম ছিল কিন্তু আমি কমিটির সভাপতি হওয়ার পর ঘটনা তদন্ত করে নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছি। নাগরিক টিভি ওই ভবন নিয়ে প্রতিবেদন করেছে।’ 

শাজাহান খান বলেন, ‘প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়, কল্যাণ ট্রাস্ট বা সংসদীয় কমিটি কারোরই বক্তব্য নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে। আমি নিজেও ফোন দিয়ে আমাদের বক্তব্য শুনতে বলেছি। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এ জন্য কমিটি বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছে এবং নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে।’ 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে তথ্য অধিকার আইন অনুসরণ না করে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রচার বা প্রকাশ না করা এবং নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে। 

শাজাহান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও অংশগ্রহণ করেন কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক, এ বি তাজুল ইসলাম, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এবং মোছলেম উদ্দিন আহমদ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত