Ajker Patrika

ছাগলের চামড়ার ‘নামমাত্র’ মূল্য, পড়ে আছে বাগানে

গাংনী (মেহেরপুর) ও নাটোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৪, ০৯: ৫২
Thumbnail image

ছাগলের চামড়ার ‘নামমাত্র’ মূল্যে বিক্রির আশা হারিয়ে ফেলেছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মানুষ। অনেকে বলছেন, বিক্রি করতে না পারলে চামড়া মাটিতে পুঁতে রাখবেন। চামড়ার দাম এতই কম যে বিক্রি করতেও মন চাইছে না বলে জানিয়েছেন অনেকে। 

সরেজমিন দেখা যায়, গরুর চামড়া আকারভেদে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এত কম টাকায় চামড়া বিক্রি করার চেয়ে মাটিতে পুঁতে রাখা ভালো। চামড়ার যে মূল্য হয়, সেই পরিমাণ টাকা দান করে দেব। এ ছাড়া চামড়া কেউ কিনতেও চাইছে না। এর আগে যে চামড়ার কদর ছিল, এখন আর সেই কদর নেই। 

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ খেজমত আলী বলেন, ‘ঈদুল আজহার নামাজ শেষ করেই কোরবানির পশু জবেহ করা শুরু হয়েছে। একজন চামড়া ব্যবসায়ী বলে গেছেন ছাগলের চামড়ার দাম ২০ টাকা করে। চামড়ার দাম কম হওয়ার কারণে বিক্রির আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে।’ 

এদিকে মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘আমরা সব সময়ই চামড়া ঝুঁকিতেই কিনছি, বিক্রি করতে পারব কি না, জানি না। যদি দাম ভালো না পাওয়া যায়, তাহলে লোকসান হবে। ছাগলের চামড়া মাপ অনুযায়ী ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা ধরে কিনেছি। চামড়ার চেয়ে লবণের দাম বেশি। তাই আমরা চামড়া কিনে অন্য ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে থাকি।’ 

আরেক ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, ‘গরুর চামড়া মাপ অনুযায়ী ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আমরা যদি বিক্রি করতে না পারি, তাহলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’ 

সাবেক ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের গরু কোরবানি ছিল। চামড়া ৬০০ টাকায় বিক্রয় করেছি। এর ওপরে আর কেউ দাম দিচ্ছে না। ছাগলের চামড়া নিতে চাইছে না। বাগানে ছাগলের চামড়া পড়ে আছে, কেউ নেয়নি।’ 

এদিকে নাটোরেও ছাগলের চামড়ার ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা ছাগলের চামড়া কিনে এবারও বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। 

নাটোরে দাম না পেয়ে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরাআজ সোমবার বিকেলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচা চামড়ার মোকাম নাটোরের চকবৈদ্যনাথ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাধ্য হয়েই প্রতি পিস ছাগলের চামড়া ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। 

মৌসুমি কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা জানান, এবারের কোরবানি ঈদে গরুর দাম তুলনামূলক বৃদ্ধি পাওয়ায় ছাগল কোরবানির সংখ্যা বেড়েছে। ফলে ছাগলের চামড়া এ বছর বিগত বছরগুলোর তুলনায় ভালো দামে বিক্রি হবে—এমন আশা থেকে তাঁরা ছাগলের চামড়া সংগ্রহ বাড়িয়েছেন। প্রতি পিস চামড়া বাসাবাড়ি থেকেই ২৫-৩০ টাকায় সংগ্রহ করেছেন। মোকাম পর্যন্ত পরিবহনে এসব চামড়াপ্রতি আরও ৫ থেকে ১০ টাকা খরচ বেড়েছে। অথচ নাটোর মোকামে প্রতি পিস চামড়া ১৫ থেকে ২০ টাকায় কিনছেন ব্যবসায়ী ও কমিশন এজেন্টরা। 

রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে ৫০ পিস ছাগলের চামড়া এনেছেন আব্দুল আজিজ। তিনি বলেন, নাটোরের ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করলে পরিবহন খরচই উঠবে না। এখন চামড়া ফেলে দিতে হবে। চামড়া লবণ মাখিয়ে সংরক্ষণ করাই লস। 

মৌসুমি ব্যবসায়ী সুমন ও রশিদ বলেন, তাঁরা ছাগলের চামড়া বাজারে আনার পর দাম দেখে হতাশ। এই চামড়া বিক্রি করবেন, নাকি ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন, তা নিয়ে তাঁরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। 

অন্যদিকে গরুর চামড়া প্রতি পিস ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা হতে দেখা গেছে নাটোরের মোকামে। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দাবি—সিন্ডিকেট করে এখানকার ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম হাজারের ওপরে তুলছেন না। 

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের যুগ্ম-আহ্বায়ক আলহাজ লুৎফর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা না বুঝে চামড়া কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তারা চামড়া পেলেই কিনে নেন। কিন্তু সেই চামড়ার মান, আকার ও লবণ দ্বারা সংরক্ষণের মাত্রা অনুযায়ী আমরা চামড়া কিনে থাকি। কাঁচা চামড়া লবণ দ্বারা আরও দু-তিন আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। সে অনুযায়ী আমরা ন্যায্য দামেই চামড়া কিনেছি।’ 

উল্লেখ্য, চলতি বছর গরু, ছাগল ও মহিষ মিলিয়ে ৫০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত