Ajker Patrika

বন্যা পরিস্থিতি: ৪ জেলায় ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
বন্যা পরিস্থিতি: ৪ জেলায় ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা

দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় এখনো বিরামহীন ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। কোথাও কোথাও পানি কমেছে, কোথাও বেড়েছে। এরই মাঝে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার রুগ্‌ণ চিত্র উঠে এসেছে। কোনো কোনো এলাকায় হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেবা পাচ্ছেন না অনেকে। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

এদিকে দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বন্যাদুর্গত জেলার সংখ্যা ১১টিই আছে। ১১ জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন। পানিবন্দী পরিবার ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি। 

৭৪ উপজেলা বন্যাপ্লাবিত। তিনি বলেন, বন্যায় এখন পর্যন্ত ২৭ জন মারা গেছে। তাদের মধ্যে কুমিল্লায় ১০, ফেনীতে ১, চট্টগ্রামে ৫, খাগড়াছড়িতে ১, নোয়াখালীতে ৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১ জন এবং কক্সবাজারে ৩ জন মারা গেছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে দুজন নিখোঁজ রয়েছে।

বন্যাকবলিত এলাকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা তুলে ধরে উপদেষ্টা জানান, ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে মোট ৬২০টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। সব বাহিনীর সহায়তায় ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

তবে স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা অনেক এলাকায় ভেঙে পড়েছে। নোয়াখালীতে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে জেলার ১৪৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি এবং ফেনী থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে ১৪৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক ডুবেছে; যাতে ব্যাহত হচ্ছে ওই সব এলাকার সেবা কার্যক্রম। জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার বলেন, ‘ইউনিয়নভিত্তিক যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আছে, সেগুলোতে গিয়ে সেবা ও ওষুধ সরবরাহ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিজ নিজ ক্লিনিকে কাজ শুরু করা হবে।’

লক্ষ্মীপুরে বেশ কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মীরা যাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলার চররুহিতা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা আজাদ হোসেন বলেন, ‘জ্বর নিয়ে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছি সেবা নিতে। এসে দেখি, কোনো চিকিৎসক বা কর্মচারী নেই।’
এদিকে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই উপজেলায় ১০টি সাব-সেন্টার রয়েছে। সব কটি বন্যার পানিতে ডুবে আছে। ফলে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বানভাসি মানুষের সেবা দিতে।’ একই কথা বলেছেন রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামনা শীষ। তিনি বলেন, ‘যত কষ্টেই হোক। রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল টিম কাজ করছে।’

ফেনীর স্বাস্থ্যসেবার চিত্র বেশ নাজুক। সেখানকার হাসপাতালগুলোর নিচতলা তলিয়ে যাওয়ায় এবং বিদ্যুৎসেবা ব্যাহত হওয়ার কারণে চিকিৎসাসেবাও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সোমবারও বন্ধ ছিল বিদ্যুৎ সরবরাহ। পাওয়া যায়নি রোগীর খাবার ও পথ্য। বন্যায় গত বুধবার জেনারেল হাসপাতালের নিচতলা ডুবে যায়। গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া হাসপাতাল থেকে পানি নেমে গেলেও কাদা ও স্যাঁতসেঁতে ভাবের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে জরুরি বিভাগ। বিকল্প হিসেবে প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষে জরুরি সেবা চালালেও নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স। ফেনীর সোনাগাজী থেকে এক নারী রোগীকে নিয়ে এসেছেন ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছাদে পা পিছলে পড়ে আমার স্ত্রী পায়ে আঘাত পেয়েছে। হাসপাতালে এসে এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি, এখনো কোনো চিকিৎসাসেবা পাইনি।’

কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে বন্যাকবলিত হয়েছে ১৪টি। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার ১৪টি উপজেলায় ৯৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৬টি সাব-সেন্টার ও ১৭টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। ফলে ব্যাহত হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বিকল্প ব্যবস্থায় তারা চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেবা দিচ্ছে বন্যার্তদের। জেলায় কাজ করছে ২০৮টি মেডিকেল টিম।

যদিও কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বসুয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রতিমা রানী দেবনাথ দুই মাসের মেয়েকে নিয়ে প্রথমে কমিউনিটি ক্লিনিকে যান। সেটি বন্ধ থাকায় যান নীলকান্ত সরকারি ডিগ্রি কলেজে আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানের মেডিকেল টিম পরীক্ষা করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। প্রতিমা রানীর স্বামী মরণ দেবনাথ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেছেন। পানিবন্দী থাকায় সেখানে যেতে পারছি না, ওষুধও কিনতে পারছি না। অপেক্ষা করছি, দেখি কী করতে পারি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত