Ajker Patrika

ডিজির বিতর্কিত আদেশে তদন্তে প্রসিকিউটররা

  • প্রজ্ঞাপন ছাড়া শুধু সভা করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না ডিজি।
  • আইন অনুযায়ী প্রসিকিউটরদের তদন্তের ক্ষমতা নেই।
  • সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তদন্তের নিরপেক্ষতা ও আইনি কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
 শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
ডিজির বিতর্কিত আদেশে তদন্তে প্রসিকিউটররা

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে কর্মরত প্রসিকিউটর ও সহকারী প্রসিকিউটরদের দিয়ে মামলার তদন্ত করানোর উদ্যোগ নিয়েছে অধিদপ্তর। যদিও তাঁরা আইনগতভাবে তদন্ত কর্মকর্তা নন এবং তাঁদের কার্যবিবরণীতেও এ ধরনের দায়িত্ব পালনের অনুমোদন নেই। তবু অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা মাদক মামলার তদন্তের কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার ডিজির নেই।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রসিকিউটরদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা নেই। তাই তাঁরা যখন তদন্ত করবেন, তখন সেটির নিরপেক্ষতা ও আইনি কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। অনেকে আবার বলছেন, তদন্ত ও প্রসিকিউশন—এই দুই ভূমিকা এক ব্যক্তির ওপর দিলে সেটি সংঘাতপূর্ণ ও আইনবহির্ভূত।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর ৬৪ ধারায় ডিজির ক্ষমতা অর্পণের আদেশ অনুযায়ী উপপরিদর্শক ও তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই কেবল অপারেশনাল কাজে নিয়োজিত থাকতে পারেন। সে অনুযায়ী, মহাপরিচালকের পক্ষে সরকারের প্রজ্ঞাপন ব্যতীত প্রসিকিউটরদের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, যদি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে সেটি অবশ্যই সরকারঘোষিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে হতে হবে। অথচ শুধু একটি সমন্বয় সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কোনো প্রজ্ঞাপন ছাড়াই মামলা তদন্তের দায়িত্ব প্রসিকিউটরদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনিক ও আইনগত দিক থেকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ, তেমনি বিচারপ্রক্রিয়ার ভবিষ্যতের জন্যও উদ্বেগজনক।

মামলার তদন্তের একটি অফিস আদেশ হয়েছে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় থেকে। জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক এ কে এম শওকত ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিঠিটি অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে জারি হয়েছে। সমন্বয় বৈঠকে ডিজি যে আদেশ দিয়েছেন, সেটাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখানে আমাদের তেমন কিছু করার ছিল না।’

শওকত ইসলাম আরও বলেন, ‘ডিজি হয়তো ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সবকিছু সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ডিজি মো. হাসান মারুফকে একাধিকবার ফোন করে ও বার্তা পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর গত সোমবার বিকেলে তাঁর (ডিজি) অফিসে গিয়ে কথা বলতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। পরে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিজির বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। মোস্তাক আহমেদের পরামর্শ অনুযায়ী লিখিতভাবে ডিজির কাছে জানতে চাওয়া হয়। এরপরও গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ডিজির পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে জনসংযোগ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, তিনি ডিজিকে বিষয়টি অবহিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমার সই করা একটি অফিস আদেশে বলা হয়, ২০ এপ্রিল ২০২৫ সালের সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, অধিদপ্তরের অধীন কর্মরত প্রতিটি প্রসিকিউটর ও সহকারী প্রসিকিউটরকে অন্তত একটি করে মাদক মামলার তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। সেই অনুযায়ী অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় থেকে অধীনস্থ সব মেট্রো ও জেলা অফিসগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের ডিজি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালেই প্রসিকিউশন বিভাগ চালু হয়। বর্তমানে দেশে দশম গ্রেডে ৬৮ জন প্রসিকিউটর এবং একাদশ গ্রেডে ১০৪টি অনুমোদিত পদে সহকারী প্রসিকিউটর রয়েছে। অনেক পদ পূর্ণ না হলেও বর্তমানে শতাধিক কর্মকর্তা কাজ করছেন। তাঁদের কার্যবিবরণী অনুযায়ী, তাঁদের মূল দায়িত্ব হলো আদালতে মামলা পরিচালনা, সমন জারি, জামিন বিরোধিতা ও রায়ের পর আপিল কার্যক্রমে সহায়তা করা। তদন্তের দায়িত্ব তাঁদের মধ্যে পড়ে না।

তা ছাড়া ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’-এর ৩০ ধারার উপধারা (২) অনুযায়ী অপরাধ তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকায় প্রসিকিউটরদের নাম নেই। সেখানে শুধু অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিচালক, অতিরিক্ত পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, পরিদর্শক ও উপপরিদর্শকদের তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রসিকিউটর ফৌজিয়া মুবাশ্বের নীলিম বলেন, ‘আমরা আগে কখনো তদন্ত না করলেও অভিযানের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা তদন্ত করতে পারব।’ তিনি দাবি করেন, ‘মামলার তদন্ত খুব একটা জটিল কিছু নয়। কিছু গাইডলাইন অনুসরণ করলেই তদন্ত সম্ভব।’

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘প্রসিকিউটর যদি মামলার তদন্ত করেন, তাহলে সেটা কোনো তদন্তই হবে না। প্রথমত, তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই, ফলে ভুল হবে। দ্বিতীয়ত, প্রসিকিউটরের কাজের সঙ্গে তদন্তের বিষয় সাংঘর্ষিক। তাই যদি এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে, তা মোটেও যুক্তিসংগত হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিন বাহিনীর প্রধান

১৭ বছর খাইনি, এবার খাব—টেন্ডার জমা দেওয়া ঠিকাদারকে বললেন বিএনপি নেতা

দেশে এল স্টারলিংক: কতগুলো ডিভাইস যুক্ত করা যাবে, কীভাবে করবেন

ছুটিতে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন, নতুন দায়িত্বে আসছেন সিয়াম

মধ্যরাতে হাক্কানীর মালিকের বাসায় মবের হানা, আটক তিন সমন্বয়ককে ছাড়িয়ে নিলেন হান্নান মাসউদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত