নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশের ৫০-এর অধিক জেলায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ঢাকায় বিক্ষোভ দেখানো হয় মার্কিন দূতাবাসের সামনে। ঢাকার বাইরে পাঁচ জেলায় আন্তর্জাতিক ফাস্ট ফুড চেইন কেএফসি, পিৎজা হাট ও জুতার কোম্পানি বাটার শোরুমে ভাঙচুর চালানো হয়।
সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শাহবাগ, বায়তুল মোকাররম, কুড়িল বিশ্বরোড, নতুন বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নানা সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিকেলে কয়েকটি ছাত্রসংগঠন আবারও বিক্ষোভ দেখায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’, ‘ট্রাম্পের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘আমরা কারা, তোমরা কারা, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’ বলে স্লোগান দেন। সবার হাতে ‘শো ইসরায়েল দ্য রেড কার্ড’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
সকালে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ চলাকালে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম বলে, ‘গাজায় এমন নির্মম গণহত্যার দৃশ্য দেখার পর থেকে আর সুস্থির থাকতে পারছি না।
আজকে বিশ্বব্যাপী কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা আমাদের ক্লাস বাতিল করেছি। আমরা ফিলিস্তিনি মানুষের মুক্তি চাই। স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই।’
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত নারী, শিশুসহ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ‘ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস’ নামের একটি জোট গতকাল সোমবার বিশ্বব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়।
এদিকে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের পরপরই গাজায় নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদে সংহতি সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। তিন দফা হলো—২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় বর্বরোচিত গণহত্যার রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানো, মার্কিন দূতাবাসের উদ্দেশে লংমার্চ ও স্মারকলিপি দেওয়া এবং দেশে ইসরায়েলি পণ্য নিষিদ্ধ করা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মিছিলের পরপরই বিজয়নগর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বাড্ডায় পথে নামেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জোহরের নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে শত শত মুসল্লি বেরিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এলাকায় মিছিল বের করেন একদল শিক্ষার্থী। নতুন বাজারের কাছে দূতাবাসের সামনে সড়কের পাশে অবস্থান নেন তাঁরা। দূতাবাসের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায় সেনাসদস্যদেরও। তাঁরা পথচারীদের তল্লাশি করেন ও ফুটপাতে কাউকে দাঁড়াতে বাধা দেন।
পরে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস দেশটির নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করে। বড় ধরনের জমায়েত ও বিক্ষোভের স্থানগুলো এড়িয়ে চলতে দেশটির নাগরিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরের পর দূতাবাসের বিভিন্ন সেবা সীমিত করা হয়।
দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজ আলম বলেন, ফিলিস্তিন, গাজার জয় হবেই হবে। যত দিন এই পৃথিবী থাকবে, তত দিন ইসলামের ওই ভূমি ধ্বংস করা যাবে না। এখন দরকার পুরো পৃথিবীর মুসলিমদের এক হওয়া। জিহাদ ঘোষণা করা।
এ পরিস্থিতিতে দূতাবাসের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এ বিষয়ে ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি মো. তারেক মাহমুদ বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন অনেকে। সে জন্য এখানে দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
প্রায় একই সময় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি), আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি) ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আসিফ লিখেন, “‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল”, সলিডারিটি। নট গোয়িং টু জয়েন ওয়ার্ক টুডে।’
সারা দেশে সর্বস্তরের মানুষের বিক্ষোভ
আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, ঢাকা ছাড়াও ৫০-এর অধিক জেলায় গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে। ‘গাজায় রক্ত ঝরছে, শিশুরা নিথর পড়ে আছে, আর আমরা কী করছি—চুপচাপ তাকিয়ে আছি?’—এই প্রশ্ন তুলে দুপুরে উত্তাল হয়ে ওঠে ফেনী শহর। বিক্ষোভে রাস্তায় নামেন নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ।
নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। নগরের চাষাঢ়া গোলচত্বর এলাকায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে কুমিল্লা জেলা ও মহানগর এনসিপিসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবাদ হয়। এতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। যান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। ক্যাম্পাসের হাদি চত্বরে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ নামের ওই কর্মসূচিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও অংশ নেন। বিকেলে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে জড়ো হন হাজারো মানুষ।
চাঁদপুরেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। শহরের হাসান আলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সমাবেশ করেন।
ময়মনসিংহে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ নগরীর টাউন হল মোড়ে মিছিল নিয়ে জড়ো হন। তাঁদের মাথায় কালো কাপড় ও হাতে প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পিবিপ্রবি) সব পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত ঘোষণা করে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে সমাবেশ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
ঝালকাঠিতে মিছিল ও বিক্ষোভ করেন শহরবাসী। সকাল থেকে অধিকাংশ দোকান বন্ধ রাখা হয়। বগুড়ায় দুপুর থেকে শহরের সাতমাথা এলাকায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। শত শত শিক্ষার্থী আর সাধারণ মানুষ সড়কে অবস্থান নেন। তাঁরা ফিলিস্তিনের ভুক্তভোগী মানুষের জন্য দোয়া করেন। ফরিদপুরেও বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। সেখানে বের হওয়া এক মিছিল মুজিব সড়ক ধরে নিলটুলী মহল্লা পার হয়ে জনতা ব্যাংকের মোড় ও আলীপুরের মোড় পর্যন্ত যায়।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যালি ও সংহতি সমাবেশ হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন।
গাজীপুরে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
কেএফসি ও বাটায় ভাঙচুর
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, ইসরায়েলি পণ্য রাখার অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক ফাস্ট ফুড চেইন কেএফসি, পিৎজা হাটের পাশাপাশি কাঁচা লংকা, পানসি রেস্টুরেন্ট এবং মেরিন ফুড রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালানো হয়।
সিলেট নগরে বিক্ষোভ মিছিল থেকে কোমল পানীয় কোকা-কোলা বিক্রির অভিযোগ এনে কেএফসিতে ভাঙচুর চালানো হয়। এর পর থেকে কেএফসি বন্ধ রয়েছে। একই মিছিলের একটি অংশের লোকজন পাশের সড়কে আন্তর্জাতিক জুতার ব্র্যান্ড বাটার শোরুমে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। জুতা লুট করা হয়।
বগুড়ায়ও বাটার শোরুমে ভাঙচুর চালানোর খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডে কেএফসির সামনে বিক্ষোভ করে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়। এ সময় কেএফসি বন্ধের দাবি জানান একদল যুবক।
চট্টগ্রাম নগরীতে বিকেলে ইসরায়েলবিরোধী একটি মিছিল থেকে কোকা-কোলা, সেভেনআপের সাইনবোর্ড ও কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাহমুদা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মিছিল থেকে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ভাঙচুরের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। তবে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি।’
গতকাল সন্ধ্যায় খুলনার ময়লাপোতা মোড়ে অবস্থিত কেএফসি ও ডমিনোস পিৎজার ব্রাঞ্চ এবং সেনাকল্যাণ ভবনে বাটা শোরুম ভাঙচুর করে তৌহিদী জনতা।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশের ৫০-এর অধিক জেলায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ঢাকায় বিক্ষোভ দেখানো হয় মার্কিন দূতাবাসের সামনে। ঢাকার বাইরে পাঁচ জেলায় আন্তর্জাতিক ফাস্ট ফুড চেইন কেএফসি, পিৎজা হাট ও জুতার কোম্পানি বাটার শোরুমে ভাঙচুর চালানো হয়।
সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শাহবাগ, বায়তুল মোকাররম, কুড়িল বিশ্বরোড, নতুন বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নানা সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিকেলে কয়েকটি ছাত্রসংগঠন আবারও বিক্ষোভ দেখায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’, ‘ট্রাম্পের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘আমরা কারা, তোমরা কারা, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’ বলে স্লোগান দেন। সবার হাতে ‘শো ইসরায়েল দ্য রেড কার্ড’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
সকালে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ চলাকালে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম বলে, ‘গাজায় এমন নির্মম গণহত্যার দৃশ্য দেখার পর থেকে আর সুস্থির থাকতে পারছি না।
আজকে বিশ্বব্যাপী কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা আমাদের ক্লাস বাতিল করেছি। আমরা ফিলিস্তিনি মানুষের মুক্তি চাই। স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই।’
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত নারী, শিশুসহ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ‘ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস’ নামের একটি জোট গতকাল সোমবার বিশ্বব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়।
এদিকে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের পরপরই গাজায় নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদে সংহতি সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। তিন দফা হলো—২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় বর্বরোচিত গণহত্যার রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানো, মার্কিন দূতাবাসের উদ্দেশে লংমার্চ ও স্মারকলিপি দেওয়া এবং দেশে ইসরায়েলি পণ্য নিষিদ্ধ করা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মিছিলের পরপরই বিজয়নগর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বাড্ডায় পথে নামেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জোহরের নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে শত শত মুসল্লি বেরিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এলাকায় মিছিল বের করেন একদল শিক্ষার্থী। নতুন বাজারের কাছে দূতাবাসের সামনে সড়কের পাশে অবস্থান নেন তাঁরা। দূতাবাসের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায় সেনাসদস্যদেরও। তাঁরা পথচারীদের তল্লাশি করেন ও ফুটপাতে কাউকে দাঁড়াতে বাধা দেন।
পরে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস দেশটির নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করে। বড় ধরনের জমায়েত ও বিক্ষোভের স্থানগুলো এড়িয়ে চলতে দেশটির নাগরিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরের পর দূতাবাসের বিভিন্ন সেবা সীমিত করা হয়।
দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজ আলম বলেন, ফিলিস্তিন, গাজার জয় হবেই হবে। যত দিন এই পৃথিবী থাকবে, তত দিন ইসলামের ওই ভূমি ধ্বংস করা যাবে না। এখন দরকার পুরো পৃথিবীর মুসলিমদের এক হওয়া। জিহাদ ঘোষণা করা।
এ পরিস্থিতিতে দূতাবাসের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এ বিষয়ে ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি মো. তারেক মাহমুদ বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন অনেকে। সে জন্য এখানে দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
প্রায় একই সময় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি), আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি) ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আসিফ লিখেন, “‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল”, সলিডারিটি। নট গোয়িং টু জয়েন ওয়ার্ক টুডে।’
সারা দেশে সর্বস্তরের মানুষের বিক্ষোভ
আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, ঢাকা ছাড়াও ৫০-এর অধিক জেলায় গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে। ‘গাজায় রক্ত ঝরছে, শিশুরা নিথর পড়ে আছে, আর আমরা কী করছি—চুপচাপ তাকিয়ে আছি?’—এই প্রশ্ন তুলে দুপুরে উত্তাল হয়ে ওঠে ফেনী শহর। বিক্ষোভে রাস্তায় নামেন নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ।
নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। নগরের চাষাঢ়া গোলচত্বর এলাকায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে কুমিল্লা জেলা ও মহানগর এনসিপিসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবাদ হয়। এতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। যান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। ক্যাম্পাসের হাদি চত্বরে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ নামের ওই কর্মসূচিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও অংশ নেন। বিকেলে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে জড়ো হন হাজারো মানুষ।
চাঁদপুরেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। শহরের হাসান আলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সমাবেশ করেন।
ময়মনসিংহে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ নগরীর টাউন হল মোড়ে মিছিল নিয়ে জড়ো হন। তাঁদের মাথায় কালো কাপড় ও হাতে প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পিবিপ্রবি) সব পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত ঘোষণা করে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে সমাবেশ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
ঝালকাঠিতে মিছিল ও বিক্ষোভ করেন শহরবাসী। সকাল থেকে অধিকাংশ দোকান বন্ধ রাখা হয়। বগুড়ায় দুপুর থেকে শহরের সাতমাথা এলাকায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। শত শত শিক্ষার্থী আর সাধারণ মানুষ সড়কে অবস্থান নেন। তাঁরা ফিলিস্তিনের ভুক্তভোগী মানুষের জন্য দোয়া করেন। ফরিদপুরেও বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। সেখানে বের হওয়া এক মিছিল মুজিব সড়ক ধরে নিলটুলী মহল্লা পার হয়ে জনতা ব্যাংকের মোড় ও আলীপুরের মোড় পর্যন্ত যায়।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যালি ও সংহতি সমাবেশ হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন।
গাজীপুরে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
কেএফসি ও বাটায় ভাঙচুর
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, ইসরায়েলি পণ্য রাখার অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক ফাস্ট ফুড চেইন কেএফসি, পিৎজা হাটের পাশাপাশি কাঁচা লংকা, পানসি রেস্টুরেন্ট এবং মেরিন ফুড রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালানো হয়।
সিলেট নগরে বিক্ষোভ মিছিল থেকে কোমল পানীয় কোকা-কোলা বিক্রির অভিযোগ এনে কেএফসিতে ভাঙচুর চালানো হয়। এর পর থেকে কেএফসি বন্ধ রয়েছে। একই মিছিলের একটি অংশের লোকজন পাশের সড়কে আন্তর্জাতিক জুতার ব্র্যান্ড বাটার শোরুমে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। জুতা লুট করা হয়।
বগুড়ায়ও বাটার শোরুমে ভাঙচুর চালানোর খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডে কেএফসির সামনে বিক্ষোভ করে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়। এ সময় কেএফসি বন্ধের দাবি জানান একদল যুবক।
চট্টগ্রাম নগরীতে বিকেলে ইসরায়েলবিরোধী একটি মিছিল থেকে কোকা-কোলা, সেভেনআপের সাইনবোর্ড ও কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাহমুদা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মিছিল থেকে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ভাঙচুরের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। তবে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি।’
গতকাল সন্ধ্যায় খুলনার ময়লাপোতা মোড়ে অবস্থিত কেএফসি ও ডমিনোস পিৎজার ব্রাঞ্চ এবং সেনাকল্যাণ ভবনে বাটা শোরুম ভাঙচুর করে তৌহিদী জনতা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগে নারী, পোষ্য ও পুরুষ কোটা থাকছে না। উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী, কোটা থাকবে মাত্র ৭ শতাংশ। বাকি ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। প্রস্তাবিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫-এর খসড়ায় এমন বিধান থাকছে। খসড়া থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
৬ ঘণ্টা আগেজুলাই আন্দোলনে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে করা মামলায় পুলিশের ১ হাজার ৫৯ জন সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র ৫৪ জন। স্বাধীন তদন্ত কমিশন করে বাকি দায়ীদেরও গ্রেপ্তারের চাপ দিয়ে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) জুলাই আন্দোলনের শরিক দলগুলো।
৬ ঘণ্টা আগেজামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় অসময়ে যমুনা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তীব্র ভাঙনে প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হচ্ছেন শত শত মানুষ। এ ছাড়া ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আগামী বর্ষার আগেই কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে চলে যাবে বলে আশঙ্কা যমুনা পারের বাসিন্দাদের।
৬ ঘণ্টা আগেকৃষিতে ভর্তুকি দিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। তবে আগামী বাজেটের আকার বাড়বে না জানিয়ে এ বাবদ চলতি অর্থবছরের সমান ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে চায় অর্থ মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভর্তুকিতে বরাদ্দ না বাড়ালে তারা বিপাকে পড়বে।
৭ ঘণ্টা আগে