Ajker Patrika

৮১ দেশে অপু

রজত কান্তি রায়
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৩: ২৮
৮১ দেশে অপু

এ পর্যন্ত ৮১টি দেশের ৮৮০টি শহরে গেছেন, থেকেছেন, খেয়েছেন তানভীর অপু। তাঁর এ ভ্রমণের তালিকায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন আছে, তেমনি আছে ইউরোপ, উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের অনেক দেশ। তাঁর শেষ ভ্রমণ ছিল মাল্টার গজো দ্বীপ। ফেব্রুয়ারি মাসে ঘুরে এসেছেন সেখান থেকে। তানভীর অপুর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন রজত কান্তি রায়।

রাজশাহী ও লাল ছেলেবেলা
তাঁর ফেসবুক পেজ দেখলে বোঝার কোনো উপায় নেই তিনি এই মুহূর্তে ঠিক কোন দেশে বা কোন শহরে আছেন। শত মানুষের মাঝেও তাঁকে চেনা যায় তাঁর ঝলমলে রঙিন পোশাক আর লম্বা চুলের জন্য। হাসিখুশি ভ্রমণপ্রিয় অপুর জন্ম পদ্মাপারের রাজশাহী শহরের দরগাপাড়ায়, ১৯৮০ সালে। পুরো নাম তানভীর অপু। বাবা ইব্রাহিম আলী দেওয়ান ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর। মা মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে অবসরে গেছেন ৪০ বছর চাকরি করার পর।

রাজশাহী শহর, পদ্মা নদী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসেই কাটে অপুর ছেলেবেলা। কীভাবে যেন সেই ছেলেবেলাতেই ভ্রমণের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল তাঁর মধ্যে। বড় বেলায় এসে সে অঙ্কুর মহিরুহে পরিণত হয়েছে মাত্র। 

পাখি দেখা ও ইনাম আল হক
পদ্মার চরে প্রচুর পাখি আসে প্রতিবছর। সেসব পাখি দেখতে গিয়েছিলেন পাখিবিশারদ ইনাম আল হক। সেটা ১৯৯৯ সাল। সে বছরই তাঁর সঙ্গে অপুর দেখা ও পরিচয় হয়। তারপর তাঁর সংসর্গে আসেন অপু। ভ্রমণের পৃথিবীতে নতুন জোয়ার আসে। ‘ফুলটাইম ট্রাভেলার’ হওয়ার নেশা পেয়ে বসে তখনই। 

রোমান্টিক শহর বলে বিখ্যাত ইতালির ভেনিস শহরে তানভীর অপু।প্রথম বিদেশ ভ্রমণ
স্কুলের পাঠ চুকিয়ে বিকেএসপিতে কিছু সময় লেখাপড়া করেন তানভির। তারপর পাড়ি জমান ফিনল্যান্ড। একেবারে স্বাধীন মানুষ হিসেবে ভ্রমণ করার পুরো সুবিধা পেতে শুরু করেন সেখান থেকে। সেটা ২০০৫ সাল। এর পরের বছর, অর্থাৎ ২০০৬ সালে ফিনল্যান্ডে তাঁর স্কুল থেকে পাশের দেশ এস্তোনিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সূত্রে এস্তোনিয়ার রাজধানী তালিন তাঁর দ্বিতীয় বিদেশ ভ্রমণ। 

ভালো লাগার শহর 
৮১টি দেশের ৮৮০টি শহর থেকে ভালো লাগার শহর বেছে নেওয়া খুব সহজ কাজ নয়। কোন শহর প্রিয়, সে প্রশ্নের উত্তরে খানিক ভাবতে হলো তানভির অপুকে। অবশেষে জানালেন, ‘এ পর্যন্ত যত শহর ঘুরে বেড়িয়েছি তার ভেতর ভালো লেগেছে ভেনিস, ইতিহাসবিজড়িত রোম, পৃথিবীর উত্তরের শেষ শহর হেমারফেস্ট এবং কিউবার রাজধানী হাভানা।’

কারণ কী? অপু জানালেন, প্রকৃতির পর ইতিহাস তাঁকে টানে বেশি। সে জন্য যেখানেই যান না কেন, হাতে সময় নিয়ে যান। কোনো শহরে গিয়ে একটু ঘুরেই চলে আসেন না। এভাবে ঘুরতে গিয়েই ভেনিস, রোম, হেমারফেস্ট ও হাভানাকে ভালো লেগে যায় তাঁর। ভ্রমণের সঙ্গে যোগ হয়েছে কিশোরকালের পড়া ওই সব দেশ কিংবা শহরের রোমাঞ্চকর ইতিহাস। গত মাসে ঘুরে এসেছেন লন্ডন, ওয়েলস ও মাল্টা।

স্মরণীয় ভ্রমণ 
‘লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ ছিল আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ভ্রমণ। এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশের মানুষ চমৎকার হাসিখুশি, প্রাণবন্ত এবং অনেক অতিথিপরায়ণ। এখানকার মায়া সভ্যতার ইতিহাস আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। বিশেষ করে হন্ডুরাসের কোপান নামে একটি নগরীর কথা মনে গেঁথে আছে। আর আছে গুয়াতেমালার আতিক লান লেকের পাশে গড়ে ওঠা সেন্ট পেট্রো নামের শহরটির কথা, যে শহরে বসবাস করে মায়ানরা।’ কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই গড়গড় করে বলে গেলেন অপু।

লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ একটানা দীর্ঘ সময় ধরে ভ্রমণ করেছিলেন অপু। সে ভ্রমণটি তাঁকে যে চমৎকার অভিজ্ঞতা দিয়েছিল, সেটা তাঁর কথায় বোঝা যায়। ভ্রমণের একটি ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে বেলিজের এক মায়ান গ্রামে। সে গ্রামের নাম সেন্ড মৃগেল। ছোট্ট চমৎকার সেই গ্রামে এখনো বসবাস করে মায়ান মানুষেরা। ১০ থেকে ১৫টি মায়ান পরিবারকে তাঁর ভীষণ সুখী পরিবার মনে হয়েছে।

‘পৃথিবীতে আমার দেখা সুখী দেশ কিউবা ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও খুব ভালো ছিল। সে দেশে রংবেরঙের বাড়ি আর আছে হাসিখুশি মানুষ। গান-বাজনা, আড্ডা তাদের সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় অংশ। সেই সঙ্গে মেক্সিকোর মান সভ্যতার পিরামিডে উঠেছি। আর মেক্সিকোর খাবার খুবই ভালো লেগেছে আমার।’ বোঝা গেল, দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছরের ভ্রমণে দারুণ সব অভিজ্ঞতা আছে তাঁর ঝুলিতে।

ইতালির ভেরোনা শহরে কিংবদন্তি চরিত্র জুলিয়েটের বাড়িতে তার ভাস্কর্যের সঙ্গেএবং ফিনল্যান্ড
ফিনল্যান্ড নিয়ে অপুর দুর্বলতার কথা সর্বজনবিদিত। সম্ভবত তাঁর প্রিয় বাক্য, ‘ফিনল্যান্ড হলো আমার কাছে একটি স্বর্গ।’ ছয়বার পৃথিবীর সুখী দেশের মুকুট ছিনিয়ে নেওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়। এ ছাড়া পৃথিবীর দুর্নীতিমুক্ত দেশগুলোর সেরাদের তালিকায় ২০ বছর ধরে আছে ফিনল্যান্ডের নাম। সেই দেশ সম্পর্কে দুর্বলতা থাকাটা তাই অস্বাভাবিক নয়।

অপুর বক্তব্য খুব সাধারণ, ‘পৃথিবীর যে দেশে থাকি না কেন, ফিনল্যান্ডে গেলে আমি সবচেয়ে শান্তিবোধ করি। এ দেশে ১৭ বছর ধরে আছি কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়া। শুধু একটাই সমস্যা, দেশটিতে তীব্র ঠান্ডা! এখানকার মানুষ খুবই শান্তশিষ্ট। তারা অপ্রয়োজনীয় কথা বলে না। গ্রীষ্মে সেখানকার আবহাওয়া চমৎকার। পড়ালেখা, চিকিৎসা, যোগাযোগব্যবস্থা এবং সামাজিক শৃঙ্খলা খুবই ভালো।’

তারুণ্যের সময় পার হয়ে এলেও ভ্রমণের বেলায় তিনি তরুণস্য তরুণ। অপু জানান, তরুণদের ভ্রমণ করা উচিত বেশি বেশি। ভ্রমণের অর্থনৈতিক সামর্থ্য না হলে অন্তত নিজের জেলাটিকে ভালো মতো দেখা ও চেনা উচিত প্রতিটি মানুষের।

সন্ধ্যা গাঢ় হয়ে গেলে আমাদের সংবিৎ ফেরে। জ্যামের শহর পাড়ি দিয়ে আমাদের পৌঁছাতে হবে বাসায়। ফলে উঠে পড়তে হয় আমাদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত