Ajker Patrika

ফ্যাশনে নিরীক্ষার বছর ২০২৫

পোশাকে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় নকশার মেলবন্ধন

সানজিদা সামরিন, ঢাকা 
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ২০: ৫৯
মডেল: আতাহার ও নিধি, পোশাক ডিজাইন: মাহিরা রহমান, মেকআপ: রাজিব মজুমদার, ফ্যাশন ডিরেকশন: ফারদিন বায়জিদ, প্রোডাকশন: স্টুডিও ভেলভেট, ছবি: কাউসার হামিদ মজুমদার।
মডেল: আতাহার ও নিধি, পোশাক ডিজাইন: মাহিরা রহমান, মেকআপ: রাজিব মজুমদার, ফ্যাশন ডিরেকশন: ফারদিন বায়জিদ, প্রোডাকশন: স্টুডিও ভেলভেট, ছবি: কাউসার হামিদ মজুমদার।

বলা হয়, ফ্যাশন উইকগুলোয় র‍্যাম্পে মডেলরা যেসব পোশাক পরে হেঁটে বেড়ান, সেগুলো আদৌ সাধারণ মানুষের আলমারিতে তোলার উপযোগী নয়। তাহলে অত দামি ফ্যাব্রিক গায়ে তোলেন কারা? হ্যাঁ, বলিউডের সোনম বা আলিয়াদের গায়ে কখনো কখনো রানওয়ে পোশাকের নকশা বা প্রিন্ট দেখা যায়; তবে সেখানেও প্রশ্ন যে উদ্ভট নকশাওয়ালা পোশাকগুলো? সেগুলো কি কেউ পরে? আগেভাগেই বলে রাখি, একটু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তো পরেই। রিয়ান্না, জেনিফার লোপেজ, সেলেনা গোমেজ, কিম কার্দিশিয়ানদের সেই সাহস আছে। সাহস রয়েছে ভারতের উর্ফি জাভেদেরও।

এখানে আবার সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, ‘রানওয়েতে যেসব পোশাক দেখা যায়, তার কোনোটাই কি বিশ্বমানের ফ্যাশন ডিজাইনাররা আমাদের জন্য তৈরি করেন না? যদি না-ই হয়, তাহলে এসব পোশাক তৈরির উদ্দেশ্য কী?’ ছোট্ট করে বলে রাখি, ‘ধরুন, আপনি আপনার নকশা করা একটা পোশাক রানওয়েতে দেখানোর সময় পাবেন মাত্র ১০ মিনিট। তখন কি সাধারণ কোনো পোশাক গায়ে জড়িয়ে যেকোনো ব্যক্তি হেঁটে গেলেই দর্শক দেখবে? মোটেও না। আর এই জায়গাটা থেকেই থিমভিত্তিক ফ্যাশন শোগুলো পরিচালিত হয়। একটা নির্দিষ্ট ফ্যাব্রিক ও ম্যাটেরিয়ালকে এমনভাবেই শোকেজিং করা হয়, যা দর্শকের চোখে লেগে থাকবে। এখানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মডেলও গুরুত্বপূর্ণ। জিজি হাদিদ যে পোশাক পরবেন, তা নিশ্চয়ই তরুণীদের মন কেড়ে নেবে, তাই না?

তবে রানওয়ে থেকে নেমে এসেও যদি বলি, তাহলে ফ্যাশনবোদ্ধাদের মতে, এই বছরে যেহেতু মঙ্গলগ্রহের প্রভাব রয়েছে, সেহেতু ১২ মাসে ঘটবে অভাবনীয় অনেক কিছুই। মানে, ফ্যাশনবিশ্বও বাদ যাবে না, ফ্যাশন ও স্টাইলিংয়ে এ বছরটা হবে পুরোদস্তুর নিরীক্ষাধর্মী। বর্তমানে তরুণেরা যেহেতু আগের তুলনায় অনেক বেশি ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল; খোলাসা করে বললে, ইউটিউবের বরাতে বহির্বিশ্বের ফ্যাশনের প্রতি এখনকার তরুণেরা ব্যাপক আগ্রহী।

গত বছর বা তার আগের বছরের রেশ টানতে গেলে যে প্রসঙ্গ এড়ানো যায় না, তা হলো পাকিস্তানি ও তুর্কি সিরিজ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নারীরা পোশাক-পরিচ্ছদও ফ্যাশন উপকরণ বেছে নিচ্ছেন। সেখানে বাদ যাচ্ছে না ওয়াইড লেগ প্যান্ট থেকে শুরু করে সিগারেট প্যান্ট, স্কার্ফ, ফ্রিল দেওয়া পোশাক, ফ্লোরাল প্রিন্ট, ভারী মেটালের গয়না, একরঙা সিল্কের পোশাক, পেনসিল হিল ইত্যাদি। আর এই হাওয়া লেগেছে আমাদের দেশেও। তবে এ প্রসঙ্গে কোরিয়ান সিরিজকে বাদ দিলে দাঁতে জিব কাটতে হবে। জেন-জিরা ওভারসাইজড টপস, লুজ কার্গো প্যান্ট ও চুলে বো-ব্যান্ড জড়িয়ে দিব্য়ি চলে যাচ্ছে ক্লাসে এমনকি পার্টিতেও। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্য়লয়ের আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করলে চোখে পড়বে ছেলে ও মেয়ে উভয় ছাপা কাপড়ে তৈরি তিন কোনা ছোট স্কার্ফ হেডব্যান্ডের মতো করে মাথায় পরছেন। এগুলোর সবই বিশ্ব ফ্যাশনের প্রতিচ্ছবি। আমাদের দেশের ডিজাইনাররাও এই ফ্যাশনসচেতন তরুণ-তরুণীদের কথা বিবেচনায় রেখে অন্যান্য দেশের পোশাকের দেশীয় ঘরানার মিলমিশে ফিউশন ঘরানার পোশাক তৈরি করছেন।

মডেল: নিধি, পোশাক ডিজাইন: মাহিরা রহমান, মেকআপ: রাজিব মজুমদার, ফ্যাশন ডিরেকশন: ফারদিন বায়জিদ, প্রোডাকশন: স্টুডিও ভেলভেট, ছবি: কাউসার হামিদ মজুমদার।
মডেল: নিধি, পোশাক ডিজাইন: মাহিরা রহমান, মেকআপ: রাজিব মজুমদার, ফ্যাশন ডিরেকশন: ফারদিন বায়জিদ, প্রোডাকশন: স্টুডিও ভেলভেট, ছবি: কাউসার হামিদ মজুমদার।

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজির সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্রী মাহিরা রহমান। সম্প্রতি কাজাখস্তানের সংস্কৃতি, স্থাপত্য এবং সিম্বলিক মোটিফে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাক নকশা করেছেন। এই পোশাকগুলো আমাদের দেশের সাধারণ তরুণ-তরুণীদের ব্যবহারের উপযোগী কি না, তা জানতে চাইলে মাহিরা বলেন, ‘যদিও এসব পোশাক আমাদের দেশে প্রচলিত নয়, তবে আমি চেয়েছি এমন একটি ফিউশন তৈরি করতে, যেখানে আন্তর্জাতিক এবং আমাদের দেশীয় ঘরানার মেলবন্ধন ঘটবে। এটা একটা নিরীক্ষাধর্মী কাজ বলতে পারেন, যেখানে স্টাইলিংয়ের মাধ্যমে দুটি সংস্কৃতিকে সংযুক্ত করা হয়েছে।’

ফিউশনভিত্তিক এ পোশাকগুলো কাজাখস্তানের ঐতিহ্যবাহী মোটিফ, প্রতীক এবং স্থাপত্যের অনুপ্রেরণায় ডিজাইন করা হয়েছে। পোশাকে ব্যবহৃত হয়েছে দেশীয় হাতের কাজ, যেমন–এমব্রয়ডারি ও অ্যাপ্লিক। রোজকার ব্যবহারের জন্য ও সন্ধ্যাকালীন ছোটখাটো পার্টিতে পরার উপযোগী এ পোশাকগুলো হালকা, তবে অভিজাত রুচির নকশা করা রয়েছে। বাংলাদেশ যেহেতু গ্রীষ্মপ্রধান দেশ, আবার কাজাখস্তানেও গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম ও শীতে তীব্র ঠান্ডা পড়ে, তাই আবহাওয়ায় মিল থাকায় মসলিন, সুতি ও সিল্ক কাপড়ে পোশাকগুলো তৈরি করেছেন তিনি। চোখের আরাম হয় এমন রঙের কাপড়ে করেছেন নকশা। আকাশি, সাদা, অফ হোয়াইট রংই প্রাধান্য পেয়েছে। মোটিফগুলোতে কাজাখস্তানের ট্র্যাডিশনাল জিওমেট্রিক ও ফ্লোরাল প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয়েছে, যা এমব্রয়ডারি ও অ্যাপ্লিকের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

মডেল: সিমরান, পোশাক ডিজাইন: মাহিরা রহমান, মেকআপ: রাজিব মজুমদার, ফ্যাশন ডিরেকশন: ফারদিন বায়জিদ, প্রোডাকশন: স্টুডিও ভেলভেট, ছবি: কাউসার হামিদ মজুমদার।
মডেল: সিমরান, পোশাক ডিজাইন: মাহিরা রহমান, মেকআপ: রাজিব মজুমদার, ফ্যাশন ডিরেকশন: ফারদিন বায়জিদ, প্রোডাকশন: স্টুডিও ভেলভেট, ছবি: কাউসার হামিদ মজুমদার।

এই পোশাকগুলো মূলত কার কার উপযোগী, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই সংগ্রহ মূলত বর্তমান ট্রেন্ড সেটার তরুণ-তরুণী, সংস্কৃতি এবং শিল্পপ্রেমীদের জন্য। যাঁরা বরাবরই নিজেদের ভিন্নভাবে উপস্থাপনে পছন্দ করেন এবং পোশাকের মাধ্যমে নিজেদের স্টাইল ও রুচিকে প্রকাশ করতে ভালোবাসেন।’

এসব ফিউশনধর্মী পোশাকের দাম সম্পর্কে মাহিরা বলেন, ‘কাপড়, শ্রম ও নিখুঁত কাজ অনুযায়ী একেকটি পোশাক সেটের দাম ৫ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার ৫০০ টাকা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কূটনৈতিক পাসপোর্টকে রাতারাতি অর্ডিনারি বানিয়ে দেওয়া পরিচালক বরখাস্ত

এবার সরানো হলো জ্বালানি উপদেষ্টার পিএসকে

৩৫ বছর ভারতে, স্বামী–সন্তান রেখে দেশে ফেরার নোটিশ পেলেন পাকিস্তানি সারদা

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি: প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত