Ajker Patrika

নাম তাঁর ফেমাস

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, ২১: ৩০
নাম তাঁর ফেমাস

নাম শুনে প্রথমে একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। তাঁর নামের অংশ হিসেবে আছে ইংরেজি ‘ফেমাস’ শব্দটি। ভেবেছিলাম, বিষয়টি নতুন কবিদের নতুন নাম নেওয়ার মতো বিষয়। কিন্তু সে ভুল ভাঙল। তিনি জানালেন, হানিফ রানা ফেমাস তাঁর পুরো নাম। শুধু তা-ই নয়, এটিই তাঁর আদি ও আসল নাম। সব ধরনের সনদ এবং পাসপোর্টে এ নাম লেখা আছে। বরং অন্যান্য বাঙালি ছেলে বা মেয়েদের মতো তাঁরও একটি ডাকনাম আছে— বাবু। আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ঠিক করে নিলাম ফেমাস বাবু নামটি! 

বাইকিং, ভ্রমণ আর খাদ্য—জীবনের এই তিনটি বিষয়কে সত্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফেমাস। জানতে চাইলাম, কেন? সেই ছোটবেলা থেকে নিজ সীমানার বাইরে কোথাও না কোথাও যেতে না পারলে তাঁর মন টিকত না। বড়বেলায় যখন ব্যবসা করতে শুরু করেন, তখন তাঁর ব্যবসায় মন টিকত না প্রতি মাসে কোথাও না কোথাও না গেলে। আবার ঘুরে এলে সেই ‘চার্জে’ কিছুদিন ভালো সময় কাটত। ধীরে ধীরে চার্জ ফুরিয়ে গেলে আবার কোথাও চলে যেতেন। এই যাওয়া-আসা হতো তাঁর সেই ‘মন কেমন’ করা দূর করতে। এভাবেই একসময় ভ্রমণ বিষয়টি অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেল ফেমাস বাবুর। এখন তাই বিষয়টি নিয়মিত হয়ে উঠেছে।

প্রথম ভ্রমণ
দেশের বাইরে প্রথম ভ্রমণ ভারতের কলকাতা শহর, যেখানে মূলত বাংলাদেশের তরুণদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের হাতেখড়ি হয়। সময়টা ২০১৪ সাল। প্রথম সীমান্ত পার হওয়ার সে উত্তেজনা এখনো চোখে ভাসে ফেমাস বাবুর। ঘোরাঘুরি আর শপিংয়ের সেই অভিজ্ঞতা স্মরণীয় হয়ে আছে প্রথম হিসেবে। এরপর একে একে গেছেন মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কা।

টাইগার টেম্পলেচায়নিজ নিউ ইয়ার ও দীপাবলি
এত দিন চায়নিজ নববর্ষ উৎসবের কথা শুধু শুনেই এসেছেন। কিন্তু সরাসরি সেটা দেখার অভিজ্ঞতা হয় তাঁর মালয়েশিয়ায়। সে এক ‘বিপন্ন বিস্ময়’। আতশবাজির শব্দে ঘুম আসে না! এরপর ধীরে ধীরে জেটল্যাগ সরে গেলে ফেমাস সেই বিখ্যাত উৎসব উপভোগ করতে শুরু করেন বন্ধুদের সঙ্গে। আতশবাজির শব্দ তখন আর বিরক্তির কারণ নয়; উপভোগের বিষয়। 
এর সঙ্গে তিনি মিল খুঁজে পান ভারতের দীপাবলি উৎসবের। একবার দীপাবলি উৎসব তিনি কাটিয়েছেন দিল্লি, জয়পুর ও আগ্রায়। সে স্মৃতির সঙ্গে চায়নিজ নিউ ইয়ারের স্মৃতি মিলেমিশে যায় মাঝেমধ্যে।

সিঙ্গাপুরের অর্চার্ড পয়েন্ট
এত এত ভ্রমণের পরেও ফেমাস বাবুর কাছে সিঙ্গাপুরের অর্চার্ড পয়েন্টের আকর্ষণ কমে না। তিনি সে দেশে গেছেন একাধিকবার। প্রতিবারই সেখানে প্রচুর সময় কাটিয়েছেন। বিষয় কী, জানতে চাইলে বাবু জানালেন, টেলিভিশন আর সিনেমায় দেখা বিদেশের সঙ্গে তিনি এই একটি জায়গার মিল খুঁজে পান। বাকি সব দেশের মতোই। না হলেও কোথাও না কোথাও কিছু না কিছু মিল আছে। কিন্তু অর্চার্ড পয়েন্টে মিল নেই। এ এলাকা তাঁর কাছে কখনো টোকিও শহরের মতো মনে হয়। কখনো নিউইয়র্ক শহরের মতো মনে হয়। বিষয়টি ইল্যুশনের মতো, মাথা থেকে দূর হয় না এখনো।

প্রিয় ফিফি দ্বীপেপ্রিয় ফিফি দ্বীপ
ভ্রমণ যেহেতু চলমান, তাই এখনই বলা যাচ্ছে না প্রিয় জায়গা কোনটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত হানিফ রানা ফেমাস ওরফে ফেমাস বাবুর প্রিয় জায়গা থাইল্যান্ডের ফিফি দ্বীপ। সমুদ্র, সৈকত আর পানির রং তাঁর খুব প্রিয়। প্রথমবার দীর্ঘ ভ্রমণের ঝক্কি সামলে গিয়েছিলেন ফিফি দ্বীপে। তারপর তার প্রেমে পড়ে যান তিনি। বারবার ফিরে যেতে চান সেখানে। 

ভ্রমণ বিলাসিতা নয়
ভ্রমণ তাঁর কাছে বিলাসিতার বিষয় নয়। তবে তিনি মনে করেন, প্রচুর টাকা ব্যয় করে ভ্রমণের দরকার নেই; বরং ধীরেসুস্থে নিজের দেশ দেখাও ভালো। ভ্রমণ মনের আনন্দে করা উচিত। লোকদেখানোর জন্য নয়। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ ও সংস্কৃতি—এগুলো দেখার একটা প্রভাব জীবনে থেকে যায় কোনো না কোনোভাবে বলে মনে করেন ফেমাস বাবু। 

মায়ের রান্না প্রিয়
প্রায় ১৭ সদস্যের একান্নবর্তী পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফেমাস বাবুর। এখন সে পরিবার আর অত বড় নয়। সদস্যরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছেন বিভিন্ন জায়গায় জীবন ও জীবিকার নিয়মে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তিনি বাড়িতে রিকশা ভ্যানে বাজার আসতে দেখেছেন। দুপুরে ছোটখাটো একটি অনুষ্ঠানের খাবার রান্না হতে দেখেছেন। নিজের আকারের চেয়ে বড় মাছ আসতে দেখেছেন বাড়িতে। তখন দাদা বেঁচে ছিলেন। সেগুলোই দাগ কেটে গেছে নিউরনে। ফেমাস বাবু তাই খেতে ভালোবাসেন, খাওয়াতে ভালোবাসেন। নিজ এলাকা অর্থাৎ মুন্সিগঞ্জের খ্যাতি আছে খাবারদাবারের বিষয়ে। যেখানেই ভ্রমণে যান, সেখানকার খাবার উপভোগ করেন প্রাণভরে। 

ইউনিভার্সাল স্টুডিও, সিঙ্গাপুরভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
দ্রুতই তিনি নেপাল যাবেন ট্রেকিং করতে। এখনো নেপাল যাওয়া হয়নি বলে খানিক তাড়াহুড়ো আছে দেশটিতে যাওয়ার জন্য। তারপর যাবেন মালদ্বীপ। 

ব্যক্তিগত
পদ্মাপাড়ের মুন্সিগঞ্জে হানিফ রানা ফেমাস ওরফে ফেমাস বাবুর জন্ম ১৯৮৯ সালে। গ্রাম মীরপাড়া, সদর, মুন্সিগঞ্জ। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বাবা হাজি জুলহাস মিয়া এবং মা ফরিদা ইয়াসমিন। ছোটবেলা কেটেছে মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা মিলিয়ে। এখন ঢাকাবাসী। তিনি একজন ব্যবসায়ীও বটে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত