Ajker Patrika

চলন থেকে চূড়ায়

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ২৩
Thumbnail image

অথচ তিনি একজন সফল প্রকৌশলী কিংবা একজন ডুবুরিও হতে পারতেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল জলের কাছাকাছি, চলনবিল এলাকায়। তিনি এখন পুরোদস্তুর পর্বতারোহী এবং পর্যটক—দুটোই এখন তাঁর নেশা ও পেশা। সম্ভবত তিনিই প্রথম বাংলাদেশি, যিনি পেশা হিসেবে এক্সপেডিশন লিডারের পদ বেছে নিয়েছেন কোনো প্রতিষ্ঠানে।

পাবনার পুরোনো জনপদ চাটমোহর। এখনো এখানকার ভিটেমাটি থেকে পুরোনো গন্ধ পাওয়া যায়। সেই গন্ধ গিয়ে মেশে চলনবিলে। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের ছাইকোলা এলাকায় নেমে ভ্যানে চলনবিলের ঠিক মাঝ দিয়ে যাওয়া যায় চাটমোহর। দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত বিল। বর্ষায় সেই বিলে থইথই করে পানি আর শীতে পুরো বিল হয় সবুজ-হলুদের সমুদ্র। চলনের এই রূপ দেখে বড় হয়েছেন আহসানুজ্জামান তৌকির। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা চাটমোহরের বালুচর গ্রামে। বাবা মো. আকরাম হোসেন ও মা সুলতানা সামিয়া পারভিন।

লবুচে ইস্ট চূড়ায় পতাকা হাতে তৌকির। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষাজীবনের প্রথম পর্ব শেষ করে ঢাকায় আসেন উচ্চশিক্ষার জন্য। অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি শেষ করেন তৌকির। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করেই ভ্রমণের প্রতি ভালোবাসা জন্মে তাঁর। সেভাবেই ভ্রমণের শুরুটা হয় ২০১৭ সালে। এরপর ধীরে ধীরে দেশের প্রায় সব জেলা ঘোরেন তিনি। কখনো বন্ধুদের সঙ্গে, কখনো একা। এর মধ্যেই ভ্রমণ করেন ভারতের ছয়টি প্রদেশ। এই ভ্রমণগুলো একসময় তাঁকে টেনে নিয়ে যায় পাহাড়ের দিকে। পেয়ে যান পাহাড়ের স্বাদ। দেশের কঠিন ট্রেকগুলোতে হাঁটার পর তিনি হিমালয়ের অনেক ট্রেকে ট্রেকিং করেছেন। এগুলোর মধ্যে আছে এভারেস্ট বেসক্যাম্প ট্রেক, অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প, অন্নপূর্ণা সার্কিট, সান্দাকফু ও গোচেলা ট্রেক।

প্রকৌশলীর নিশ্চিত জীবন ছেড়ে তৌকির বেছে নিয়েছিলেন এক্সপেডিশন লিডারের অনিশ্চিত জীবন। 

তবে তৌকিরের পর্বতারোহী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় রোপ ফোর আয়োজিত মিশন হিমালয় ২০২২ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। সে বছর তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়ে এভারেস্ট বেসক্যাম্পে ভ্রমণের সুযোগ পান। সেই ভ্রমণের সময় তাঁর শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনা করে রোপ ফোর থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয় ৬ হাজার মিটার পর্বত সামিট করার জন্য। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তৌকিরকে। সেই সূত্রে তিনি ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে হিমালয়ের খুম্বু রিজিওনের ৬ হাজার ১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক অভিযান করে সফল হন। এই অভিযানে যাওয়ার আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।

আহসানুজ্জামান তৌকির। ছবি: সংগৃহীতআইল্যান্ড পিকে সফল অভিযান করে ফেরার পর তিনি রোপ ফোর-এ এক্সপেডিশন লিডার হিসেবে যোগ দেন। সেই কাজের সূত্র ধরে ২০২৩ সালে ৬ হাজার ১১৯ মিটারের লবুচে ইস্টসহ নাগার্জুন ও কালাপাথর পর্বত আরোহণ করেন। আহসানুজ্জামান তৌকির প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৬ হাজার মিটারের কোনো পর্বতে বাণিজ্যিকভাবে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। সে চূড়াটি ছিল নেপালের ৬ হাজার ১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত