Ajker Patrika

জুকো ভ্যালির সুখপাহাড়ের গল্প

সজল জাহিদ
জুকো ভ্যালির সুখপাহাড়ের গল্প

­জীবনের অল্প কয়েকটি ভ্রমণে বিভিন্ন ধরনের পাহাড় দেখেছি। সবুজ থেকে সাদা, ন্যাড়া থেকে অরণ্যে ঢাকা, সাদা থেকে লাল, কালো থেকে ধূসর—সব রকমের পাহাড়ই ভীষণ প্রিয়, অনেক আনন্দের আর দারুণ উপভোগের। কিন্তু সত্যি বলতে, এমন আদুরে, এত মন ভালো করে দেওয়া, অপলক তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করার মতো পাহাড় আগে দেখিনি। এই পাহাড়ের সারিগুলোর দিকে তাকাতেই কেমন যেন একটা সুখ সুখ অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে যেত মন। ভীষণ সুখানুভূতি নিয়ে, সবুজ ঢেউয়ের মতো ঢেউখেলানো পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থেকে হাঁটতে শুরু করেছিলাম। এতটাই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম যে এই পাহাড়ের আমি নাম দিয়েছি সুখপাহাড়!

আজকে সেই সুখপাহাড়ের ছোট্ট গল্পটা করি। নাগাল্যান্ডের জুকো ভ্যালি ট্রেকে পাওয়া জুকোর পথের প্রথম আপহিল শেষ করে, ট্রেইলের শুরুতেই দেখতে পাওয়া যায় এ পাহাড়ের সারি। না, এখানে কোনো পাহাড় আকাশছোঁয়া ছিল না, বড়, বুনো বা জঙ্গলে ঘেরা ছিল না। এখানে কোনো পাহাড়ে মেঘেদের দলের ছুটে বেড়ানো ছিল না, পাহাড়ের গায়ে কুয়াশার চাদর জড়ানো ছিল না। কোনো পাহাড়ে গা-ছমছমে অনুভূতি ছিল না। এখানে তেমন কোনো আপহিল বা ডাউনহিল ছিল না। এ ছিল আমার দেখা এক অদ্ভুত রকমের পাহাড়, যেমনটা আগে আর কোথাও দেখিনি, চোখে পড়েনি।

শুরুতে একটা ঘাস-লতাপাতা দিয়ে আবৃত পাহাড়ের গা বেয়ে কিছুটা নিচে নেমে, একটা ছোট্ট খাঁড়ি পার হয়ে অন্য একটি পাহাড়ে হাঁটা শুরু করেছিলাম। তখনই, ঠিক তখনই এত দিন ধরে অন্যের ছবিতে আর গুগলে দেখা অদ্ভুত মোহাচ্ছন্নতায় মোড়ানো সবুজের ঢেউখেলানো পাহাড়ের ঢেউ দেখতে পেলাম! প্রথম দেখাতেই মুগ্ধতা আমার গতি থামিয়ে দিল। ছবির সঙ্গে বাস্তবের এমন চমৎকার মিল পেয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম ঝটপট। এরপর অবাক চোখে মন্ত্রমুগ্ধের মতো কিছু সময় তাকিয়ে ছিলাম সেদিকে। আর ঠিক তখনই একটা অদ্ভুত সুখানুভূতিতে আচ্ছন্ন হলাম। মনে হলো, এই পাহাড়ের রিজ লাইন ধরে অনন্তকাল বুঝি হেঁটে যাওয়া যাবে ক্লান্তিহীন।

আবারও হাঁটা শুরু করলাম। কিছু সময় হেঁটে আরও কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর পুরো পাহাড়ের ঢেউখেলানো সবুজ সারির প্রায় পুরো ভিউ দৃষ্টিসীমায় ধরা দিল। ব্যাকপ্যাক রেখে সেখানে বসে পড়লাম। সেই পাহাড়ের সবুজ ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রাণভরে উপভোগ করতে থাকলাম দৃশ্য। তখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি, এই ট্রেইলের পুরোটা পথই এমন সবুজ ঢেউখেলানো পাহাড়ের সারি দিয়ে সাজানো। তাই বসে বসে দেখছিলাম, দূরে, ঢেউখেলানো সবুজের মাঝে, পাহাড়ের ঠিক মাঝখানে মাথার সিঁথির মতো আঁকাবাঁকা একটা লাইন চলে গেছে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। তখনো বুঝতে পারিনি যে ওটাই আমাদের পুরো ট্রেকের পাহাড়ের ট্রেইল। অথচ তেমনই একটা ট্রেইলে দাঁড়িয়ে আছি!

নাগাল্যান্ডের জুকো ভ্যালিতে দেখা যাবে এমন সবুজ পাহাড়যখন ওই পাহাড় ছাড়িয়ে একটু আগে ছবি তুলে রাখা পাহাড়ের ট্রেইলে গিয়ে পৌঁছালাম, পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম, যে ছবি একটু আগে তুলেছি, যে পাহাড়ের ট্রেইল দূর থেকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি, সেই একই পাহাড়ের সারি! একই রকম ট্রেইল আর একই রকম সবুজের ঢেউখেলানো পাহাড়েই হেঁটে এসেছি। পেছনে সেই একই দৃশ্য সামনের মতো হুবহু! বুঝলাম, পাহাড়ের মাঝের ওই সরু রেখাটাই আসলে আমাদের ট্রেক রুট, পাহাড়ের মূল ট্রেইল। এটা দেখা, বোঝা আর উপলব্ধি করার পর মুগ্ধতা আরও বেড়ে গেল। বিস্ময়ে আরও বেশি সুখে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম। যেটুকু ক্লান্তি অনুভূত হতে শুরু করেছিল, তা দূর হয়ে সেই জায়গায় সুখের নতুন একটা অনুভূতি তৈরি হলো। আর ঠিক তখনই সবুজের এই ঢেউখেলানো পাহাড়, অদ্ভুত মোহময় এই পাহাড়ের সারির আমি নিজের মতো নাম দিলাম ‘সুখপাহাড়’!

সুখপাহাড়ের ট্রেইল ধরে ভীষণ আনন্দ নিয়ে আরেকটা অদ্ভুত রকম সন্তুষ্টির রেশ প্রাণে জড়িয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করলাম। কোনো রকম ক্লান্তি, হাঁপিয়ে ওঠা কিংবা কষ্ট ছাড়া! শুধুই একটা সুখ সুখ অনুভূতি নিয়ে পাহাড়ে এর আগে কোনো দিন এভাবে হাঁটিনি। তাই এই সুখপাহাড়ে ট্রেক করে এগিয়ে যাওয়ায় স্মৃতি অনেক দিন অমলিন থাকবে, যে স্মৃতি আমার সুখের আকাশে আর একটা শুকতারা হয়ে গেছে!

যেতে চাইলে
নাগাল্যান্ডের জুকো ভ্যালি ট্রেকে এই সুখপাহাড়ের অবস্থান। সেখানে যাওয়ার নানা উপায় আছে। এয়ারে কলকাতা বা গুয়াহাটি থেকে ডিমাপুর অথবা আগরতলা বা গুয়াহাটি থেমে ট্রেনে ডিমাপুর। সেখান থেকে বাস বা জিপে করে নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা। সেখান থেকে আরও ২৫ কিলোমিটার দূরের জুকো ট্রেক পয়েন্টে গাড়ি বা জিপে যেতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করে জুকো ট্রেইলে চলা শুরু করতে হয়। শুরুর চড়াই শেষ করে ভিউ পয়েন্ট থেকে মূল ট্রেইলে হাঁটতে শুরু করলেই পাওয়া যাবে এই সুখপাহাড়ের ঠিকানা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

বিদ্যুতের লাইন ঠিক করার কথা বলে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে ধর্ষণ, যুবক গ্রেপ্তার

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পৃথিবীর একমাত্র মরিচ উৎসবে একদিন

মইনুল হাসান, ফ্রান্স  
ফ্রান্সের স্পোলেত গ্রামে অনুষ্ঠিত মরিচ মেলায় আসা দর্শক। ছবি: লেখক
ফ্রান্সের স্পোলেত গ্রামে অনুষ্ঠিত মরিচ মেলায় আসা দর্শক। ছবি: লেখক

ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমে একদম স্পেনের সীমান্ত ঘেঁষে পিরিনিজ পর্বতমালা। এই পর্বতমালার পাদদেশে দুই দেশ মিলিয়ে ছবির মতো বিশাল পাহাড়ি উপত্যকায় প্রাচীনকাল থেকে বসবাস বাস্ক জাতির মানুষেরা। নিজস্ব ভাষা, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক এ জাতির মানুষ নিজেদের বাস্ক হিসেবে পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করে।

বাস্ক তরুণী জুলি, তাঁর মরিচ ও মরিচের পণ্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন উৎসবে। ছবি: লেখক।
বাস্ক তরুণী জুলি, তাঁর মরিচ ও মরিচের পণ্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন উৎসবে। ছবি: লেখক।

একদিকে পর্বত, অন্যদিকে অতল অতলান্তিক মহাসাগরের বিশাল জলরাশির মিলে অপার্থিব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সবটুকু যেন এখানেই ঘনীভূত হয়েছে। এই অঞ্চলেই ফ্রান্সের বাইওন শহর থেকে ২২ কিলোমিটার বা ১৮ মাইল দূরে পর্বতের কোলে আছে নির্জন, নিভৃত ছোট্ট একটি গ্রাম—স্পোলেত।

প্রায় ৪০০ বছর ধরে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন, সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে জড়িয়ে আছে একটি বিশেষে জাতের মরিচ। ফরাসি ভাষায় এর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘পিমো দ্য স্পোলেত’ অর্থাৎ স্পোলেতের মরিচ। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা এর একটি খটমটে নাম দিয়েছেন, তা হলো ক্যাপসিকাম অ্যানুয়াম, প্রকরণ গোরিয়া। ১৬ শতকে স্প্যানিশ পরিব্রাজক খুয়ান সেবাস্তিয়ান এলকানো মেক্সিকো থেকে এই মরিচ ইউরোপের নিয়ে আসেন। সেই ১৬৫০ থেকে এই অঞ্চলের কৃষকেরা পিমো দ্য স্পোলেত নামে এই মরিচ চাষ করতে শুরু করেন।

স্পোলেতের মরিচ। ছবি: লেখক।
স্পোলেতের মরিচ। ছবি: লেখক।

উজ্জ্বল লাল রঙের, চমৎকার ঘ্রাণের, একটু মিষ্টি ও হালকা ঝালের এই বিশেষ জাতের মরিচ প্রথম দিকে শুধু ঔষধি এবং কাঁচা মাংস সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো। পরে গোলমরিচের অভাব পূরণে রান্না করা খাদ্যের স্বাদে আলাদা ব্যঞ্জনা আর ঝাঁজের জন্য ব্যবহার হতে শুরু করলে ফরাসি ও স্প্যানিশদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পিমো দ্য স্পোলেতকে ঘিরে গড়ে ওঠে আলাদা মাত্রার রন্ধনকৌলীন্য, এক সমৃদ্ধ ও সম্পূর্ণ ভিন্ন খাদ্যসংস্কৃতি। এই অঞ্চলের জীবন আবর্তিত হয় এই মরিচ ঘিরে। ফ্রান্স ও স্পেনের মানুষ এবং শেফদের খুব প্রিয় এই বিশেষ জাতের মসলা।

প্রতিবছর, অক্টোবরের শেষ শনি ও রোববার, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই ছোট্ট নির্জন গ্রামের নৈঃশব্দ্য ভেঙে ভিড় করে বহু মানুষ। দূরদূরান্ত থেকে দেশ-বিদেশের মরিচপ্রেমীরা এখানে ভিড় করেন—বসে এক মহা মিলনমেলা। ৫৬ বছর ধরে, অর্থাৎ ১৯৬৯ সাল থেকে এমনটাই চলে আসছে। এমন জাঁকজমক আর জমজমাট আয়োজনের কেন্দ্রে আছে এই বিশেষ জাতের মরিচ।

মরিচের গয়না। ছবি: লেখক।
মরিচের গয়না। ছবি: লেখক।

২৫ অক্টোবর শনিবার, সকাল থেকে স্পোলেত গ্রামে ভিড় বাড়তে থাকে। পাহাড়ি পথ ধরে সারি সারি গাড়ির বহর। বিশাল অঙ্গনে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং চলাচলের সুবিধার জন্য সরকারি বাহিনীর সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকদের দল গলদঘর্ম হচ্ছে। তারপরেও তাদের মুখে হাসির ঝিলিক। আমরাও মিশে গেলাম বহু ভিনদেশির সঙ্গে। বাদকদের দল বাদ্য বাজিয়ে বিয়েবাড়ির আমেজ সৃষ্টি করছিল। বাস্ক তরুণ-তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী নাচে মুগ্ধ করছে আগতদের।

অনেকটা উঁচু এক বিশাল জায়গাজুড়ে স্পোলেতের মরিচ এবং মরিচজাত নানান পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন উৎপাদনকারীরা। হাসিমুখে উৎসুক দর্শনার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তাঁরা। দেখা হলো মসিয়ঁ পিয়ের ডিহার্চের সঙ্গে। তিনি এসেছেন স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে। বহু বছর ধরে তিনি এই মরিচের চাষ করেন এবং তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করেন নিজ হাতে। তিনি জানালেন, মোট ১০টি গ্রামে এই মরিচের চাষ হয়। ১৫০ জন কৃষক বছরে প্রায় ১০০ টন মরিচ উৎপাদন করেন। আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফলন হয়। আরও বললেন, ভিটামিনের ভালো উৎস এই মরিচ হজমশক্তি বাড়ায়। ওজন কমাতে, বিপাকে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

মরিচ চাষি মসিয়ঁ পিয়ের ডিহার্চ। নিজের উৎপাদিত মরিচ নিয়ে জায়া ও পুত্র নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন উৎসবে। ছবি: লেখক।
মরিচ চাষি মসিয়ঁ পিয়ের ডিহার্চ। নিজের উৎপাদিত মরিচ নিয়ে জায়া ও পুত্র নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন উৎসবে। ছবি: লেখক।

আমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল দুই মরিচকন্যার—ক্লারা ও রেবেকা। ছবি তুলতে চাইলে মিষ্টি হেসে রাজি হয়ে গেলেন। বাস্ক তরুণী জুলি, তাঁর মরিচ ও মরিচের পণ্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন উৎসবে। অনেকের সঙ্গে দেখা হলো, আলাপ হলো। সবাই খুব আন্তরিক।

পরদিন রোববার একই রকম আয়োজন। শেষ হলো পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে। সেরা মরিচ উৎপাদনকারীকে পুরস্কারের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়।

উৎসবে মরিচকন্যা ক্লারা ও রেবেকা। ছবি: লেখক।
উৎসবে মরিচকন্যা ক্লারা ও রেবেকা। ছবি: লেখক।

এ বছর, ২০২৫-এ মরিচের তীর্থে এসেছিলেন প্রায় ২৫ হাজার মরিচ ভোক্তা ও ভক্ত। এমন করেই প্রতিবছর মরিচের প্রার্থনাসংগীত দিয়ে শুরু হয় দুদিনব্যাপী জমজমাট উৎসবের। উদ্‌যাপিত হয় মরিচের রাজধানীতে পৃথিবীর একমাত্র মরিচ উৎসব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

বিদ্যুতের লাইন ঠিক করার কথা বলে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে ধর্ষণ, যুবক গ্রেপ্তার

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রতিদিন ওয়ার্কআউট করার পর চুল তৈলাক্ত হয়ে পড়ে? ৫ উপায়ে সমস্যার সমাধান করুন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
ওয়ার্কআউট করলে কি প্রতিদিনই চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে? ছবি: পেক্সেল
ওয়ার্কআউট করলে কি প্রতিদিনই চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে? ছবি: পেক্সেল

জিমে ওয়ার্কআউট সেরে বাড়ি ফিরে চুল না ধোয়া পর্যন্ত শান্তি থাকে না। যাঁরা প্রতিদিন ওয়ার্কআউট করেন, তাঁদের মনে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়, প্রতিদিনই কি চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত? আবার কী করে চুল বাঁধলে ব্যায়ামের ফলে চুলের গোড়ায় বেশি ঘাম জমবে না, এ নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। আন্তর্জাতিক ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদনে মিলল এসব প্রশ্নের সমাধান। দেখে নিন একনজরে।

ঢিলেঢালা বেণি করুন

জিমের সময় ঢিলেঢালা বেণি বা খোঁপা করলে চুল খুব বেশি ঘামবে না, আবার চুল ভাঙার আশঙ্কাও থাকবে না। ছবি: পেক্সেলস
জিমের সময় ঢিলেঢালা বেণি বা খোঁপা করলে চুল খুব বেশি ঘামবে না, আবার চুল ভাঙার আশঙ্কাও থাকবে না। ছবি: পেক্সেলস

জিম করার সময় অনেকে চুল খোলা রাখেন। এতে করে চুল ভাঙার আশঙ্কা থাকে। আবার যাঁদের মুখে ব্রণ রয়েছে, বারবার চুল মুখে এসে লেগে যাওয়ার ফলে সংক্রমণও হতে পারে। অনেকে আবার খুব টাইট করে উঁচু পনিটেইল করে জিমে যান। তাঁদের চুলের গোড়া বেশি ঘাম জমে। এর ফলে মাথার ত্বকে চুলকানি ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর চেয়ে জিমে যাওয়ার সময় যদি ঢিলেঢালা বেণি বা খোঁপা করে নেওয়া যায়, তাহলে চুলের ভেতর বাতাস চলাচল করতে পারে। এতে চুল খুব বেশি ঘামবে না, আবার চুল ভাঙার আশঙ্কাও থাকবে না।

ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করুন

ঘামের কারণে প্রতিদিন শ্যাম্পু করতে গিয়ে চুল রুক্ষ হয়ে উঠলে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। ড্রাই শ্যাম্পু স্প্রে করার সময় তালুর এমন জায়গায় স্প্রে করুন যে অংশ বেশি তৈলাক্ত। ড্রাই শ্যাম্পুর বোতল মাথার ত্বক থেকে অন্তত ৯ ইঞ্চি দূরে ধরে স্প্রে করুন। এরপর আঙুলের ডগা দিয়ে মাথার ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করে নিন। এতে শ্যাম্পু আরও ভালোভাবে মিশে যাবে। ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে সপ্তাহে তিন দিন চুল ধুয়ে নেওয়াই যথেষ্ট।

ভেজা চুলে ব্যায়াম করার সময় মাথার ত্বক ঘেমে গেলে চুল ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ছবি: পেক্সেলস
ভেজা চুলে ব্যায়াম করার সময় মাথার ত্বক ঘেমে গেলে চুল ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ছবি: পেক্সেলস

ভেজা চুলে ব্যায়াম করবেন না

ওয়ার্কআউটের ঠিক আগে গোসল করেছেন? বৃষ্টিতে ভিজে গেছেন? আপনার দিনের ব্যায়াম এখানেই শেষ। কারণ, ভেজা চুলে ব্যায়াম করা ঠিক নয়। ভেজা চুলে ব্যায়াম করার সময় যদি মাথার ত্বক ঘামে, তাহলে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকে। আমাদের চারপাশের দূষণের কারণে বৃষ্টির পানিও ততটা পরিষ্কার নয় এবং এটি আপনার মাথার ত্বকে বসতে দিলে চুলের গোড়ার ক্ষতি এবং খুশকির মতো আরও সমস্যা হতে পারে।

মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখুন

চুলের রুক্ষতা ও শুষ্কতা এড়াতে প্রতিদিন ওয়ার্কআউটের পরে চুল ধুতে নিষেধ করা হয়। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, না ধোয়া চুল ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের উৎস হতে পারে। এ জন্য মাথার ত্বকের ঘাম মুছে ফেলার জন্য আলাদা তোয়ালে বা টিস্যু ব্যবহার করা জরুরি। যাঁরা ওয়ার্কআউটের পর চুল না ধুয়ে থাকতে পারেন না, তাঁরা সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। প্রতিবার ধোয়ার পর চুলে স্মুথিং সেরাম ব্যবহার করুন।

ব্যায়াম শেষে চুল ছেড়ে বাতাসে শুকাতে হবে

ওয়ার্কআউটের পর চুল বেঁধে রাখবেন। তখন আপনার মাথার ত্বককে শ্বাস নিতে দিতে হবে এবং ওয়ার্কআউটের সময় তৈরি হওয়া আর্দ্রতা বের করে দিতে হবে। ব্যায়াম শেষে মাথার ত্বকে তাপ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। সে জন্য ড্রায়ার ব্যবহারের পরিবর্তে ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানোর চেষ্টা করুন। এ সময় আঙুল দিয়ে চুলের জট ছাড়ানোর পর চওড়া দাঁতের চিরুনি দিয়ে একবার আঁচড়ে নিন। যদি আপনি ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহার করতেই চান, তাহলে কুল এয়ার ব্যবহার করুন। এটি আপনার মাথার ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নেবে, কিন্তু চুলকে অতিরিক্ত শুষ্ক করবে না।

জেনে রাখা ভালো

  • জিমে একই যন্ত্রপাতি ও ম্যাট প্রায় সবাই ব্যবহার করেন। ফলে ঘাম বা ব্যাকটেরিয়া যাতে আপনার চুলে লেগে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে মাথার ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম না হলে এক দিন অন্তর শ্যাম্পু করা যাবে। প্রয়োজনে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
  • সুতির হেয়ারব্যান্ড ব্যবহার করুন।

ছবি: পেক্সেলস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

বিদ্যুতের লাইন ঠিক করার কথা বলে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে ধর্ষণ, যুবক গ্রেপ্তার

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাড়িতেই তৈরি করুন ভিন্ন স্বাদের কতবেল মাখা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
পাকা কতবেল
পাকা কতবেল

শহরের অলিগলিতে এখন কতবেল মাখা বিক্রি হচ্ছে। ঝাল বাড়িয়ে জম্পেশ করে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রশ্ন থাহলে ঘরেই তৈরি করে নিন জিবে জল আনা কতবেল মাখা। আপনাদের জন্য একটু ভিন্ন স্বাদের কতবেল মাখার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন ‘সেরা রাঁধুনি ১৪২৭’ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় রানার্সআপ ও রন্ধনশিল্পী মরিয়ম হোসেন নূপুর

উপকরণ

পাকা কতবেল ১টি, লেবুর রস ১ চা-চামচ, চিনি ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ মিহি কুচি ১টি, লবণ এক চিমটি, বিট লবণ ১ চা-চামচের ৪ ভাগের ১ ভাগ, ধনেপাতাকুচি ১ চা-চামচ, পুদিনাপাতার কুচি আধা চা-চামচ, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ।

কতবেল মাখা
কতবেল মাখা

প্রণালি

একটি পাত্রে কতবেল ও লেবুর রস বাদে বাকি উপকরণ একসঙ্গে মেখে নিতে হবে। এরপর মসলার মিশ্রণের সঙ্গে কতবেল আর লেবুর রস দিয়ে মেখে পরিবেশন করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

বিদ্যুতের লাইন ঠিক করার কথা বলে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে ধর্ষণ, যুবক গ্রেপ্তার

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা

রজত কান্তি রায়, ঢাকা  
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২১
তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা

তিতাস একটি নদীর নাম। এই নদীতীরে গোকর্ণ গ্রাম। এখন অবশ্য তা গোকর্ণ ঘাট নামে পরিচিত। সেই ঘাটে এসে ভিড়ল আমাদের বহনকারী বোট। তবে যাত্রার শুরুটা হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দবাজার ঘাট থেকে। সেখান থেকে শুরু করে কুরুলিয়া নদী হয়ে আবার তিতাসে—কিছুটা শর্টকাট রাস্তা। কুরুলিয়া নদী যেখানে তিতাসের সঙ্গে মিলিত হলো, সেটাই গোকর্ণ গ্রাম তথা এখনকার গোকর্ণ ঘাট—অদ্বৈত মল্লবর্মণের জন্মভিটা। এখন আর বস্তুগত চিহ্ন নেই, আছে স্মৃতি। শোনা গেল, তাঁর দূরসম্পর্কের এক নাতি আছেন সেখানে। আর কেউ নেই। মল্লবাবু বহু আগে তখনকার রাজধানী শহর কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন, ভাগ‍্যের অন্বেষণে। আমরা যেমন এখন দূরদূরান্ত থেকে রাজধানী ঢাকায় এসে ভিড় জমাই।

এখানে নদীর ওপর মস্ত প্রাচীরঘেরা গুদাম। সেটির ছোট ছোট মিনারে বসে আছে তিনটি বালক আর একটি কাক। অদ্বৈত মল্লবর্মণ একদিন সম্ভবত এই বালকদের মতোই ছিলেন—দুরন্ত। অথবা এই বালকেরাই হয়তো তাঁর কিশোর, সুবল, অনন্ত কিংবা বনমালীদের এই প্রজন্মের সংস্করণ।

কেমন ছিল অদ্বৈতের তিতাস? তিনি লিখেছেন, ‘তার কূলজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ্বাস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। ভোরের হাওয়ায় তার তন্দ্রা ভাঙ্গে, দিনের সূর্য তাকে তাতায়; রাতে চাঁদ ও তাঁরারা তাকে নিয়া ঘুম পাড়াইতে বসে, কিন্তু পারে না।’ বর্ষা থেকে হেমন্ত তিতাস হয়তো তেমনই থাকে। অন্তত হেমন্তের তিতাস দেখে তাই মনে হলো। কিন্তু বছরের বাকি সময় সে যক্ষ্মার রোগী—শুনেছি তার বুকে তখন গরু চরে।

গোকর্ণ ঘাট ছাড়তেই তিতাসের আকার সাগরের মতো! সঙ্গে মিশেছে হাওর। স্থানীয়দের সহায়তা ছাড়া চেনার উপায় নেই—কোনটা হাওর আর কোনটা নদী। এই বিশাল বিস্তারেই বসতি ছিল অদ্বৈত মল্লবর্মণের। নইলে তেমন নভেল লেখা যায়!

আমরা এগিয়ে চলেছি। সূর্য তখনো কুয়াশা আর মেঘের সঙ্গে লড়াই করছে। সকাল আটটাও বাজেনি। আমাদের পাড়ি দিতে হবে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথ। তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার সদরঘাট। এত দীর্ঘ পথ এর আগে কখনো পাড়ি দিইনি নৌকায়। ভয়, উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ—সব একসঙ্গে ঘিরে আছে। কারণ, সামনে পাড়ি দিতে হবে মেঘনা—দ্য গ্রেট মেঘনা!

নদীর নাম পাগলা। তিতাসের শরীর থেকে বেরিয়ে ডানে চলে গেছে। এখানে গ্রামের নাম রসুলপুর, রতনপুর ইত্যাদি। নদী থেকে আটপৌরে দৃশ্যের বাইরে গ্রাম বা শহর দেখা যায়। তার একটা মজা আছে। তবে নদীতে বসে জলজ জীবন দেখাই দস্তুর। তাই দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলেছি।

পাগলা নদী পেরিয়ে গেলাম। তিতাস এখানে বেশ প্রশস্ত। আমাদের উল্টো দিক থেকে অনেক নৌকা আসছে। গতিতে আমাদের পেছনে ফেলেও এগিয়ে যাচ্ছে অনেক নৌকা। তার বেশির ভাগই মালবাহী। প্রচুর কচুরিপানা। তাতে এখনো ফুল ফোটেনি। কৌতূহলী হয়ে দেখলাম, সেগুলো মূলত ঘের। মাছ ধরার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা। ছোট ছোট নৌকায় জেলেরা সেগুলোতে মাছ ধরছে।

আমরা এগিয়ে চলেছি সদরঘাটের দিকে। ইঞ্চি ইঞ্চি করে দূরত্ব কমছে। কমলে কী হবে, এ পথ ফুরোতে সময় লাগবে পাক্কা দশ ঘণ্টা। মোবাইল ফোনের ঘড়ি দেখি—মাত্র ঘণ্টাখানেক এগিয়েছি। শোনা গেল, সামনেই মেঘনা। উত্তেজনার পারদ বাড়ল খানিক।

এই যাত্রার আয়োজন করেছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নদী রক্ষা আন্দোলনের অনন্যসাধারণ সংগঠন ‘তরী’। তাদের দাবি, পুরোনো এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ আবার সচল করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য কত কিলোমিটার? আইইউসিএনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে দেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার। পরের তিন দশকে তা কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার কিলোমিটারে। বিআইডব্লিউটিএর তথ্য, ষাটের দশকে নদীপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। গত ছয় দশকে তা নেমে এসেছে মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটারে। শুকনো মৌসুমে তা-ও কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৪৭ কিলোমিটারে। তরীর দাবি, নৌপথগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে, দেশ বাঁচাতে। সেই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সেখান থেকে নৌকাযোগে ঢাকা উদ্দেশে যাত্রা।

জায়গাটা বিশাল। চারদিকে পানি আর পানি। বাল্কহেডের সংখ্যা যেন বেড়ে গেছে হঠাৎ করে। মাছ ধরার নৌকাগুলোর আকারও বদলেছে। বোটের অভিজ্ঞরা জানালেন, আমরা মেঘনায় চলে এসেছি। অর্থাৎ তিতাস পাড়ি দেওয়া শেষ। এখন আমাদের মেঘনা পাড়ি দিতে হবে।

অথই জলে এখানে ভাসছে প্লাস্টিকের তৈরি দিকনির্দেশক। রাতে তাতে বাতি জ্বলে। বড় বড় ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বাল্কহেডে ভরা হচ্ছে। শত শত বাল্কহেড সেই বালু নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে বিভিন্ন দিকে। বেশির ভাগের গন্তব্য ঢাকা। আমাদের বোট এগিয়ে চলেছে। মহাসড়কে যেমন বাস-ট্রাক আর ছোট ছোট ব্যক্তিগত গাড়ির সারি থাকে, এখানে বাল্ডহেডের সারিও অনেকটা তেমনই। একটার পেছনে একটা, শত শত! মাঝি দক্ষ হাতে বোট সামলে চলেছেন। মাঝে কদাচিৎ দেখা যাচ্ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর স্পিডবোট। কোথাও ঘাটে বাঁধা দেখলাম পুরোনো এক গয়না নৌকা। একসময় এগুলো নদীপথে দাপিয়ে বেড়াত পণ্য নিয়ে। এখন সে বিগত যৌবনা।

মেঘনা এক পবিত্র নদী। বরাক উপত্যকার সুরমা ও কুশিয়ারা এক হয়ে যে প্রবাহ তৈরি করেছে, তার নাম কালনী। ভাটিতে এর নাম মেঘনা। তাতে এসে মিশেছে হিমালয়ের মানস সরোবরের জল, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র হয়ে। তারও ভাটিতে মেঘনার সঙ্গে মিলেছে পদ্মা। তারপর চলে গেছে সাগরপানে। আমরা এই পদ্মাসঙ্গমের আগেই হাতের ডানে চলে গেলাম। সেখানে দুটি নদী দুদিকে বেরিয়ে গেছে—একটি শীতলক্ষ্যা, অন্যটি ধলেশ্বরী। এখানে অসংখ্য বাল্কহেড আর মাদার ভ্যাসেলের টার্মিনাল। ধলেশ্বরী ধরে এগিয়ে গিয়ে পড়লাম বুড়িগঙ্গায়। সে পথে সদরঘাট।

টানা ১০ ঘণ্টার যাত্রা। পথে নৌকাতেই রান্না ও খাওয়া। সদরঘাটের দিকে যতই এগিয়ে চলেছি, পানির রং ততই কালো হয়ে উঠছে। বুঝতে পারছি, বহু ব্যবহারে জীর্ণ বুড়িগঙ্গা। কিন্তু নদী থেকে রাজধানী শহর দেখতে সুন্দর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসির তালিকায় যুক্ত নতুন নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’

বিদ্যুতের লাইন ঠিক করার কথা বলে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে ধর্ষণ, যুবক গ্রেপ্তার

‘আমি আওয়ামী লীগ করি, এটাই অপরাধ’

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

সময়ক্ষেপণ করবেন না, আগামীকালের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন— প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত