সানজিদা সামরিন, ঢাকা
রবিঠাকুরের মেজ বউদি জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর ‘পুরাতনী’ নামের বই থেকে জানা যায়, তাঁর শাশুড়ি সারদা দেবী নাকি নিজে বসে থেকে কাজের মেয়েদের দিয়ে পুত্রবধূদের গায়ে বিভিন্ন ধরনের উপটান মাখাতেন। বোঝাই যাচ্ছে, ঠাকুরবাড়িতে রূপচর্চার গুরুত্ব ছিল। শুধু বাড়ির মেয়ে–বউয়েরা কেন, বাড়ির ছেলেরাও ত্বক ও চুলের যত্ন নিতেন খুব করে।
স্নানের সময় যা ব্যবহার করতেন
ঠাকুরবাড়িতে নারী–পুরুষ বলতে গেলে প্রত্যেকেই উপটান মেখে স্নান করতেন। ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথের মা সারদা দেবী বাদাম বাটা, দুধের সর ও কমলালেবুর খোসা বাটা মিশিয়ে রবীন্দ্রনাথের গায়ে মাখিয়ে স্নান করাতেন। ঠাকুরবাড়ির মেয়ে–বউয়েরা দিনে অন্তত একবার দুধের সর আর ময়দার মিশ্রণ তৈরি করে সারা শরীরে মাখতেন। এরপর কিছুক্ষণ তা ত্বকে মালিশ করে গামছা দিয়ে ঘষে ঘষে ধুয়ে নিতেন। সর–ময়দার এই মিশ্রণ তাঁদের ত্বকের রং উন্নত করত, অতিরিক্ত লোম অপসারণ করত এবং ত্বক রাখত মসৃণ। এ ছাড়া ত্বকের ময়লা কাটাতে ও রোদে পোড়া দাগ তুলতে ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা মসুর ডাল বাটার সঙ্গে কমলালেবুর খোসা বাটা মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতেন।
সাবানের পরিবর্তে
সে সময় ঠাকুরবাড়িতে সাবানের পরিবর্তে বেসন ব্যবহারের চল ছিল। তবে সময়বিশেষে গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করতেন তাঁরা। স্নানের পর ত্বকে ব্যবহারের জন্য ক্রিম তৈরি হতো বাড়িতেই। ‘মোম রুট’ নামের সেই ক্রিম তৈরির জন্য আনা হতো মৌচাকের মোম। সেই মোম গুঁড়ো করে তার সঙ্গে মেশানো হতো নারকেল তেল। তাতে যে মিশ্রণ তৈরি হতো, তা কৌটায় সংরক্ষণ করা হতো। সারা বছর সেই ক্রিম ঠাকুরবাড়ির সদস্যরা ত্বকে ব্যবহার করতেন।
ভ্রমণ করে ফিরে ত্বকের যত্ন
ভ্রমণ ছিল ঠাকুরবাড়ির এক দারুণ বিষয়। বাঙালিদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের মতো ভ্রমণবিলাসী কমই আছে। তিনি ছাড়াও প্রায় সবাই ভ্রমণ করতে ভালোবাসতেন। সে সময় তো ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফিরে ত্বকের যত্ন নিতে সেলুনে যাওয়ার উপায় ছিল না। কিন্তু ত্বক তো ভালো রাখা চাই। তাই সমুদ্র বা পাহাড় থেকে ঘুরে আসার পর ত্বকের রোদে পোড়া দাগ তুলতে আটার প্রলেপ লাগিয়ে আলতো করে ঘষতেন তাঁরা। কয়েক দিনের মধ্য়ে ত্বকের স্বাভাবিক রং ফিরে আসত।
ত্বক টান টান করতে
ভাবার কোনো কারণ নেই যে ত্বক টান টান রাখার বিষয়টি এখনকার। এটি মানুষের বেশ পুরোনো প্রবণতা। ঠাকুরবাড়িতেও এর চর্চা হতো। ত্বক টান টান করতে সে বাড়ির নারীরা আধা কাপ দুধে গোল গোল করে শসা কেটে ভিজিয়ে রেখে ত্বকে লাগাতেন। এতে ত্বক টান টান হতো আর রোমকূপও ছোট থাকত।
ব্রণের দাগ দূর করতে
ব্রণের দাগ মুখের সৌন্দর্যহানির জন্য যথেষ্ট। রবীন্দ্রনাথের বাড়ি বলেই যে সে বাড়িতে ব্রণের মতো রোগবালাই ছিল না, তা নয়। সেটি তো বটেই, তারচেয়ে ভয়াবহ ছিল জলবসন্তের দাগ। মুখে ব্রণের দাগ বসে গেলে ডাবের জলে পাতলা কাপড় ভিজিয়ে দাগের ওপর বুলিয়ে নিতেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা। তাতে দাগ হালকা হতো।
রবিঠাকুরের ত্বক ও চুলচর্চা
শরীরের যত্নে রবীন্দ্রনাথের নিজের অবস্থান কেমন ছিল, সঠিকভাবে তা জানা যায় না। তবে মানুষ যেহেতু, আর ভ্রমণ করতেন প্রচুর, মিশতে হতো বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে; তাই বলা চলে, শরীরের যত্ন না নিলে তাঁর চলত না।
চুলের যত্নে রবীন্দ্রনাথ তেল বা সাবান কোনোটাই ব্যবহার করতেন না। চুলের চাকচিক্য় ধরে রাখতে ও ডিপ ক্লিনের জন্য ব্যবহার করতেন শর্ষে বাটা। অবশ্য আমেরিকায় গেলে সেখানকার শ্যাম্পু ব্যবহার করতেন। ত্বকের যত্নে শর্ষে ও ডাল বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে গায়ে মাখতেন। এতে তাঁর চুল ও ত্বক দুটোই মসৃণ থাকত। অনেক পরে এসে অবশ্য রবীন্দ্রনাথ সাবান ব্যবহার করতে শুরু করেন। সেই সাবানের জোগান দিতেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক পশুপতি ভট্টাচার্যের ভাই বিজ্ঞানী গিরিজাপতি ভট্টাচার্য।
সূত্র: ‘ঠাকুরবাড়ির রূপ কথা’, শান্তা শ্রীমানী
ছবি: হাসান রাজা
রবিঠাকুরের মেজ বউদি জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর ‘পুরাতনী’ নামের বই থেকে জানা যায়, তাঁর শাশুড়ি সারদা দেবী নাকি নিজে বসে থেকে কাজের মেয়েদের দিয়ে পুত্রবধূদের গায়ে বিভিন্ন ধরনের উপটান মাখাতেন। বোঝাই যাচ্ছে, ঠাকুরবাড়িতে রূপচর্চার গুরুত্ব ছিল। শুধু বাড়ির মেয়ে–বউয়েরা কেন, বাড়ির ছেলেরাও ত্বক ও চুলের যত্ন নিতেন খুব করে।
স্নানের সময় যা ব্যবহার করতেন
ঠাকুরবাড়িতে নারী–পুরুষ বলতে গেলে প্রত্যেকেই উপটান মেখে স্নান করতেন। ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথের মা সারদা দেবী বাদাম বাটা, দুধের সর ও কমলালেবুর খোসা বাটা মিশিয়ে রবীন্দ্রনাথের গায়ে মাখিয়ে স্নান করাতেন। ঠাকুরবাড়ির মেয়ে–বউয়েরা দিনে অন্তত একবার দুধের সর আর ময়দার মিশ্রণ তৈরি করে সারা শরীরে মাখতেন। এরপর কিছুক্ষণ তা ত্বকে মালিশ করে গামছা দিয়ে ঘষে ঘষে ধুয়ে নিতেন। সর–ময়দার এই মিশ্রণ তাঁদের ত্বকের রং উন্নত করত, অতিরিক্ত লোম অপসারণ করত এবং ত্বক রাখত মসৃণ। এ ছাড়া ত্বকের ময়লা কাটাতে ও রোদে পোড়া দাগ তুলতে ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা মসুর ডাল বাটার সঙ্গে কমলালেবুর খোসা বাটা মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতেন।
সাবানের পরিবর্তে
সে সময় ঠাকুরবাড়িতে সাবানের পরিবর্তে বেসন ব্যবহারের চল ছিল। তবে সময়বিশেষে গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করতেন তাঁরা। স্নানের পর ত্বকে ব্যবহারের জন্য ক্রিম তৈরি হতো বাড়িতেই। ‘মোম রুট’ নামের সেই ক্রিম তৈরির জন্য আনা হতো মৌচাকের মোম। সেই মোম গুঁড়ো করে তার সঙ্গে মেশানো হতো নারকেল তেল। তাতে যে মিশ্রণ তৈরি হতো, তা কৌটায় সংরক্ষণ করা হতো। সারা বছর সেই ক্রিম ঠাকুরবাড়ির সদস্যরা ত্বকে ব্যবহার করতেন।
ভ্রমণ করে ফিরে ত্বকের যত্ন
ভ্রমণ ছিল ঠাকুরবাড়ির এক দারুণ বিষয়। বাঙালিদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের মতো ভ্রমণবিলাসী কমই আছে। তিনি ছাড়াও প্রায় সবাই ভ্রমণ করতে ভালোবাসতেন। সে সময় তো ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফিরে ত্বকের যত্ন নিতে সেলুনে যাওয়ার উপায় ছিল না। কিন্তু ত্বক তো ভালো রাখা চাই। তাই সমুদ্র বা পাহাড় থেকে ঘুরে আসার পর ত্বকের রোদে পোড়া দাগ তুলতে আটার প্রলেপ লাগিয়ে আলতো করে ঘষতেন তাঁরা। কয়েক দিনের মধ্য়ে ত্বকের স্বাভাবিক রং ফিরে আসত।
ত্বক টান টান করতে
ভাবার কোনো কারণ নেই যে ত্বক টান টান রাখার বিষয়টি এখনকার। এটি মানুষের বেশ পুরোনো প্রবণতা। ঠাকুরবাড়িতেও এর চর্চা হতো। ত্বক টান টান করতে সে বাড়ির নারীরা আধা কাপ দুধে গোল গোল করে শসা কেটে ভিজিয়ে রেখে ত্বকে লাগাতেন। এতে ত্বক টান টান হতো আর রোমকূপও ছোট থাকত।
ব্রণের দাগ দূর করতে
ব্রণের দাগ মুখের সৌন্দর্যহানির জন্য যথেষ্ট। রবীন্দ্রনাথের বাড়ি বলেই যে সে বাড়িতে ব্রণের মতো রোগবালাই ছিল না, তা নয়। সেটি তো বটেই, তারচেয়ে ভয়াবহ ছিল জলবসন্তের দাগ। মুখে ব্রণের দাগ বসে গেলে ডাবের জলে পাতলা কাপড় ভিজিয়ে দাগের ওপর বুলিয়ে নিতেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা। তাতে দাগ হালকা হতো।
রবিঠাকুরের ত্বক ও চুলচর্চা
শরীরের যত্নে রবীন্দ্রনাথের নিজের অবস্থান কেমন ছিল, সঠিকভাবে তা জানা যায় না। তবে মানুষ যেহেতু, আর ভ্রমণ করতেন প্রচুর, মিশতে হতো বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে; তাই বলা চলে, শরীরের যত্ন না নিলে তাঁর চলত না।
চুলের যত্নে রবীন্দ্রনাথ তেল বা সাবান কোনোটাই ব্যবহার করতেন না। চুলের চাকচিক্য় ধরে রাখতে ও ডিপ ক্লিনের জন্য ব্যবহার করতেন শর্ষে বাটা। অবশ্য আমেরিকায় গেলে সেখানকার শ্যাম্পু ব্যবহার করতেন। ত্বকের যত্নে শর্ষে ও ডাল বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে গায়ে মাখতেন। এতে তাঁর চুল ও ত্বক দুটোই মসৃণ থাকত। অনেক পরে এসে অবশ্য রবীন্দ্রনাথ সাবান ব্যবহার করতে শুরু করেন। সেই সাবানের জোগান দিতেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক পশুপতি ভট্টাচার্যের ভাই বিজ্ঞানী গিরিজাপতি ভট্টাচার্য।
সূত্র: ‘ঠাকুরবাড়ির রূপ কথা’, শান্তা শ্রীমানী
ছবি: হাসান রাজা
পিৎজার জন্মস্থান ইতালি, এটা প্রায় সবার জানা। এ খাবার নিয়ে পৃথিবীজুড়ে যে উন্মাদনা, তা বলে শেষ করার নয়। বরং চলুন, জেনে নেওয়া যাক, এটি নিয়ে বড় বড় উৎসব কোথায় হয়। এসব উৎসব কিন্তু ঢাকার পিৎজা শপগুলোর মূল্যছাড়ের উৎসব নয়; লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত ও শিহরণ জাগানো উৎসব।
৬ ঘণ্টা আগেশরতের আবহাওয়ায় ভীষণ শুষ্ক। বাতাসে প্রচুর ধুলাবালু ও কাশফুলের রেণু উড়ে বেড়ায়। এগুলো ত্বকে ময়লার আবরণ সৃষ্টি করে। এ ছাড়া ত্বকে চুলকানিসহ নানান সমস্যার জন্ম দেয়। তার ওপর আছে পিছু না ছাড়া সানট্যান। সাবান, বডিওয়াশ, ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করাই যথেষ্ট নয়। ত্বক ভেতর থেকে ধুলাবালু মুক্ত রাখতে হবে।
১ দিন আগেকাশফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেছে পূজার আয়োজন। পূজা মানে উৎসব। আর আমাদের যেকোনো উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ রঙিন পোশাক। বাজারে আসতে শুরু করেছে সেসব। আর চলছে জোর বিজ্ঞাপন।
১ দিন আগেএখন তালের মৌসুম। বছরের এই একটি সময় রসিয়ে রসিয়ে তাল খাওয়ার সময়। মৌসুম বলে বাজারে প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে এই ফল। কিনে এনে তৈরি করে ফেলতে পারেন মনের মতো কোনো খাবার।
১ দিন আগে